STORYMIRROR

Rima Goswami

Horror Crime

2  

Rima Goswami

Horror Crime

হানিমুনে অশরীরী প্রেতাত্মা

হানিমুনে অশরীরী প্রেতাত্মা

5 mins
455

গাড়িটা এগিয়ে যাচ্ছে , গাড়ির মধ্য খুনসুটিতে মেতে নব দম্পতি মেখলা আর রিসব । কলকাতা থেকে ওরা এসেছে হানিমুনে , আর এখানে এসে থেকে ঘুরতে বেরোলেও প্রকৃতি দেখার থেকে একে অপরকে দেখতেই ব্যস্ত ওরা । রিসবের থেকে এজ ডিফারেন্সটা মেখলার বাবা মাকে বদর করছিল । রিসব আগরতলার ছেলে বয়স উনচল্লিশ , কলকাতার এক নামি কোম্পানির লিগ্যাল এডভাইসর । মেখলা কলকাতার এক বাইশ বছরের তরুণী , ফিলোসফি তে হনর্স করে ঘরেই বসে ছিল তার পর নন্দনে আলাপ দুজনের সেই থেকে মেলামেশা , প্রেম আর শেষে বিয়ে । রিসবের কেউ নেই , মা বাবা অনেক দিন গত হয়েছেন আর এক সন্তান হওয়ায় ভাইবোন ও নেই । তাই সে আগরতলার পাট চুকিয়ে পাকাপাকি কলকাতা নিবাসী । বিয়ের পর রিসব জম্মু যেতে চাইছিল হানিমুনে কিন্তু মেঘলা তো কবে থেকেই ভাবে রেখেছিল পূর্ব সিকিমের সিল্ক রুট তথা রেশম পথ ওদের হানিমুন ডেস্টিনি । সফেদ ঊর্মিমালা ছড়িয়ে কুলকুল বয়ে চলেছে রংপো নদী। আজকের মত ঘোরা শেষ তাই গাড়ি লোটবহর সমেত যেখানে নামিয়ে দিল সেখান থেকে পাহাড়ি পথে উতরাই বেঙে, নুড়ি পাথর চাটান টপকিয়ে, বাঁশের সেতু পথ পেরিয়ে জঙ্গলে পথ সাঁতরে—১ কিমি পথ পেরিয়ে অনভস্ত পথে হাঁটতে থাকে দুজনে । রিশি নদীর নিবিড় গলে অস্ফুট পারাপার। নদীর পাড় বরাবর উচ্ছ্বসিত উল্লাসে পথ চলা। দূরে রিশি নদীর লাগাম ছুঁয়ে ইকো-কটেজ। এই কটেজি ওদের মধুচন্দ্রিমা যাপনের স্বর্গ । মেঘলা বলে এই দেখ রিশির ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড হোম স্টে-এর অবস্থানটি কিন্তু চমৎকার তাই না ? পিছুটানহীন মায়াবী উটোন , পায়ের পাতায় নদীজল। নিসর্গ ঘেঁষে সবুজ প্রলেপ। পাহাড়ি উদাসীনতা। আশ্চর্য নদী বক্ষে ছায়া আর বহুমাত্রিক সবুদ ও রঙিন ফুলের ধরণা। অলীক সুখে সেখানে ফুটে আছে গুল্মলতা, ফুল, অর্কিড। নদীর এক পাড়ে পশ্চিমবাংলো ওপাড়ে সিকিম। মাঝে একটা পলকা কাঠের সাঁকো। আর বাগান, পাখি, নদী, নুড়ি পাথর, জানুয়ারির শীত নিয়ে কটেজ ধাঁচের কাঠের হোম স্টে। চারপাশে জঙ্গল পাহাড়ের ধারাবাহিকতা কমে আসছে।সে তো ঠিক আছে ম্যাডাম কিন্তু


হিমেল আবহাওয়ায় বিকেলে শীতের হু হু টক্করে এখন একান্ত জরুরি মনে হয় ধোঁয়া ওঠা কফি আর চিকেন পাকোড়া রিসব বলে ওঠে । তুমি না একটা আস্ত পেটুক বলে ওঠে মেঘলা , প্রকৃতি প্রেমী মেয়েটা ভেবেছিল স্বামী টিও হবে তার মতোই স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণকারী কিন্তু রিসব এসে থেকে শুধু খাওয়া দাওয়া আর মেঘলার শরীর নিয়ে খেলতেই ব্যস্ত । রাত পেরিয়ে গেলো একে অপরের আলিঙ্গনে পরের দিন গন্তব্য পূর্ব সিকিমের প্রাচীন ‘সিল্ক রুট’ বা ‘রেশমপথ’। এক সময় জেলেপ লা পাস দিয়ে এদেশের সঙ্গে তিব্বত ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য চলত এই দুর্গম অথচ শীত ও শব্দহীন প্রান্তর জুড়ে। যে পথে প্রাণখোলা আবেগে এই শীত মরসুমে যেতে যেতে ঝেঁপে আসে পাহাড়ি নির্জনতা। সেই দূরবর্তী অতীতে বাণিজ্যে বিনিময় প্রথায় পণ্য ছিল সিল্ক। এ ছাড়াও সুগন্ধী, মশলাপাতি, এমনকী মুদ্রাও মণিমানিক্যও। আবার সেই বনপথ, নদী সাঁকো ও পাথর পথে সাবধানী পদক্ষেপে পেরিয়ে চড়াই ডিঙিয়ে পিচ রাস্তা। পিটার গাড়ি ধুয়েমুছে ওদের আপেক্ষা করছিল । বেশি দেরি হয়ে গেলে রেশম পথ যাওয়ার


পারমিট পেতে অসুবিধা হবে সাব , রিসব কে সে বলল । দু’ঘারে ঘন সবুজ জঙ্গলে ঢাকা পথশোভা, ছবির মতো সুন্দর ঘরবাড়ি নিয়ে শব্দহীন থমকে থাকা পাহাড়ি গ্রাম। বেশ চলছিল সব কিছু হঠাৎ ছন্দ পতন । সন্ধ্যার দিকে গাড়িটা গেল বিগড়ে , অনেক সাধ্য সাধনা করেও যখন গাড়ি স্টার্ট হলো না তখন শেষমেষ রণে ভঙ্গ দিতেই হল । পিটার গ্রামের বাসিন্দা দের একজনকে অনুরোধ করে তার সাইকেলটা দিতে যাতে সে শহর থেকে মেকানিক নিয়ে আসতে পারে সকালের মধ্য । ওই ভদ্রলোক লুসঙ এর সাইকেল নিয়ে পিটার রওনা দেয় আর রিসব মেঘলা ওদের লুসঙ আশ্রয় দেয় রাতটুকু । প্রথমে রিসব রাজি হচ্ছিল না এখানে থাকতে , ও যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ জায়গাটা ছাড়তে চাইছিল তবে উপায় না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে সে রাজি হলো রাত টুকু থাকতে । জায়গাটা বেশ উপভোগ করছিল মেখলা কিন্ত রিসবের মধ্য একটা চাপা অসস্তি লক্ষ করছিল মেখলা । লুসঙ এর বউ দওসি ওদের থুপকা , মোমো আর চিকেন স্যুপ দিলো গরম গরম খাবার দেখে মেঘলার খিদেটা চাগার দিয়ে উঠলো এতক্ষণ ওরা এসব ভুলে ছিল টেনশনে । রিসব খাবার নেড়ে চেড়ে দেখলো কিন্তু তেমন কিছুই খেলো না । খাবার খেয়ে ওদের জন্য লুসঙ দম্পতি ওদের বেডরুমে মেঘলা রিসবকে থাকতে দিলো আর নিজেরা রান্নাঘরে শুতে গেল । সারা দিনের থকান দুচোখ বুজে এসেছে সবে হটাৎ রিসবের আর্তনাদ শুনে ধড়ফড় করে উঠলো মেঘলা , কিন্তু রিসব কোথায় ? ওকে সাড়া বাড়িতে পেলো না , এর মধ্যে লুসঙ দম্পতি ও উঠে এসেছে । আবার চিৎকারের শব্দ , শব্দটা বাড়ির পিছনে খালের ধার থেকে আসছে , ওরা ছুটলো শব্দটা লক্ষ করে । গিয়ে হতবাক হয়ে ওঠে মেঘলা , রিসবের সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে যার চোখের মণি দুটো সম্পূর্ণ সাদা , সাড়া শরীর রক্তহীন ফ্যাকাসে । রিসব এর সামনে মেয়েটা দাঁড়িয়ে এক কথা বলে যাচ্ছে তোমারই অপেক্ষায় আমি রিসব , আমি এত বছর ধরে এই খাদের ধারে তোমারই অপেক্ষায় । রিসব ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে , আর বলছে আমিনা তুমি ক্ষমা করে দাও আমায় , আমি তোমাকে মা মা মারতে চাইনি বি বি বিশ্বাস করো । লুসঙ দম্পতি কে মেঘলা জিজ্ঞাসা করলো কে এই মেয়েটা কি হচ্ছে এখানে ? ওরা কিছুই বলতে পারল না , ভয়ে ওরা রীতিমতো জড়োসড়ো হয়ে গেছে , লুসঙ শুধু এটুকু বললো তা হলে এর আওয়াজ ই আমরা দীর্ঘ দিন ধরে পাই প্রতি রাতে । মেঘলা এবার মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে গেল , বললো দেখ তুমি যেই হও না কেন রিসবকে ছেড়ে দাও , তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ও এখানকার ছেলে নয় ওকে তুমি কি করে চিনবে ? মেয়েটা হেসে উঠলো যা চারদিক কাঁপিয়ে উঠলো , মেঘলা বুঝলো নিঃসন্দেহে এ কোন অশরীরী প্রেতত্মা । আমিনা বলে মেয়েটা বলে উঠলো রিসব আগরতলা র ছেলে ওর বাবা মা নেই ও এক লিগ্যাল এডভাইসর তাই তো ? মেঘলা তুমি এটুকুই জানো তবে আমি এর থেকেও অনেক বেশি জানি ওর সমন্ধে । ও একটা খুনি ! ও আমাকে বিয়ে করেছিলো নিজের প্রেমের জালে জড়িয়ে , তার পর হানিমুনে এখানে এনে ও আমাকে আজ থেকে এগারো বছর আগে এই খাদে ঠিলে ফেলে দেয় আর আমার বুড়ো আব্বাকে গিয়ে বলে একসিডেন্ট এ আমার মৃত্যু হয়েছে । আব্বা এ বুড়ো বয়সে এক মাত্র সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি , আব্বার ইন্তেকালের পর এই শয়তানটা বসিয়াত অনুসারে আমার সব সম্পত্তি পেয়ে যায় আর তার পর কলকাতা চলে যায় । রিসব এসবের মধ্যে পালাতে চেষ্টা করে , আমিনা নিমেষে ওকে ধরে নেয় । রিসব আমার সহর তোমার জন্য আমি কতদিন অপেক্ষায় আছি চলো আমার দুনিয়ায় ।

এই পর্যন্ত বলে নিমেষে রিসবকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমিনা । মেঘলার চোখের সামনে রিসব শেষ হয়ে যায় , শাস্তি পেয়ে যায় তার কৃতকর্মের । সকালে পিটার গাড়ি নিয়ে ফিরে এলে মেঘলা একাই ফিরে যায় । কলকাতা পৌঁছে মা বাবাকে সে বলে একসিডেন্ট এ রিসব মারা গেছে , পুরোনো দিনের কাসুন্দি ঘেঁটে আর লাভই কি হত ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror