গুঁতো
গুঁতো


গুয়াহাটিতে বেড়ানর সময় সুগত সস্ত্রীক কামাক্ষা দর্শনে গিয়েছে। মায়ের মৃত্যুর কারণে তখন তার অশৌচ চলছে। মন্দিরের ভেতরে ঢোকা চলবে না। তাই স্ত্রী একাই পান্ডার সাথে পুজো দিতে গেল। যুবতী স্ত্রীকে একা অচেনা পান্ডার সাথে পুজো দিতে পাঠাতে মন সায় দিচ্ছিল না। উপায় নেই। এতটা এসে বাইরে থেকে পেন্নাম ঠুকে চলে যাওয়ার বান্দা ওর বৌ নয়। একটু চিন্তা নিয়েই সুগত মন্দিরের বাইরে অপেক্ষা করছে। আশপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে হঠাৎ তার চোখ গেল একটু তফাতে একটা চাতালের দিকে। চওড়া চাতালের ওপর দুলকি চালে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক নধরকান্তি বিশাল সাইজের রামছাগল। পুজো দিয়ে ফেরার সময় অনেকেই ছোট ছোট মালা ওর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে আর ও ঘুরে ঘুরে সেগুলো খাচ্ছে। পুজোর মালা ওভাবে ফেলতে ও অন্য কোথাও দেখেনি। ওখানে হয়ত ওটাই রেওয়াজ। কিছু মালা নিচে পড়েছিল, সুগত সেগুলো কুড়িয়ে ছাগলটার সামনে ধরতে ও গপগপ করে খেয়ে নিল। তারপর একটু আদর করার বাসনায় ছাগলটার মাথায় হাত দিতেই ঘটল চরম বিপত্তি। এক গুঁতোয় ছিটকে গিয়ে পড়ল চাতালের নিচে। ভূপাতিত অবস্থাতেই দ্যাখে ব্যাটা ওর দিকে জুল জুল করে চেয়ে রয়েছে। ভাবখানা—দিয়েছিস তো কটা মালা, তাতে মাথায় হাত দিয়ে অত আদিখ্যেতা করার কি আছে।
বৌএর কাঁধে ভর দিয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে হোটেলে ফিরেছিল। মাল্টিপল ফ্র্যাকচার হতে পারত, বাঁ হাঁটুতে একটু চোট ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। তখন সামলে গেলেও গুঁতোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব প্রৌঢ় বয়সে এসে এখন টের পাচ্ছে। ওই বাঁ হাঁটুর মেরামতির জন্যই অরথোপেডিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।
হাঁটু নেড়েচেড়ে ডাক্তারবাবু বললেন- চোট তো পুরোনো মনে হচ্ছে। কি ভাবে লেগেছিল ?
- আদর করতে গিয়ে।
রসিক ডাক্তার শুধোলেন—বিয়ের আগে না পরে ?
-পরে।
-ঘরে না বাইরে ?
- বাইরে।
- এ তো পরকীয়া। রাজি ছিল না বোধহয়?
- হয়ত।
-তাও এগোলেন?
-নিরীহ চালচলন দেখে এগিয়েছিলাম, মনটা ঠিক পড়তে পারিনি।