আপন পর
আপন পর


--জমিটা বিক্রি করার আগে আর একবার ভেবে দেখিস রমা। ওই জমিটুকু আর এই বাড়িটাই তোর সম্বল।
-- কেন বড়দি, পেনশন আছে তো। ফ্যামিলি পেনশন যা পাই তাতে মা মেয়ের সংসার দিব্যি চলে যায়।
-- ভগবান না করুক একটা বড় কোন ব্যামো হলে কি করে সামলাবি?
-- সে যখন হবে তখন ওসব নিয়ে ভাবা যাবে। সরকারী হাসপাতাল তো আছে। মেয়েটা এত ভাল রেজাল্ট করে ডাক্তারিতে সুযোগ পেল আর ওর বাবা নেই বলে টাকার জন্যে পড়া আটকে যাবে তা কখনো হয়!
-- মেয়েটার জন্যে নিজেকে নিঃশেষ করে ফেলছিস, ভবিষ্যতে এর প্রতিদান পাবি তো? নিজের রক্ত হলেও বা কথা ছিল।
-- ওভাবে বোল না বড়দি বড় কষ্ট হয়। ও আমার সন্তান, এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় সত্যি।
কথাটা শেষ হতে রমা দেখে বারান্দার একপাশে খুশি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
-- কখন এসেছিস মা?
-- এই কিছুক্ষণ।
--ভেতরে না এসে ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছিস যে?
-- তোমরা দরকারি কথা বলছিলে তাই।
তার মানে মেয়ে সব শুনেছে, সব জেনে গেছে। রমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এরপর আর মা বলে যদি স্বীকার না করে। রমার আর দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা নেই। সোফার একটা পাশে মাথা নিচু করে বসে পড়ে।
খুশি পাশে বসে মাকে জড়িয়ে ধরল।
-- মা মনখারাপ কোরো না। আমি সব জানি। আজ নয়, অনেকদিন আগে থেকেই। স্কুলে একদিন আমার এক সহপাঠী,হয়ত বড় মাসির মত বাস্তবটাকে চেনাতে,আমায় সবকিছু বলেছিল। তুমি আর বাবা যেবার আমার শরীরটা একটু খারাপ ছিল বলে স্কুলের একটা ট্যুরে যেতে দিলে না,ও বলেছিল আমি নাকি তোমাদের নিজের মেয়ে নয় বলে এমনটা করেছ। মিথ্যে বলব না মা, শুনে প্রথমদিকে একটু মুষড়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সেটা সাময়িক। ভাগ্যিস যেতে দাওনি, পরের দিনই আবার আমার ধুম জ্বর এল। রাতভোর তুমি আমার সেবা করেছ, যখন যন্ত্রণায় কাতরেছি আমার মাথা তোমার কোলে তুলে নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় ঠাকুরের নাম জপ করে দিয়েছ। আর বাবা সারা রাত জেগে জ্বর দেখেছে আর আমার মাথায় জলপটি দিয়েছে। আমার মনে আছে মা জ্বর কমতে তোমাদের চিন্তামগ্ন মুখ দুটো কেমন উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। মা বাবা নিয়ে আমার মনে আর কখনো কোন সংশয় বা প্রশ্ন জাগেনি। রক্তের সম্পর্ক ঠিক কতটা জোরালো হয় তা আমার জানা নেই তবে এটুকু জেনেছি যে তোমাদের কাছে পাওয়া স্নেহ ভালবাসা সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে।
--মাসি,ফুলদা বিয়ের পরে সেই যে বিদেশে গেল আর তো একবারও তোমার কাছে এল না। ও তো তোমার নিজের রক্ত গো, তাও এমনটা কেন হল বলতে পার?