Rima Goswami

Abstract Inspirational Others

4  

Rima Goswami

Abstract Inspirational Others

গুলাবি গ্যাং

গুলাবি গ্যাং

4 mins
477


বেগুসরাই’ নামটি এসেছে ‘বেগমসরাই’ অর্থাৎ রানির সরাইখানা কথাটি থেকে। ‘বেগমসরাই’ পরবর্তীকালে ‘বেগুসরাই’ নামে পরিচিতি লাভ করে। বিহারের যে ৩৬টি জেলা অনগ্রসর অঞ্চল অনুদান তহবিল কর্মসূচির অধীনে অনুদান পেয়ে থাকে, এই জেলা তার মধ্যে অন্যতম। বেগুসরাই জেলার লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৯৫ জন মহিলা এবং সাক্ষরতার হার ৬৩.৮৭%। তার পরেও এই সব এলাকায় নারীদের প্রতি অত্যাচার চলে নির্বিচারে ।


আমি টুম্পা দুবে একজন গৃহবধূ । আমার স্বামীর নাম স্বপন দুবে । আমরা গুজরাটের গান্ধীনগরের বাসিন্দা । স্বপনের বদলি হওয়াতে আমরা বেগুসরাই আসি কিছুদিন আগে । এখানে এসে দেখি এখানকার মেয়েদের জন্য সুরক্ষা তেমন নেই । হতাশ হলাম দেখে যে এখানে নির্বিচারে নারীদের প্রতি অত্যাচার করা হয় । শাসনের নাগপাশে তাদের বেঁধে রাখা হয় । ব্যাপারটা খারাপ লাগে , ভাবি হাতে তেমন কিছুই কাজ থাকে না যখন সংসারে তখন এদের জন্য তো কিছু করতে পারি ? যেমন ভাবা তেমন কাজ । আমার একটা নার্সিং ট্রেনিং করা ছিলো আগে । লোকাল স্বাস্থ্য দপ্তরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছা জানালাম । ওদের এখানে এই ধরণের স্বাস্থ্য কর্মীর প্রয়োজনের থেকে মেয়ে কম তাই খুব বেশি পরিশ্রম করতে হলো না কাজটা পেয়ে গেলাম ।


স্বাস্থ্য কর্মীদের একটা দল যাদের কাজ হলো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ওষুধ , শিশুদের টিকাকরণ , গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খোঁজ খবর রাখা । আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীদের পোশাক গোলাপি রঙের শাড়ি তাই আমরা গুলাবি গ্যাং অফ বেগুসরাই নামে প্রসিদ্ধ হলাম । আমরা তিন জন করে মেয়ের দল একালা ভাগ করে ভিজিট করি । প্রতি বাড়িতে টয়লেট থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই হোক বা বাড়ির মহিলাদের মাসিকের সময় পরিছন্ন থাকার উপদেশ দি আবার সরকার থেকে দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে তাদের এটি ব্যবহারের উপকার সমন্ধে বোঝাই । দুটির বেশি সন্তান জন্ম তারা যেন না দেয় এই নিয়ে ক্যাম্পেনিং করি ও তাদের গর্ভনিরোধক বড়ি , কপারটি এ সকল মাধ্যমের ব্যবহার করতে অনুরোধ করি । ক্যালসিয়াম , আয়রন ট্যাবলেট বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের দেওয়া হয় প্রতি সপ্তাহে । এসব নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম শীঘ্রই । তার মধ্যে একটা নতুন ক্যাম্পেনিং আমরা নিজে থেকেই চালু করলাম , পুরুষদের প্রতি রবিবার রবিবার একটা সভার আয়োজন করে জড়ো হতে বলি । এই সভায় আমরা তাদের কাছে বার্তা পৌঁছাই যে নারী নির্যাতন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ । প্রত্যেক পুরুষের কর্তব্য তার স্ত্রীকে যত্ন নেওয়া , তার সন্মান করা । তারা যেন কখনোই নিজের বাড়ির মহিলাদের উপরে নিগ্রহ না করে ।অনেকে বোঝে , নিজেদের আচরণে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে ।


অনেকে আমাদের উপরে ক্ষোভ উগরে দেয় । তবে আমরা নিরন্তন চেষ্টায় থাকি সামাজিক পরিবর্তন আনার । এভাবে বেশ কিছুদিন পার করে আমরা ক্রমে গুলাবি গ্যাং অফ বেগুসরাই চারদিকে নাম করে ফেললাম । সেবার দুখিয়া সর্দার বলে এক চাষী এসে আমাদের কাছে কেঁদে পড়লো । তার একমাত্র মেয়ে সাহিয়া গর্ভবতী আর শশুর বাড়ীর লোকেদের দাবি পুত্র সন্তান না হলে তারা সাহিয়াকে সন্তান সহ বিতাড়িত করবে । এবার সাহিয়ার ডেলিভারির সময় প্রায় হয়ে এসেছে । তাই দুখিয়া কাকা অনেক ভরসা নিয়ে আমাদের কাছে খুব আশা নিয়ে এসেছে যাতে তার মেয়ে ও সন্তান সুরক্ষিত থাকে । আমরা ওনাকে আশ্বস্ত করলাম । তারপর সাহিয়ার শশুর বাড়ীতে গেলাম কয়েকজন মিলে । আর আশ্চর্য হলাম দেখে যে চনচনে রোদ মাথায় নিয়ে সাহিয়া তখন উঠোনে পাতা একটা খাটিয়াতে পড়ে আছে । ওর কাছে গিয়ে বুঝলাম মেয়েটার ব্যাথা আরম্ভ হয়ে গেছে । আমাদের একটি মেয়ে ছুটে ভিতরের লোকজনদের ডাকতে গেল । সাহিয়ার শাশুড়ি এসে আমাদের মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন যে পোয়াতি মেয়ের তো এ ব্যাথা হবেই , সাহিয়ার ও হচ্ছে । আর বাচ্চা প্রসব হলেই তো সুস্থ হয়ে যাবে সাহিয়া । যদি পুত্র সন্তান জন্ম দেয় তো ভালো না হলে সাহিয়া এই উঠোন থেকেই বিদায় নেবে তার বাপের ঘর । আমরা বুঝলাম এখন কথা বাড়িয়ে লাভ নেই । সাহিয়াকে এখন হসপিটালে নিয়ে যেতেই হবে । তাই আমাদের গুলাবি গ্যাং একটা গাড়ি ম্যানেজ করে সাহিয়াকে হসপিটালে ভর্তি করলাম ।


সাহিয়া একটা মেয়ের জন্ম দিলো আর তারপর ভয়ে ভীত হয়ে শুকনো মুখ করে বসে রইলো । চারদিন ধরে কেউ এলো না ওকে দেখতে একমাত্র ওর বাবা দুখিয়া কাকা ছাড়া । ছুটি পেয়ে হসপিটাল থেকে দুখিয়া কাকা মেয়েকে নিজের বাড়ি নিয়ে যাবার তোড়জোড় শুরু করে দিলো । আমরা বাধা দিলাম ওনাকে । সাহিয়া আর তার শিশুকে নিয়ে আমরা পৌঁছে দিতে গেলাম ওর শশুর বাড়ী । সেখানে পৌঁছে দেখলাম সাহিয়ার শাশুড়ি আর শশুর কিছুতেই মা আর শিশুকে ঘর ঢুকতে দিতে রাজি নয় । অনেক বোঝালাম ওদের যে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ মায়ের জন্য হয়না এটা পিতার উপর নির্ভর করে । তবে মহিলা শুনতে চাইলো না । সাহিয়ার স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকে । এখন আমরা বুঝলাম নিজমুর্তি ধারণ না করলে কপালে দুঃখ আছে মেয়েটার । তাই কোমর বেঁধে আমরা এগিয়ে গেলাম সাহিয়ার শাশুড়ির দিকে । তাকে স্পষ্ট করে হুমকি দিলাম যে কোন বউকে তার শশুর বাড়ী থেকে এই যুক্তিতে তাড়ানো যায় না যে সে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে । যদি মানে মানে এখন সাহিয়া ও তার সন্তানকে স্বীকার না করা হয় তো সমাজসেবিকারা সমবেত হয়ে কেস করবে বধূ নির্যাতনের । রণমূর্তি ধারণ করার ফলে কাজ হলো । সাহিয়া ও তার কন্যা সন্তানকে ওরা ঘরে তুললো । দুখিয়া কাকা শেষে আমাদের অনেক ধন্যবাদ জানালো । এভাবেই আমরা সমাজের সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে লাগলাম ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract