গেষ্ট হাউস:-
গেষ্ট হাউস:-
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে মন খারাপ হয়ে গেলো শায়নের। লক ডাউনের কারণে সে আটকা পড়েছে হায়দ্রাবাদে। ট্রেন, বাস, উড়োজাহাজ কিছু চলছে না। লক ডাউন ঘোষণা হবার আগেই হায়দ্রাবাদ গিয়েছিল সে অফিসের কাজে। লক ডাউনের আগে সে বাড়ি ফিরে যেতেই পারতো কিন্তু সম্ভব হলো না কারণ শেষ মুহূর্তে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সে আটকা পরে গেলো। ওইদিকে তার বাড়িতে সকলেই অস্থির, ছেলেটা একা বিদেশ বিভূঁইয়ে পড়ে আছে। শায়ন অনেক চেষ্টা করেও ফিরতে পারেনি তখন। আর এরকম অবস্থা হয়ে যাবে সেটা বুঝতেও পারেনি। অফিসের গেস্ট হাউষ্টাই এখন তার বাড়ি হয়ে গেছে একরকম। যদিও শুধু শায়ন নয় একটা পাঞ্জাবি ছেলেও হায়দ্রাবাদ অফিসে এসেছিল কাজের সূত্রে আর শেষ মুহূর্তে ওই ছেলেটাও আটকা পড়েছে। তাই এই দুইজনের ঠিকানা এখন হাদ্রবাদের এই গেষ্টহাউস টি। ঘুম থেকে উঠে মন খারাপ করে গেষ্টহাউসের বারান্দায় চেয়ারটা টেনে বসে আছে শায়ন। ওই পাঞ্জাবি ছেলেটিও তখন ওখানেই ছিল, বুঝতেই পারলো শায়নের মনের অবস্থা। কিছুক্ষন পর শায়নের কাছে এসে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলো শায়নের মন খারাপ কিনা। শায়ন একটু হেসে মন হালকা করতে চাইলেও পরলো কই? যে কেউ অনায়াসে বুঝতে পারবে যে শায়নের মনে তোলপাড় চলছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। পাঞ্জাবী ছেলেটিও আরেকটা চেয়ার টেনে একটু দূরে বসে কথা বলতে লাগলো। শায়ন বুঝতে পারলো ওই ছেলেটির অবস্থাও তার মতই। সে ও বাড়ি যেতে পারে নি। আটকা পড়েছে। সেও তার মতই লকডাউন পরিস্থিতির শিকার। ধীরে ধীরে জমে উঠলো দুটো দুই প্রান্তের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব। শায়ন উপলব্ধি করতে পারে যে তার মতন ওই যুবকটিও বাড়ি ফেরার জন্য আকুল হয়ে আছে। দুজন যখন গেষ্টহাউসের বারান্দায় বসে গল্প করছে তখন শায়ন উপলব্ধি করতে পারে যে বাড়ির প্রতি একটা টান বাড়ির থেকে দূরে থাকলেই তৈরি হয়। এই লকডাউনে বাড়ি যেতে না পেরে অচেনা অজানা শহরে এখন এই দুটি ছেলে একে ওপরের সবচেয়ে কাছের মানুষ। শায়ন অবাক হয় এই ভেবে যে এই লকডাউন কত সূক্ষ্ম আর নিবিড় একটি বন্ধুত্বের বন্ধনে বেঁধে দিয়েছে অপরিচিত দুটি যুবক কে। লকডাউনের কারণেই তো শায়ন স্বাদ পেয়েছে এক নিবিড় বন্ধুত্বের।
______*_______