একদিন
একদিন


“ দাদা আমার এই ব্যাগটা একটু রাখবেন?”
অনুরোধটা শুনে ভুরু কুঁচকে তাকালও কেষ্ট। সবে দোকানটা খুলছে ও। ষ্টেশনের পাশে একটা ছোট পান সিগারেটের দোকান কেষ্টর। কোথায় খদ্দের আসবে তা না কোথা থেকে এই উটকো ঝামেলা। একটা নিরীহ গোছের মাঝবয়সী লোক।
এই সকাল ছটার সময় ফুরফুরে হাওয়াতেও ঘামছে।
“ আপনার কি শরীর খারাপ?”
“ না মানে...... আমি একটু বড় বাইরেতে...... মানে বুঝলেন না অনেক ভোরে বেরিয়েছি তো…।“
“ যত্তোসব ……। ঐ কোনটায় রাখুন।“ বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল কেষ্ট।
লোকটা ব্যাগটা রেখে ছুটে রাস্তার ওপারের পাবলিক টয়লেটের দিকে চলেগেল। কেষ্ট নিজের দোকান খোলার দিকে মন দিল। আজ সকাল থেকেই মেজাজটা খিচড়ে আছে। ছোট মেয়েটার জ্বর। আজকালকার ডাক্তাররা একটার পর একটা টেস্ট বলে। যা বলছে সব করাচ্ছে ও কিন্তু দিনকে দিন শুকিয়ে যাচ্ছে যেন মেয়েটা। এদিকে দোকানের তিন মাসের আর বাড়ীর ছ মাসের ভাড়া দেওয়া বাকি।
কাল রাতে পয়সাকড়ি নিয়ে বউটার সাথে হেবি ঝগড়া হয়ে গেল। রেগে গেলে ওর আবার হাত চলে। মার খেয়ে বউটা শুধু কাঁদে। কথাটা মনে করে মেজাজটা আরও খিচিয়ে উঠলো। চেষ্টা তো ও করছে... কিন্তু টাকা রোজগার করা কি এতই সহজ?
একটা চেঁচামিচির আওয়াজে কেষ্টর চিন্তায় ছেদ পড়ল। রাস্তার ওপর অনেক লোক জমা হয়েছে। কে একটা লোক নাকি রাস্তা পার করছিল, একটা ট্রাক এসে মেরে চলে গেছে। স্পট ডেড।
আশপাশের লোকেরা খবর দেওয়াতে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স এসে বডি তুলে নিয়ে গেল। যে সব লোকেরা দেখতে এসেছিল তারা সব কেষ্টর দোকানে এসে জমা হল। নানা লোক, নানা গল্প বলল। মাঝের থেকে কেষ্টর বিক্রিটা আজ ভালোই হল।
রাতে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করতে গিয়ে কেষ্টর নজর ঐ ব্যাগটার দিকে পড়লো। সত্যি তো লোকটা ব্যাগটা নিয়ে যায়নি তো! ইস! সকালে লোকটার নামটাও জানা হয়নি। নানা কথা ভেবে ও ব্যাগটা নিয়ে বাড়ী রওনা দিল। বাড়ী গিয়ে ব্যাগটা খুলে দেখবে যদি লোকটার ঠিকানা পাওয়া যায়। তাহলে ব্যাগটা ওর বাড়ী পৌঁছে দেবে।
বাড়ী এসে জানতে পারলো মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে বাড়ীর সবাই। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটল ও।
ডাক্তার বলল ,” ঠিক সময়ে এনেছেন। নাহলে হয়তো বাচান যেত না।“
শুনে বেশ হাল্কা লাগলো কেষ্টর। একটা সিগারেট খেতে হাসপাতালের পিছন দিকে গিয়েছিল কেষ্ট। দেখলো একটা বডি বাইরে পড়ে আছে। লাশের মুখের থেকে চাদরটা সরে গিয়েছিল। কেষ্টর চোখটা চলে গেলো, মুখটা চেনে চেনা লাগছে। সকালের সেই লোকটা না? হাসপাতালের একজন ওয়ার্ডবয়কে জিজ্ঞাসা করাতে জানতে পারলো , ওটা বেওয়ারিশ লাশ।
তাড়াতাড়ি বাড়ী এসে ব্যাগটা খুলতেই কেষ্টর চক্ষুস্থির, তাতে রয়েছে রাশি রাশি দু হাজার টাকার নোট।