Pronab Das

Fantasy

1  

Pronab Das

Fantasy

চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা ।

চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা ।

2 mins
2.1K


আজকের হাইটেক যুগে চিঠি লেখালেখি প্রায় উঠে গেছে। মোবাইল ইন্টারনেটের কাছে চিঠি লেখা আজ পরাজয় স্বীকার করেছে। আগে অফিসিয়াল চিঠির সাথে সাথে পারিবারিক চিঠির ব্যাপক রমরমা ছিল। অফিসিয়াল চিঠি লেখা বাদে এখন সেসব আজ অতীত। পিওন হিসেবে ষাট বছরের চাকরীর অবসর নিয়েছি গতকাল। সুদীর্ঘ চাকরী জীবনে চিঠি বিলি করার সুবাদে নানা রকম অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়েছে। পড়ন্ত অলস বিকেলে সেসব মনে দাগকাটা অভিজ্ঞতা রোমন্হনে বসলাম।


ঘটনাটি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের। আমি তখন হিঙ্গলগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরে সদ্য জয়েন করেছি। প্রতিদিনই বেশ কিছু চিঠি বিলি করতে হত। নুতন জয়েন, তাই এলাকাটি চিনতে একটু সময় লাগছিল। রতনদা এই ডাকঘরের পুরোন পিয়ন। মাস দুয়েক পর তিনি অবসর নেবেন। তাই সকালে চিঠি বাছাই করে রোজই দুপুরের দিকে চিঠি বিলি করার সাথে সাথে কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য বেরতাম। বলা বাহুল্য মাস তিনেকের মধ্যেই আমি কাজটা দক্ষতার সাথে ধরে ফেললাম। 


প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময়ে চিঠি বাছাই করে দুপরের পর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। এই চিঠি বাছাই করা কাজটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক ঠিক পর পর গুছিয়ে রাখলেই বিলি করার কাজটা সহজ হত। সেদিন চিঠি বাছতে গিয়ে একটা অদ্ভুত পোস্ট কার্ড হাতে পরল। অপরিণত হাতে খুকুমণি নামের নামের কোন বাচ্চা মেয়ে তার বাবার জন্য ভগবানের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছে।


চিঠিটা অনেকটা এই রকম,.....


প্রিয় ভগবান,


      মা বলে বাবা এখন নাকি আকাশে তোমারে কাছে আছে। কালু আর রানা কাল আমায় বলেছিল বাবা সেখান থেকে আর কোনদিন ফিরবে না। তুমি বাবাকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দাও। বাবার জন্য মন কেমন করে। পড়াশুনা করতে ভালো লাগে না। মায়ের শরীর খারাপ। 


                        

                       ইতি

                      খুকুমণি ।


পোস্টকার্ডে খুকুমনির নিজের ঠিকানা দিলেওও ঈশ্বরের কাছে পাঠানো ঠিকানার স্থানে শুধু 'ভগবানের কাছে' লেখা আছে।


চিঠি পড়ে মনটা তৎক্ষণাৎ ভারী হয়ে গেল। সেদিনই খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে বিদ্যাধর মন্ডলের মেয়ে খুকুমনির মন্ডল এই চিঠি লিখেছে। সে গ্রামের বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। ওর মায়ের কাছে জানতে পারলাম বাবার শোকে সে এক প্রকার নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। স্কুলেও যেতে চায় না। এক প্রকার জোর করে আজ তাকে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যাধর মন্ডল মাস দেড়েক আগে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের হানায় নিহত হয়েছে। স্বামী তো গত হয়েছে , মেয়েকেও সামলানো প্রায় মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সব শুনে আমি তার মাকে খুকুমনির লেখা পোস্টকার্ডটি দেখলাম। উনি খুব ভেঙে পড়েছেন দেখে আমি একটা উপায় তার সামনে রাখলাম। খুকুমণি যাহাতে পড়াশোনা করে, ভাল থাকে সেই উদ্দেশ্য আমি ভগবানের তরফ থেকে খুকুমণি কে চিঠি লিখব বলে জানালাম।


মেয়েটির মায়ের অনুমতি পেয়ে পরদিন একটা চিঠি লিখলাম। এবং তার সাথে ওর কিছু পছন্দের জিনিস দিয়ে দিলাম। চিঠির বয়ান টি ছিল এরকম,.......


স্নেহের খুকুমণি,


     তোমার চিঠি পেয়েছি। তোমার বাবা বিদ্যাধর মন্ডল আমার কাছেই আছে। একটা বিশেষ কাজে এখানে এসেছে। সে তোমার এই চিঠি পড়েছে ও ওপর থেকে দেখছে। তুমি ঠিকমত পড়াশোনা করলে ও মায়ের কথা শুনলে তোমার বাবা খুশি হবেন।

     

                       ইতি

                তোমার প্রিয় ভগবান ।

    

  ভগবানের কাছ থেকে ওর চিঠির উত্তর পাওয়ার পর খুকুমণির মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে।


xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy