তিন্নি মাসি।
তিন্নি মাসি।


আবছা আবছা মনে পড়ে তাকে। অনেকটা ছেড়া ছেড়া স্মৃতি। ময়েরে আলমারি থেকে পুরোনো দিনের ফটো আলবামটি ঘাটতে ঘাটতে অনেকটা মায়ের মতোই দেখতে যার দিকে বারংবার আমার চোখ পড়তো, তিনি হলেন আমার মাসি, তিন্নি মাসি।
মাকে যখনই তিন্নি মাসির কথা জিজ্ঞেস করি, মা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। বলে তিন্নি মাসি অনেক দূরে থাকে। বিশেষ কিছু বলত না।
সেই কবেকার কথা কত আর বয়স হবে আমার তিন কি চার, ঠিক মনে করে বলতে পারব না। মায়ের কোলে মামার বাড়ী ঢুকতেই সেই তিন্নি মাসি আমায় একপ্রকার জোর করে মায়ের কোল থেকে নিয়ে নিত। যেতে চাইতাম না। আসলে মাযের কোল ছাড়া আর কারো কাছেই যেতে চাইতাম না যে। তিন্নি মাসি আমায় দুহাতে জাপটে ধরে কত আদর করত। সারাদিন কোলে নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটত। ছোট থেকেই মাসির একটা সমস্যা ছিল, শরীরের বা দিকে প্যারালাইসিস এর কারণে অসাড় থাকতো। হাত, পা নাড়তে কিঞ্চিৎ সমস্যা হত। কথা বলতেও একটু সমস্যা হোত। কিন্তু সেসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমায় নিয়ে সে সবসময় থাকতে চাইত। ছোট্ট শিশু মন কিন্তু তিন্নি মাসির সেই স্নেহমাখা ভালবাসায় সহজেই মজে থাকতো।
এরপর সময়ের গতিপথে তিন্নি মাসি যেন কোথায় হারিয়ে গেল। টুকরো টুকরো কয়েকটা শৈশবের স্মৃতি আর ধূসর সাদাকালো কয়েকটা পুরোনো ফটোগ্রাফ ছাড়া তিন্নি মাসির কিছুই ছিলনা আমার কাছে।
আমি তখনও স্কুলের গন্ডী পারিনি। স্কুল থেকে ফিরে মা , বাবার কথায় তিন্নি মাসিকে পেলাম। বুঝলাম তিন্নি মাসি কলকাতার কোন একটা সরকারী হোমে আছে। মা আজ সকালে মাসির সাথে দেখা করে এসেছে। শুনে বুকের ভেতর টা কেমন যেন হু হু করে উঠল। আমাকে নিয়ে গেলনা। মা কে দেখে নাকি বারে বারে আমার কথা জিজ্ঞেস করছিল। খুব কান্না কাটি করছিল।
খুব রাগ হচ্ছিল তাদের ওপর যারা তিন্নি মাসিকে রেখে এসেছিল ওই হোমে। সেদিনই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি বড় হয়ে মাসিকে একদিন ফিরিয়ে আনব নিজের কাছে।