Pronab Das

Inspirational

2  

Pronab Das

Inspirational

রিসোলিউশান ।

রিসোলিউশান ।

2 mins
753


দীর্ঘদিন নেশা করতে করতে করতে আমার একসময় মনে হত নেশা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। সেই স্কুল ফাইনাল পাস করার পর বন্ধুর হাত থেকে সিগারেটে প্রথম টান। আর সেই শুরু। উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার পর স্কুল থেকে তাতনের সাথে ফিরছি। দুজন দুটো সাইকেলে। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনার পর একটা বাঁকের মুখে তাতান হটাৎ থামল। সাইকেল থেকে নেমে প্যান্টের পকেটে থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করল। সে দৃশ্য দেখে আমি তো অবাক। ওর হাতে ওই সিগারেটের প্যাকেট দেখে একটা অনাবিল উত্তেজনা অনুভব করলাম শরীর জুড়ে। যে নিষিদ্ধ জিনিস শুধু দূর থেকে দেখে এসেছি তা আজ এত কাছে, তাতানের হাতে!! ও আমায় আরও অবাক করে, স্টাইল করে দু আঙুলে সিগারেটটা ধরে ফস করে আগুন ধরাল। লম্বা লম্বা দুটো টান দিয়ে ও আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।


--- নে ধর।


বীর বিক্রমে জ্বলন্ত সিগারেটটি  হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলাম।


--- কিরে টান। পুড়ে যাচ্ছে তো। নষ্ট করিস না।


কিছু না ভেবেই সিগারেটটা ঠোঁটে ছোয়ালাম। সে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। একটা আলতো করে টান দিতেই এমন কাশি আরম্ভ হল যেন এক্ষনি প্রাণ বায়ু বেরিয়ে আসবে। খুব বিরক্ত হয়ে ওকে দিয়ে দিলাম। তাতান আমার অবস্থা দেখে হেসে লুটোপুটি ।


--- আরে বোকা সিগারেট কেউ ওভাবে টানে?


দুবার টেনে দেখাল, কিভাবে সিগারেটে টান দিতে হয়। দু তিনটি প্রয়াসের পর সফল হলাম। সাদা ধোঁয়ার মায়া জালে একটু একটু করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যেতে থাকলাম। প্রায় প্রত্যেক দিনই একটা দুটো করে খাওয়া হতো। বাড়ির লোকের কাছে খবর ও যেতে থাকে একটু আধটু করে।


নেশা ছাড়া যে বেঁচে থাকা যায় সে বিশ্বাস চলে গিয়েছিল অনেকদিন। কারণ অনেক বার চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি ধোঁয়ার মাযা জালটাকে। ইতিমধ্যে বাবা গত হলেন। মৃতদেহ সৎকার করার পর ঠিক করলাম আর ধূমপান করব না। বেশ ক দিন ঠিক ছিলাম। হঠাৎই এক পারিবারিক অশান্তিকে কেন্দ্র করে, মানসিক চাপে আবারও সে দু আঙুলের ফাঁকে ফিরে এল স্বমহিমায়।


বছর গড়িয়ে যায় অনেকগুলি। পর বিয়ে করলাম। পকেটে তখন সিগারেটের প্যাকেট স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। বছর খানেক বাদে স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা। সিগারেট খাওয়া নিয়ে

মাঝে মধ্যেই কয়েক প্রস্ত ঝগড়া ঝাটি চলছে স্ত্রীর সাথে। মাস কয়েক পর স্ত্রী সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হল। খুব চিন্তায় আমি। ঘন ঘন ধূমপান চলছে সুযোগ পেলেই। 

অতঃপর সেই শুভক্ষণে নার্স এসে পুত্রসন্তান ভুমিষ্টের খবর দিল। পরম আনন্দে সেই দিনই সিদ্ধান্ত নিলাম ধূমপান ত্যাগের। 


আজ প্রায় ছ বছর হতে চলল সব রকম নেশা থেকে বিরত। আমার মতে ধূমপান ছাড়তে একটা বলিষ্ঠ কারণই যথেষ্ঠ। আমি খুবই খুশি, খুবই সুখী আমি এখন নেশাহীন ব্যক্তি।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational