কঠিন সময় ।
কঠিন সময় ।
সময়টা আট বছর আগের। পুজোর সময় , দিনটা ছিল সপ্তমী। তখন সকাল সাড়ে ছ টা হবে। ছুটির দিন। আয়েশ করে ঘুমোচ্ছি। হঠাৎই একটা ফোন আসে। পাশের বাড়ির কাকিমা আমায় ফোন করে জানায় যে মায়ের গুরুতর একটা অক্সিডেন্ট হয়েছে। সম্ভবত পায়ের হাড় ভেঙেছে। তৎক্ষনাৎ আমি যেন হাসপাতালে পৌঁছে যাই।
মোবাইল ফোনে ওই দুঃসংবাদ পেয়ে প্রচন্ড ঘাবড়ে যাই। প্রায় কাঁপতে কাঁপতে হাসপাতালে পৌছাই। হাসপাতালে আপদকালীন বেডে মা শুয়ে। সকালে দুর্গা মন্দিরে ফুল দিয়ে রিক্সায় ফেরার সময় একটা মোটর গাড়ি ধাক্কা মারে। বা পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে বিচ্ছিরি ভাবে ভেঙেছে। ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। তিনি পরীক্ষা করে জানালেন অবস্থা ভালো নয়। হাটু থেকে ফিমারের জয়েন্ট গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। ঐ অংশ থেকে পা কেটে বাদ দিতে হবে। শুনে তো আমার মাথা ঘুরছে।
কোন মতেই আমি মায়ের পা বাদ দিতে চাইছি না। একটা এম্বুলেন্স ভাড়া করে মাকে কলকাতার অন্যান্য বড় হসপিটালে উপযুক্ত চ
িকিৎসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে যেতে যেতে অন্য কোনো হসপিটাল বা নার্সিংহোম চোখে পড়লেই মাকে দেখিয়ে নিচ্ছিলাম। তারাও মায়ের এক্সরে প্লেট ও প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে ওই একই কথা জানালেন।
কলকাতায় কয়েকটা বড় হাসপাতালে দেখানোর পর নিতান্তই আশাহত হয়ে একটা বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখলাম। সেখানে একদল জুনিয়র ডাক্তার ও ওই বিভাগের প্রধান খুঁটিয়ে মায়ের পা পরীক্ষা করলেন। আমি অনেক অনুনয় বিনয় করে বললাম যাতে মায়ের পা যেন বাদ না যায়।
ডাক্তারবাবুরা সব দেখে শুনে বললেন,..
--- ওনার পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। জোড়া দেওয়ার মতো কোন পজিশন নেই। তবে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।
আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম। অনেক কিছু পরীক্ষা করলেন। কয়েকদিন পর অপেরাশন হল, সাফল্যের সাথে।
বছর খানেকের পর মা আবার নিজের পায়ে দাড়াতে পেরেছে। বর্তমানে কোন অবলম্বন ছাড়া খুব স্বাভাবিক ভাবেই হেটে বেড়াচ্ছে।