দেশাত্মবোধ।
দেশাত্মবোধ।


কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতা মুখো লালগোলা ট্রেনটা ছাড়ল ঠিক বিকেল পাঁচটা ত্রিশ মিনিটে। এপ্রিল মাস অসম্ভব একটা ভীড় ট্রেনে উঠতেই এক প্রকার গলদঘর্ম অবস্থা। বসার জায়গা পাওয়া তো দূরের কথা একটু ভদ্রস্থ ভাবে দাঁড়ানোর জন্য মুখোমুখী দুই সিটের রোয়ের মাঝে কোনোমতে ঘেমে নেয়ে এসে দাঁড়ালাম। ট্রেন চলছে তার স্বাভাবিক গতিতে। মাথার ওপরে পাখা দুটো ঘুরছে ঠিকই, অথচ তার থেকে ছিটে ফোঁটাও হাওয়াও গায়ে লাগছে না।
প্রায় আধা ঘন্টা এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে। আমার ঠিক সামনে এক জন বৃদ্ধ মহিলা বসে, পালপাড়া নামক ষ্টেশন আসতেই ওই বৃদ্ধ মহিলা উঠে দাঁড়ালেন, হয়তো নেমে যাবেন। আমি তাকে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে ওখানেই বসতে যাব, দেখি পাশে বসা আর এক ভদ্রমহিলা আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্বামীকে ওই জায়গাতে ডেকে বসালেন। তা দেখে আমি যথেষ্ট অবাক ও হতাশ হলাম।
--- আরে এটা কি হোলো? আমার সামনের জায়গা খালি হয়েছে, এখানে তো আমার বসার কথা।
উনি তো কোন কথাই আমার শুনলেন না। অবান্তর আমার সাথে অযৌক্তিক তর্ক করলেন। শেষমেশ পাশের একজন ভদ্রলোক আমার সপক্ষে বলতেই ওই বসার জায়গাটি আমার জন্যে ছেড়ে দিলেন। আমি ওখানে বসতেই তিনি হঠাৎই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন..
--- ব্লাডি ইন্ডিয়ান কোথাকার।
শুনেই ঝট করে মাথাটা গরম হয়ে গেল। এই ধরণের উক্তি তো বিভিন্ন সিনেমাতে বা নাটকে শুনেছি বা পড়েছি। বিশেষত বিদেশী বা ইংরেজদের মুখে। কেন এধরনের কথা আমাকে বললেন প্রশ্ন করতে তার অসংলগ্ন কথায় বুঝলাম তারা ভারতীয় নয় বাংলাদেশী। চিকিৎসার প্রয়োজনে এ দেশে এসেছে আমার আশেপাশের সবাই সমস্বরে তার ওই কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলেন। যদিও তারা ভিনদেশী বুঝে উঠে আবার তাকে বসতে দেই। তাদের দেশের স্বাধীনতায় আমাদের দেশের অবদানের কথা তাদের স্মরণ করিয়ে দেই।
আমি তো বটেই , আমার আশেপাশে উপস্থিত সকলের মধ্যে খাঁটি দেশাত্মবোধের যে কন্ঠস্বর শুনেছিলাম তা মনে করলে আজ ও আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়।
*****