ছোটবেলা
ছোটবেলা


গ্রামে বেড়ে ওঠা, ঝোপ ঝাড় পুকুরে ছুটোছুটি সারাবেলা। নিজের দূরন্তপনা,আর মায়ের হাতের রান্না আজও দেয় হৃদয়ে দোলা। পূজোর আগে আশ্বিন মাসে পুকুরে লুকিয়ে ধরা চারাপোনা। আটা মেখে টোপ করা,ছিপ নিয়ে পুকুরে পুকুরে মাছ ধরা। তাড়া খেয়ে চলে আসা, আবার গিয়ে ছিপ ফেলা। যদি বা পেলাম দুটো-একটা মাছ, মায়ের বকুনিতে পুকুরের রাখাকে তা ফেরত দিয়ে আসা। কিন্তু, পরের দিন মন শোনেনা কোন মানা। মাছ ধরার জন্য খেলবো যে লুকোচুরি খেলা। যদিও জানো তুমি সে মাছ আসবে না ঘরে, পাবে না খেতে, তবুও যেতে হবে ধরতে। অবশ্য, তোমায় হবে খেতে মশার কামড়টা। কতো যে মজা ছিল সেদিনে। সব হারিয়ে গেল সময়ের কোন গহ্বরে।
কাঁচা কলার ঝোলটা খাব না, তো খাব না। জেদ ছিলো হিমলয় সমান, কিন্তু সেথায় থাকতো হিমের পরিবর্তে লাভা। কিছু মনে না ধরলে করো মুখ গোমড়া। একটু পরেই পাবে বাবা-বাছা। আজ মা নেই, সেই নির্মল রাগ দেখানোর মানুষ আর কেউ নেই পৃথিবীতে। কিন্তু, কাঁচা কলার খোশা বেটে মায়ের হাতে বানানো বড়া সেটা চাই সবার চেয়ে ভাগে বেশি মোরা। আগে গুনে দেখে নেওয়া আমার থালায় পড়েছে কটা বড়া, তারপর খেতে বসা; নইলে খাবো না যা লবডঙ্কা। মায়ের চালাকিও কম ছিলো না, আমারা একটা বড়া ভেঙে হয়ে যেত দুই খানা। তবু তো গুনতিতে পেয়েছি বেশি সেটাই ছিল মোরা সান্ত্বনা।
আজ জীবন-মৃত্যুর অপরাহ্নে মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা, আর পড়ে শুধু থেকে থেকে দীর্ঘ শ্বাস। ফিরে পাবো না জেনেও বিধাতার কাছে অনুরোধ করি, দাও ফিরিয়ে আমায় সেথা।