Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sayandipa সায়নদীপা

Abstract

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Abstract

ছদ্ম-সাংবাদিকের বিড়ম্বনা

ছদ্ম-সাংবাদিকের বিড়ম্বনা

5 mins
828


তাতাইয়ের তো এখনও পড়া শেষ হয়নি তাই তাতাইয়ের চাকরির গল্প এখনও তৈরি হতে বাকি। তবে তাতাইয়ের চাকরির মতোই অর্থাৎ ছদ্ম চাকরির অভিজ্ঞতা হয়েছিল একবার। সেই গল্পই আজ শোনাবো আপনাদের।


   সেটা কলেজের শেষ বছর। পড়াশুনার চাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত। এরই মাঝে এক দমকা ঠান্ডা বাতাসের মত একটা খুশির খবর নিয়ে এসেছিলেন বাবা--- তামিলনাড়ু যাওয়ার টিকিট। সেই মতো পুজোতে তাতাইরা ট্রেনে চেপে চলে গিয়েছিল তামিলনাড়ু। কুড়ি দিনের দেদার মজা শেষে বাড়ি ফেরার পরেই মাথায় হয়েছিল বজ্রাঘাত… ভাইফোঁটার পরের দিন বেশ হেলতে দুলতে কলেজ গিয়ে তাতাই শুনল এ'বছর নাকি পুজোতে টানা ছুটি ছিল না, লক্ষী পুজোর পরেই খুলে গিয়েছিল কলেজ। আর শুধু কি তাই ওই সময় প্রজেক্টের জন্য ফিল্ড ভিজিটখানিও নাকি হয়ে গেছে, তাতাই রয়ে গেছে এবসেন্ট। তাতাইয়ের তো মাথায় হাত, প্রসপেক্টাস খুলে দেখে সত্যি সত্যিই পুজোর ছুটি আর দীপাবলির ছুটি ভাগ করা আছে। আর তাতাই কিনা প্রত্যেক বছর যা হয় তাই হবে ভেবে প্রসপেক্টাসখানা কোনোদিনও ব্যাগ থেকে বের করে দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি। এবার উপায়…! 

তবে এমন বিখ্যাত কাজকর্ম তাতাই একা করবে তা কি আর হয়, এবারেও যথারীতি সঙ্গে ছিল ওর ক্রাইম পার্টনার দিশান। সে গিয়েছিল পাঞ্জাব। 

H.O.D দু তিন প্রস্থ বকাবকি, নিন্দেমন্দ করার পর একটা উপায় বাতলালেন অবশেষে। তাতাইয়ের আরেক সহপাঠীনি পূজার ওই সময় পা ভেঙে গিয়েছিল, তাই সেও ফিল্ড ভিজিটে যেতে পারেনি। কাজেই এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে তাতাইদের তিনজনকে নিজের উদ্যোগে যেতে হবে ফিল্ড ভিজিটে। 


   অতএব তাতাই, দিশান আর পূজার বসল মিটিং। ঠিক হল তাতাইদের শহরের বাস স্ট্যান্ড হবে ওদের ফিল্ড অফ ভিজিট, কারণ তাতাইএর মতে পৃথিবীর যত রকম দূষণ আছে সব দেখতে পাওয়ার একটাই জায়গা, বাস স্ট্যান্ড। প্রজেক্টটা ভালো করে তৈরি করা যাবে। 


                   ★★★★★


প্ল্যান অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে সকাল সকাল স্নান করে ফর্মাল ড্রেস আর গলায় কলেজের আইডেন্টিটি কার্ড ঝুলিয়ে তাতাইরা হাজির হল বাস স্ট্যান্ডে। তাতাইয়ের হাতে একটা বোর্ড আর পেন, পূজা ওর দাদার কাছ থেকে চেয়ে এনেছে একটা দামি ক্যামেরা, আর শান ফুল বাবু সেজে কাঁধে একটা অফিস ব্যাগ ঝুলিয়ে এসেছে ফিল্ড ভিজিটে। 


   শানের প্রথম নজর পড়ল সর্বত্র যেখানে সেখানে চেটানো পোস্টার। তাতাই তাড়াতাড়ি নোট করল প্রথম পয়েন্ট ---- দৃশ্য দূষণ। পূজা খিচিক খিচিক করে কয়েকটা ছবি তুলে নিল চারিদিকে। তারপরে তাতাই ইশারা করল বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বড় ড্রেনটার দিকে। ড্রেনটার ওপরে একটা জলের ট্যাংক ভেঙে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কেউ সেটা পরিস্কার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি; তার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ড্রেনে জল জমে পোকা কিলবিল করছে সেখানে, সেই সাথে উৎকট গন্ধ। পূজা আর শান মিলে ভালো করে ছবি তুলতে লাগল জায়গাটার। আর তাতাই দরকারি পয়েন্টটা সবে নোট করে নিতে যাচ্ছিল, তখনই কানে লাগল কথাটা-----

----সাংবাদিক।


---- কোন চ্যানেলের?


---- চ্যানেল নয়, খবরের কাগজের। দেখেছিস না শুধু ছবি তুলছে।


---- কোন খবরের কাগজ? 


---- অতো জেনে কাজ নেই, চল ছবি তোলাই।


এই বলে লোক দুটো এগিয়ে এলো তাতাইয়ের দিকে,


---- ম্যাডাম কোন খবরের কাগজ থেকে আসছেন?


---- আসলে আমি…


---- আপনারা কি লোকাল?

তাতাই ওর জবাব সম্পূর্ণ করার আগেই শান লাফিয়ে চলে এলো ওদের সামনে। লোক দুটো ওকে দেখে জামা টামা বেশ ঠিক করে নিয়ে বিগলিত কণ্ঠে বলল,

---- হ্যাঁ সার। কোনো হেল্প লাগবে?


---- অফ কোর্স।


---- কি করছিস তুই শান?

ফিসফিস করে বলল তাতাই। শান ওকে পাত্তা না দিয়ে পূজার উদ্দেশ্যে হাঁক পাড়ল,

---- ক্যামেরা ওম্যান ক্যামেরা লাও। এই তুমি নোট করতে থাকো।

শেষের কথাগুলো তাতাইকে উদ্দেশ্য করে বলল সে।

লোকদুটোর মধ্যে একজন বলে উঠল,

---- স্যার আমাদের ফটো ছাড়বেন তো?


---- ওসব ঠিক হবে। তার আগে বলুন আপনারা এখানে কি করেন?


---- আমরা টোটো চালাই স্যার।


---- টোটো! বাহ্ ইকো ফ্রেন্ডলি। 

সাহেবি কেতায় কথাগুলো বলল শান। লোক দুটোর চোখ চকচক করে উঠল। 

---- তা বলছি ড্রেনটার এই অবস্থা আপনারা কিছু করেন না কেন?


---- সরকারি জিনিস সার, কে হাত দেবে!


---- আপনারা ওপর তলায় জানিয়েছিলেন?


---- ইউনিয়নে বলেছিলাম। কিছুই করেনি।


---- আচ্ছা এই সিমেন্টের ট্যাংকটা কিসের?


---- খাবার জল স্যার।


---- সেকি! ড্রেনের এতো কাছে! আর এদিকে দোকানের এতো নোংরা জলও জমেছে ওর পাশে, এতো ভীষণ আনহাইজিনিক!


---- কি স্যার?


---- বলছি এরকম জল খাওয়া উচিৎ নয়। 


---- কি করবো স্যার, আগে তো এটুকুও ছিল না। 


---- কিন্তু করাই যখন হল তখন ঠিক করে করা উচিৎ ছিল।


---- আপনারা উচিৎ অনুচিৎ বলার কে মশাই? আপনারা তো ওই ফলের জুস খাওয়া লোকেদের হয়ে লিখবেন সবসময়…

কথাগুলো বলতে বলতে একটা ষন্ডা মতন লোক এগিয়ে এলো শানের দিকে।

পূজা ফিসফিস করে তাতাইয়ের কানে কানে বলল,

---- শান এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছে, ওকে থামা। তাতাই মাথা নেড়ে সায় দিল,

---- শান প্লিজ চল এবার। 

কিন্তু শান কি শোনার পাত্র! সে ষন্ডার দিকে ঘুরে বলল,

---- আপনি কি আমাকে চেনেন? 


---- আরে মশাই আপনাকে চিনতে হবে না। আপনাদের কাজে ভালো করেই জানা আছে। শুধু এসে ছবি তুলে চলে যাবেন, আমাদের হাল যেমনকে তেমনই রয়ে যাবে। 

একটা লোক ষন্ডাকে সমর্থন করতে এগিয়ে এলো। আর দেখতে দেখতে ওদের ঘিরে বেশ ছোটখাটো একটা ভীড় জমে গেল। এবং ভীড় থেকে নানান রকম মন্তব্য ধেয়ে আসতে লাগল ওদের দিকে...


---- তাও যদি বা সেবার ভিডিও করল তাও চ্যানেলে দেখাবার সময় আমাকে দেখাল না!


---- আরে সেবার হয়েছিলটা কি…


---- আমারও সেম কেস।


---- এরা সব মিথ্যা কথা বলে।


---- এতো জ্ঞান দিচ্ছে এখানে…


---- আরে এই পাবলিকগুলো বহুত ভুলভাল খবর দেয়।


---- এমনি কি আর এদের ধরে ক্যালায় রে…!



    ----- শান, এরা কিসব ক্যালানোর কথা বলছে ভালো চাস তো চল এখান থেকে। 

শানকে সাবধান করার চেষ্টা করল পূজা।


---- আরে না না আপনাদের ক্যালানোর কথা বলেনি। ছিঃ মেয়েরা মায়ের জাত, মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে নেই। 

অনেকক্ষণ পর আবার কথা বলল প্রথমের সেই টোটো চালক।


---- শুনলি তো। তুই কিন্তু মায়ের জাত নয়, চল এখান থেকে…

শানের হাত ধরে টানল তাতাই। শানও বুঝেছে পরিস্থিতি আর ওর হিরোগিরি করার জন্য অনুকূল নয়, তাই এবার বিনা বাক্য ব্যয়ে ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেল তাতাইয়ের সঙ্গে। পেছন থেকে নানান রকম মন্তব্যের রোল ভেসে এলো আবার। তাতাইরা পা চালালো তাড়াতাড়ি। কিন্তু একটু না এগোতেই একটা ছেলে এসে দাঁড়াল ওদের সামনে, 

---- বলছি ম্যাডাম আমার ছবিটা কাল কোন পেপারে ছাপবেন?


---- আপনার ছবি…!

ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল পূজা। 


---- হ্যাঁ, ওই তখন তুললেন না! কোন পেপার ম্যাম?


---- কে.জি.পি কলেজ।

কথাটা বলেই বাস স্ট্যান্ড ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া একটা অটোতে লাফ মেরে উঠে পড়ল শান। তাতাই আর পুজাও উঠল সঙ্গে। অটোটা ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে পেছন ফিরে ওরা দেখলো ছেলেটা হতভম্বের মত তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। 


   পরে ওরা আবিষ্কার করেছিল, ওদের দৃশ্য দূষণের জন্য তোলা ছবিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটাতে বিভিন্ন রকম পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। ছবিগুলো দেখতে দেখতে ওরা হেসেছিল খুব। সেই সাথে সাংবাদিক না হয়েও সাংবাদিকতার বিড়ম্বনা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল সেদিন।।



Rate this content
Log in

More bengali story from Sayandipa সায়নদীপা

Similar bengali story from Abstract