ছায়া এবং কায়া
ছায়া এবং কায়া
ছায়া যদি ছেড়ে যায় কায়া কে? তাহলে কি হতে পারে? ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। এই মুহুর্তে আমিও তাই উঠলাম। ইদানিং ও আমাকে খুব শাসাচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে, আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বলে। ভয় পাচ্ছি। সত্যিই ভয় পাচ্ছি খুব। ওঃ! আপনারা কিছুই বুঝতে পারছেন না, তাই না! বলছি। ভয়ে গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। একটু জল খেয়ে নিই। আসলে আমার ছায়া টা এখন আমার শত্রু হয়ে উঠেছে। আমাকে আর সহ্য করতে পারছে না ও। ছেড়ে চলে যাবার ভয় দেখাচ্ছে। আচ্ছা, ওকে ছেড়ে আমি থাকতে পারি বলুন তো!
এইমুহূর্তে ও আমার কাছেই রয়েছে। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় নিবিষ্ট চিত্তে একটা বই পড়ছিলাম। বইটা অকাল্ট সায়েন্সের। আমার চেয়ারের পাশে চুপটি করে পড়ে আছে ও। কদিন দেখছি শাসানিটা বন্ধ হয়েছে। তবে কি মত বদলেছে ও! কে জানে! ইদানিং অকাল্ট সায়েন্সের ওপর আগ্রহ টা বেড়েছে আমার। সারাদিনই প্রায় ওই সংক্রান্ত বই তে ডুবে থাকি। অফিস যাওয়া বন্ধ করেছি। আর কেউ তো নেই কিছু বলার। দিব্যি আছি। তোফা আছি।
হঠাৎ খেয়াল হল, ছায়া টা চেয়ারের পাশে তো নেই! কোথায় গেল! বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছে। তবে কি সত্যিই চলে গেল ও! ওমা! ওই তো আমার ছায়া ।কখন যেন নিঃশব্দে দেওয়ালে উঠে গেছে। কিন্তু ওর সঙ্গে তো আর একটা ছায়া রয়েছে। ওটা কার ছায়া? ওরা দুজনে কথা বলছে। কি বলছে ওরা। কোনো ষড়যন্ত্র করছে কি! আমার বিরুদ্ধে!
আমার ঘরের দেওয়াল টা দখল করেছে ওরা। এই চেয়ারে বসে দেখতে পাচ্ছি, ওদের ঠোঁট নড়ছে। আমার ঘরে বসে আমারই বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে ওরা। আমি দেখতে পাচ্ছি। সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। ওই তো, ওই লোকটা চেয়ারে বসে রয়েছে, নিথর, নিশ্চল। ঘাড় টা ঝুলে পড়েছে বুকের ওপর। সামনে টেবিলের ওপর অকাল্ট সায়েন্সের বই খোলা। আর ঘরের দেওয়ালে এখন তিনটে ছায়া বিরাজ করছে। ওরা কথা বলছে, হাসছে। কায়া ছেড়ে ছায়ারা সুখেই আছে।
