Sharmistha Mukherjee

Abstract Tragedy Inspirational

2  

Sharmistha Mukherjee

Abstract Tragedy Inspirational

বংশধর

বংশধর

4 mins
77



শশধর বাবু ও তার স্ত্রী শান্তি দেবী বেজায় খুশি । মাতা-পিতা হতে চলেছেন ওনারা । পিতৃত্ব লাভের আনন্দে আত্মহারা শশধর বাবু অফিসের সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন । এক সহকর্মী বন্ধু নিখিলেশ বাবু বললেন, " আরে আগে একটি মিষ্টি মেয়ে বা ছেলে ঘরে আসুক তারপর কবজি ডুবিয়ে ভুরিভোজ করাতে হবে । " শশধর বাবু বললেন, " নিশ্চয়ই মিষ্টি মেয়ে নয়, ছেলেই আসবে আমার বংশপ্রদীপ হয়ে । " এই বলে হা হা করে হেসে উঠলেন । সময়কালে শশধর বাবু ও শান্তি দেবীর সংসারে এলো এক ফুটফুটে মেয়ে । মেয়ে হয়েছে শুনে শশধর বাবুর মুখটা যেন শুকিয়ে গেলো । কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলেন না । মেয়ের জন্মের চার বছর পর শান্তি দেবী দিত্বীয় বার সন্তানসম্ভবা । কিন্তু শশধর বাবুর সেই উৎসাহ বা আনন্দ কারো চোখেই পড়লো না । প্রথম সন্তান মেয়ে বলে দিত্বীয় সন্তান পুত্র হবে সেই ভাবনাই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন । অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ে শান্তি দেবী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন । তখন শশধর বাবুর আনন্দ যেন আকাশছোঁয়া । মেয়ের অন্নপ্রাশন ছোটো করে করলেও ছেলের অন্নপ্রাশন করলেন ধুমধাম করে । এতোদিনে তার বংশধরের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে । মেয়েকে বিয়ে দিলে পরের ঘরে চলে যাবে কিন্তু ছেলে বাবা-মায়ের বৃদ্ধকালের ভরসা এইরূপ ভাবনা ছিল শশধর বাবুর । মেয়েকে গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পড়ান । মেয়ে শ্রুতির আরও পড়ার ইচ্ছা থাকলেও তিনি জানিয়ে দিলেন, " তোমার ভাইকে ডাক্তারি পড়াতে অনেক খরচ তাই তোমাকে আর পড়াতে পারবো না । আর তুমি মেয়ে, এতো পড়ে কি হবে ? সেইতো পরের ঘরে গিয়ে সংসার সামলাতে হবে । তা তোমার পড়তে ইচ্ছে হয় তো বিয়ের পর স্বামীর টাকায় পোড়ো , আমি আর পারবো না । " গ্রাজুয়েশন শেষ হবার এক বছর পর শশধর বাবু মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন । বিয়ের পর শ্রুতি আবার পড়াশোনা শুরু করে । অন্যদিকে শশধর বাবুর ছেলে ডাক্তারি পাশ করে লন্ডনে চলে যায় । মেয়ে শ্রুতি নিয়মিত শশধর বাবু ও তার স্ত্রীর দেখাশোনা করতো । শশধর বাবু মেয়েকে বলতেন , " আর কিছুদিন, তারপর আমার ছেলেই আমাদের দায়িত্ব নেবে । শ্রুতি মা তুই তোর সংসার দ্যাখ্, আমাদের কথা ভাবার জন্য তোর ভাইতো আছে । তোর ভাই এখন কতো বড় ডাক্তার । আমি আজ খুবই নিশ্চিন্ত । " ইতিমধ্যে শ্রুতির স্বামীর আমেরিকায় বদলি হলে শ্রুতিও স্বামীর সাথে বিলেতে পাড়ি দেয় । শশধর বাবুর ছেলে লন্ডনে এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে সুখেই দিনযাপন করতে থাকে । বাবা - মায়ের খোঁজ নেওয়ার সময় ও তার নেই । ছেলের সাথে ফোনে কথা বলতেও অপেক্ষা করতে হয় । বৃদ্ধ শশধর বাবু ও তার স্ত্রী শান্তি দেবী অসহায়ের মতো অপেক্ষা করতে থাকে কবে ছেলে এসে ওনাদের দায়িত্ব নেবে । কিন্তু অপেক্ষার যেন কোনো শেষ নেই । ছেলে আর ফিরলো না , অপেক্ষা করতে করতে শান্তি দেবী গত হলেন । মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েও শশধর বাবুর বহু আকাঙ্খিত বংশপ্রদীপ দেশে না ফিরলে শশধর বাবু খুব ভেঙে পড়েন । অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মী 

বন্ধু নিখিলেশ ও শশধর বাবু মিলে প্রায় রোজ বিকালে আড্ডা দিতেন । একদিন শশধর বাবু বন্ধুকে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, " জানিস নিখিল, যখন শ্রুতি মা আমার সংসারে এলো তখন খুব রাগ হয়েছিল মেয়ে হয়েছে দেখে । আসলে বংশ রক্ষার জন্য, বয়সকালে আমাদের ভরসা হবার জন্য, যাকে বলে অন্ধের যষ্টি - ছেলে চেয়েছিলাম তো তাই । পরে যখন রাহুল হোলো তখন যে কি খুশি হয়েছিলাম , যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি, ডাক্তারি পড়তে চেয়েছিল কষ্ট করে হলেও পড়িয়েছি । আজ সে লন্ডনের একজন নামকরা ডাক্তার । শ্রুতি মায়ের দিকে কোনোদিন ভালো খেয়াল রাখিনি, সন্তান বলে শুধু কর্তব্য পালন করেছি মাত্র । অথচ সেই মেয়েই আমাদের খোঁজ খবর রাখা, দেখাশোনা করতো । আজ শান্তি বেঁচে নেই এখন আমিও যেতে পারলে ভালো হোতো । বংশ রক্ষার জন্য ছেলে চেয়েছিলাম, বংশ রক্ষাতো হোলো কিন্তু ছেলে আমার কোনোরকম যোগাযোগ রাখে না । একটি বারের জন্য আমাদের খোঁজ নেয় না । সন্তান তো সবসময় চাই ভালো থাক, সুখের থাক্ । কিন্তু আমি এই দিন দেখবো বলে কি ছেলে চেয়েছিলাম ? আজ আমি সত্যিই ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে শ্রুতি মায়ের মতো একটি কন্যা সন্তান দেবার জন্য । জামাই আমার নিজের ছেলের জায়গা নিয়েছে । যা যা ছিল আমার ছেলের কর্তব্য তার সবটুকুই আজ আমার মেয়ে - জামাই পালন করে চলেছে । আমি প্রাণ ভরে ওদের আশীর্বাদ করি । আমার সন্তানেরা ভালো থাক " এই বলতে বলতে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শশধর বাবু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । দিদি শ্রুতি বাবার মৃত্যুর খবর ভাই রাহুলকে জানায়, কিন্তু বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েও সে একবার ও আসে না । সত্যিই শশধর বাবু পুত্র চেয়েছিলেন মুখাগ্নি করবে বলে কিন্তু মৃত্যুর পর সেটিও হোলো না । বাবার উজার করা ভালোবাসায় বড়ো হয়ে , বিলেত গিয়ে সেই বাবার দিকে কোনোদিন ফিরেও দেখলো

 না শশধর বাবুর বহু আকাঙ্খিত পুত্র সন্তান। সত্যিই শশধর বাবু প্রকৃত বংশধর পেয়েছিলেন । 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract