বন্হিশিখার একা একলা দিন
বন্হিশিখার একা একলা দিন
বন্হিশিখা একলাই থাকে , একাকীত্বতা তার নিত্য সঙ্গী । ও একটু কেমন যেন, সমাজের ধার ধারে না ।
লজ্জা - ঘৃণা - ভয় তিন থাকতে নয়
সেতো জানে সবাই ,
উচ্চ দরে - উঁচু জাতে , প্রতিদিন নিশুতি রাতে
হাজার হাতে জবাই ।
ওর কি নেই ভয় ?
ঐযে বললাম, লজ্জা - ঘৃণা - ভয়
তিন থাকতে নয় ,
রোজ রাতে নীলামে উঠছে দেহ
শতাধিক হাতের যৌনতার নয় - ছয়
আর কি লাগে ভয় ?
ব্যাঙ্গালোরে চাকরি পেলো
সেথায় অফিসের বস্ সুযোগ নিলো ,
একাকীত্বের শিকার হোলো ,
দুজন মিলে নিংড়ে খেলো ,
পথের ধারে ছুঁড়ে দিলো ,
তাও বন্হি দাঁড়িয়ে রয়
সত্যিই আর লাগে না ভয় ।
লজ্জা! সেতো চলেই গেছে
চোখের জলে ঘৃণা ধুয়েছে ,
সতীত্ব তো লুঠ হয়েছে
এখন আর ভয় কারে কয় ?
নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না ?
অসুবিধা যদি হয় ,
তাহলে বলি
এই গল্প এক বারবণিতার
নামটি বন্হিশিখা রায় ।
ইন্জিনিয়ারিং শেষ করতেই চাকরি পেলো বন্হিশিখা, সেই সুদূর ব্যাঙ্গালোরে । মায়ের মুখ ভার কিছুতেই মেয়েকে একা চাকরি করতে যেতে দেবে না । বন্হি মাকে অনেক করে বোঝাতে থাকে কিন্তু মা শুনতেই নারাজ।
বন্হির মা বলে, " একদম না । চাকরি করতে হয় কোলকাতাতেই করো , একা একটা মেয়ে বাইরে কিছুতেই যেতে দেবো না । " বন্হি কাঁদো কাঁদো গলায় বাবাকে বললো,
" ও বাপি, please তুমি মামমামকে একটু বোঝাও না । Please please বাপি । আগে জয়েন তো করি, না ভালো লাগলে ছেড়ে দিয়ে চলে আসবো । Please তুমি মামমামকে বোঝাও । Please please please ..... "
বন্হির বাবা রাতে খেতে বসে বন্হির মাকে বলে, " শোনো , মেয়ে এখন বড়ো হয়েছে , ওকে তো নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে হবে নাকি ? তুমি আর অমত কোরো না । আর এখন বাইরে গিয়ে চাকরি করাটা কোনো ব্যাপার না । প্রচুর ছেলে- মেয়ে বাইরে গিয়ে চাকরি করছে, আমার মেয়ে ও যাবে । '" বন্হির মা বললো, " যা খুশি করো তোমরা বাবা - মেয়ে মিলে । আমি কিচ্ছু বলবো না " এই বলে রান্নাঘরে চলে যায় । সাথে সাথেই বন্হি লাফিয়ে উঠে বাবার গালে চুমু খেয়ে বললো,
" Thank u, thank u বাপি । U are the best father in the world. " বন্হির বাবা আশীর্বাদের ভঙ্গিতে বন্হির মাথায় হাত রেখে বললো, " Thank u for the complement my little princess " । এই বলে দুজনে খুব জোরে হেসে উঠেই আবার মায়ের ভয়ে চুপ করে যায় । বন্হির মা একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো । সামনের মাসে 6th June জয়েনিং ।
3rd June বন্হিশিখা ব্যাঙ্গালোরে চলে যায় । যাবার আগে এখান থেকেই একটা PG ( পেয়িং গেস্ট ) ঠিক করে রেখেছিল । খুব চিন্তায় ছিল জয়েনিং নিয়ে । 6th June বন্হি চাকরি জয়েন করে । চাকরি পাওয়ার দিন পঁচিশ পর বন্হির বস্ বন্হিকে তার কেবিনে ডেকে বলেন, " Redwood হোটেলে একজন delicate client - এর সাথে মিটিং আছে । তোমাকেও যেতে হবে for presentation " । বন্হি " Ok Sir " বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় । কিন্তু বন্হি ঘূনাক্ষরেও টের পায় নি এই presentation কোনো official presentation নয় , এই presentation বন্হির নগ্ন শরীরের presentation । দুপুর ১২: ৩০ নাগাদ বন্হি বস্ - এর সাথে হোটেলে যায় মিটিং এর জন্য । কথাবার্তার ব্যস্ততার ফাঁকে বস্ বন্হির সরবতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় । বন্হি সরবত খাওয়ার মিনিট কুড়ি পর ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে । প্রায় ঘন্টা তিনেক পর বন্হির হুশ ফিরতেই নিজেকে নগ্ন অবস্থায় দেখে আৎকে ওঠে । চীৎকার করে কাঁদতে শুরু করে লজ্জায় - ঘৃণায় - ভয়ে । সেই সময় বস্ ও client মিলে নানারকম ভয় দেখিয়ে বন্হির মুখের আওয়াজ চিরদিনের মতো বন্ধ করে দেয় । তারপর থেকে এইধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটতে থাকে । ধীরে ধীরে সব সহ্য হয়ে যায় বন্হির । চাকরি করতে এসে এই চরম বিপর্যয় বন্হির জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দেয় অন্ধকার রাতের চাদরের আড়ালে । ইন্জিনিয়ার বন্হি হয়ে ওঠে রাতপরী " মাহী " ।
এখন মাহীরূপি বন্হির একটা বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট এর তেরো তলায় well decorated ফ্ল্যাট । বন্হি সেখানে একাই থাকে, মাঝে মাঝে এক আধবার আসে অফিসের বস্ । বন্হি সারাদিন ঘরেই থাকে । এখন তার রাতের চাকরি , দিনের চাকরিটা সে ছেড়ে দিয়েছে । লজ্জা - ঘৃণা - ভয় সব নিমজ্জিত হয়েছে শরীর নীলামের টাকার সমুদ্রে । সবার আড়চোখে দৃষ্টি বন্হির নজর এড়ায় না কিন্তু সে কাউকে পাত্তাই দেয় না । সে একাই দাপিয়ে বেড়ায় নিজের মনের একার ফাঁকা মাঠে । একলা জীবনটাই সে বেছে নিয়েছে , গুছিয়ে নিয়েছে নিজের মতো করে । পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে একাকিনী হতে । একলা বন্হি রাত শেষে ঘরে ফেরে যেমন রাত শেষে ঘরে ফেরে সূর্য। সবাই যখন ব্যস্ত নিজেদের দৈনন্দিন কাজে তখন বন্হি যায় নিদ্রা জগতে । কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিয়ে রাতে নীলামে ওঠা শরীরটাকে একটু জুড়িয়ে নেয় । একা থাকার যন্ত্রনা ভুলতে ব্যালকনিতে বসে কখনো গান শোনে , কখনো ম্যাগাজিন পড়ে, কখনো বা কফির কাপ হাতে নিয়ে বসে কবিতা লেখে । আবার কখনো বা সিগারেটের তৃষ্ণা পেলে সুখের টান দিয়ে ধোঁয়ার রিং ছুড়ে দেয় বাতাসের মাঝে ।
বন্হির রোজনামচার মধ্যে একলা বসে কাঁদাও সমানতালে যুক্ত । হাসি - কান্না - আনন্দ - দুঃখ - কষ্ট এসব দেখার কেই বা আছে । শুধু যারা আছে তারা শুধু শরীরটাকে দ্যাখে , মনটাকে দ্যাখে না । সকলেই মাহীকে চেনে বন্হিশিখাকে জানেনা।
বাবা - মা জানে মেয়ে ভালো চাকরি করে, এখন promotion হয়ে অনেক উন্নতি করেছে, কিন্তু হায়!! বন্হি তাদের কিছু বলতেও পারে না । বন্হি এখন কাঁদে আর ভাবে কতো মেয়েরাই তো বাইরে যায় চাকরি করতে কিন্তু এমন পরিনতি কি শুধু ওর কপালেই লেখা, নাকি খোঁজ করলে পাওয়া যাবে ওর মতো আরও অনেক বন্হিশিখাকে ।
আজ বন্হিশিখার একলার দিন , একলার জীবন , বহুজনের রাতটাই শুধু ওর একলার নয় ।
