Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Pronab Das

Fantasy

2  

Pronab Das

Fantasy

ভুল সংশোধন ।

ভুল সংশোধন ।

4 mins
743


হেকিমপুর গ্রামের ছেলে হারু মন্ডল ইদানিং ফলের বাগান ইজারার ব্যবসা ধরেছে। মাঝে মধ্যে পুকুর-টুকুরও লিজে নেয়। আগে চুরি ছেচরামো করেই দিন চলত। এই তো বছর দুয়েক আগের ঘটনা, এক রাতে গ্রামের মোড়লের পুকুরে লুকিয়ে জাল ফেলতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পরে। অনেক কাকুতি-মিনতি করে লাভ হয়নি। আগেও বার দুয়েক মোড়ল বারুজ্যেমশাই ওকে কান ধরে একটু ওঠ বোস, বকা ঝকা, ক্ষমা-ঘেন্না করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এবারে ধরা খাওয়ার পর তিনি হারুর কোন কথারই কর্ণপাত করেননি। দুজন জল্লাদের মত দেখতে তেলপানা পাইক হারুকে চ্যাং দোলা করে কোতয়ালীর মেজবাবু শক্তি বাবুর হাতে তুলে দেয়। মাস তিনেক জেলের ঘানি টানার পর হারু হেকিমপুরে ফিরে আসে। বারুজ্যেমশাই ভাল মানুষ, হারুকে ডেকে পাঠায়। ওকে ভাল থাকার পরামর্শ ও হাতে কিছু নগদ অর্থ দেয়, ব্যবসা করার জন্যে। সেই থেকে হারু ব্যবসা করছে, চুরি-ছেচরামো এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছে। তবে হ্যা, হাত যে একদম সুড়সুড় করেনা তা কিন্তু নয়। তবে আয়নাতে যখনই বারুজ্যেমশাই এর উঠোনে নাকখত দেওয়া, ঘষা খাওয়া নাকটায় চোখ পরে তখনই ওই ছুঁক ছুঁক করা বাতিকটা এক্কেবারে জ্বর নামার মত নেবে যায়। উফস ,...কি দিনটাই না গেছে সেদিন। গুনে গুনে এবড়ো-খেবর উঠোনের পনেরো হাত , আপ- ডাউন দুটোই, এক ইঞ্চিও কম নয়। ছেলে, ছোকরা, দিদি, বৌদি কে না ছিল ওইসময় ওই উঠোনে সেদিন। আর ওই পেল্লাই গোঁফওয়ালা শক্তিবাবুর মুখটার কথা মনে পড়লে তো আর কথাই নেই। অসময়ে তল পেটটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে, বুকের খাঁচার ভেতরটা কেমন যেন ডিস ডিস করতে থাকে। মনে মনে হারু বলে,........


 "থাক,...... হাত যতই শুড়শুড় করুক,...... মন যতই হাকুপাকু করুক ,.......এবার থেকে চুরিতে এক্কেবারে ফুলুসস্টপ ।"


      এবারে আমের ফলন ভাল হওয়ায় বেশ কিছু নগদ টাকা হাতে এসেছে। টাকাটা কিভাবে কাজে লাগানো যায় ভাবতে থাকে। এমন সময় বিবিরহাঁটে পাঁচকড়ি খুড়োর সাথে দেখা। কথায় কথায় খুড়োর কাছ থেকে হারু জানতে পারে যে গ্রামের দক্ষিণ দিকে শ্মশানের কাছে পাঁচ বিঘে পুকুর লিজ দেওয়া হবে। ওই রাতেই সাইকেল চালিয়ে পুকুরের মালিক করিম মোল্লার সাথে দেখা করে কিছু টাকা বায়না করে আসে, দুদিন পর লিখিত চুক্তিপত্রে সইসবুত হবে। হারুর চোখ আনন্দে চিক চিক করে ওঠে। এত বড় পুকুর আর এত কম টাকায় পাঁচ বছরের জন্য। মনের সুখে বিড়ি টানতে টানতে বাড়ির পথ ধরে। হঠাৎ মনে হল ফেরার পথে একবার পুকুরটাকে দেখে গেলে মন্দ হয় না। অনেকদিন এদিকে তার আসা হয়নি। সাইকেল ঘুরিয়ে হারু শ্মশানের রাস্তা ধরে। বড়ই নির্জন সে রাস্তা। রাস্তার পাশে বুড়ো বট গাছের নিচে রাস্তার অনেকটা ছায়াময় অন্ধকার । ওই গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় গায়ে কেমন কাঁটা দিল। মনে হল যেন ও গাছে কারা যেন বসে আছে। 



       বিকেলে একপ্রস্থ তাড়িয়ে বৃষ্টি হয়ে গেছে । মেঠো পথ। কাদা বাঁচিয়ে সাইকেল চালিয়ে যেতে হচ্ছে। পূর্ণিমার চাঁদ এখন ঠিক মাথার ওপর । পরিষ্কার সব দেখা যাচ্ছে রাস্তা ও আশে পাশের গাছ গাছালি। ধানী জমির শেষে , খালের এধার থেকে এখনো ধোঁয়া উঠে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। বোধ হয় সদ্য কোন দেহ সৎকার করে গেছে। ওসব দেখলে শরীরটা কেমন ভারী হয়ে হযে যায় হারুর। উল্টো দিকে তাকিয়ে মনে মনে রাম নাম জপ করতে করতে দ্রুত এগিয়ে চলে। অবশেষে সে পুকুরের পশ্চিম পাড়ে এসে পৌঁছয়। এদিকটায় গাছপালা বেশি, বসতি নেই। এর পাশ দিয়ে খালটি বয়ে গেছে শ্মশানের কোল বেয়ে। আর খালের ওপারে বিস্তৃত জলা জমি। চাঁদনী আলোয় দিনের আলোর মত পরিষ্কার পুকুর চত্বরটা। ঝিরি ঝিরি ঠান্ডা বাতাস বইছে। পূর্ণিমার একফালি আঁকাবাঁকা রূপলী রেখা পুকুরের মাঝ বরাবর গিয়ে ক্রমশ বিলীন হয়ে গেছে।




      পুকুরের টল টল জলের দিকে তাকিয়ে হারু মাছ বিক্রি করে ব্যবসার কথা, লাভ-লোকসানের কথা ভাবতে থাকে। একটা বড় শ্বাস নিয়ে পকেট থেকে বিড়ি বের করে ধরায়। সবে দুটো সুখটান দিয়েছে, হঠাৎ জলে পাড়ের দিকে কি একটা ছলাৎ ছলাৎ করে নড়ে উঠল। এগিয়ে গেল হারু খানিকটা। দেখে, খান চারেক বাঁশে বাধা ছিপ জলে ফেলা। তার দুটো তে একটা ছোট মৃগেল আর আর একটিতে একটা বড় রুইমাছ আটকে আছে। দেখেই হারুর হাত দুটো নিশপিশ করতে লাগল। বড়শি থেকে মাছ দুটো ছাড়িয়ে, শুকনো কলাপাতার ফাতনায় কানকো বেঁধে সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে চম্পট দিল। মনে মনে বলল রাতে বউকে বলব গরম গরম মাছ ভাজা আর ডাল ভাত। উফস,..… ভেবেই এক্ষনি পেট চোঁ চোঁ করছে।



     অত রাতে সাইকেলে মাছ ঝুলিয়ে ওই বট গাছের দিকে যেতেই শরীরটা আবারও কেমন ভার ভার করতে লাগল। মন কেমন যেন সায় দিচ্ছে না ওদিকে যাওয়ার। মাছ দুটো না নিলেই ভাল হত। এখন কিছু করার নেই। মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে যখন ঠিক বট গাছের নিচে এল, মনে হল বটগাছের সমস্ত ডালপালা যেন হুড়মুড়িয়ে নিচের দিকে মাটির অনেকটা কাছাকাছি নেমে আসছে। হারু কি করবে কিছু বোঝার আগেই একটা মুণ্ডুহীন প্রায় আট ফুট ছায়া মূর্তি ওপর থেকে গাছ বেয়ে সুরুৎ করে নেমে রাস্তা আগলে দাড়াল। দুটো সরু লিকলিকে হাত হারুর দিকে এগিয়ে খোঁনা গলায় বলল, .....


       "হাঁরু,...... মাছ খাব.... দে।"


হারু চোখ উল্টে পরে আর কি। কাঁপতে কাঁপতে মুখের ভেতর কলজেটাকে কোনমতে আটকে রেখে জোর হাত করে বলে, .....


      "আজ্ঞে কত্তা চেনেন আমায়?"


ওপাশ থেকে খোনা গলায় উত্তর আসে,......


       "ওরে আমি তোদের ভুদেব খুড়ো, ...... দে...... দে ...... মাছ দুটো দে দিকিনি..... আর যে তর সইছে না।"



    মনে পড়ল, গত বছর এলাকার চাষী ভুদেব খুড়ো বউয়ের সাথে ঝগড়া করে রেল লাইনে গলা দিয়েছিল। পাশের গাঁয়ের বাতাসীর সাথে নাকি ওর লটর পটর ছিল। বাতাসীও এর পর বিষ খেয়ে মড়ে। হঠাৎই ওপর থেকে আরো একজোড়া লিকলিকে শাঁখা পলা পরা কেলটে হাত ছো মেরে মাছ দুটো নিয়ে উধাও হয়ে গেল। সাথে পেত্নী সুলভ খিলখিলিয়ে তীক্ষ্ণ হাসি ওই পরিবেশটাকে আরও ভয়াবহ করে তুলল। ভুদেবখুড়ো নির্ঘাৎ বাতাসীর সাথে এই গাছেই ঘর পেতেছে। সহসা সামনের ওই ছায়া মূর্তিটি আর দেখা যাচ্ছে না, মাছ পেয়ে সটকে পড়েছে। বট তলার পরিবেশটাও ঠিক আগের মত হয়ে গেল, যেন কিছুই হয়নি। করজোড়ে আর একবার প্রণাম ঠুকে গুটি গুটি পায়ে হারু গাছতলা ছাড়ল আর নিজেই নিজের কানমূলে তার ভুল সংশোধনের প্রতিজ্ঞা করল,….... 


        "আর যাই করি, .....চুরি আর মোটেই করব নাকো।"


Rate this content
Log in

More bengali story from Pronab Das

Similar bengali story from Fantasy