STORYMIRROR

Akash Karmakar

Abstract Romance Tragedy

3  

Akash Karmakar

Abstract Romance Tragedy

ভালোবাসার ত্যাগ

ভালোবাসার ত্যাগ

3 mins
418

প্রতিটা অপেক্ষারত গোলাপ তার প্রেমিকের ছোঁয়ায় বিলীন হয়ে যাক্,

আর যেন কোনো প্রেমিক তেরঙ্গা মোড়া কফিনের বুকে অসম্পূর্ণ প্রেম না রেখে যায়!


ভালোবাসার উদযাপন-প্রিয় মানুষের প্রতি নিজের ভালোবাসা, অনুভূতিকে ব্যক্ত করা। একটা দিন নিজের প্রিয়জনকে আরেকটু কাছে টেনে ধরা, কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলা, 'তুমি আমার, শুধুই আমার'।


ভালোবাসার রঙ লাল-লাল গোলাপ, লাল সিঁদুর, কিম্বা লাল চুড়ি। আর যখন সেই লাল রঙের ভালোবাসার রক্তিম আকাশে ঘনীভূত হয় কালো ধোঁয়ার পিন্ড, কালো পিচ ভিজে যায় রক্তে...বুঝে নিও বিদ্বেষ এসেছিল বিষাক্ত আঙ্গিকে।


'কি গো রেডি হলে? দেরী হয়ে যাবে এবার।


...উফফফ্ একটুও তর সয় না নাকি তোমার! বললাম তো হয়ে গেছে, যাচ্ছি।


আজ খুব ভিড় চারদিকে, জায়গা পাব না ঠিক করে বসার।

এই নাও বেরোলাম। জলদি এসো।'

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর তিনটে পনেরো। একটা বিস্ফোরণ- চল্লিশ টা নিথর দেহ। তারা ভালোবেসেছিল, তারা কথা দিয়েছিল-তারা কথা রেখেছে। তারা শহীদ হয়েছে।

'কবে ফিরছ বাড়ি? সামনের মাসে ডেট আছে কিন্তু, এসো প্লিজ।

চেষ্টা করব, অবশ্যই যাওয়ার। বাকি তো তুমি জানই।

...না, এবারে আমি কিছু শুনব না। তোমাকে আসতেই হবে।

আচ্ছা বেশ, তাই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরব। আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাকে সবার আগে কোলে নেব। বেশ, এবার রাখি।

শোন না গো একটু।

কি?

আই লাভ ইউ। আমি তো তোমাকে সবার মতো করে কাছে বসিয়ে বলতে পারি না তাই। তবে তুমি আমার গর্ব, তুমি দেশের গর্ব।

লাভ ইউ টু মাই সুইটহার্ট। ভেবো না, খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি তোমার কাছে।'...

কে বলল সেনারা কথা রাখে না! পা দুটো বাদে পুরো শরীরটা ফিরেছিল বাড়িতে। কত মানুষের ঢল, অতঃপর গান স্যালুটে শেষ বিদায়।

কফিনের উপর ছড়িয়ে থাকা কত ফুল...ছিল না শুধু লাল গোলাপটা।

ইশ্ কি বীভৎসতা চারপাশে! কত নৃশংস হতে পারে মানুষ! হ্যাঁ, এসব আলোচনার সূত্রপাত হল কারোর কফির টেবিলে, কারোর চায়ের কাপে, কারোর পার্কে প্রেমিকার কাঁধে মাথা রেখে।

আর কতকগুলো সম্পর্ক চিরকালের জন্যে কফিনবন্দী হয়ে যাত্রা করল নিজ নিজ পরিজনদের কাছে। যতটুকু ফিরেছিল কোথাও তা হল দাহ আর কোথাও তা কবরস্থ। আর যা পেল না দেখতে খালি চোখ - শূন্য বুকের মাঝে নুইয়ে পড়া গোলাপ, থিতিয়ে পড়া ভালোবাসা, লক্ষ লক্ষ কোলাহলের মাঝে এক তীব্র বিষণ্ণতা, হাহাকার যার উপর অধিকার শুধুই তার প্রিয়জনের... তার ভ্যালেন্টাইনের।

কে বলে, অনুভূতির মৃত্যু নেই। মাত্র একটা বিস্ফোরণ-আর শত সহস্র স্বপ্নের দহন। অনুভূতিরা ছেড়ে গেলেও রেখে যায় এক অক্ষত ক্ষত যে যন্ত্রণার কোনো রূপান্তর নেই; আছে এক আকাশ বিলাসিতা।

যাদের জীবনের আঙিনায় জারি হয়েছে লাল রঙের নিষেধাজ্ঞা, আজ সকালে ওঁনার স্ত্রী বাগানের সবচেয়ে বড়ো লাল গোলাপটা ফ্রেমবন্দি ছবির সামনে নামিয়ে বলল,

"নিমেষের মধ্যে যেন সবকিছু লাল থেকে কালো হয়ে গেল; তবুও দেখো ভালোবাসার বাঁধনে একটুও মরচে লাগে নি। আজও সগর্বে আমি বলতে পারি, আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মারাঠা রেজিমেন্টের ল্যান্সনাইক হরিশ সালভের সহধর্মিণী। এই পরিচয় দিয়েছ তুমি আমায়, ভালো থেকো যেখানেই থেকো। তোমার ছেলে বড় হচ্ছে, সেও একদিন ঠিক দেশের সীমান্তে পৌঁছাবে। না, আমি তাকে কখনো প্রতিশোধের স্পৃহায় উজ্জীবিত করব না, কারণ বুলেটের ওপারে কারোর ভালোবাসা অপেক্ষার প্রহর গোণে--একবার তারে বুকে জড়াবে বলে।"

যত ক্ষত গেঁথেছ ভারতের বুকে, ভালোবাসা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে শোকে;

গোলাপের আঙিনায় রক্তের লাভা; ইতিহাস যেন আর না ফেরে দুঃস্বপ্নের আলোকে।

সীমান্ত শুধুই বেড়াজাল মোটে, অচেনা প্রত্যুষে যাবে মুছে মানচিত্রের লাইন;

প্রতিটা প্রেমিকা প্রেমিকের বুকে মাথা রেখে বলবে, ইউ আর মাই ভ্যালেন্টাইন।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract