Prantik Biswas

Comedy Inspirational

4.7  

Prantik Biswas

Comedy Inspirational

ভাইরাসের কড়চা #২; উনিশের-বিষ

ভাইরাসের কড়চা #২; উনিশের-বিষ

3 mins
516


২৬শে মার্চ, ২০২০


আমার এই বিচিত্র আচরণের থুড়ি, কড়চা লেখার কথা এতক্ষণে আপনারা জেনেই গেছেন। কি করি বলুন, বসের আজ্ঞা না মেনে চললে…


আমার নাম জপতে সুবিধা হবে বলে করোনা ভাইরাস ডিজিজকে ছোট করে কভিড বলছে এরা! আর আগের বছর আত্মপ্রকাশ করেছি বলে পুরো নামটা ছোট করে - কভিড-১৯। তা সে উনিশ বা বিশ, নামে কিই বা আসে যায়; আসল তো কাম - যা হল বিষ ছড়ানো!


শরীর আমার অত্যন্ত ছোট, খালি চোখে দেখাই যায় না। আমার দাপট কিন্তু টের পাচ্ছে বাচ্চা থেকে বুড়ো! আমাকে দেখতে একটা ছোট্ট বলের মতন। শরীর বলতে একটুকরো প্রোটিন আর গায়ের একটা পাতলা চামড়া। আশ্রয়কে আঁকড়ে ধরার জন‍্যে সারা গায়ে বেশ কিছু কাঁটা - অনেকটা এখানকার কেষ্ট ঠাকুরের প্রিয় কদম ফুলের মতন। তা কেষ্টর জীবকে কে আর হেলাফেলা করবে!


আমি কিন্তু পৃথিবীর আদিমতম জীব। আসলে ঠিক জীবও নই আমি। এমনিতে জীবনশূন্য, বাতাসে জড় পদার্থের মতন উড়ে বেড়াই - কোনো জীবের কোষের মধ্যে ঢুকলে তবেই আমার দেহে প্রাণ আসে। ব্যস; পৃথিবীর অন্যান্য জীবদের মতন আমরা তখন লেগে পড়ি বংশবৃদ্ধি করতে। আর এখানেই ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হয় আমার বাহক সেই জীবের। তবে আমি কিন্তু মানুষ ছাড়া খুব কম জীবকে বাহক হিসেবে বেছে নিই। আপনি শুধোবেন - কেন? কেন নয় বলুন... আমার প্রিয় বাহক হল পৃথিবীর সবথেকে উন্নত জীব, আর আমি প্রাচীনতম। আর তাছাড়া মানুষ হলো এই পৃথিবী নামে বিশাল বাড়িটার সবচেয়ে বুদ্ধিমান অথচ সবচেয়ে বখাটে সন্তান। নিজের কয়েক মুহূর্তের সুখের জন্য নিজের বাড়িতেও আগুন লাগাতে পারে। এরকম কাউকে চ্যালেঞ্জ না ছুঁড়ে কি গরু-গাধাদের চ্যালেঞ্জ করবো?


আগেই স্বীকার করে নিয়েছি মানুষ বুদ্ধিমান জীব। এতদিনে বুঝে গেছে আমি কি করে জেঁকে বসি ওদের শরীরে। তাই বলে আমার যে খুব একটা অসুবিধে হচ্ছে তা নয়। যা বুঝেছি, চীনের ইউহানের থেকে ভারতের কলকাতায় আমার পসার অনেক ভালো জমা উচিত। চীনের মানুষ খুব নিয়মনিষ্ঠ আর পরিশ্রমী। আর এই বাঙালিরা নিয়মকানুন তো পছন্দই করে না আর সেই সঙ্গে বেশ অলসও বটে! খেতে, ঘুমোতে আর আড্ডা দিতে পারলে আর কিছুই চায় না। তার ওপর আবার এক্সারসাইজ বা ব‍্যায়ামের ধারেকাছেও যায় না! লোকে যেখানে সেখানে থুতু ফেলে; হাঁচি বা কাশি হলে মুখে হাত কিম্বা রুমাল চেপে ধরা তো দূর অস্ত, কেউ মুখটা আড়ালও করে না। ফেসবুক, টিভি, হোঅ্যাটসঅ্যাপ ইত্যাদিতে আমার হাত থেকে বাঁচার উপায় শোনার পরেও...


এই ফাঁকে একটা মজার ঘটনার কথা আপনাদের শুনিয়ে রাখি। লকডাউনের কয়েকদিন আগে একটা কসমেটিকসের দোকানের সামনে ঘুরঘুর করছি - একজন মাঝবয়সী লোক দোকানের সামনে এসে ভেতরে একবার উঁকি মেরে আবার দেখি ফিরে যাচ্ছে। লোকটা সব দোকানে স্যানিটাইজার খুঁজছিল কিন্তু পাচ্ছিল না। তা এই দোকানে তো সেটা আছে, তাহলে ঢুকলো না কেন! স‍্যুইং ডোরটা ঠেলে আর একজন যেই দোকানে ঢুকলো সেই ফাঁকে এক পলক নজর করে দেখলাম আধবুড়ো দোকানদার মনের সুখে নাকের মধ্যে তার বাঁ হাতের কড়ে আঙুলটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমি হেসে কুটোপাটি - এর মধ্যে মাঝবয়সী লোকটা দেখি আবার ফিরে এলো দোকানটায়। জিগ্যেস করল - স্যানিটাইজার আছে? আধবুড়ো দোকানদারের আঙুল তখনো নাকের ভেতরে । মাথাটা একটু তুলে খদ্দেরের দিয়ে তাকিয়ে বললো - হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তারপরেই একটা বিকট শব্দে - হ্যাঁচ্চো!!!


ব‍্যস্ , এই তো সুযোগ! আর আমায় পায় কে!


কৃতজ্ঞতা স্বীকার - শ্রী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy