Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sandipa Sarkar

Fantasy

3  

Sandipa Sarkar

Fantasy

বেগুনি রশ্মি

বেগুনি রশ্মি

9 mins
1.3K


"আজ বিজ্ঞানী মিস্টার স্পার্ককে আমাদের বিদায় জানাতে হবে,ভেবেই আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু কিছু করবার নেই,বয়সের নিরিখে আমাদের একদিন সবাইকেই ফেয়ারওয়েল নিতে হয়।ওনাকেও আজ আমাদের বিদায় জানাতে হবে।তবে বিজ্ঞানের জগতে এখন অবধি উনি যা আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন,তা সত্যিই অবিশ্বাস্য ও প্রশংসনীয়ও বটে।কিছু সামান্য উপহার ওনার জন্য"......

বলে আরো একজন বিজ্ঞানী মিস্টার স্পার্কের হাতে কিছু উপহার তুলে দিয়ে বিদায় জানাতে লাইন ধরে সবাই হ্যান্ডসেক করতে লাগলেন।বিজ্ঞানী স্পার্ক বিদায় বন্ধুগন বলে গট গট করে হেঁটে নিজের কর্মস্হলকে পেছনে ফেলে গাড়ি নিয়ে ছুটলেন গভীর অরন্যের দিকে।অরন্য গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ভেসে আসছে ঝরনার ডাক।রাতের আকাশটা আজ পূর্ণিমার গোল চাঁদের আওতায়।ঠিকরে পড়ছে চাঁদের আলো চারিপাশে।গাড়িটা সরু পথ ধরে চলতে লাগলো।ডানা ঝাপটানো একটা পেঁচা গাড়ির সামনে বসে কিছুক্ষন ডাক ছেড়ে আবার উড়ে যাবার আগেই বিশালকায় সাপের মুখে পড়ল।সাপটা কত বড় বোঝা যাচ্ছে না, মুখটা খালি সামনে দেখা যাচ্ছে।কাঁচে দু-চারবার ছোবল পড়লো।গাড়িটা গাছে গুলোর গা ঘেষে যেতে লাগলো কিছুক্ষন পরে হিস হিস শব্দে গাছের গা বেয়ে সাপটা চলে গেলো।ধীর গতিতে চলা গাড়িটা অবশেষে এসে থামলো একটা কাঠের কটেজের সামনে। ঝোপ থেকে ঝরনার দূরত্ব খুব বেশী হলে দুশো মিটার।গাড়ি থেকে নেমে স্পার্ক কটেজের দরজাটা একটা রিমোটের সাহায্যে খুলে ভেতরে ঢুকে লাইট গুলো জ্বাললেন।সোলার সিস্টেমের দ্বারা এখানে আলোর ব্যবস্হা করা আছে।জঙ্গলের ভেতর এছাড়া আলোর ব্যবস্হা করা সম্ভবপর না।সব কিছুই স্পার্কের পরিকল্পনায় সৃষ্ট।ভেতরে ফ্রিজ,রান্না করার সব সরঞ্জাম মজুত করা আছে।তবে দীর্ঘদিন যাবৎ সেগুলো ব্যবহার না করাই ধুলো জমে অপরিস্কার হয়ে আছে।প্রায় পঁচিশ বছর পর স্পার্ক এখানে এলেন।কটেজের ভেতরে দুটো বেড রুম।তার মধ্যে একটাতে বিজ্ঞানের গবেষনাগারের যত যন্ত্রপাতি,মেশিন,সব মজুত আছে।একটা বেশ বড় দূরবীন বন্ধ জানলার পাশে দাঁড় করানো আছে। চারিপাশের জঙ্গলের ঝোড়ো হাওয়া জানলা খুলতেই ঘরটা ঠান্ডা করে দিলো।সেখান থেকে ঝরণা টাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।চাঁদের আলোতে জলের ধারাগুলো রুপোর মতো ঝকঝক করছে।


ঝর্ণার মিষ্টি জল পানীয় হিসেবে খুব উপকারী।হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।বিছানা পত্রের ধুলো ঝেড়ে কটেজ থেকে বেরিয়ে সোজা গেলেন ঝর্ণার সামনে।হাতে নিজের বানানো একটা অত্যাধুনিক টারবাইন।সেটার সাহায্যে জল তুলে বেশ কটা বালতি জল তুলে এনে ঘরে রাখলেন।এতে বেশ কদিন রান্না খাওয়া চলে যাবে।ঝরণার ঠান্ডা জলে স্নানটাও সেরে নিয়ে কটেজে ফিরলেন। ইন্ডাকশন নিয়ে এসেছেন এবার সাথে করে।রাতটা নুডলস সেদ্ধ করে মশলা দিয়ে খেয়ে বিছানার ওপর ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে উপহার পাওয়া 'সায়েন্স ম্যাজিক অফ দি আর্থ' নামের বইটা পড়তে শুরু করলেন।এতদিন যত ইনভেনশন উনি করেছেন তার কোলাজ হলো এই বইটা।রাত প্রায় মধ্য।বইটা পড়তে পড়তে অনেক পুরোনো স্মৃতি স্পার্ককে অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলো।দূরবীনটা নিয়ে জানলা দিয়ে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র দেখতে লাগলেন।সেই গোলাপী রঙের গ্রহটা দীর্ঘ পঁচিশ বছর আর দেখতে পান না।অনেক চেষ্টা করেও সিগন্যাল পান নি।সিগন্যাল ছাড়া কোন গ্রহের অবস্হান বোঝাও যায় না।একবারের পর তাই আর সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।ধীরে ধীরে কাজের চাপ। বিদেশে ঘোরা।নতুন ইনভেনশন এসবে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে এখানে আর আসাও হয়ে ওঠেনি ওঁর।এরপর গোলাপী গ্রহ থেকে ফিরে সেখানকার লোকদের সাথে মাস ছয়েক যোগাযোগ রাখতে পেরেছিলেন।তারপর একদিন প্রচন্ড ঝড় জলে উত্তাল প্রকৃতি।সেদিন দ্বিতীর বার ওঁর গোলাপী গ্রহে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু মেশিনটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলো।একটা সুইচও কাজ করছিলো না।কিছুতেই টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছিল না।তাই বার বার মেশিন অকেজো হয়ে গিয়ে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো।ঝড়ের দাপট থামলো প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টা পর।সেই রাতেও আবার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন যাবার।কিন্তু সেই গ্রহটাই আর মিললো না।দীর্ঘ আরো একবছর কাজের ফাঁকে প্রতিমাসেই আসতেন যদি গ্রহটার খোঁজ পাওয়া যায়।কিন্তু না! কোন খোঁজ আজ অবধি পাওয়া যায়নি।এই গ্রহটার আবিষ্কার প্রথম উনিই করেন।বিজ্ঞান মহলে আলোড়ন ওঠার আগেই তা বন্ধ হয়ে যায় প্রমানের অভাবে।হঠাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্হান দেখতে দেখতে বার বার চোখে পড়ছে একটা বেগুনী রঙের রশ্মি।ভালো করে দেখছেন।খুব উজ্জ্বল।এটা সামান্য রশ্মি বলে ওঁর মনে হচ্ছে না।দীর্ঘদিন বাদে আবার নতুন গ্রহ ইনভেনশনের নেশায় ছুটলেন বিজ্ঞানের গবেষণাগারে।ঝটপট সাজিয়ে ফেললেন কন্ট্রোল রুম।হেডফোন, সব যন্ত্রপাতির ধুলো ঝেড়ে বসে পড়লেন আর একটা দূরবীনে চোখ দিয়ে।অনেক চেষ্টা করছেন সঠিক দিকনির্ণয়ে ব্যর্থ হলেন। হেডফোনটা খুলতে যাবেন এমন সময় ড্রয়ার থেকে দিক নির্নয়ের ঘড়িটা বেজে উঠলো।পিক পিক করে।সঙ্গে সঙ্গে সেটা বের করে অবাক হয়ে গেলেন, এতো গোলাপী গ্রহের সুন্দরী কিজোটার সিগন্যাল! এইটা তো ওই ওঁকে বানিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।ওর সাথে কথা বলার জন্য।স্পার্কের চোখ ভর্তি জল, তবে আবার ওঁর ভালোবাসার দেখা পাবেন।কিন্তু এটা তো কিজোটার গোলাপী গ্রহের দিক নির্নয় করছে না।সেটা তো এতো কাছে ছিলো না।ওঁর পৌঁছাতে কয়েক মাস লেগেছিলো।নিজস্ব সৃষ্টি সব থেকে দ্রুততম যান ZAK1 চড়ে।এই সিগন্যালটা মাত্র পৃথিবী থেকে পাঁচ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে।সিগন্যালটা ইন্ডিকেট করছে বেগুনি রশ্মিটাকে।অবাক হয়ে যাচ্ছেন এত বছর পর খোঁজ পেয়ে। তবে কি কিজোটার ঘড়িটা কেউ চুরি করে নিয়েছিলো! তাই এই বিপত্তি?যোগাযোগ বিচ্ছিন্নর পর কোনভাবে পাসওয়ার্ড পেয়ে গিয়ে কোন বিজ্ঞানী কি ছক করেছেন এই সৃষ্টি কার জানতে?তবে কি কিজোটা আর বেঁচে নেই?শুনেছিলের গোলাপী গ্রহের মানুষদের তিন-চারশো বছর অবধি আয়ু থাকে।যদি না তুষার ঝড়ে গ্রহের ধ্বংস হয়।এই গ্রহে আলোর দেখা নেই, সর্বক্ষন অন্ধকার।এতেই এঁরা অভ্যস্ত।এঁরা আলো সহ্য করতে পারেননা।তাপ পেলেই এদের গায়ের চামড়া বরফের মতো গলে যাবে।গাছপালা বলতে অর্কিড জাতীয় কিছু উদ্ভিদের দেখা মেলে,সেটা একপ্রকার তরলের হ্রদের তলায়,সেখানে আছে অফুরান খাদ্যের ভান্ডার আর আছে হ্রদের সুমিষ্ট গোলাপী পানীয়।স্পার্কের সেটা খেয়ে মনে হয়েছিলো স্ট্রবেরী আইসক্রিম গোলা জল খাচ্ছেন।সেটা পরীক্ষা করে স্পার্ক দেখেছে ওতে শরীরের ক্যালোরী রক্ষার সব গুন আছে।এমন কি খনিজ গুনেও ভরপুর।এসব খেয়েই ওঁরা বাঁচে।বেগুনী রশ্মির কাছ থেকে সিগন্যালটা ক্রমশ এগিয়ে পৃথিবীতে ঢুকছে।বেগতিক দেখে স্পার্ক হাতের সুইচটা অফ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন।বিচ্ছিন্ন করার পর ভাবছেন হইতো কিজোটাই অন্য কোন যানে করে ওর খোঁজ করছে। গেলেন, এটা একটা যান না গ্রহ সেটা বোঝা যাচ্ছে না।এগিয়ে যখন আসছে তবে কোন গ্রহযানই হবে।আবার নতুন করে সব সাজিয়ে বসলেন, না!আর সিগন্যাল আসছে না।


মেঘ মুক্ত আকাশে হঠাৎ কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলো।ঝড়ের দাপট শুরু হয়ে গেল।দূরবীনে আর কোন বেগুনি রশ্মি ধরা পড়ছে না।সিগন্যাল পাওয়া দূর।পিক পিক শব্দে হাতের ঘড়িটা জানান দিচ্ছে যন্ত্রে কোন সিগন্যাল ধরা পড়ছে না।পরের দিনও যথারীতি রাতের দিকে হা হুতাশ করে বসে আছেন স্পার্ক দূরবীনে চোখ লাগিয়ে।না! কিচ্ছু নজরে নেই।তারকা রাশির মাঝে কোন গ্রহ বা গ্রহযানের চিন্হ অবধি নেই।রাতের খাওয়া শেষ করে বই নিয়ে শুলেন।কিছুতেই ঘুম আসছে না।মন বলছে সব পেয়েও হারালেন।মধ্যরাতের দিকে আবার দূরবীনে চোখ রেখে আকাশের মাঝে খুঁজছেন বেগুনি রশ্মিটাকে।সিগন্যালের অপেক্ষায় বসে।নিজেই জিকোটার কোডে সিগন্যাল দিতেই সিগন্যাল ক্যাচ করলো।ক্ষীণভাবে ভেসে আসছে একটা কন্ঠস্বর।শুধু মিস্টার স্পার্ক কথাটা শুনতে পেলেন।স্পার্ক নিশ্চিত এটা কিজোটার কন্ঠস্বর।কারণ ওঁর নাম জানা অন্য গ্রহের লোকের পক্ষে সম্ভব না।ওঁকে যেতেই হবে এবার বেগুনি রশ্মির কাছে।ধুলো জমা গ্রহযানটা সক্রিয় করে তুললেন সারারাত ধরে।পরেরদিন মধ্যরাতে সিগন্যাল পেতেই বেরিয়ে পড়লেন গ্রহযানে করে।অনেক দূর গিয়ে সিগন্যাল বিভ্রান্তি ঘটছে, ঝড়ের মুখে গ্রহযান।আবার কিছুটা এগোতেই সিগন্যাল পাওয়া গেলো।এইভাবে কেটে গেলো পনেরোদিন।পৃথিবী পেরোলো গ্রহযান।বেগুনি গ্রহ আর বেশী দূরে নেই।এটা খুব একটা আয়তন বিশিষ্ট হবে বলে মনে হচ্ছে না স্পার্কের। সেই পথেই মিললো আরো একটা গ্রহপথ।যদি খুব ভুল না করেন স্পার্ক এই পথ ধরে বেঁকে তিনি গিয়েছিলেন গোলাপী গ্রহে।কিন্তু বেগুনি গ্রহের পথ সোজা।ধীরে ধীরে আর একটুও সিগন্যাল বিভ্রান্তি ঘটছে না।বেশ বুঝতে পারছেন আর মাত্র এক আলোক বর্ষ দূরে স্পার্ক।অবশেষে হিমশীতল গর্ভ গৃহে প্রবেশ করলো স্পার্কের গ্রহযান।চারিদিকে বেগুনি ছটা।দিন-রাতের ফারাক বলে এখানে কিছু নেই।যান থেকে ওঁকে বেরোতে দেখেই বেগুনি রঙের একদল লোক তেড়ে এলো।গ্রহযান বিকল করে দিলো।স্পার্ক নিজের নাম ইংরেজিতে বলতে সবাই থেমে গেলো।একজন অতীব সুন্দরী যুবতী বেগুনি রশ্মির ছটার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে এসে স্পার্কের সাথে হাত মেলালো,ইংরাজিতে বললো "হাই আই অ্যাম স্পার্কলিন",ওয়েলকাম।প্লিজ কাম উইথ মি"।বলে গটগট করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।পেছন পেছন স্পার্ক ওকে অনুসরণ করে এগোচ্ছেন।স্পার্ক লক্ষ্য করছেন কি স্মার্ট মেয়েটা।পরণে পশুর ছালের পোশাক।সব লোক গুলোকে সরিয়ে মেয়েটা স্পার্কের যাওয়ার পথ করে দিলো। আরো দেখছেন স্পার্ক গায়ের রঙ পুরো ওঁর মত।এমনকি মুখের আদলও।স্পার্ক ভাবছেন এই কি সেই মেয়ে?যে ওঁর আর জিকোটার মিলনের সম্পদ।জিকোটার মাথায় চুলের বদলে চোখ বিশিষ্ট শুঁড় ছিলো।গোলাপী গ্রহের সবাই এমনই ছিলো।কারো মাথায় চুল ছিলো না, তার বদলে চোখ বিশিষ্ট শুঁড় ছিলো।মেয়েটিরও তাই আছে।ধীরে ধীরে বেগুনি রশ্মির মধ্যে দিয়ে একটা গুহায় প্রবেশ করলো। গুহার চারপাশটা বরফের আস্তরনে ঢাকা।এখানে অক্সিজেনের মাত্রা পৃথিবীর মতোই।আলাদা করে অক্সিজেন মাস্ক তাঁর লাগছে না।গুহার ভেতরে গাছের সমাবেশ।ছোট ছোট টমেটোর মত ফল ফুটে আছে।আরো অদ্ভুত সব গাছ ও তার ফল ।


গুহা পেরিয়ে এলেন স্বপ্নপুরীর মতো পাহাড় কেটে বানানো বাড়িতে।বাড়ির গায়েও বরফের আস্তরণ।ভেতরে ঢুকলেন স্পার্ক।দেখলেন সাদা পাথরের বিছানায় পেছন ফিরে শুয়ে একজন মহিলা।পরণে পশুর ছালের পোশাক।মেয়েটা এগিয়ে গিয়ে নিজের ভাষায় মহিলাকে ডাকলেন এ ভাষা গোলাপী গ্রহে থাকাকালীন স্পার্ক শিখেছিলেন।এদের সব সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ।জিকোটা নামটা স্পার্কের দেওয়া।জিকোটাকেও স্পার্ক শিখিয়েছিলেন ইংরেজি ভাষা বলতে,লিখতে।যতটা শিখলে ওঁদের মনের ভাব বিনিময় করতে সহজ হবে তার বেশী শিখে ফেলেছিলো জিকোটা।খুব পরিস্কার ছিলো ওর ব্রেন।সহজেই সিগন্যাল পাঠানোর ঘড়িটার কাজ শিখে ফেলেছিলো।এখানে আবার ফিরে আসবেন মনস্হির করে অনেক মূল্যবান বই জিকোটার কাছে রেখেই ফিরে গিয়েছিলেন পৃথিবীতে।মেয়েটা স্পার্ককে ইংরাজিতে বললো এটা ওর মা,উনি মৃত্যু শয্যায়।মাঝে মাঝেই ওঁর জ্ঞান চলে যায়।জ্ঞান এলে দেখা করাবে বলে স্পার্ককে মেয়েটি খাবারের একটা থালা এগিয়ে দিলো।গ্রেভি টাইপের কিছু পাথরের বাটিতে।থালাটাও পাথরের।তারপর কিছু অজানা ফলের মতো নিয়ে এসে দিলো।স্পার্ক সব কিছু খাওয়া শেষে ওঁকে একটা আলাদা ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দেখিয়ে দিলো স্পার্কলিন।কিছুক্ষন পর স্পার্ককে একজন ধাক্কা দিয়ে তুলে ওদের ভাষায় বললো "ম্যাডামের জ্ঞান ফিরেছে,আপনি আসুন"।ওই ঘরটায় গিয়ে দেখলেন স্পার্ক কত রুগ্ন হয়ে গেছে জিকোটা।গোলাপী গায়ের রঙের আভাতে বেগুনী রশ্মি পড়ে গায়ের রঙটা একটা অদ্ভুত মত দেখাচ্ছিল।স্পার্ককে দেখে ঢুলু ঢুলু চোখে দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করতে চাইছে।স্পার্ক দৌড়ে গিয়ে ওকে আলিঙ্গন করে কেঁদে ফেললেন।হার্টবিট অতি ধীর।থেমে থেমে চলছে।ইশারা করে স্পার্কলিনকে দেখিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে ইংরেজিতে বললো "এ আমাদের মেয়ে স্পার্কলিন"।স্পার্কলিন জিকোটাকে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে স্পার্ককে বললো "উনি আর দুদিন বাঁচবেন।আমি দীর্ঘ দশ বছর আপনাকে খুঁজে গেছি।এতোদিনে পেলাম"।স্পার্ক তখন বললেন তিনি আসতে গিয়েও সেদিন আসতে পারেননি।সিগন্যাল সেই যে চলে গেলো আর একবছর টানা না কোনো সিগন্যাল না কোন গোলাপি গ্রহ, কিচ্ছুর দেখা মেলেনি।এরপর স্পার্কলিন সব ঘটনা খুলে বললো," যদিও তখন ওর জন্ম হয়নি সব মায়ের মুখে শোনা। সেইদিন ধেয়ে এলো তুষার ঝড়।পুরো গ্রহকে ঢেকে গাছের মতো উপরে নিয়ে গিয়ে ফেলল কোটি কোটি আলোক বর্ষ দূরে।সেই অবস্হা থেকে মুক্তি পেতে কেটে গিয়েছিল কয়েক মাস।ঝড় থামলেও পুরো গ্রহে চারশত বাসিন্দার মধ্যে জীবিত থাকলো মাত্র দেড়শত জন।আমি জন্মালাম।ধীরে ধীরে বড় হলাম,আপনার কথা জানলাম।মায়ের থেকে শিক্ষালাভ করলাম।আপনার বিজ্ঞানের বইগুলো পড়তে ভালো লাগা থেকে আমিও সৃষ্টি কার্যে জড়িয়ে ফেললাম নিজেকে।মা বলেছিলেন রক্ত কথা বলে।তার প্রমান আমি।আপনার দেওয়া বিকল হওয়া মায়ের ঘড়িটা একদিন চালুও করে ফেললাম।কত এখান থেকে চেষ্টা করেছি কোন যোগাযোগ স্হাপন করতে পারিনি।আমাদের গ্রহের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তিনশত ছাড়িয়ে গেলো।ততদিনে আমার তৈরী বেগুনি গ্রহযন্ত্র তৈরী হয়ে গেছে।এটা এতটাই শক্তিশালী করে তৈরী করতে সক্ষম হয়েছি এর ভেতরে আমি একটা পুরো গ্রহরাজ্য স্হাপন করতে সক্ষম হয়েছি।এটা চলমান গ্রহ।এখানে প্রান ধারণের সব উপকরণ সৃষ্টি করেছি কৃত্রিম ভাবে।পৃথিবীর মানুষ জনও যাতে অনায়াসে এখানে বসবাস করতে পারে তার জন্য সূর্যের বদলে বেগুনি রশ্মিতে পরিপূর্ণ করেছি গ্রহরাজ্য।দিন-রাতের আবর্তমান হয় না ঠিক।এখানে সারাক্ষন বেগুনি আলো বর্তমান।প্রকৃতির ঠান্ডা এখানে সর্বদা।পৃথিবীর মত বৈদ্যুতিক ব্যবস্হার প্রয়োজন হয় না এখানে।জীবিকা বলতে বৃক্ষরোপন,তাদের পরিচর্যা করা।সেখান থেকে সবার খাদ্যের ভালোমত যোগান হয়ে যায়।এই গ্রহের মানুষদের আয়ু একশত।আর মায়ের বয়স আর দুদিন পর হবে একশত।তাই তার শেষ ইচ্ছে রাখতে নিয়মিত চলমান গ্রহযান নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম।আশা ক্ষীণ হলেও নিরাশ হইনি"।বলে স্পার্কলিন কিজোটাকে ধরে কাঁদতে লাগলো।স্পার্ক মেয়েকে সান্তনা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন "আমি তোমার জন্মদাতা পিতা,তোমার সব দায়িত্ব আমার, আর এমন আশ্চর্য প্রতিভা বিরল।নিজের প্রচেষ্টায় তুমি একটা আস্ত গ্রহের সৃষ্টি করেছ।যা পৃথিবীতে আলোড়ন তুলবে।প্রকাশ্যে আমার ঔরসজাত সন্তানকে আনবোই"।কিজোটা দুদিন বাদে মারা যেতেই মেয়েকে নিয়ে স্পার্ক ফিরে যেতে চাইলেন পৃথিবীতে।স্পার্কলিন নতুন গ্রহ দেখার আনন্দে হ্যাঁ বলতে সব বাসিন্দারা স্পার্ককে ঘিরে ধরে আন্দোলন শুরু করে দিলো।কিছুতেই ওকে নিয়ে যেতে দেবে না।স্পার্কলিন কথা দিলো ও এই গ্রহ ছেড়ে চির বিদায় কোনদিন নেবে না।


আবার ফিরে আসবে বলে স্পার্কের বিকল যন্ত্রটা অনেক চেষ্টা করেও যখন ঠিক করতে পারলো না তখন গ্রহযন্ত্র থেকে বেগুনি গ্রহকে বের করে দিয়ে বেগুনি গ্রহযানে ফিরে গেলো পৃথিবীতে।ওদের কাছে ঘড়িটা দিয়ে এলো যোগাযোগের জন্য।পৃথিবীতে ঢুকতেই আলোর ঝলকানিতে স্পার্কলিনের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।এই সময় বিজ্ঞান মহল উত্তাল দিনের আকাশে বেগুনি গ্রহযানের দেখা মিলেছে সেটা একটি জঙ্গলে মিলিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।বিজ্ঞান মহলের সাংবাদিক মিটিং ডেকে সব বলাতে সূত্র ধরে সবাই ছুটলেন জঙ্গলে।ঠিক দেখতে পেলেন বেগুনি রশ্মি ঠিকরে পরা একটা গ্রহযান, কাঠের কটেজের সামনে।কটেজের দরজায় টকটক আওয়াজ শুনে বেরিয়ে এলেন স্পার্ক।সবাই স্পার্ককে এখানে দেখে অবাক।সবাইকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করালেন মেয়ে স্পার্কলিনের সাথে।উঠে এলো গোলাপি গ্রহের অতীত।বেগুনি গ্রহের সৃষ্টির ইতিহাস।বিজ্ঞান জগতে আলোড়ন তুললো বাবা-মেয়ের কীর্তি।দুজনকেই পুরস্কৃত করা হলো বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান মহল থেকে।পাকাপাকি ভাবে পৃথিবী বাসিরাও যাতে ওখানে ভবিষ্যতে বসবাস করতে পারেন তার দায়িত্ব নিলেন স্পার্ক।মেয়েকে নিজেই ট্রেনিং দিয়ে বড় বিজ্ঞানী হওয়ার পথে এগিয়ে দিলেন।দুই গ্রহের বাসিন্দা স্পার্কলিনের মাথার অংশটুকু বাদ দিলে কেউ ধরতেই পারবে না ও পৃথিবীর মানুষ না।বেগুনি গ্রহের লোকেরা জামা-কাপড়ের ব্যবহার শিখেছে।সব যোগান দেয় বাবা-মেয়ে।খুলেছে বিদ্যালয়।বানিজ্যের ধাপে এবার এদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করলেন স্পার্ক। ধীরে ধীরে এটাও হয়ে উঠবে একদিন পৃথিবীর মতো সবদিক দিয়ে উন্নত গ্রহ,বেগুনি গ্রহ।।


      সমাপ্ত:-

      *****


Rate this content
Log in

More bengali story from Sandipa Sarkar

Similar bengali story from Fantasy