STORYMIRROR

Sandipa Sarkar

Romance

2.8  

Sandipa Sarkar

Romance

সে প্রথম প্রেম আমার

সে প্রথম প্রেম আমার

4 mins
1.6K


তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।গায়ক নচিকেতা আজও আমার প্রিয় গায়কদের মধ্যে একজন। তাঁর 'সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা' গানটা আমার হৃদয়ে দামামা বাজাতো।না শুধু প্রিয় গায়কের গান বলে না।সেই গানটার সাথে আমার জীবনের মিল ছিলো।একটি মেয়ে, যতদিন তার নাম জানিনি ততদিন আমার কাছে সে নীলাঞ্জনাই ছিল।আর সেই গানটার ছেলেটার মতো আমিও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতাম রাস্তার মোড়ে।সে সময় আবার 'মহব্বতে' সিনেমাটা নতুন এসেছিল,মাথাটা একদম প্রেম জোয়ারে ভেসে যাওয়ার মতো হয়েছিল।মাখো মাখো প্রেম এবার আমারও চাই।দু একজন বন্ধুর সেটিং তখন হয়ে গেছে।ওদের প্রেম দিবস পালন দেখে নিজেরও মনে প্রেমের ছোঁয়াচে আগুন গনগন করে জ্বলছে।সাথে 'নীলাঞ্জনা' আর 'মহব্বতে' আমাকে টেনে নিয়ে গেলো প্রেমের পথে।না! আমি শুধু 'নীলাঞ্জনা' গানের ছেলেটির মতো দেখে ভ্যাবলাকান্ত হয়ে থাকিনি।'মহব্বতের' থিম সঙটাও তো বাজতো বুকের বাম পাশটায়।


ব্যস! সেই গানের কলি মনে সাহস দিলো হাতে ফুল নিয়ে সটান চললাম সুন্দরীকে প্রপোজ করতে।প্রথমে যা হয়, পাত্তা না পাওয়া।কুছ পারোয়া নেহি! পটাতে হবেই।প্রথম প্রেম এ ভাবে ভুলতে পারা অসম্ভব।ভুলবই বা কেন?এর ফাঁকে মেয়েটির নাম বলে রাখি বেলা।না অঞ্জন দত্তের 'বেলা বোস' হতে দিইনি তাকে।'চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো' বলার মতো পরিস্হিতিই হতে দিইনি।সব বলছি, প্রেমের গাড়ি এগোলো না মাঝ পথেই হাওয়া বেড়িয়ে গেছিলো।


রাজি হবিনা? করলাম প্ল্যান।ও না তো 'কোই অর সহি' বলে টোপ দিলাম ওরই বেস্ট ফ্রেন্ডকে।ওর সামনেই প্রপোজ করলাম মাঝ রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে।ফুল একসেপ্ট হয়ে প্রেমের অনুমতি মিলতেই প্রেম চলল ওর সাথে।এই চলাটাতেই বেলা রায় কাবু হয়ে গেল।ওর বান্ধবীটির নাম মধুশ্রী।মধুশ্রী ধীরে ধীরে বেলার কাছে খলনায়িকা হয়ে উঠছিলো।আমি কিন্তু প্রেমটা চালাচ্ছি ভালোই।চকলেট,ঘড়ি সব উপহারও দিয়ে যাচ্ছি।মালয়েশিয়া ঘুরতে গিয়ে ঘড়িটা এনেছিলাম।মধুশ্রীর একটি স্টেডি বয়ফ্রেন্ড ছিলো।সেটা বেলা জানতো।হয়তো আমাকে ঠকাচ্ছে আবার উপহারও নিচ্ছে বলেই আরো ক্ষিপ্ত হয়ে একসময় কথা বলাই বন্ধ করে দিল। একদিন মধুশ্রীর জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি,হঠাৎ বেলা স্কুল বাস থেকে নেমে গটমট করে আমার সামনে এসে মধুশ্রীর প্রেমিক আছে সহ আমি ঠকছি সব গড় গড় বলে যাচ্ছে।


কি অপরূপ সুন্দরী বেলা! তাকিয়ে থাকতে মন চায়।এর কাছে হাজার মধুশ্রী কুরবান।এত কথা বলছে, একবার এটা বলছেনা আমাকে সে ভালোবাসে।মনটা খালি জপে চলেছে, একবার বলো বেলা! একবার।আরে! দাঁড়ান-দাঁড়ান মহিলাগন জমিয়ে গালি দিচ্ছেন ক্যারেকটারলেস ছেলে,ফ্লার্ট বয় বলে।কি করবো বলুন?'ভালোবাসা আর যুদ্ধে সব চলে' কথাতেই আছে।এবারটা শুনলে বুঝবেন আমি কতটা ফ্লার্ট মাস্টার।গালিগুলো বাঁচিয়ে রাখুন না হয় পুরোটা পড়েই দেবেন।


ততদিনে আমার জয়েন্টের রেজাল্ট বেড়িয়ে গেছে।মেডিক্যালে চান্সও পেয়ে গেছি।উচ্চমাধ্যম

িকের রেজাল্ট বেড়িয়ে গেলে পড়তে বাইরে চলে যাবো। আমি স্হির চোখে বেলাকে দেখছি।হঠাৎ বেলা কথা শেষে মুখের কাছে হাতটা নিয়ে,


"হ্যালো! কথাগুলো তোমাকে বলছি।মুখে কি দেখছো?আমার মুখে কিছু লেখা নেই।আরো ভালো মেয়ে আছে,তার জন্য প্রেমের ফিলিংসটা বাঁচিয়ে রাখো। ওকে!লিভ মধুশ্রী"।

আমিও রোমিও মেজাজে বলে ফেললাম,


"ভালো মেয়ের দলে তো তুমিও পড়ো! আসবে আমার জীবনে"?


আমি তখন পুরো আন-কন্ট্রোল।এটা রাস্তা ভুলে গেছি।মনে হচ্ছে চারিদিকে লাল গোলাপের বাগানের মাঝে আমরা দুজন দাঁড়িয়ে।ওপরদিকে কানে ভেসে আসছে 'মহব্বতের' গান 'হামকো হামিসে চুরালো'।আমার মন বলছিলো আজ যদি না বলি হয়তো আর কোনোদিন বলা হবেনা।

বেলা হঠাৎ বলে উঠলো,


"ইউ অলসো আ ফ্লার্ট বয়।ঠিকই আছে, রতনে রতন চেনে।ক্যারি অন"।

"নো! আই অ্যাম নট ফ্লার্ট বয় ড্যাম,মধুশ্রী আজ আসবেনা জেনেও এখানে দাঁড়িয়ে আছি।রোজ দাঁড়িয়ে থাকি শুধু তোমাকে দেখবো বলে।ভেবেছিলাম আমাদের দেখে জেলাস হয়ে আমার প্রপোজাল অ্যাকসেপ্ট করবে।আজ রিয়ানের বার্থডে সেলিব্রেট করতে মধুশ্রী-রিয়ান ঘুরতে বেড়িয়েছে।রিয়ানও মেডিক্যালে চান্স পেয়ে গেছে।আর আমিও।এটা কতবার তোমাকে বলবো ভেবেও বলতে পারেনি।মধুশ্রী আমার বন্ধু রিয়ানের গার্লফ্রেন্ড।দে লাভ ইচ আদার।ওরা জানে ভালোবাসা কি! সেটা না পেলে কতটা কষ্ট হয়।মধুশ্রী জাস্ট হেল্প করছিলো।মালয়েশিয়া থেকে ঘড়িটাও শুধু তোমার জন্যেই এনেছিলাম।ভেবেছিলাম যেদিন তোমার মন গলবে তোমাকে দেবো।আই লাভ ইউ সো মাচ"।


আমি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে বলতে কেঁদে ফেলে রাস্তায় মুখ ঢেকে বসে পড়েছি।ওদিকে বেলাও নাকের জলে চোখের জলে হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়েছে।দুজনে যখন বিভরতা কাটিয়ে আশে-পাশে তাকালাম ভিড় করে সবাই যেন শুটিং দেখছে।সম্প্রতি মেট্রোতে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা জড়িয়ে ধরে যা বেধড়ক মার খেলো! ভাগ্গিস মেট্রোর দাদুর মতো কেউ সেই ভিড়ের মধ্যে সেদিন ছিলেন না! তবে নির্ঘাত পশ্চাৎদেশে জুতোর বাড়ি পড়া থেকে কেউ আর বাঁচাতে পারতোনা।


ভাবছেন তো তারপর কি হলো?প্রথম প্রেম টেকেনা বেশীর ভাগেরই এমন অভিমত। 'রঞ্জনা আমি আর আসবোনা' গানই বেশীর ভাগ প্রেমের সমাপ্তি টানে।তবে আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি।'দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' গান দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছিল।এক কন্যা,বেলাকে নিয়ে পাঁচবছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়ে ফেলেছি গতকাল বোস্টন শহরে।এখন এখানেই আমাদের বসবাস।রিয়ান-মধুশ্রী আজও পিছু ছাড়েনি।ফরচুনেট ওরাও এখানে থাকে এক পুত্র সন্তান নিয়ে।আমাদের ছেলে-মেয়ে গুলোর মধ্যে এখন থেকে যা ভাব,একে অপরকে চোখে হারায়।ওরা শুধু বন্ধু থাকবে, না নতুন করে প্রেম কাহিনী রচনা করবে তা সময়ের হাতে ছেড়ে দিলাম।

        

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance