Sandipa Sarkar

Tragedy

2  

Sandipa Sarkar

Tragedy

চেতনা

চেতনা

3 mins
1.1K


"ওপাড়ার ছেলেগুলোর জ্বালায় রাস্তায় ঠিক করে মেয়েরা হাঁটা চলা করতে পারে না।সন্ধের পর থেকে গ্রামের মেয়েদের আতঙ্ক হয়ে পড়েছে এই ছেলেরা।কি করা যায় বলুন তো"?

"একদম ঠিক বলেছেন আপনি,এবার একটা ব্যবস্হা নেওয়া দরকার।কার ওড়না টানছে,কার শাড়ির আঁচল ধরে টানছে।এগুলো কাহাতক সহ্য করা যায়!কি করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো তাই ভাবছি"।


দুই বয়স্ক মানুষ একে অপরের সাথে কথা বলছেন।গ্রামের প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে এই চারটি ছেলে, নেপাল-পটা-বুড়ো-পটলা।দুই বয়স্ক লোকের মধ্যে একজন গিয়ে থানায় অভিযোগ জানালেন।যদিও ওদের কেশাগ্র অবধি স্পর্শ করতে পারল না কেউ।নেতার চামচা হওয়ার সুবাদে আর প্রমানের অভাবে চারজনেই ছাড়া পেয়ে যায় প্রতিবার।


সাড়া গ্রাম রাগে ফুঁসছে।আগুন জ্বলছে চারিধারে।গ্রামেরই একজন মাঝবয়সী বৌকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অভিযোগের তীর ওই চারজনের ওপর যাচ্ছে।তবে প্রমাণের অভাবে ওদের পুলিশ ধরতেও পারছে না।জঙ্গলে চারজনে মৌজ করে বসে চাটের সাথে মদ্যপান করছে।দূরে খসখস পাতার সাথে নূপুরের শব্দে নেপাল ঘুরে দেখলো কেউ একজন আসছে।বুঝতে পারছে না এই ঘন জঙ্গলে এত রাতে ঠিক কে আসছে?নিজেদের কৃতকর্মের সাজা পাওয়ার ভয়ও ওদের আছে।তাই ভাবছে পুলিশ ওদের খুঁজতে আসছে না তো?ভয়ে ভয়ে বাকি তিনজনও তাকাচ্ছে পেছনে,প্রচন্ড জোরে বাজ পড়ে চারপাশে আলো ঠিকরে পড়লো।চারজনে জিভ লকলক করে উঠলো!মুখটা ঠিক মতো দেখা না গেলেও শরীরের ঢেউ খেলানো বক্ষযুগল নজরে পড়তে ওদের মধ্যে পটলা বলে উঠলো,

"এ রাতটা শুকনো মুখে যাবে ভেবেছিলাম,না! এতো নিজেই হালাল হতে এদিকে আসছে রে।চল জঙ্গলে এবার মঙ্গলটা করে নি।


চার জনের মধ্যে নেপালের নেশা বেশী চড়ে গেছে বলে নিজেকে ঠিক করে তুলে ধরে দাঁড়াতে পারছে না।ও শরীর তুলে নেশাতুর চোখে তাকানোর আগেই পায়ের নূপুরের আওয়াজ থেমে গিয়ে চিৎকারে ভরে গেলো জঙ্গল।প্রথমে ঝাঁপালো পটলা,তারপর পটা,তারপর বুড়ো, মেঘের কড়কড়ানির শব্দে মেয়েটার গোঙানি থেমে থেমে কানে আসছে নেপালের।চোখ বড় বড় করে দেখছে বিদ্যুতের ঝলকানিতে পা গড়িয়ে রক্তের ধারা বেয়ে আসছে, শেষ জনের পাশবিকতা শেষ হলে নেপাল জিভটা চেটে নিয়ে,


"কি রে বেঁচে আছে তো আমাকে তৃপ্ত করতে?"

বলে টলমল পায়ে এগোচ্ছে, তৃপ্ত তিনজন একে অন্যের সাথে হাইফাইভ ভঙ্গিতে হাত মিলিয়ে বলাবলি করছে,

"মালটা পুরো টাটকা ছিলো"।


ততক্ষনে নেপাল শরীরটাতে ঝাঁপাতে গিয়ে বিদ্যুতের ঝলকানি গিয়ে পরলো নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোনো মুখটাতে।চমকে উঠলো নেপাল,

"এ কি করলি তোরা?ওঠ!বোনটি ওঠ।"


বাজের আওয়াজ আর হাসির রোলের মাঝে ওর কান্নামাখা গলার আওয়াজ বাকী তিনজনের কানে গেলো না।পাগলের মতো বোনের গা জামা দিয়ে ঢেকে বাকী তিনজনের দিকে উদভ্রান্তের মতো তেড়ে এসে মারতে লাগলো।নিস্তব্ধ তিনজন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে, গাছের গায়ে পিঠ ঘষতে ঘষতে নেপাল বসে পড়লো গাছের গোড়ায়।


এবারে প্রমাণের অভাব না ঘটাতে নেপাল বাদে তিনজন বন্দী হলো আইনের হাতে। নেপাল সব হারিয়ে ফেলেছে।সেই রাতে বোনটা দৌড়ে আসছিলো দাদাকে মায়ের শরীর খারাপের খবর দিতে। বাড়ি গিয়ে মাকেও মৃত দেখে সে।উদাস হয়ে প্রতিরাতে বসে থাকে সেই জঙ্গলের গাছের তলায়, নূপুরের আওয়াজ শুনতে পাওয়ার লোভে।বোনটা আজ তারই কৃতকর্মের ফলে চলে গেলো।আজ সে বুঝতে পারছে কত দাদাকে সে চোখের জল ফেলিয়েছে।গাছে হেলান দিয়ে বসে চোখ লেগে এসেছে নেপালের। কানে আসছে নূপুরের শব্দ,নেপাল চোখ মেলে তাকালো, সামনে একটা দুধ সাদা পোশাকের পরী তার সামনে এসে শূন্যে ভাসছে।পরীর চেহারায় দুটো মুখ।একটা পাশে নেপালের বোনের মুখ, অন্যপাশে সেই হারিয়ে যাওয়া বৌ-টার।নেপাল স্বপ্নের আকাশে ভাসছে,সাদা সাদা তুলোর মেলা। নেপালের শরীর হালকা পালকের মত ভাসছে সাদা তুলোর ভেলায়।পরীর যাদুকাঠি ঠেকলো নেপালের মাথায়,ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে নেপাল। হাত জড়ো করে নেপালের মুখ থেকে উচ্চারিত শেষ বাক্য "ক্ষমা করো সবাই"।চোখ ঠিকরে বুক চীরে বেরিয়ে যাচ্ছে নেপালের বাষ্পাকৃতি আত্মা।

পরদিন সকালে নেপালের দেহটা পাওয়া গেলো গাছে হেলান অবস্হায়।বেওয়ারিস লাশটা চললো ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কাটা ঘরে। এরপরের ঠিকানা মর্গ।।


(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy