একই অঙ্গে দুই রূপ
একই অঙ্গে দুই রূপ


"গো-ও-ও-ল"!
"আরে দীপু কি খেললি রে তুই! অসম্ভব ভালো"।
"ওয়েলডান দীপু"....
প্রতিবারই পাড়ার ফুটবল ম্যাচে দীপু ট্রফি আনবেই।ক্লাবগুলো ওকে ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে খেলায়।ও নিজেও ফুটবল পাগল ছেলে।সেকেন্ড ডিভিশন লিগেও খেলেছে দীপু।আর দু'মাস বাদেই ওর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।পড়াশোনাতেও তুখোড় ছেলে।সবাই অপেক্ষায় আছে হবু ডাক্তারদের মধ্যে একজন হিসেবে দীপুকে তারা দেখবে বলে।বাড়িতে এই খেলার জন্য রোজ বকা খায় সে।তবু খেলার ভূত মাথা থেকে কিছুতেই নামাতে পারে না সে।কি একটা অজানা টানে সে বল মাঠে করে দৌড়ে বেড়ায়।তখন পড়া-শোনা,পরীক্ষা সব কথা ভুলে যায়।
বাড়ির চাপে পরীক্ষার একমাস আগে সে মন দিলো পড়াশোনায়।জয়েন্টে ডাক্তারীতে চান্স পেয়ে গেলো সে।পড়ার চাপে ধীরে ধীরে ফুটবল ওর পায়ের আর ধারে কাছে আসতে পারে না।গ্রাম ছেড়ে চলে গেলো শহরে ডাক্তারী পড়তে।এখানকার পরিবেশে ফুটবলের অস্বিত্ব নেই।সব ছেলেরাই হোস্টেলের খুব পড়ুয়া।দীপুকেও ওদের সাথে তাল রাখতে পড়ুয়া হয়ে উঠতে হলো।কিন্তু সাথে ফুটবলটা ঠিক নিয়ে এসেছে।পড়ার ফাঁকে বের করে কিছুক্ষণ দেখে,হোস্টেলে ওর রুমের অন্য ছেলেরা বাইরে থাকলে পায়ে একটু বলটাকে নাচিয়ে নিয়ে আবার রেখে পড়তে বসে যায়।এভাবে দিন কাটে,দীপু ডাক্তার হলো।আরো ডাক্তারীতে উচ্চশিক্ষার জন্য সে বিদেশ পাড়ি দিলো।এখন দীপু নাম করা ডাক্তার বিদেশের।আমেরিকার একটা হাসপাতালে ও ডাক্তার হিসেবে জয়েন করলো।এখানে ওর মতোই আরো কজন ফুটবল পাগল ডাক্তারের সাথে পরিচয় হলো।সবাই পরিস্হিতির চাপে একদিন নিজেদের শখকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছিলো। দীপু ফুটবলটা ওদের দেখাতে বাচ্চারা যেমন করে ওরাও হাতে নিয়ে একে অপরের সাথে কাড়াকাড়ি করে পায়ে নাচাচ্ছে,কেউ হেড দিচ্ছে,কেউ পুরোনো অভ্যেস আয়ত্বে আছে কিনা দেখতে আঙ্গুলের ঢগায় বলটা নিয়ে ঘোরাচ্ছে।সকলের মধ্যে খুশির জোয়ার।
একদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হলো অন্য হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছে।অনেকগুলো হাসপাতাল যোগদান করছে।এটা হাসপাতালের জন্য "প্রেসটিজ ফাইট"।যারা যারা ফুটবল জানে তাদের সত্বর যোগাযোগ করতে বলা হলো।দীপু সহ বাকী ফুটবলাররা কথাটা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজেদের সেই ছোটবেলাকার ফুটবলার ভাবতে লাগলো।কোমর বেঁধে সবাই নামলো এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জিতেই আসবে।দীপু ওদের হেড হলো।অনেকদিন শরীর চালনা নেই, মাঠে নেমে সবাই হাঁপিয়ে যাচ্ছে একটু দৌড়িয়ে।একমাস সময় হাতে মরণ-বাঁচন পণ নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছে মাঠে নামার জন্য।পনেরো দিনের মাথায় সবাই পুরোনো খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের ফিরে পেলো।দীপুর মনে আবার সেই সুপ্ত খেলোয়াড় জেগে উঠলো যে কোনদিন হারে নি।ট্রফি আনা যার বাঁধা ধরা কাজ ছিলো।
এলো সেই দিন।আগামীকাল আমেরিকার এক নামি ফুটবল স্টেডিয়ামে আয়োজন হয়েছে ফুটবল খেলা।এত বড় স্টেডিয়ামে খেলার সৌভাগ্য এর আগে দীপুর হয়নি।হাসপাতাল থেকে স্টেডিয়ামটা দেখতে গেলো বল হাতে করে আগের দিন ডাক্তার দীপু।স্টেডিয়ামে ঢুকলো,একহাতে বল অন্যহাতে ব্রিফকেস নিয়ে।কাল হবে এখানে জেতার লড়াই।অনেক দিন পর সে ফিরে পাচ্ছে গোলপোস্ট,মাঠ।তার নিজের একান্ত ভালোবাসার হারিয়ে যাওয়া জগত।দীপুর আজ একই অঙ্গে দুটো রূপ।একাধারে নামি ডাক্তার অপরদিকে ফুটবলার। দূরে দাঁড়িয়ে গোল পোস্টটা নিরীক্ষণ করে মনে মনে বলছে দীপু,
"কাল আসছি আবার আমার ফেলে আসা জগতে! দেখা হবে কাল, প্রাইজ হবে আবার ডক্টর দীপুর হাতের মুঠোয়।।
সমাপ্ত:-
*****