Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sandipa Sarkar

Drama

4  

Sandipa Sarkar

Drama

পরিতক্ত

পরিতক্ত

4 mins
1.4K


ট্রেনটা গিয়ে বিকেলের দিকে থামলো সুজা নামের একটা প্রত্যন্ত গ্রাম্য স্টেশনে।পিঠে ব্যাগটা নিয়ে সদ্য ডাক্তার হওয়া পৃত্থীশ এদিক ওদিক চেয়ে দেখছে কেউ তো আশে-পাশে নেই,ট্রেন থেকে নামলো।সোজা হেঁটে চলেছে, জনমানব শূন্য এলাকা।দূরে একটা সাইকেল ক্রিং ক্রিং বেল দিতে দিতে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।ঠিক ওর সামনে গিয়ে সাইকেলটা থামলো।লোকটার মুখে একটা গামছা বাঁধা।লোকটা পৃত্থীশকে সাইকেলে বসতে বলে হাওয়ার বেগে চালিয়ে নিয়ে চলে গেলো ওদের পুরোনো বাড়িতে।ও মনে ভাবছে এই তবে ওদের পুরোনো ভৃত্য হরিদাদু হবেন।ছোটবেলা থেকে নাম শুনেছিলো হরিদাদুর,লোক গেলে তাদের দায়িত্ব নিয়ে উনিই বাড়ি অবধি নিয়ে যেতেন।তবে কোনদিনই দেখা সাক্ষাৎ ঘটেনি পৃত্থীশের তার সাথে।পৃত্থীশের দাদু-বাবা সবাই ছিলেন নাম করা ডাক্তার।একসময় এই বাড়ির নীচটা পুরোটাই হাসপাতাল করেছিলেন পৃত্থীশের দাদু।গ্রামের কারো চিকিৎসার অভাব হতো না।পৃত্থীশকে হরি বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে সব দেখিয়ে বলতে লাগলো ওর দাদুর কথা।কত মহান ব্যক্তি ছিলেন।জীবনে কোনদিন কোন গরীবকে অবহেলা করতেন না।গরীবদের জন্য সর্বদা বিনামূল্যে ওষুধ দিতেন।এসব বলার পরই একটু ক্ষোভ উগরে দিলেন পৃত্থীশের বাবার ওপর।কারণ ওর বাবা ডাক্তারী পড়া শেষে বিদেশ থেকে আর ফিরে আসেন নি। ওখানেই ডাক্তারী শুরু করেন।কিন্তু পৃত্থীশের দাদুর কথামত ওর বাবা দেখা শোনা করবেন এই হাসপাতালের রোগীদের।কিন্তু না! পৃত্থীশের দাদুর মৃত্যুর পর ওর বাবা আর দেশে ফিরে এসে হাসপাতালের দায়িত্বভার নেননি।পৃত্থীশ এখানে এসেছে ওর দাদুর চিকিৎসা শ্রাস্ত্রের কিছু প্রয়োজনীয় ডায়েরী নিতে।সেগুলো খুঁজতেই এখানে আসা।প্রচুর জটিল রোগের ওষুধ নিজের হাতে ওর দাদু তৈরী করতেন।সে তথ্যগুলো ও পেয়ে গেলে চিকিৎসা শ্রাস্ত্রে আলোড়ন আনতে পারবে।মনে হয় হরি ওর মনের কথা বুঝতে পেরেছে।চাবি দিয়ে একটা ঘর খুলে দিয়ে বলল "খোকাবাবু ওই আলমারিটাতে তুমি খোঁজো।বুড়কত্তার সব ডায়েরী পাবে ওখানে,পাশেই চাবি ঝুলছে"।


পৃত্থীশ দৌড়ে ঢুকে আলমারির পাশে ঝোলা চাবিটা নিয়ে সেটা খুলে ডায়েরির স্তুপ দেখতে পেলো।সব হরমরিয়ে পড়ে গেলো। টর্চের আলোতে ভালো দেখা যাচ্ছে না।সবগুলো সকালে দেখে আসল ডায়েরী গুলো নিয়ে যাবে ভেবে আলমারিটা আবার বন্ধ করে দিলো।ওর মনে প্রশ্ন জাগছে গ্রামে না আছে আর বাড়ি, না লোকবসতি!কিন্তু কেন?এই গ্রামটাতো একসময় নিশ্চয়ই লোকবসতি ছিলো,নাতো ওর দাদু হঠাৎ হাসপাতাল বা কেন বানিয়েছিলেন এতো বড় করে?সব জটলা পেকে যাচ্ছে ওর।হরিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল "হরিদাদু,এই গ্রামে আর কোন লোক কেন দেখছি না"?

"আর বলো না খোকাবাবু,সবাই অসুস্হ,কারোর ঘরে কুপি জ্বালার মতোও শরীরে বল নেই।বাইরে আসবে বা কি করে"?

"সেকি!কি হয়েছে সবার?এ গ্রামে আর অন্য ডাক্তার নেই?তাকে গিয়ে দেখাচ্ছে না কেন কেউ"?

"সবার ভরসা ছিলেন তোমার দাদু।তারপর ভেবেছিলাম সবাই তোমার বাবা ভরসা হবেন,না!তিনি তো আর এলেন না।আর কোন ডাক্তার নেই এখানে।পাঁচটা গ্রাম ছাড়িয়ে শহর।সেখানে হাসপাতাল আছে,এতদূর অসুস্হ শরীরে যাওয়া সম্ভব না।ভ্যানচালক যে যাবে, সেও তো অসুস্হ"।

"কি হয়েছে সবার"?

"কালাজ্বর"।

"কি!কালাজ্বর তো দাদুর আমলের রোগ।এখন তো এসব রোগ টীকা করণের ফলে আর হয় না,এক রোগ সারা গ্রামের লোকের কি করে হলো"?

"এ রোগ হলে তো সারা গ্রামই উজার হয়ে যায় খোকাবাবু"।

"আমি দেখতে চাই সবাইকে।এক এক করে কোলপাঁজা করে নিয়ে আসতে পারবে সবাইকে"?

"সবার কথা ছাড়ো,তুমি আমার মুন্নিকে বাঁচিয়ে দাও,তবেই হবে" বলে একটু বাদে কোলে করে সাত-আট বছরের একটা অজ্ঞান মেয়েকে নিয়ে এসে হাসপাতালের একটা বেডে শোয়ালো।সাথে সাথে কত মানুষের গলা।ডাক্তার বাবু বাঁচান বলে পাল পাল লোক যেন হাসপাতাল চত্তর ঘিরে ফেলেছে।পৃত্থীশ দেখছে হরির মেয়েটার গা কি ঠান্ডা,যেন বরফ।নাড়ী টিপে বুঝলো এ বেশ কয়েকদিন আগে মারা গেছে।কি বলবে হরিদাদুকে বুঝতে পারছে না।হরি চোখের জল মুছে বলল "আর নেই"! পৃত্থীশ কি উত্তর দেবে বুড়ো মানুষটাকে বুঝতে পারছে না।র্টচের আলোটা হরির ওপর একঝলক পড়তেই হরির কষ্ট হচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো "সরাও আলো,দীর্ঘদিন অন্ধকারে থেকে এটাই অভ্যেস হয়ে গেছে"।পৃত্থীশ যে এক ঝলক হরিকে দেখলো, তাতে হরিকে বেশ ইয়ং দেখাচ্ছে দেখলো।সব গুলিয়ে যাচ্ছে ওর।কেমন মাথার ভেতরটা করছে পৃত্থীশের।অজ্ঞান হয়ে গেলো সে।সকালে তাকিয়ে দেখছে সারা ঘরে বেড, তারই একটা বেডে ও শুয়ে।ধরমরিয়ে উঠলো।কত হরিদাদু বলে ডাকলো।কারো সাড়া পেলো না।পরিতক্ত বেড বিশিষ্ট ঘরটা ধুলো,মাকড়সার জালে ভর্তি।চারিদিকে কাগজ পত্র,ঠোঙা ছড়ানো।জানলার কাঁচগুলো বেশীরভাগই ভাঙা।ডায়েরী গুলো কাল বের করেছিলো সে গুলো আছে।কিন্তু না দেখলো হরিদাদুকে,না ওর মৃত মেয়েকে।না দলে দলে বাঁচার আশায় আসা মানুষদের।ডায়েরীগুলোর মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় চার-পাঁচটা ডায়েরী ব্যাগে ভরে বেরিয়ে দেখলো কালকের সাইকেলটা।সেটা চালিয়ে স্টেশন অবধি এসে ট্রেনে উঠে পড়লো।


    ************


বিদেশে ফিরে আমতা আমতা করে দু-তিনদিন বাদে নিজের গ্রামে যাওয়ার গল্প সব বাবাকে করতে লাগলো।ওর বাবা শুনে আতঙ্কিত হয়ে বললেন "তুমি না জানিয়ে ওখানে গিয়ে খুব অন্যায় করেছ।তুমি কি জানো হরি কত জন্ম আগে মারা গেছে?বাবার মৃত্যুর পর ওই গ্রাম সহ বাকী পাঁচটা গ্রাম কালাজ্বরে উজার হয়ে যায়।ডাক্তারের অভাবে,আমি জানলে তোমাকে যেতেই দিতাম না"।

সব শুনে পৃত্থীশের মনে নাড়া দিলো।ভাঙ্গা হাসপাতাল,পরিতক্ত বেডগুলো,বাঁচার আশায় আসা মানুষ গুলোর ছটপটানি সব ওকে ভাবতে বাধ্য করছে গ্রামের মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর কথা।।


       সমাপ্ত:-

       *****


Rate this content
Log in

More bengali story from Sandipa Sarkar

Similar bengali story from Drama