বার্ধক্যের খেলাঘর
বার্ধক্যের খেলাঘর


“ বাবু...চেক ইন হয়ে গেছে বাবা? ......আচ্ছা। সাবধানে যাস। আর হ্যাঁ বোর্ডিং হলে জানাস। এখনই কি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে বাড়ীটা। লব কুশের জন্য খুব মন কেমন করবে রে। এই দু মাস বৌমা ওদের নিয়ে ছিল, বাড়ীটা ভরে ছিল। “ বললেন মীনাক্ষী।
“ মা তোমাদের এভাবে একা ছেড়ে যেতে আমাদের ভালো লাগছে না।“ মীনাক্ষীর ছেলে উদয়নের গলাটা চিন্তিত শোনায়।
“ তুই চিন্তা করিস না বাবু। আমরা ঠিক থাকবো। আর কোর্ট কেসটা শেষ হলেই আমরা চলে আসবো।“
“তোমরা এখানে একা একা থাকবে কি করে? শরীর খারাপ হলে কে দেখবে? ওদেশে অনেক সুবিধা। ডাক্তার, হাসপাতাল......”
“ জানি বাবু। আমাদের শরীর খারাপ হলে তো আসবই তোদের কাছে।“ ফোনটা রেখে দিলেন মীনাক্ষী।
“আমি আমার জিনিষ গুছিয়ে নিয়েছি। তুমি তাড়াতাড়ি কর।“ তাড়া দিলেন অমিয়, মীনাক্ষীর স্বামী।
“ দাঁড়াও, আগে বোর্ডিং হোক। “
“ আরে আজ আমাদের ব্রিজ খেলার কমপিটিশন, তুমি তো জানো।“
“ যদি ফ্লাইট ক্যানসেল ট্যানসেল হয়, আর ওরা বাড়ী ফিরে আসে......?”
আবার ফোনটা বাজলো।
“ মা বোর্ডিং হচ্ছে। ”
“ সাবধানে যাস। দুর্গা দুর্গা।“ কপালে হাত ঠেকালেন মীনাক্ষী।
ফোনটা কেটে যেতেই মীনাক্ষী আর অমিয় তড়িঘড়ি জিনিষপত্র গুছিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলেন। প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে ট্যাক্সিটা এসে দাঁড়ালো ‘সায়াহ্নে’ বৃদ্ধাশ্রমের সামনে।
অমিয়রা ট্যাক্সি থেকে নামতেই ভিতর থেকে আট দশজন লোক হই হই করতে করতে বেরিয়ে এলো,” আরে এসো ভায়া এসো। উফফ! দু মাস পর দেখা। ছেলে বউয়ের কাছে ধরা পড়ে যাও নি তো?“
“ না না ধরতে পারেনি । যদি জানতে পারে আমরা বাড়ীতে নয় বৃদ্ধাশ্রমে থাকি তাহলেই আমাদের ধরে ওদের বাড়ী নিয়ে চলে যাবে।“ বললেন মীনাক্ষী।
“তবে আপনার কোর্ট কেসের গল্পটা কিন্তু দারুণ কাজে দিয়েছে দাদা!” অমিয় বললেন প্রাক্তন উকিল সমীর বাবুকে।
“ তা কি করা, তোমরা তো ছেলের বাড়ী গিয়ে থাকতে চাও না।“ বললেন সমীর বাবু।
“ বাব্বাহ ......আবার সেই বন্দী জীবন ! সারাদিন টিভি দেখো, রান্না কর, ওয়াশিং মেশিন চালাও......“ বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠলেন মীনাক্ষী।
“ কিন্তু সপ্তাহের শেষে তো বেড়াতে যেতে।“ বললেন অমিয়।
“ তা ঠিক । কিন্তু আমার ওরম বেড়ানো ভালো লাগেনা। আমাদের এখানে যেমন গঙ্গার ধারে বসে চা মুড়ি নিয়ে আড্ডা, বাংলা সিনেমা দেখা, তাস লুডো খেলা, তারপর অন্তাক্ষরি খেলা...”
“ চা আর চপ রেডি। সবাই ভিতরে আসুন। এবার ব্রিজ খেলা শুরু হবে...।“ হাঁকলেন বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ার টেকার কমল বাবু।
সবাই হাসাহাসি করতে করতে চা খেতে চলল।