Rima Goswami

Fantasy Inspirational Others

3  

Rima Goswami

Fantasy Inspirational Others

বারবিকিউ

বারবিকিউ

6 mins
177


সদুর বিয়েটা ভেঙেই গেল শেষ পর্যন্ত । দিন ঠিক হয়ে যাবার পরেও বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণটা কি ? গ্রামে ওর খুব নাম কারণ রান্নায় নাকি সদু সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা । এমনকি সে শহুরে খাবার ও বানাতে পারে পাশের বাড়ির টিভিতে রান্নাবান্নার অনুষ্ঠান দেখে দেখে । মা মারা মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল কলকাতার বাগবাজারের নামি ময়রার দোকানি ভজন ময়রার ছেলের সঙ্গে । পাত্র অবনী একটা বড় রেস্তোরাঁ চালায় পার্ক স্ট্রিটে । তো অবনীর একটাই দাবি ছিল তার স্ত্রী হবে তার যোগ্য সহধর্মিণী । মানে রূপে নয় গুনে তার সহগামী হতে হবে । যে মেয়ে রান্নায় হবে নিপুণ তার সঙ্গেই অবনী শুভ দৃষ্টি করবে । এই ধনুক ভাঙা পনকে কেউই প্রথম দিকে তেমন সিরিয়াসলি নেয়নি । তারপর একে একে পাত্রী নাকচ হয়ে যাওয়ায় অবনীর মা নড়ে চড়ে বসেন । খবর পান নিজের মামাতো ভাইয়ের কাছে ওদের বাদাবনে একটি সুলক্ষনা পাত্রী আছে । শহর বাজারে এ মেয়ে থাকলে হয়ত একটা বড় কিছু করেই ফেলত । সৌদামিনি মোদক বাদাবনের বনবিবির কৃপা ধন্য এক মেয়ে । তার হাতের রান্না একবার যে খাবে সে কোনদিন ভুলবে না ওই অমৃতের স্বাদ । এত প্রশংসা যে মেয়ের তাকে একবার দেখতেই হয় । তাই অবনীর মা শকুন্তলা দেবী একেবারে ছেলেকে নিয়েই গেলেন সদুকে দেখতে । সদুর বাবা মোদক বাবু একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিলেই পিছুটান মুক্ত হন । মা মরা সরল সহজ মেয়েটার জন্য বড্ড ভাবেন উনি । কে জানে কি লেখা আছে হতভাগীর কপালে । অবনী আর শকুন্তলা দেবী এলেন মেয়ে দেখতে । মেয়েকে দেখে আর তার হাতের রান্না খেয়ে ওরা যারপরনাই মুগ্ধ হলেন । সদু ওদের জন্য বানিয়েছিল পাঁচ রকম ভাজা , সুক্ত , আলু পোস্ত , মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল , খয়রা মাছের ঝাল , মাছের কালিয়া , আমের চাটনি , লাউয়ের পায়েস । খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে অবনী মনে মনে ভাবলো তাবড় তাবড় রেস্তোরাঁকে টেক্কা দিতে পারে এই মেয়েটা । তার কপাল সত্যি ভালো না হলে এত মিষ্টি মুখের একটা মেয়ে এমন সুদক্ষ হাতের রান্না বলতে গেলে সব মিলিয়ে মা অন্নপূর্ণা .. তার কপালে কি জুটত ? সেদিন আর বেশি কিছু ভাবতে পারেনি অবনী , বিয়েতে মত দিয়েই ফিরেছিল ।মোদক বাবু বললেন তার পরম সৌভাগ্য যে মেয়েটার তিনি কলকাতার এত নামি পরিবারে বিয়ে দিতে পারছেন । কিন্তু উনি তো বলতে গেলে কর্পদ শূন্য মানুষ তাই উপযুক্ত পন হয়ত দিতে পারবেন না । একথা শুনে শকুন্তলা দেবী বললেন , ' আমিও এই এলাকারই মেয়ে বলতে পারেন । আমার মামাবাড়ি বাদাবনে । আমি তো নিচ্ছি আপনার কাছ থেকে , আপনি দাতা । পন নেওয়ার কথা আসছে কোথা থেকে ? 'শকুন্তলা দেবীর কথা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিল বাবা মেয়ে । বিয়ের দিন পাকা করে ফিরে গেছিল ওরা । অবনী দেখে মেয়েটা মাত্র উনিশ কুড়ি বছরের । এলাকায় কলেজের অসুবিধা তাই কলেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি । ওকে যদি কলকাতা এনে আবার ভর্তি করে দেওয়া যায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট এ তাহলে হাতের জাদু প্রফেশনাল রূপ নিতে বেশি সময় নেবে না । স্বামী স্ত্রী মিলে সফল ভাবে একের পর রেস্তোরাঁর এক আউটলেট খুলে তাক লাগিয়ে দেবে ও । সব ঠিকই চলছিল এমন সময় কি মনে হয় অবনী মামা দাদুকে ফোনে করে বলে একবার পাত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে চায় যে পাত্রী কি বারবিকিউ রান্না জানে ? মামা দাদু ও সদুর বাড়ি গিয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করে , ' মা সদু তুমি কি বারবিকিউ রান্না জানো ?'সদু বারবিকিউ কথাটা আগে কোনদিন শোনেনি । সে সরল মনে জানায় না সে জানে না । ব্যাস খবর অবনীর কানে যেতেই অবনী ওর মাকে বললো যে বিয়ে হচ্ছে না । কারণ মেয়েটা বারবিকিউ করতেই জানে না । শকুন্তলা অনেক বোঝান যে গ্রামের মেয়ে তাই বারবিকিউ মানেই হয়ত জানেনা ভালো করে । যার হাতে অত স্বাদ সে খুব পারবে বারবিকিউ ও করতে , কেবল একবার শিখিয়ে পরিয়ে নেবার অপেক্ষা । ছেলের এক জেদ সে বিয়ে করবে না । মোদক বাবুকে খবর পাঠানো হলো বিয়ে ক্যান্সেল । মোদক বাবু ভীষণ মুষড়ে পড়েন মেয়ের পরিণতি দেখে । মেয়েকে বলেন , 'বোকা মেয়ে কেন বললি জানি না ওই খাবারটা বানাতে ? 'সদু বললো , ' বাবা মিথ্যা দিয়ে নতুন সম্পর্কের ভিত তোলা বৃথা । তুমি ভেবো না বাবা এই গ্রামের ময়রা ঐ শহুরে ময়রাকে শিখিয়ে দেবে আমি নারী চাইলে সব পারি '। মেয়ের কথার এক বর্ন ও বুঝলেন না মোদক বাবু । নিজের ভাগ্যকে করাঘাত করতে লাগলেন ।


সদু পাড়ার সবথেকে চালাক চম্পট ছেলে সনাতনকে বললো তার ওই বড় ফোনে ইন্টারনেটকে একবার বলুক না বারবিকিউ কি জিনিস দেখাক একবার সদুকে । সনাতন ইউ টিউবে সার্চ করতেই বেরিয়ে এলো বারবিকিউ কি জিনিস । তা দেখে সদু বললো , ' আ মরণ ! শহুরে বাবুর এই পুড়িয়ে বানানো খাবারের কথা বলছিল ? দাঁড়া দিকি সনাতন আমি ছুটে একবার ঘরে যাবো আর আসবো '।সনাতন কিছুই বুঝলো না সে দাঁড়িয়ে রইল আর সদু ছুটে বাড়ি গেল আবার কিছুক্ষণ পর ফিরেও এলো । হাতে একটা চিরকুট , ওটা দিয়ে সনাতনকে বললো ফোন নাম্বার আছে একটা ফোন লাগিয়ে দিতে হবে । অবনীর ফোনে বিকালে একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে । ধরবে না ভেবেও ধরে অবনী ফোনটা । ওপারে কলকল করে ওঠে একটা মেয়েলী কন্ঠ । সদু ফোন করেছে অবনীকে । সদু বললো , ' বিয়ে হচ্ছে না ঠিক আছে শহুরে লাট সাহেব কিন্তু আমার খ্যামতার দিকে আঙ্গুল তুলেছিলে তুমি । তাই কাল একবার পরলে এসো তোমার দোকানের সবথেকে বড় রাঁধুনিকে নিয়ে । প্রতিযোগিতা করে দেখে নিও কে ভালো বারবিকিউ বানায় । আমি ওটা ভালোই বানাতে পারি তবে নামটা নিয়েই আমার যত গোলমাল হয়েছিল তাই বলেছিলাম পারি না । আসবে কিন্তু হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি হবে আমার ইস্পেশাল বারবি.... কিউউউউ । 'অবনীকে একটা কথা বলার ও সুযোগ না দিয়ে ওদিক থেকে ফোনটা কেটে দেয় সদু । অবনী পাত্তা দেয়না । বাড়ি ফিরে মাকে সব বলতে মা বলে সদুর চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা ঠিক হবে । হতেই পারে রান্নাটা ও জানে কিন্তু নামটা আয়ত্ব ছিল না । অবনী ভাবে ঠিক আছে চ্যালেঞ্জ না হয় নেওয়াই যাক । ও নিজের রেস্তোরাঁর নামী কুককে নিয়ে পৌঁছে যায় বাদাবন । শুরু হয় বারবিকিউ চ্যালেঞ্জ ।


সদু ওদের মাটির রান্নাঘরের এক কোনে ২ টা ইট একটার উপর একটা রেখে,মাঝে পুরু করে কিছু বালু বিছিয়ে কয়লা নিয়ে বানিয়ে ফেলেছে চুলা । কাঠ কয়লা আর কেরোসিন তেল পাশে রেখেছে পরবর্তী ব্যবহার করার জন্য । এদিকে অবনীর কুক এনেছে বারবিকিউ গ্রিল মেশিন । দুজনেই হাঁসের মাংস ধুয়ে নিল । সদু একদম নিখুঁত ভাবে একটা কাটা চামচ দিয়ে মাংসের টুকরাগুলু কে একটু একটু মাঝখানে-উপরে-নিচে কেচে নিল।একে একে মসলা, সয়াসস,আদা-রাসুন বাটা দিয়ে মাংসর টুকরাগুলুকে ২ ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রেখে দিল । তারপর সকলকে চা জল দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল । সবাই অবাক হয়ে গেছে সদু কি পারবে শহুরে রাঁধুনির শহুরে কেতাকে টক্কর দিতে ? কুক ব্যবহার করছে বারবিকিউ সস আর সদু নিজে হাতে বানিয়ে ফেলেছে সস । দুজনেই এবার বারবিকিউ চুলায় আগুন ধরানোর কাজে লেগে গেল । অবনী দেখলো সদু চুলায় কিছু কয়লা নিল ,তারপর কেরোসিন ছড়িয়ে ম্যাচ দিয়ে আগুন জ্বালাল ।

সদু বা কুক দুজনেই এবার চুলায় একে একে মাংস গুলি বসিয়ে দিল ।সয়াবিন তেল ব্রাশ করে একপিঠ সঠিক ভাবে উল্টিয়ে দিয়ে ওপর পিঠে তেল ব্রাশ করলো সদু ।


এভাবে তেল মাখিয়ে দশ মিনিট পর পর উল্টে উল্টে মাংস হয়ে গেলে খয়রি রঙের একটা কালার এলো । কুক আর সদু দুজনের হাঁসের বারবিকিউ রেডি । অবনী দুজনের ডিস খেয়ে দেখলো । ভীষণ অবাক করে স্বল্প জোগারে মেয়েটা যে এমন অবাক করা স্বাদ আনতে পারবে অবনী একবারের জন্যও ভাবেনি । কুক নিজেও সদুর বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় । আর অনুরোধ করে যদি এই সসের উপকরণ আর বানাবার প্রণালীটা সদু কুককে জানায় । সদু সবটা লিখে দেয় কুককে । অবনী ফিরে যাবার সময় মোদক বাবুকে বলে যায় তার ভীষণ লজ্জা লাগছে কথাটা বলতে তবুও কথাটা আজ তাকেই বলতে হবে অন্তত মা শকুন্তলা দেবীর তাই আদেশ । মোদক বাবু বলেন তার মেয়ে আজ যুদ্ধে জয়ী হয়েছে তাই বাবা হিসেবে ভীষণ গর্ব অনুভব করছেন আজ । অবনী বলতে পারে সে কি বলতে চায় । অবনী বলে যদি সদু ওকে ক্ষমা করতে পারে তবে বিয়েটা যে দিন স্থির হয়েছিল সেইদিনই বর সেজে অবনী আসবে বাদাবন মাস্টার সেফ সৌদামিনিকে নিয়ে যেতে ।সদু বলে পরীক্ষা ও আমি দেবো আর ওই শহুরে খোকাকে উপহার ও আমি দেবো ? হায়রে কপাল ? সবাই হেসে ওঠে সদু রানীর কথায় । তারপর এক গোধূলি বেলায় ওদের চার হাত এক হয়ে যায় ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy