অরণ্যের নরখাদক
অরণ্যের নরখাদক


সুন্দরবনের এই দিকটায় লোক আসতে চায় না। লোকে বলে এখানে নাকি বেঘোভূত ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ,পূর্ণিমারাতে কোনো মানুষ বাঘের হাতে মৃত্যুবরণ করলে আর বাঘ তাকে অভুক্ত অবস্থায় ছেড়ে গেলে সে নাকি বেঘোভূতে পরিণত হয়-এটাই জনশ্রুতি। তখন পূর্ণিমার রাতে সেই পিশাচ মানুষকে আক্রমণ করে। এদের শরীর মানুষের মতো হলেও হাত পায়ের আঙুল নখরযুক্ত এবং মাথা বাঘের মতো। এরা নরমাংসর লোভে ঘুরে বেড়ায়। এরা মানুষ সেজে অচেনা আগন্তুককে পথ ভুলিয়ে নিজের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করে।
অরুণাভ আর কৃষাণুকে আগেই জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে নিষেধ করেছিল চায়ের দোকানের মৃত্যুঞ্জয়দা। তাঁর মতে,জঙ্গলের এই দিকটায় বেঘোভূতের আস্তানা। তখন সেই দোকানীর কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল দুই বন্ধু। এখন কৃষাণুর মনে হচ্ছে মৃত্যুঞ্জয়দার কথা শুনলেই বরং ভালো হত। জঙ্গলের মধ্যে একা দাঁড়িয়ে কাঁপছে কৃষাণু,অরুণাভকে তো সেই পিশাচ তাড়া করেছে। বাবা,কি ভয়ঙ্কর জীবটা। দেহের গড়ন মানুষের মতো,মানুষের মতোই পোষাক পরে আছে,কিন্তু মুখ- সেখানেই তো সমস্যা। হিংস্র বাঘের মুখাবয়ব। এ যেন নরক থেকে উঠে আসা কোনো প্রাণী।সে যে কি বিভীষিকা বোঝানো যাবে না। অরুণাভর দিকে তেড়ে এসেছিল জন্তুটা। সঙ্গে যে রাইফেল আছে ভুলেই গিয়েছিল অরুণাভ। দৌড় লাগিয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয়দা বলছিল এই প্রাণীগুলো আগুনকে খুব ভয় পায়। ঐ তো জঙ্গলের মধ্যেই শোনা গেল গুলির আওয়াজ। তাহলে কি অরুণাভ জন্তুটাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে! বাঘের আর্তনাদও শোনা গেল। তারপর সব চুপচাপ। ঐ তো ফিরে আসছে অরুণাভ। হাতে বন্দুক নিয়ে ঘামতে ঘামতে। যাক তাহলে বিপদ কেটেছে। সাহস আর স্বস্তি দুটোই ফিরে পেল কৃষাণু। অরুণাভর সাথে ফিরে আসছে কৃষাণু। এই অভিশপ্ত স্থানে আর এক মুহূর্তও নয়। কিন্তু অরুণাভর গলার স্বর এরকম ঘড়ঘড়ে হয়ে যাচ্ছে কেন,জান্তব আওয়াজ বেরোচ্ছে মুখ থেকে। মুখটাই বা কেন বাঘের মতো হয়ে যাচ্ছে। আঁতকে উঠল কৃষাণু।