অরণ্যে ঘেরা ঝাড়গ্রাম
অরণ্যে ঘেরা ঝাড়গ্রাম


অনেক কষ্টে অফিস থেকে পরপর দুদিন ছুটি পেয়েছে অর্ঘ্য। ঠিক করল এবার উইকেন্ড ডেস্টিনেশন হোক পশ্চিমবাঙলার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত ঝাড়গ্রাম। সেই অনুসারে একদম সক্কাল সক্কালেই হাওড়া থেকে ধরল লালমাটি হাওড়া ঘাটশিলা মেমু প্যাসেঞ্জার ছাড়ল হাওড়া থেকে বেলার দিকে। ট্রেন দাশনগর পার করতেই লাইনের দুপারে সবুজ শস্যশ্যামলা বঙ্গভূমির অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। দিগন্তবিস্তৃত মাঠ,মাঝে মাঝে ফুলের চাষও হচ্ছে,এমনিই বাগনান তো ফুলের জন্য বিখ্যাত। পার হল কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত দেউলটি,এরপর রূপনারায়ণের ওপর ব্রিজ ঝমঝম করে পার করে ট্রেন ঢুকল কোলাঘাটে। এরপর মেচেদা,মাদপুর,জকপুর পার করে খড়গপুর। খড়গপুর পার করতেই বদলে যেতে থাকল প্রকৃতি। বঙ্গভূমির চিরপরিচিতা শস্যশ্যামলা রূপের জায়গা নিল ছোটনাগপুরের পাথুরে রুক্ষতা। এই নিদাঘে প্রকৃতি যেন ভৈরবীর রূপ ধারণ করেছে। লাইনের দুপাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে শালের দুর্ভেদ্য অরণ্য। সেগুন আর ইউক্যালিপটাসও রয়েছে।
কোথাও বা ফাঁকা অনুর্বর রুক্ষ ঢেউ খেলানো প্রান্তর।
অর্ঘ্য জানে,সে লালমাটির দেশে প্রবেশ করেছে। কোথাও বা শুকিয়ে যাওয়া নদীর ওপর তীব্রগতিতে ব্রিজ পার করছে ট্রেন। নিচে ধু ধু শ্বেতবর্ণ বালুরাশি।
বেলার দিকে পৌঁছল ট্রেন ঝাড়গ্রাম। জঙ্গলমহলের গায়ে ছোট্ট এক সুন্দর শহর,কিছুটা দূরেই শালবনের মধ্যে ডিয়ার পার্ক। এখানকার শ্মশানকালী মন্দির বিখ্যাত।
শহরের বাইরেই শাল অরণ্য।ট্রেকারদের স্বপ্নের জায়গা বেলপাহাড়ি আর চিল্কিগড় খুব দূরে নয়।
ফরেস্ট গেস্ট হাউস আছে,অনেকে আবার জঙ্গল সাফারিও করতে আসে। গোটা শহরটাই নিরিবিলি,সবুজে ঘেরা। বেলা পড়ে আসে। পাখির কিচির মিচির ডাকে দিগন্ত রক্তিমরাগে রাঙিয়ে দিবাকর অস্ত যান। সারা প্রকৃতিতে থেকে যায় এক বিষণ্ণতার বার্তা। পরের দিন কোলকাতায় ফিরে আসে অর্ঘ্য। তাও মনের মধ্যে থেকে যায় সেই সবুজ শালের বনানী।