Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Comedy Romance Tragedy

4  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Comedy Romance Tragedy

অনাদৃতা (পর্ব ১)

অনাদৃতা (পর্ব ১)

19 mins
1.0K


(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য)


ভালোবাসার অনেক রূপ হয়, প্রেম তার মধ্যে অন্যতম... আবার প্রেমেরও অনেক রূপ হয়... এই প্রেম জীবনে যেমন নিয়ে আসে অবসাদ, দুঃখ... ঠিক তেমনই বন্ধুত্বের হাত ধরে প্রেম জীবনে নিয়ে আসে 'ভালোবাসা'... এই 'প্রেম' নামক অনুভূতিটা কিভাবে জীবনে আর্বতিত হয়- সেই নিয়েই এই গল্প... এই গল্প নিখাত বন্ধুত্বের... এই গল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসার... এই গল্প প্রথম প্রেমের... এই গল্প বিশ্বাসঘাতকতার...

Pune :

------------

'পুরনো এক প্রেমের গল্প সত্যি কিংবা মিছে,

সম্পর্কের ভাঙা-গড়া আতস কাঁচের নীচে

দু'জন বাঁচে কাছাকাছি, দু'জন বাঁচে দূরে,

চিরকুটেতে লিখছে সময় মনকেমনের সুরে'

University থেকে Paying Guest-এর ঘরে ফিরে মৈথিলী আর দিব্যা ঘরে ঢুকে হাফ ছেড়ে বাঁচে... অসহ্য প্যাচপ্যাচে গরম... গানটা একটু শুনেই আর একটু বসে থিতিয়ে নিয়েই মৈথিলী উঠে একটু নুন, চিনি আর লেবুর জল করে নিয়ে দিব্যাকে দেয়... ওরা Roommate, আজ ওদের বাবারা ওদের হোস্টেলে ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে... এখন ওদের পরষ্পরের সম্বল হয়েই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে...

দিব্যা : Ohhh... Thank You রে...

মৈথিলী : তুই খেয়ে নে... আমি ততক্ষণে স্নানটা সেরে আসি...

দিব্যা : আয়... আমি ততক্ষণ একটু জিরিয়ে নিই...

মৈথিলী : আচ্ছা...

বাথরুমে ঢুকে Shower-টা খুলে মৈথিলী চুপ করে তার নীচে দাঁড়িয়ে থাকে... আজ সে চিৎকার করে কাঁদতে ভুলে গেছে... তার চুল বেয়ে বয়ে আসা জলধারা তার অশ্রুধারাকে ধুইয়ে দিতে থাকে... একটা প্রশান্তি আসে মৈথিলীর মনে... যাক, কেউ তার অশ্রুধারাকে আলাদা করে বুঝতে পারবে না.... কতক্ষণ এইভাবে কাটে, কে জানে !!! মৈথিলী হুশ ফেরে দিব্যার চিৎকারে,

দিব্যা : কি রে !! বাথরুমেই ঘুমিয়ে গেলি না কি !!! তাড়াতাড়ি কর... আজ আমাদের কিছু কেনাকাটা করতে বেরতে হবে তো না কি !!! দেখ, Shopping না করলে আমার Mood Off হয়ে যায়... Please, তুই তাড়াতাড়ি বের হ...

মৈথিলী তাড়াতাড়িই স্নান সেরে বেরিয়ে ভেজা জামাকাপড়গুলো বাইরে মিলে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে চারপাশটা আনমনে দেখতে থাকে... তার প্রায় সমবয়সী সবাই এখানে পড়তে এসেছে... সবার মধ্যে কত প্রাণবন্ততা, উচ্ছলতা... কিন্তু সে যেন কোথাও হারিয়ে গেছে... খুঁজে পায় না নিজেকে... ছোট্ট থেকে যাই স্বপ্ন দেখেছে সে, সব ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে... তার কুড়ি বছর বয়স, এখনো তার জীবনে প্রেমের ছোঁয়া আসে নি... আসবে কি করে !! বই-এর বাইরের জগৎ-এর সাথে তার তেমন যোগাযোগই নেই... পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য যে শৃঙ্গার করতে হয়, তাতেও সে পারদর্শী নয়... কেবল ছোট্ট টিপ, আর হাল্কা লিপস্টিক অব্দি তার গন্ডি...

তার দিব্যাকে বেশ লাগে... জীবনে ওর Fashionটাই সব... কি সুন্দর করে সাজে দিব্যা... মৈথিলীর বড় ভালো লাগে দেখতে... কিন্তু সে নিজে ওই ছোট্ট টিপ আর হাল্কা লিপস্টিক-এর লক্ষ্মণরেখাটা কিছুতেই পার করতে পারে না.... একটা সাদা চিকনের সালোয়ার কামিজ গায়ে গলিয়ে ঠোঁটে হাল্কা গোলাপী লিপস্টিক ছুঁয়েই কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পড়ে নেয়... দিব্যাও একটা Tight Blue Pepe Jeans আর Pink Short Top গলিয়ে চোখে Eye Liner-এর টান দিয়ে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক বুলিয়ে মৈথিলীর সাথে Shopping-এ বেরিয়ে যায়...

Delhi :

----------

Dillll Karta Hain Naadaniyan

Sehta Hain Laakhon Sitam

Raahi Chalna Hain Ab Tere SangYuhiiiii

Tujhe Main Dhundta Phirun

Meri Har Chahat Hain Tu

Tujhe Main Dhundta Phirun

Meri Har Chahat Hain Tu

মন... বড় অবুঝ এই মন...

কিছুতেই মানে না হায়...

অবিরাম আহত স্মৃতির ভিড় তবুও....

আমি যে চেয়েছি তোমায়, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়...

হায়, কত খুঁজেছি তোমায় আমি শুধু খুঁজেছি তোমায়...

গিটারটা নামিয়ে সবার অলক্ষ্যে চোখের সিক্ততা হাতের কড়ি আঙুল দিয়ে মুছে নিয়ে আবার বন্ধুদের দিকে তাকায় আদ্বান.... Tall, Dark, Handsome মানে এই যুগের প্রজন্ম যাকে বলে TDH... কিন্তু তার মিষ্টি মুখের আড়ালে একটা মিষ্টি মন ছিল, যেখানে ভালোবাসার একটা তীব্র আকাঙ্খা ছিল... কিন্তু তার প্রথম ভালোবাসা তার সেই মিষ্টি মনটাকে ভেঙেচুরে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে গেছে... ভালোবাসার উপর বিশ্বাস হারিয়েছে বছর কুড়ির আদ্বান... সে তখন সবে নিজের পায়ে দাড়ানোর লড়াই শুরু করেছে, এই ছিল তার অপরাধ... এখন তার পাথেয় শুধু তার স্বপ্ন আর এই গিটারের সুরে বাঁধা গানগুলো... নিজেকে এমন ইস্পাত সদৃশ করে গড়ে তুলেছে, যে যেই তার হৃদয়ে হাত রাখতে যাবে তার হাত শুধু রক্তাক্ত হবে... আদ্বান নয়...

আদ্বান পাশে রাখা Beer-এর বোতলে হাত রাখতেই ঈরিশ বলে উঠে,

ঈরিশ : আর নয় আদ্বান... অনেক খেয়েছিস... তোর পেট না মদের পিপে... ঢেলেই যাচ্ছিস, ঢেলেই যাচ্ছিস... আর ঢাললেই কি সব ভোলা যায় !! 

আদ্বান : ভুলতে চাইছেটা কে !!! আমি তো মনেই রাখতে চাইছি... যতদিন মনে থাকবে, আমি তত উপরে উঠব... যত ভেতর ভেতর রক্তাক্ত হব, তত নিজেকে Enrich করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারব... অতীত যত এমন অন্ধকার আমার দিকে ঢালবে, আমি তত তার গায়ে আলোর নকশা বুনবো...

ঈরিশ : এইভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করা যায় না আদ্বান... দেখবি, কেউ একজন ঠিক আসবে- যার মতো এমন শত সহস্র মেয়েরা আছে যারা সহজে টাকার পিছনে ঘুরে মরে না, কারণ তারা আলোর মন্ত্র শিখেছে এই অন্ধকারের বিপরীত স্রোতে সাঁতার কাটতে কাটতে... ভাগ্যিস তোর ভালোবাসা তোর জীবনে অন্ধকার জোগালো, তাই তো ওতো আলো নিয়ে কেউ আসবে তোর হাতটা শক্ত করে ধরতে... যার মুখের দিকে তাকিয়ে তোর আর এই মদের বোতল ছুঁতে ইচ্ছে করবে না... যে, কোনো অজুহাতেই তোর হাত ছাড়বে না... তোর চলার পথের অন্ধকারকে নিজের সীমিত কিন্তু নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত করবে... হ্যাঁ, হয়তো সে আকাশের চাঁদ হবে না, কারণ আকাশের চাঁদের তো নিজস্ব আলো নেই... কিন্তু ক্ষুদ্র জোনাকির আছে... সেও রাতের আঁধার আলোকিত করে নিজের নিজস্বতায়... অনেকে সেই আলোর মন্ত্রকে উন্মাদের প্রলাপ বলে, কিন্তু সে ঠিক আসবেই...

আদ্বান : Utopian World.... Utopian World-এ বসবাস করছিস তুই... চল উঠি... নয়তো সারারাত এইখানেই পড়ে থাকতে হবে...

এমনসময় পিহু আর বৃন্দা ওদের পাশে এসে বসে...

পিহু : এই তোরা এখনো এখানে বসে কি করছিস !!! সবাই তো চলে গেল... এই তোরা Drink করছিস !!! আমাদেরও এক Sip দে না...

আদ্বান : এই... ফুট এখান থেকে... নিজেদের খাবার মন হয়েছে, নিজেরা কিনে খা... আমাদেরগুলো হাটকাবি না...

পিহু : আচ্ছা আদ্বান, তুই কি জানিস- তুই Drink করলে আরো Sexy, Seductive হয়ে যাস... আমার তো মনে হয়, তোকে যদি একবার কাছে পাই...

আদ্বান : ভুলেও কাছে আসিস না... তোদের ছোঁয়া তো দূর, তোদের মতো মেয়েদের দেখলেই আমার গা গুলিয়ে বমি আসে... তোর Registry হয়ে গেছে না, পিহু... শুধু Social Ritual-টাই বাকি... তারপরেও নিজের বন্ধুকে এইরকম প্রস্তাব দিতে তোর বাঁধে না....

পিহু : শরীরের কি আছে !!! Kiss করব, Sex করব... তারপর স্নান করব, সব ধুয়ে চলে যাবে...

আদ্বান : সেটা করতে হলে অন্য কারোর সাথে কর... আমাকে পাওয়া অত সোজা নয়...

পিহু : এত অহংকার ভালো নয় আদ্বান... ভবিষ্যতে এমন না হয়, তুই কাউকে পাবার জন্য হেদিয়ে মরলি, আর সে তোকে পাত্তাই দিল না...

একটা তির্যক হাসি ঠোঁটে এঁকে আদ্বান দৃঢ় পায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়...

পিহু : আমি তোকে অন্ততঃ একবার নিজের করে পেয়েই ছাড়ব আদ্বান... যে মানুষের এতটা Drink করার পরও পা একটুও টলে না, সেই মানুষটার কাঠিণ্যকে ভাঙার একটা আলাদাই মজা আছে... তোকে আমার হাত থেকে বাঁচানোর মতো কেউ এই পৃথিবীতে আসে নি...

Pune :

-----------

একটা বেপরোয়া হাওয়া এসে মৈথিলীর ওড়নাটা এলোমেলো করে দিয়ে যায়... দিব্যাকে ডাকতে গিয়ে দেখে সে আনন্দ আর দীপ্তর সাথে গল্পে ব্যস্ত...

দীপ্ত : WOW... পেছন থেকে তোকে কি Sexy লাগছে রে !!!

মৈথিলী : দিব্যা, একটু আমার হাতের জিনিসগুলো ধর Please... আমার ওড়নাটা উড়ছে তো... একটু ঠিক করে নিই...

দিব্যা : শুধু পেছন থেকে... সামনে থেকে লাগছে না !!!

মৈথিলী : ব্যাস... শুরু হয়ে গেল মেয়ের... এই... তুই এইগুলো একটু ধর না !!!

দিব্যা : এই শোন... যেদিন দিব্যাকে দেখে ছেলেরা পাগল হওয়া ছেড়ে দেবে, সেদিন জানবি Divya Finished... Just Finished...

মৈথিলী : আচ্ছা বেশ, এবার তো একটু ধর...

আনন্দ : মৈথিলী Relax... দিব্যা তোর পাশে থাকলে কেউ তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না... আকাশে চাঁদ উঠলে কেউ জোনাকির দিকে তাকাবে না বুঝলি !! নিজেকে একটু Upgrade কর... নয়তো সারাজীবন অবিবাহিতই থাকতে হবে...

মৈথিলী : এই শোন, পুরুষ জাতি যদি তোদের মতো হয় না, তাহলে আমার অবিবাহিত থাকাই Better... কিন্তু এই Window Shopping করার মতো সুখ তোদের কোনোদিনই আমি পেতে দিই না, ওটাই তোদের সমস্যা ?? কিন্তু আমি তো এইরকমই...

আনন্দ : তোর এই Attitude থাকলে না, তোর কপালে কেউ জুটবে না...

মৈথিলী : এইসব নিয়ে তোদের ভাবতে হবে না... তোদের ঘাড়ে তো পড়ব না !!! তাই ভাবিস না বেশি...

নেপথ্যে : Hi, I am Dibyanta.... May I help you....

সবাই একযোগে পেছন ঘোরে... বেশ লম্বা, মিষ্টি মুখ আর স্মিত হাসির একটা ছেলে দাঁড়িয়ে...

দিব্যান্ত : আমি কি তোমার জিনিসগুলো ধরতে পারি !!!

মৈথিলী : না থাক...

দিব্যান্ত : আরে দাও না...

বলে জোর করে মৈথিলীর হাত থেকে জিনিসগুলো একপ্রকার কেড়ে নেয়... এতে যদিও মৈথিলীর সুবিধাই হয়... সে তার ওড়না ঠিক করে আবার একটু হেসে দিব্যান্ত-র হাত থেকে জিনিসগুলো নিতে গেলে দিব্যান্ত বলে ওঠে,

দিব্যান্ত : থাক না... আমি তোমার PG-তে গিয়ে রেখে আসব...

মৈথিলী : মানে তুমি আমাদের সাথে PG অব্দি যাবে !!! কিন্তু কেন !!!

দিব্যা : (মৈথিলীর কানে কানে, অস্ফুটভাবে) একটা এত Handsome ছেলে আমাদের সাথে যেতে চাইছে, যাক না... তোর সবকিছুতে কিসের সমস্যা !!!

মৈথিলী : (অস্ফুটভাবে) এতে তো ছেলেটা আমাদের PG-টা চিনে যাবে... একবার সেটা ভাব....

দিব্যা : শোন, এই ছেলেটাকে আমার চাই... চাই মানে চাই...

মৈথিলী : ও তো একটা মানুষ... কোনো জিনিস না কি- যে তোর চাই !!! অদ্ভুত !!!

দিব্যা : শোন, এই ছেলেটাকে আমার পকেটে আমার চাই...

মৈথিলী : পকেট !!!

দিব্যা : তুই চুপ কর... এখানকার সবচেয়ে Handsome ছেলেটা যদি কারুর সাথে Attached হয়, তাহলে সেটা শুধুমাত্র দিব্যা-র সাথেই হবে....

মৈথিলী : আচ্ছা... শোন, আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না... তুই পকেট ভর... আমি ফুচকা খেতে যাই...

দিব্যান্ত : আমার নাম তো বললাম... তোমাদের নাম কি !!!

দিব্যা : আমি দিব্যা... খুব মিল বলো, আমার আর তোমার নামের...

দিব্যান্ত : হ্যাঁ, সেটাই দেখছি... Hello Divya...

আনন্দ : আমি আনন্দ আর ও দীপ্ত...

দিব্যান্ত : Hello, Ananda and Dipto... আর তুমি !!!

মৈথিলী : ফুচকা !!!

দিব্যান্ত : তোমার নাম ফুচকা ??

মৈথিলী : নাহহহ.... আমি মৈথিলী... আসলে আমি না অনেকক্ষণ থেকে ফুচকাটা দেখছি... আমি খেতে যাই... তোমরা যাবে !!!

দিব্যান্ত : গিয়ে একসাথে খেলে বন্ধুত্বটা বেশ জমবে, তাই না মৈথি !!

দিব্যা : মৈথি !!!

দিব্যান্ত : অত বড় নাম ধরে কে ডাকবে বাবা !!! You can also me Deb... আমি কিন্তু তোমাকে 'Diva' বলে ডাকব !!!

দিব্যা : WOW !!! Diva !!!

মৈথিলী : হ্যাঁ, Butter-টা বেশ ভালোই লাগাতে পারেন...

দিব্যান্ত : Please... No আপনি... তুই-টা Butter-এর থেকে Better... By the Way, ফুচকা খেতে কিন্তু আমিও খুব ভালোবাসি... তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের শুরুটা ফুচকা দিয়েই হোক...

দিব্যা : হ্যাঁ... হ্যাঁ... শুরু করাই যায়...

আনন্দ : আমরা আসছি... তোরা ফুচকা Enjoy কর...

আনন্দ আর দীপ্ত চলে গেলে ওরা তিনজন ফুচকা স্টলে যায়... মৈথিলী ভীষন Excited ফুচকা খাবে বলে... আর পাশে দিব্যা দিব্যান্তকে মৈথিলীর ফুচকা প্রেমের গল্প করে যাচ্ছে... দিব্যান্ত আড় চোখে এক দু'বার মৈথিলীর মুখের উজ্জ্বলতার দিকে তাকিয়ে দেখছে, সামান্য ফুচকাতে এত খুশি মেয়েটা... কিন্তু প্রথম ফুচকা মুখে দিতেই 'রে রে' করে ওঠে মৈথিলী...

মৈথিলী : ছ্যাআআআআ.... এটা কি !!! ফুচকার জলে শুধু পুদিনা পাতা !!! ছিইইই !!!

দিব্যান্ত : হয়ে গেল রে !!!

মৈথিলী : এই আপনি সরুন তো... আমি আপনাকে বলছি, আপনি তৈরি করুন...

দিব্যান্ত : (ফিক করে এসে) আজ কাকু কার মুখ দেখে উঠেছিল কে জানে রে !!!

মৈথিলী : তেঁতুল দিন...

ফুচকা কাকু : কা !!

মৈথিলী : (কোমর হাত দিয়ে) আবার কা কা করছে রে !!! এই শুনুন, আপনার ওই বিভৎস তেঁতুল জল খেয়ে আমি সব হিন্দি ভুলে গেছি...

দিব্যান্ত : ইমলি... ইমলি...

মৈথিলী : বীট নুন, ভাজা মশলা, লেবুর Slice, ধনেপাতা কুচি দিয়ে জলে মেশান.... শুধু আলু মাখা নয়- শশা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি, একটু শুকনো লঙ্কা, বীট নুন, ভাজা মশলা মেশান... মাখুন ভালো করে... পরের দিন থেকে ভেজানো ছোলা, মটর নিয়ে আসবেন...

ফুচকা কাকু : আবার কবে আসবেন !!

মৈথিলী : (চোখ পাকিয়ে) রোজ আসব...

দিব্যান্ত হাসতে হাসতে একে একে সব হিন্দি করে বলে... ফুচকা খাওয়া হয়ে গেলে দিব্যান্তর অনুরোধে ওরা তিনজন হাঁটতে হাঁটতে একটা মন্দিরের দিকে এগোয়...

দিব্যান্ত : তোরা আমাকে হয়তো ভুল বুঝছিস... আমি বাধ্য হয়েছিলাম তোদের সাথে কথা বলতে...

মৈথিলী : মানে !!

দিব্যান্ত : হ্যাঁ, আমাকে Ragging করেই বলা হয়েছিল তোদের সাথে কথা বলতে...

মৈথিলী : কে বলেছিল !!!

দিব্যান্ত : আমার PG-র সিনিয়র দাদারা... কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা যে এত মজার হবে এই মৈথি দিদুনের জন্য, সেটা আমি ভাবতেই পারি নি...

মৈথিলী : Don't Call me Maithi... আমি মৈথিলী... আর দিদুন কি, হ্যাঁ !!

দিব্যান্ত : না যেভাবে ফুচকা বানানো...

দিব্যান্ত, দিব্যা আর কথা বলতে না পেরে জোরে হেসে ওঠে... মৈথিলী রেগে দিব্যান্ত হাত থেকে সব জিনিস কেড়ে বড় বড় পা ফেলে চলে যেতে গেলেই পেছন থেকে বাধা পায়... একটু মুষ্টিবদ্ধ হাতের বাঁধন এসে মৈথিলীর গতিরোধ করে...

দিব্যান্ত : এত রাগ কেন তোর !!! চল, মন্দিরে গিয়ে বসি... আয়.. এখানে মা-বাবা নেই... বন্ধুরাই এখানে সব... আয়...

ওরা মন্দির চাতালে গিয়ে বসে... দিব্যান্ত দেখে, মৈথিলী আনমনে ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে... পাশে যে আরো দু'জনও সেদিকে খেয়ালই নেই... দিব্যাকে প্রসাদ আনতে বলে মৈথিলীকে আলতো করে ধাক্কা মারে দিব্যান্ত....

দিব্যান্ত : কি এমন আকাশ পাতাল চিন্তায় ডুবে যাস বল তো, মাঝে মাঝেই !!! Boyfriend !!

মৈথিলী : নাহহহ... আমার কোনো Boyfriend নেই...

দিব্যান্ত : এত বড় মেয়ে হয়ে প্রেম করিস না !!! কি বলছিস !!!

মৈথিলী : না... প্রেম ছাড়াও জীবনে আরো অনেক কাজ আছে... পড়াশোনা আছে....

দিব্যান্ত : আচ্ছা... তুই কেন ভাবের জগতে থাকিস সবসময়ই !!! তখনও দেখলাম, চুল মুছতে মুছতে আনমনা হয়ে ছিলিস....

মৈথিলী : কিইইই !!! এর আগেও !!!

দিব্যান্ত : আমি চা পাতা আনতে গিয়েছিলাম... হঠাৎই তোর দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল... কি আনমনা হয়ে চুল শুকোচ্ছিলিস... তাই আর কি !!! আপত্তি না থাকলে কারনটা জানতে পারি !!!

মৈথিলী : আমি উঠব...

দিব্যান্ত : ওরে বাবা... আচ্ছা বেশ... বলতে হবে না... ওই গাছটা দেখছিস, কি গাছ বলতো !!!

মৈথিলী : কি গাছ !!!

দিব্যান্ত : আমলকি... তোর নিশ্চয়ই খেতে খুব ভালো লাগে !!!

মৈথিলী : হ্যাঁ...

দিব্যান্ত : দাঁড়া... আমি পেড়ে নিয়ে আসি... বোস...

এইভাবে এই তিনজনের মধ্যেই আমলকির এক নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে....

বারংবার আঘাত প্রাপ্ত হবার পর হয় মানুষ অবশেষে নিজেকে পরিবর্তনের অবিরত চেষ্টা করে, নয়তো নিয়তির হাতে নিজের সমর্পণ করে... দিল্লীতে থাকা আদ্বান যখন নিজের প্রথম ভালোবাসাকে হারিয়েও নিজের স্বপ্নপূরণ-এর পথে দৃপ্ত পদক্ষেপের এগিয়ে যেতে থাকে... তখন পুনেতে থাকা মৈথিলী নিজের সব স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে নিয়তির হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়... স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গেছে সে, এমনকি নিজের প্রতিও এক তীব্র অনিহা এসে যোগ দিয়েছে তার জীবনে... তার জীবনের বাস্তবতার তীব্র দহন ছাড়া কোনো বসন্তের রঙ নেই... তবে, আদ্বান আর মৈথিলীর মধ্যে একটা জিনিসের খুব মিল- তারা প্রতিনিয়ত নিজের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে, শুধু বাইরে থেকে শক্ত আবরণে নিজেদের আবৃত করে রেখেছে...

Delhi :

-----------

আমাদের প্রত্যেকের একটা নিজস্বতা থাকে, সেটা থেকে বেরনো বড্ড কঠিন... ফলে বাইরের খোলসটা দেখতে শক্ত হলেও অল্প আঘাতে সেও সংবেদনশীল... শুধু আঘাতটা ভেতরে হয়, বাইরেটা পরিপাটি... আদ্বান বড্ড ভালো রান্না করে... বন্ধু অন্তপ্রাণ আদ্বান বন্ধুদের জন্য চিকেনটা রান্না করে অ্যালকোহলের বোতল হাতে তাদের মেসের ছাদে এসে বসে পড়লো... এই রাতমাখা আকাশটা তার বড্ড প্রিয়... অ্যালকোহলটা গলায় ঢেলে আদ্বান বলে,

আদ্বান : কেন রাতের আকাশ হয়ে আমার সব যন্ত্রণা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখো না, বলো তো !! কেন দিনের আলো হয়ে উঠে বাস্তবের প্রখরতার সামনে দাঁড় করাও... আমার জীবন তো বাস্তবতার দাবদাহে ঝলসে গেছে... তুমি কেন সবসময়ই রাতের আকাশ হয়ে আমাকে শীতলতা দাও না !!! কেন এই নিদারুণ বিরহ এবং স্বপ্ন ভাঙার অগ্নীবানে দগ্ধ আমাকে নিজের ক্রোড়ে দুহাত বাড়িয়ে টেনে নাও না !! রাতটুকু একটু নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঘুমোতে পারি তবে !!

এরপর নেশার ঘোরে আবার একটা Sip টেনে নিজের উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে ওঠে,

'হারালো সে সোনালী দিন, সবুজ ইচ্ছা, স্বপ্ন রঙীন

ফিরবে না, সে কি ফিরবে না...

ফিরবে না আর কোনোদিন...'

নীচ থেকে ডাক আসে, 'এই হলুদ পাখি, খাবি আয়'

উঠতে যাবে, এমন সময় পিহুর Meaasge ঢোকে আদ্বানের ফোনে,

I miss You so much... Please send me lyrics of your favorite song.... with Love 💕 ~ Pihu

আদ্বানের ফোন থেকে পিহুর ফোনে সঙ্গে সঙ্গে Message যায়,

            'এই একলা ঘর আমার দেশ,

            আমার একলা থাকার অভ্যেস'

আদ্বান একটু খেয়েই নেশার ঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে... ঈরিশ আদ্বানের মাথায় বালিশ দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে,

ঈরিশ : আমি কি আর এই পাগলকে সামলাতে পারি !!! PLEASE ঠাকুর, তুমি কাউকে পাঠাও- যে এই পাগলকে শক্ত বাঁধনে বাঁধতে পারবে... তার ভালোবাসার ওমে এই পাগলটাকে একেবারে বদলে দেবে... Please ভগবান, এই স্বার্থের পৃথিবীতে একটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তুমি পাঠাও আমার আদ্বানের জন্য... ছেলেটা যে বড্ড একা....

Pune :

----------

'তোমার গানের সুর,

আমার পকেট ভরা সত্যি মিথ্যে

রেখে দিলাম তোমার ব্যাগের নীলে

জানি তর্কে বহুদূর,

তাও আমায় তুমি আঁকড়ে ধরো

আমার ভেতর বাড়ছো তিলে তিলে...

কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি,

পাখার ব্লেডের তালে সোজাসুজি কথা বলি...'

দিব্যা : এই কি রে !!! তুই শুতে আসবি কি না !!! আমি একা একা শুতে পারি না তো !!!

বারান্দাতে বসে শুনতে শুনতে হঠাৎই দিব্যার গলার আওয়াজ শুনতে পায় মৈথিলী... এতক্ষণ ধরে ঘিরে রাখা বাস্তব ভাবনার মোহমায়া ছেড়ে আবার বর্তমানে ফিরে আসে সে... কিছুই না... এই ফাঁকা সময়টায় ওই একটুকরো ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিচারণ করছিল, আর কি !!! চারপাশের রাত্রির নিস্তব্ধতা যেন আজকে বেশি করে উপলব্ধি করাচ্ছে যে, মৈথিলী বড্ড একা... এই গোটা পৃথিবীতে ও নিজে ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই যাকে ও নিজের বলে দাবী করতে পারে... কি করে থাকবে !!! ছোটো থেকেই তো দেখেছে, সবাই কেমন ওর তুলনা টানতেই ব্যস্ত- সে শারীরিক সৌন্দর্য থেকে হোক বা পড়াশোনা... সবাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে চায়, ও এই সমাজের উপযুক্ত নয়, নয় কোনো পুরুষের যোগ্য... তবে এই তুলনাটা তো সে চায় নি কখনো... অল্পেই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিল চিরকাল... তবে ওর এই জীবনটা কেন !! কেন !! ওই কেন !! চোখের কোল ভর্তি হয়ে আসা জল মুছতে উঠতে যেতেই মৈথিলীর মনে হলো, বাইরের দেওয়ালে একটা ছায়া যেন দ্রুত সরে গেল...

মৈথিলী : কে ছিল ওখানে !!! দিব্যান্ত !!! না... না... ছিঃ ছিঃ... আমি এইসব কি ভাবছি !!!

ঘরে ঢুকে আরো একবার দেওয়ালের দিকে তাকায় মৈথিলী... না তো... কেউ নেই... ঘরে ঢুকে আলো বন্ধ করে শুতে যাবে, এমনসময় বাইরে থেকে দিব্যান্তর গলা ভেসে আসে....

দিব্যান্ত : আরে... আনন্দ যে... Good Night ভাই... খেয়ে দেয়ে একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম... খাবারটাও হজম হয়ে যাবে...

দিব্যা : Actually, ও কিন্তু এই Good Night-টা আমাদের বলার জন্যই এসেছে...

মৈথিলী : এখানে বহুবচনটা বাদ দে Please...

দিব্যা : হ্যাঁ, বাদ দেওয়াই ভালো... কারন আমাকে টপকে ও তোকে Privileges দেবে, এইটা দিব্যা কোনোদিন হতে দেবে না...

দিব্যান্ত : আর ভাবলাম, যদি কোনো ভুতের দেখা টেকা পাই আর কি !! কিন্তু দেখলাম, এখানে কোনো ভূত নেই, খালি পেত্নীর সমাহার... একা একা বারান্দাতে বসে ঠ্যাং ছড়িয়ে কাঁদে....

দিব্যা : পেত্নীইইই !!!

বলেই হাসতে হাসতে খাটে গড়িয়ে পড়ে...

মৈথিলী : এই শোন... তোর ওই দিব্যান্তকে এইসব কথা বলতে বারণ করে দিবি... নয়তো...

দিব্যা : নয়তো কি করবি !!! ওর ঠ্যাং ভেঙে দিবি !!

মৈথিলী : হ্যাঁ...

দিব্যা : আচ্ছা, মন থেকে একটা সত্যি কথা বলবি... তুই এই প্রথম কোনো পুরুষের সাথে একটা গোটা সন্ধ্যে কাটালি, কেমন লাগলো তোর !!! প্রথম অভিজ্ঞতা বলে কথা...

মৈথিলী : 'কাবাব মে হাড্ডি' মনে হচ্ছিল নিজেকে...

দিব্যা : আজ জানিস, আমার কেন জানি মনে হলো- তুই একেবারেই দিব্যান্ত-র গলাটা চিনতে পারলি !! কেন পারলি বল তো !!! By any Chance, তুই বাইরে ওর জন্যই অপেক্ষা করছিলিস না তো !!!

মৈথিলী : আবার শুরু করলি তো তুই !!! আমি নিজে প্রেম না করলেও তোর ওই ঘাটে ঘাটে একেকটা Lover গোটা College Life-টা আমার শেষ করে দিয়েছিল... এখন তুই এইসবের মধ্যে আমাকেও জড়াচ্ছিস... দেখ দিব্যা, আজ তুই খুব ভালো করে জানিস আমার Home University-তে পড়ার কত শখ ছিল !!! আজ সেই Home University-র Out Migration Form আমার হাতে... কষ্ট হচ্ছে, বিশ্বাস কর...

কান্নায় গলা বুজে আসে মৈথিলীর... দিব্যা মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখে... মৈথিলীও দিব্যাকে জড়িয়ে ধরে, যদিও তাতে মনের কষ্টটা কমে না...

দিব্যা : আচ্ছা, তুই কষ্ট পাচ্ছিস কেন বল তো !!! তুই তো চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিস নি...

মৈথিলী : সত্যিই রাখি নি জানিস তো !!! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই Subject-টা আমার প্রিয় Subject ছিল না... আমি এখনো Subject-টাকে ভালোবাসাতে পারি নি... কিন্তু আমার পরিশ্রমে কোনো খাত ছিল না...

দিব্যা : আমি জানি রে... আসলে আমি তোকে খুব ভালোবাসি... আমি জানি, তুই মিথ্যাটুকুও ভালো করে বলতে শিখিস নি... কিন্তু, দিব্যান্ত-র ব্যাপারে আমি তোর কাছে হারতে পারব না... আমার Egoতে লাগবে... এই প্রথম কোনো ছেলে আমাকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলো না...

মৈথিলী : আচ্ছা... ওর তো বাড়িতে Girlfriend থাকতে পারে !!! হয়তো তাকে ভালোবাসে...

দিব্যা : নেই... আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি...

মৈথিলী : এর মধ্যেই জিজ্ঞেস করে নিলি... ছিঃ ছিঃ... দিব্যা...

দিব্যা : সবচেয়ে বড় কথা... না থাক... এইসব তোর মাথায় ঢুকবে না... আচ্ছা, বাবা ছাড়া পৃথিবীর কোনো পুরুষকে তোর ভালো না !!!

মৈথিলী : লাগে তো !!!

দিব্যা : কাকে !! কই বলিস নি তো !!

মৈথিলী : বলেছি... শচীন তেন্ডুলকর...

দিব্যা : Ohhh My God... Please...

মৈথিলী : না রে... ওর Dedication-টা আমাকে Motivate করে সব প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করার জন্য... যখনই আমার মনে হয়, আমি হেরে যাচ্ছি... ওর জীবনী যেন আমাকে সেই খাদ থেকে হাত ধরে টেনে তোলে....

দিব্যা : ওরে বাবা... চল, শুয়ে পড়...

মৈথিলী আর দিব্যা খিলখিলিয়ে হেসে বিছানাতে শুয়ে পড়ে... মৈথিলীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দিব্যা ঘুমিয়ে পড়ে... মৈথিলী দিব্যাকে ধন্যবাদ দেয়, ভাগ্যিস ও মৈথিলীর সাথে আছে... নয়তো একা একা এই পরবাসে তার এই মনের ভার নিয়ে সে কি করে থাকত !!! ধীরে ধীরে চোখ বুজে আসে মৈথিলীর... হঠাৎই, দিব্যান্ত-র মুখটা মৈথিলীর চোখের সামনে ভেসে ওঠে... ঘুম ভেঙে ধড়মড়িয়ে বিছানাতে উঠে বসে মৈথিলী... দিব্যা অঘোরে ঘুমাচ্ছে... এই মেয়েটা ওই ছেলেটার ভুত মৈথিলীর মাথাতেও ঢুকিয়ে ছেড়েছে... উফফফ... মৈথিলী উঠে একটু জল খেয়ে নিজেকে শান্ত করে... তারপর আবার শুয়ে পড়ে, পরের দিন ক্লাস আছে যে University-তে...

সত্যিই কি শুধু দিব্যার কথাতেই দিব্যান্তকে দেখলো মৈথিলী !!! না কি, নিজের অজান্তেই দিব্যান্তর প্রতি কোথাও কোনো সুপ্ত অনুভূতি জেগেছে ওর অবচেতন মনে !!

Delhi :

-----------

সূর্যের আলো মুখে এসে পড়তেই একটু নড়ে চড়ে শোয় আদ্বান...পাশে রাখা Alarm Clockটা যেন করুন স্বরে ডেকে চলেছে শুধুমাত্র আদ্বান-এর একটু মনোযোগ পাবার আশায়... যতই হোক, JNU-তে নিজের Batch-এর 'Most Wanted Guy' বলে কথা, ব্যাপারটাই আলাদা... কিন্তু ধীরে ধীরে উঠে বসে আড়মোরা ভাঙতেই মনে পড়ে সকালের Alarm Clock-এর ওকে এত ডাকাডাকি করার কারণ- ওকে যে পড়তে বসতে হবে... ওর নিজস্ব যতই কষ্ট থাক, যতই যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খাক- ওকে ওর স্বপ্ন পূরণের পথে এগোতেই হবে আর সেই পথে হাঁটার এক এবং অদ্বিতীয় হাতিয়ার ওর পড়াশোনা, যা ওকে পৌঁছে দেবে নিজের লক্ষ্যে... তাই চোয়ালে শক্ত করে ফ্রেশ হয়ে এসে বই খুলে বসে... কিছুক্ষনের মধ্যেই পড়ায় ডুবে যায়... হটাৎই দরজা খোলার শব্দে মুখ তুলে দেখে ঈরিশ এসেছে... যথারীতি এত সকাল সকাল ওকে বইপত্র খুলে বসতে দেখে সে নিজেও যারপরনাই অবাক... মনে মনে বলে,

ঈরিশ : (মনে মনে) ছেলেটা মানুষ নাকি মেশিন !!! কাল রাতে ওইসব ছাইপাশ খেয়ে এখন সাত সকাল বেলা উঠে পরেছে !! আবার বই নিয়েও বসেছে !! যাকগে দেখি কিছু খায় কিনা !! কাল তো Beer-এর ঘোরে কিছুই খাওয়াতে পারলাম না ছেলেটাকে, এমনকি ওর নিজের রান্না করা চিকেনটাও মুখে তুললো না... কিন্তু এইভাবে যে কদ্দিন চলবে, কে জানে !!! কবে যে একটু বদলাবে নিজেকে !!

যাই হোক, একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করেই বলে ওঠে,

ঈরিশ : এই, সকাল সকাল উঠেই বই নিয়ে বসলি, তুই !! চা খাবি তো !!!

আদ্বান : দে ভাই... আমার যে মাঝে মাঝেই কি হয় !!! Alcoholic হয়ে সময় নষ্ট করা আমার জন্য বিলাসিতা... কিন্তু তাও... এক একদিন যে কি হয় আমার... সব হারিয়ে শুধু নিজেকে প্রমাণ করার এই একক যুদ্ধটুকুই তো আছে আমার... এই পৃথিবীতে নিজের কাজ দিয়ে কোনো Imprint রেখে যেতে হবে....

ঈরিশ : সৌরভ যার আদর্শ, তাকে কি কেউ দমাতে পারবে রে পাগলা !!! কিন্তু আদ্বান, আজ কিন্তু University-তে খেলা আছে... আর আমরা কিন্তু তার দিকেই তাকিয়ে... তুই শুধু আমাদের একজন All Rounder নোস, আমাদের Captain-ও... তাড়াতাড়ি পড়াটা শেষ করে আয়, ভাই...

আদ্বান : হ্যাঁ...

বই খুলে পড়ায় ডুবে যায় আদ্বান... তার সামনে এখন নিজেকে প্রমাণ করার, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এক দীর্ঘ লড়াই অপেক্ষা করে আছে... সেই লড়াইটা যে তাকে লড়তেই হবে...

Pune :

----------

University-র Gate-এ সবাই অপেক্ষা করছে, বাকি বন্ধুদের আসার জন্য... সবাই একসাথে দল বেঁধে Class-এ যাবে.... সবাই কলকলানিতে ব্যস্ত থাকলেও মৈথিলী রাস্তার একটা উঁচু জায়গাতে দাঁড়িয়ে খুব মন দিয়ে একটা ছোট্ট নীল পাখি দেখতেই মগ্ন ছিল....

                             'বুমমমমমমম'

পেছন থেকে ওইরকম একটা বিভৎস আওয়াজে আত্মমগ্ন মৈথিলী বেসামাল হতেই একটা বলিষ্ঠ হাত ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে সামলে নেয়... ভয়ার্ত মৈথিলীও ঘটনার আকস্মিকতায় তার উদ্ধারকারীর বুকের জামা আঁকড়ে ধরে.... বাকিরাও দৌড়ে আসে...

দিব্যান্ত : যাহহহ বাবা... কি ঘোরে থাকে রে মেয়েটা !!! এর সাথে মজা করতে গেলেও তো এ দেখছি বিপদ ঘটিয়ে বসে থাকবে...

মৈথিলী : Shut Up... তোকে আমার কানের কাছে এইরকম বিচ্ছিরি আওয়াজ করতে কে বলেছে !! অসভ্য ছেলে একটা...

দিব্যান্ত : আচ্ছা !!! তুই কি Normal নোস !!! আর আমার Shirt-টা ছাড়... ছিঁড়ে যাবে...

দীপ্ত : কাককে ময়ূরের পেখম লাগালেও কাক কিন্তু কাকই থাকে... যে Scene-টায় দিব্যা থাকলে ভালো লাগত, সেই Sceneটায়...

দিব্যান্ত : কথা তো আমার আর মৈথিলীর মধ্যে হচ্ছিল... মাঝখানে কথা বলাটা কি খুব জরুরি, দীপ্ত !!! Sorry, if I am hurting you... কিন্তু এই কাক আর ময়ূরের কথাটা যখন উঠল, তখন বলি... ময়ূরের সৌন্দর্যটা কেবলই তার নিজস্ব... কিন্তু চারপাশের জঞ্জাল পরিষ্কার করার ক্ষমতা কিন্তু শুধুমাত্র কাকের আছে... কাক নিজে অতটা সুন্দর না হলেও অন্যের কলুষতা সে নিজে সরিয়ে সুন্দরতা প্রদান করে... অন্যের খামতি খোঁজা খুব সহজ দীপ্ত... কষ্টসাধ্য হলেও চেষ্টা করিস, অন্যের গুনটুকু খুঁজে বের করতে- সে কোনো মানুষ হোক, বা প্রকৃতির মানুষ... Sorry Diva... I have no intention to hurt you... কিন্তু অন্যের অসম্মানটাও তো মানা যায় না...

মৈথিলী এক পা এক পা করে পিছতে থাকে... সে প্রদীপের আলোর নীচের কালোর মতো সবার মাঝে অদৃশ্য থাকতেই অভ্যস্ত, তাতেই সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে... আজ হঠাৎই কারুর চোখে নিজেকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে দেখে কেমন একটা অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরলো... তাকে ঘিরে এত কথা, এত অনর্থক তর্ক- অসহ্য লাগল মৈথিলীর... সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই শ্রেয় মনে করে এক ছুটে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল....

দিব্যান্ত : এই... মৈথি... দাঁড়া... পরে যাবি তো....

দিব্যান্ত ছুটে যেতে গেলে দিব্যা ওর হাত ধরে ওকে আটকে নেয়...

আহন : এ কি রে দিব্যা !!! তুই ওকে আটকাচ্ছিস কেন !! মৈথিকে সত্যিই এখন একা রাখা ঠিক নয়...

দিব্যা : দিব্যান্তর এখন ওর কাছে যাওয়াটা ঠিক হবে না...

আহন : কিন্তু ওকে একা যেতে দেওয়াটাও ঠিক হবে না... আমি যাচ্ছি...

এষণা : চল, আমিও যাই তোর সাথে...

আহন আর এষণা চলে গেলে দিব্যান্ত একটু কড়া সুরে দিব্যাকে বলে,

দিব্যান্ত : কি করলি এটা তুই !! কেন করলি ?? মৈথি তো আমাদের বন্ধু Diva... আমরা সবাই বাড়ি ছেড়ে এখানে এসেছি... প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভরসায়... বন্ধু হয়ে যদি বন্ধুর পাশে না দাড়াই তাহলে আর কে দাঁড়াবে ?? আজকের এই কাজটা ঠিক হলো না... তুই ঠিক করলি না এটা...

দিব্যা সুর উল্টো খাতে বইছে দেখেই নিজের গলার স্বর বদলে নেয়... করুন মুখে বলে ওঠে,

দিব্যা : তুই আমায় ভুল বুঝছিস দেব... আমি বলতে চাইছিলাম যে...

কথা শেষ হয় না... দিব্যান্ত বলে ওঠে,

দিব্যান্ত : then why did you do thisss Diva !!Answer me... Explain me Please !!

দিব্যা : আসলে ও তো তোর উপর রেগে আছে... কি বলতে কি বলে দেবে, হয়তো সেটা তোরও ভালো লাগ...

দিব্যান্ত : আমার ভালোমন্দ তো আমিও কিছু বুঝি না কি !!!

দিব্যা : আসলে তোরা দু'জনেই আমার খুব ভালো বন্ধু... তাই তোদের মধ্যে ঝামেলা হলে আমার ভালো লাগবে না... ওর রাগ একটু পরেই চলে যাবে... তারপর নয়, তুই তোর কথাগুলো ওকে বলিস... কেমন !!

দিব্যান্ত : ঠিক আছে... আজ বিকেলে আমরা একসাথে University থেকে ফিরব... একটু ঘুরে তারপর PG-তে ফিরব... ঠিক আছে... এখন চল...

দিব্যা : Yup... একদম ঠিক আছে...


(কোনদিকে মোড় নেবে এই তিনজনের বন্ধুত্ব !!! আদ্বান কি সফল হবে তার স্বপ্নপূরণে !! একটু Vicenarian Love নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল... ভাষাটাও একটু ওদের মতোই লিখতে হয়েছে...)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy