Anishri's Epilogue

Romance

3  

Anishri's Epilogue

Romance

অনাদৃতা (পর্ব ৮)

অনাদৃতা (পর্ব ৮)

18 mins
345


(শুধুমাত্র প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য)

বসন্ত নয়,

আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিলো অবহেলা

ভেবেছিলাম, অনেকগুলো বর্ষা শেষে

শরতের উষ্ণতা মিশে এলো বুঝি বসন্ত!

দরজা খুলে দেখি

আমাকে ভালোবেসে এসেছে অবহেলা

মধ্য দুপুরের তির্যক রোদের মতো

অনেকটা নির্লজ্জভাবে আমাকে আলিঙ্গন করে নিয়েছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত অবহেলা

আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখেছিলাম

আমার দীনদশায় কারো করুণা বা আর্তির

পেখম ছড়িয়ে আছে কি না, ছিলো না...

বৃষ্টিহীন জনপদে খড়খড়ে রোদ

যেমন দস্যুর মতো অদমনীয়

তেমনি অবহেলাও আমাকে আগলে রেখেছিলো নির্মোহ নিঃসংকোচিত

আমি অবহেলাকে পেছনে ফেলে

একবার ভোঁ-দৌড় দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম

তখন দেখি আমার সামনে কলহাস্যে

দাঁড়িয়েছে উপেক্ষা

উপেক্ষার সঙ্গেও একবার কানামাছি খেলে

এগিয়ে গিয়েছিলাম তোমাদের

কোলাহল মুখর আনন্দ সভায়

কি মিলেছিলো?

ঠোঁট উল্টানো ভৎসনা আর

অভিশপ্ত অনূঢ়ার মতো এক তাল অবজ্ঞা

তাও সয়ে গিয়েছিলো একটা সময়

ধরেই নিয়েছিলাম

আমার কোনো কালেই হবে না রাবেন্দ্রীক প্রেম

তোমাদের জয়গানে করতালিতে নতজানু থেকেছিলো আমার চাপা আক্ষেপ লজ্জা

বুঝে গিয়েছিলাম

জীবনানন্দময় স্বপ্ন আমাকে ছোঁবে না

জয়নুলের রঙ নিয়ে কল্পনার বেসাতি

হারানো দিনের গানের ঐন্দ্রালিক তন্ময়তা

বা ফুল, পাখি, নদীর কাব্যালাপে কারা মশগুল হলো, এ নিয়ে কৌতূহল দেখাবার দুঃসাহস

আমি দেখাইনি কখনো

এত কিছু নেই জেনেও নজরুলের মতো বিদ্রোহী হবো, সেই অমিত শক্তিও আমার ছিলো না

মেনে নেয়ার বিনয়টুকু ছাড়া

আসলে আমার কিছুই ছিলো না

শুধু ছিলো অবহেলা, উপেক্ষা আর অবজ্ঞা

হ্যাঁ, একবার তুমি বা তোমরা যেন দয়া করে

বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলে আমার দিকে

তাচ্ছিল্য নয়, একটু মায়াই যেন ছিলো

হতে পারে কাঁপা আবেগও মিশ্রিত ছিলো

তোমার দৃষ্টিতে, ওইটুকুই আমার যা পাওয়া

আমি ঝড়ে যাওয়া পাতা,

তুমি ছিলে আকস্মিক দমকা হাওয়া

তারপরও অবহেলার চাদর ছাড়িয়ে

উপেক্ষার দেয়াল ডিঙিয়ে ও অবজ্ঞার লাল দাগ মুছে জীবনের কোনো সীমারেখা ভাঙতে পারিনি আমি

এ কথা জানে শুধু অন্তর্যামী

অনেক স্বপ্নপ্রবণ হয়ে একবার ভেবেছিলাম

এই অবহেলা তুষারপাতের মুখচ্ছবি,

উপেক্ষা কাচের দেওয়াল, অবজ্ঞা কুচকুচে অন্ধকার

এর কিছুই থাকবে না একটি বসন্তের ফুঁৎকারে

একটি ঝলমলে পোশাক গায়ে চড়িয়ে হাতের মুঠোয় বসন্ত নিয়ে অন্তত একটি সন্ধ্যাকে উজ্জ্বল করে নেবো

এমন ভাবাবেগও ছিলো আকাশের কার্নিশে লেপ্টে থাকা পেঁজা মেঘের মতো

ঐ মেঘ কখনো বৃষ্টি হয়ে নামেনি

তোমার বা তোমাদের নাগরিক কোলাহল

কখনো থামে নি

অর্ধেক জীবন ফেলে এসে দেখি

অনেক কিছু বদলে গেছে

সেকি কোথায় হারালো !!

কৈশোরের দিনলিপি বিপন্ন করা অবহেলা

স্বপ্নকে অবদমনের স্বরলিপিতে আটকে ফেলা উপেক্ষা

আর তারুণ্যকে ম্রিয়মাণ করে রাখার অবজ্ঞা

ওরা আমাকে চোখ রাঙাতে পারে না ঠিক,

তবে এখনো পোড় খাওয়া দিন বড্ড রঙিন

আমি আজ সমুদ্র জলে হাত রেখে বলে দিতে পারি

কোন ঢেউয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে

তোমাদের গোপন অশ্রুকণা

আকাশ পানে তাকিয়ে বুঝতে পারি

কার দীর্ঘশ্বাসে ঝড়ে পড়ছে নক্ষত্র

এমনকি তুমি যে সম্রাজ্ঞীর বেশের আড়ালের

মিহিন কষ্ট চেপে হয়েছো লাবণ্যময় পাষাণ, পাথর

এটাও দেখতে পাই অন্তরদৃষ্টি দিয়ে

আমি জানি, দীর্ঘশ্বাসে ভরা এ আখ্যান

যদি পেতো কবিতার রূপ...

              (বসন্ত নয় অবহেলা, কবি- দর্পন কবির)

Pune :

------------

দিব্যা : মৈথি, তুই প্রেম করিস না কেন বল তো !!! না কি আজো মনে মনে দিব্যান্তর জায়গাটা কাউকে দিতে পারিস না তুই !!!

মৈথিলী মৃদু হাসে... দিব্যার কাছে এসে ওর গালটা আলতো করে ছুঁয়ে বলে,

মৈথিলী : এত Insecure কেন তুই !!! দিব্যান্ত তো তোকে ভালোবাসে....

দিব্যা : দিব্যান্ত আমাকে সন্দেহ করে, প্রবল সন্দেহ করে ...

মৈথিলী : কি নিয়ে !!!

দিব্যা : তোকে নিয়ে...

মৈথিলী : আম... আমাকে নিয়ে !!!

দিব্যা : হ্যাঁ... ও মনে করে, তুই ওর জন্যই কাউকে তোর জীবনে... না... না... না... তোকে এমন কারুর সাথে Engage হতে হবে, যাতে দিব্যান্ত তোকে ঘৃণা করতে শুরু করে... কে !! কে !! কে হতে পারে !!

মৈথিলী : আমি এটা পারব না দিব্যা... আমি কাউকে ভালোবাসার অভিনয় করে ঠকাতে পারব না...

দিব্যা : ঠকাবি কেন !! Give and Take Relation-এ  থাকবি.... ঋক !!! ঋক কেমন হবে !!!

মৈথিলীর গলা দিয়ে কেবল একটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে...

মৈথিলী : দিব্যাআআআ....

দিব্যা : হ্যাঁ... সামনে হোলি... সেদিন তুই ওকে....

মৈথিলী : (দৃঢ়স্বরে) আমি পারব না...

দিব্যা : 'পারব না' বলে কোনো Option তোর কাছে খোলা নেই মৈথিলী... আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি, দোলের দিন তুই ঋকের Proposal accept করবি...

মৈথিলী : সম্ভব না... আমাকে এবার তুই রেহাই দে দিব্যা... আমি আর পারছি না...

দিব্যা : দেব, তোকে একবার ঋকের সাথে দেখে নিক... শুধু একবার... ও তোকে ঘেন্না করলেই তোর মুক্তি...

সোনাঝুরি :

-----------------

মৈথিলী : না... সেদিন উপায় ছিল না আমার... সবসময়ই ওর Suicide করে নেবার ভয় দেখাতো আমাকে...

আদ্বান : তারপর....

মৈথিলী : তারপর এলো দোলের দিন... অত রঙের মাঝেও সেদিন আমি ছিলাম বেরঙীন... দিব্যান্ত এসেছিল দিব্যার সাথে রঙ খেলতে... সবাই ছিল সেখানে... হঠাৎই ঋক আসে আমার সাথে কথা বলতে... টুকটাক কথা চলছিল... দিব্যান্ত দূর থেকে দেখছিল আমাদের আর দিব্যার সাথে ওর রঙ খেলার প্রগাঢ়তা বাড়ছিল... ওর চোখে আমার প্রতি ঘৃণা দেখে না, আমার ভেতর ভেতর খুব কষ্ট হচ্ছিল জানিস আদ্বান... কেমন মনে হচ্ছিল, সব হারিয়ে ফেলছি... হঠাৎই ঋক আমাকে এক গ্লাস লস্যি এনে দেয়... সবাই তখন দোল খেলতে ব্যস্ত... জোরে গান বাজছে- 'রঙ বরসে'... আমি প্রথমে ঋকের আনা লস্যিটা খেতে চাই নি... জোর করলো আমাকে, বললো কিছু মেশানো নেই ওতে... দিব্যার মুখের দিকে তাকিয়ে ওই লস্যিটা খেলাম... খাওয়ার পর থেকেই শরীরটা খারাপ হতে লাগল... কাউকে বলতে পারছিলাম না, ভীষণরকম বমি পাচ্ছিল... কাউকে বিরক্ত করব না বলে, কোনোরকমে উঠে বাইরে যেতেই ঋক আর ওর সাঙ্গোপাঙ্গোরা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ঋকের মেসে, আছড়ে ফেললো ওর ঘরে... বাধা দেবার মতো ক্ষমতা ছিল না আমার... তাও শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ঋককে ঠেলে সরিয়ে দিলাম... প্রতিদানে পেলাম পেটের উপর বেশ কয়েকটা...

কথাটা শেষ করতে পারে না মৈথিলী... কেমন যেন যন্ত্রণাতে কুঁকড়ে যায়... তারপরেই হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে আদ্বানের থেকে দূরে সরে যায়.. আদ্বান কিছুক্ষণ কঠিন মুখে চোখ বন্ধ করে নীরব থাকে, মৈথিলী চোখের জল ওকে অসম্পূর্ণ কথাটা বলে দেয়... যদিও আদ্বান ডক্টরের সাথে কথা বলে আন্দাজ করেছিল, মৈথিলী ঠিক কতটা সহ্য করেছে... তবুও মৈথিলীর এই অব্যক্ত যন্ত্রণা যেন এই মূহুর্তে ওকে এলোমেলো করে দিচ্ছে... চোখ খুলে দেখে মৈথিলী একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে, আদ্বান উঠে এসে মৈথিলীর পাশে দাঁড়ালেও মৈথিলী অনুভব করতে পারে না... কারন, মৈথিলীর তখন মনে হচ্ছে যেন সেদিনের যন্ত্রণাটা সে এই মূহুর্তেও উপলব্ধি করতে পারছে... ওর মাথাটা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে, চোখের সামনে বসে থাকা আদ্বান মূহুর্তের জন্য যেন অস্পষ্ট হয়ে গেল... নিজের শরীরটা সম্পূর্ণ ভারহীন মনে হলো... মুখে ধরে থাকা হাতটা মূহুর্তে ভারহীন হয়ে পড়ে স্পর্শ করলো আদ্বানের হাত... আর তাতেই যেন সম্বিত ফিরে পেল আদ্বান...  মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে দেখে সে শূন্য দৃষ্টিতে একভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও চোখটা মুদে আসছে মানসিক ক্লান্তিতে... বোঝে সেদিনের ঘটনায় শারীরিক আঘাতের থেকেও মানসিক আঘাতের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল যেটা মৈথিলীর মনের গহীন থেকে গহীনতম কোণে ধীরে ধীরে গেঁথে গেছে... সেখান থেকে ওই ঘটনাকে উপড়ে ফেলতে গিয়ে আদ্বান আজ আবার অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও মৈথিলীর মনটাকে রক্তাক্ত করে ফেলছে... তাই বিহ্বল মৈথিলীকে তাড়াতাড়িই নিজের বুকে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো... আদ্বানের বুকের ওম পেয়ে কেঁপে ওঠে মৈথিলী, ধীমে গলায় বলে ওঠে....

মৈথিলী : ঋকের মতো পুরুষ আমার মতো একজন নারীকে নিরাভরণ করতে না পেরে আরো কুৎসিত রূপ ধারণ করতে শুরু করলো... আমি যত বাধা দিতে লাগলাম, ওর ততো আক্রোশ বাড়তে লাগলো... হিংস্র হয়ে উঠতে লাগলো ও... ও দিকে আহন বোধহয় কিছু অনুমান করেছিল... ও দোল খেলা থামিয়ে সবাইকে নিয়ে খুঁজতে শুরু করে আমাকে... জ্ঞান হারানোর আগে ঋকের দরজায় ধাক্কা মেরে আহনের চিৎকারটুকু শুনতে পেয়েছিলাম... সাতদিন পর হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরি... আমার সম্মানের কথা ভেবেই ওরা Accident বলে পুরো ঘটনাটা ধামাচাপা দিয়ে দেয়... নয়তো সবার নোংরা প্রশ্নে, নোংরা দৃষ্টিতে হয়তো আমি... তবুও নিজের কাছ থেকে পালাতাম কোথায় !!! নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হয়তো নিজের সম্মানটুকু বাঁচাতে পেরেছিলাম... কিন্তু ওই শারীরিক অত্যাচারের স্মৃতি !!! সেটা ভুলবো কি করে !!! ওই শ্বাপদের আঁচড়ের চিহ্ন, পেটের যন্ত্রণা, রক্তাক্ত হওয়া... বহুবার নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছি, পারি নি জানিস... কেন কে জানে, বারবার মনে হয়েছে এই জীবনটার শেষ এখানেই নয়... মন বারংবার বলেছে, 'করিস না মৈথি, করিস না এ কাজ... জীবন তোর জন্য আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে... তোর জীবনের বৃহত্তম লক্ষ্য পুরণটাই এখনও হয়নি... কারণ এমন কেউ হয়তো অপেক্ষায় আছে তোর জন্য, তোর হাত ধরেই যার নিজের জীবনেও অন্ধকার সরিয়ে আলোর উত্থান ঘটবে'... ব্যস !! আর এগোতে পারি না জানিস... আবার পিছিয়ে যাই... মনে হয়, সত্যিই কি তেমন কেউ আছে !!আর থাকলেই বা কি !! আমি তো আমার মানসিক কুমারিত্ব হারিয়েই ফেলেছি... শরীর না হয় অন্তিম পর্যায়ের হাত থেকে বেঁচেছিল... শুচিতা শুধু শরীরের হয় না, মনেরও হয় যার তীব্রতা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সীমাও ছড়ায়... আর ওই অত্যাচারটা শুধু কিছু আঁচড়, কামড়েই সীমাবদ্ধ থাকে নি... যা ক্ষতি করেছে, তা হলো আমার আত্মবিশ্বাসটা কেড়ে নিয়ে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে পিষে ফেলেছে আমাকে... যার হাত থেকে হয়তো আমার এই জীবনে কোনোদিনও মুক্তি নেই আর... তাই আমি মরে বেঁচে আছি... কিন্তু সেদিন আমার অন্তরাত্মার খুন হয়ে গিয়েছিল... এখন তোর সামনে একটা মৃতদেহ আছে শুধু... কেন বাঁচানোর চেষ্টা করছিস আমাকে বলতো তুই !! সব শেষ হয়ে গেছে... আমি আর কোনোদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো না... কোনো মানুষ আর আমায় গ্রহণ করবে না... না... না... পানিগ্রহণ করার কথা বলছি না... আমায় মানুষ হিসেবেই আর নূন্যতম সম্মানটুকু করবে না, কারণ আমায় অন্য পুরুষ ছুঁয়েছে... অন্য কারোর ছোঁয়া জিনিষ আর কেউ নেয়, বল... সেখানে আমি তো আস্ত একটা গোটা মেয়েমানুষ... তুই Please আর আমায় জীবনের পথে ফেরানোর জন্য জোর করিস না... আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে... আর এই অন্তিম যেটুকু মূহুর্ত পরে আছে, সেখান থেকেও তোকে ফেরাতে আমার খারাপ লাগবে, আদ্বাণ... Please..

একটানা কথার চাপ সহ্য করতে পারে না মৈথিলী... একটু টলে যেতেই আদ্বান ধরে ফেলে... ধীরে ধীরে মৈথিলীর মুখের ওপর থেকে পড়া চুলগুলোকে সরিয়ে মুখের ঘামটা হাতে থাকা রুমাল দিয়ে মুছে দেয়... সামনের উঁচু জায়গাটায় বসিয়ে জলের বোতলটা এগিয়ে দেয়... দু'ঢোক জল খেয়ে ধাতস্থ হওয়া মৈথিলীকে একপ্রকার আগলে রেখেই বলে ওঠে,

আদ্বান : না... আমি তোর বাকি সব কথা রাখলেও এইটা রাখতে পারবো না মেথি পাতা... মৈথিলী আবার শেষ থেকে শুরু করবে... নতুন করে বাঁচবে... নতুন করে স্বপ্ন দেখবে... প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেবে... হাসবে, কাঁদবে, গাইবে... আর শোন, যে পুরুষ তোর শুচিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে... আমি অন্তত তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে পাল্টা প্রতিবাদ জানাতে চাই... Virginity is not applicable only for the body, it is more important in case of the mind also...

মৈথিলী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আদ্বানের দিকে... ভাবে, এমন মানুষও হয় আজকের দিনে !! এতটা সম্মান করে মেয়েদের !! কাকতাড়ুয়া যে সত্যিই বিরল প্রজাতির... তারপর প্রায় বিস্ময়েই বলে ওঠে,

মৈথিলী : আমিইই !!!

আদ্বান : হ্যাঁ তুই... তাই আর তুই কোনোমতেই পিছিয়ে আসবি না... ওই মানুষগুলোকে দেখিয়ে দিবি তোর জীবনটা তোর, আর কারোর তাতে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই... তুই সেইসব মানুষের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হবি- যারা সেদিন তোকে দলিয়ে শেষ করে দিয়েছিল, প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ... তাদের কাছে দৃষ্টান্ত হবি যে, সব শেষ সমাপ্তি হয় না... কিছু শেষ সূচনাও হয়... তাই আমার মৈথিলী জিতবে.. আর তারপর হাসি মুখে ওই Victory পোজ দেবে...

মৈথিলী : কিন্তু এতে তুই কি পাবি !!! তুই এত কেন করছিস আমার জন্য !!!

আদ্বান : জানি না... উত্তর নেই আমার কাছে... শুধু এইটুকুই জানি যে...

মৈথিলী : কিইইই !! থেমে গেলি কেন !!!

আদ্বান : সময় একদিন তোকে সব উত্তর দিয়ে দেবে... আমি শুধু সেই সময়ের অপেক্ষাতে আছি...

মৈথিলী : তুই আমার সব রিপোর্ট জানিস আদ্বান... আমার হাতে কতটুকু সময় আছে, সেটা তুই আমার থেকে ভালো জানিস...

আদ্বান : আমি শুধু জানি, সময়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটা শুরু হয়ে গেছে... আর আদ্বান হারবে না... জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে আদ্বান, এইটুকু আদ্বান জিতবেই... জানি, সেটা খুব মসৃণ হবে না... অনেক চড়াই, উৎরাই পথ অতিক্রম করতে হবে... তোকে, আমাকে দু'জনকেই... কিন্তু তাও...

মৈথিলী : কিন্তু আমার জন্য তুই কেন !!!

আদ্বানের চোখের বারণ মৈথিলীর চোখে আর হাতের আঙুল নেমে আসে মৈথিলীর ঠোঁটের উপর... মৈথিলীর হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে আদ্বান মৈথিলীর কানে কানে উচ্চারণ করে,

আদ্বান : হুসসস... একদম চুপ...

সেই অবহেলা হতো বসন্তস্বরূপ শুনছো মেয়ে?

একটা চিঠি ঘুরে বেড়ায় এই শহরে, ঠিকানা নেই,

সেই চিঠিটার বুকের ভেতর জমছে ব্যথা সঙ্গোপনে,

বাতাস ভারি দীর্ঘশ্বাসে, কী যায় আসে!

একটা কেবল দুপুর থাকে, খা খা রোদের,

একটা খাঁচায় হলুদ রঙের পাখি থাকে,

সকাল দুপুর সেই পাখিটার বুকের ভেতর,

কে জানি কে আকাশ আঁকে!

শুনছো মেয়ে, সেই আকাশে একলা একা

কে উড়ে যায়? কার কী ভুলে?

ঠিকানাহীন, চিঠির মতো বাউন্ডুলে।

শুনছো মেয়ে, এই শহরে একটা বুকে,

তোমার নামে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা নামে!

                                  (রচয়িতা : সাদাত হোসাইন)

মৈথিলী চোখের পাতা আবার ভিজে আসে... সিক্ত, নত চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্বান... স্মিত হেসে চোখের ইশারায় হাতটা ধরতে বলে... ইতস্ততঃভাবে কাঁপা কাঁপা হাতে আদ্বানের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় মৈথিলী... মৈথিলীর হাত ধরে এনে একটা সোনাঝুরি গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় আদ্বান... ক্যানেলের জলে অস্তমিত সূর্যটাকে দেখিয়ে বলে,

আদ্বান : এই সূর্যটার সাথে ঋকের ঘটনার দুঃসহ স্মৃতিটাকে চিরতরে অস্তমিত করে দে মেথি পাতা... কালকের সূর্যটা তোর জীবনের নতুন ভোর এনে উদিত হোক... সেখানে গল্প থাক শুধু তোর...

মৈথিলী : কি করে ভুলব আদ্বান !!

আদ্বান : তোর অতীতের সব দুঃসহ স্মৃতি যদি আমি ভুলিয়ে দিই....

মৈথিলী : কিন্তু তুই কি পাবি !!!

আদ্বান : তোর কোলটা কি নরম, জানিস !!! আমার এই রুক্ষ্ম, ধূসর জীবনে ওই মরুভূমিতে কখন যে তুই ওই একফালি মরুদ্যান হয়ে গেছিস, আমি বুঝতে পারি নি রে... যখন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ব, একটু তোর কোলে আমাকে শুতে দিবি রে !!! তোর ওই নরম তুলতুলে হাতদুটো একটু আমার মাথায় রাখবি !!! আমার শক্তিস্বরূপিনী হবি মেথি পাতা !!! যদি কখনো হোঁচট খাই, আগলে নিবি আমাকে !! পারবি না !!

কথাগুলো বলে হতবিহ্বল মৈথিলীকে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদ্বান... আদ্বানের শরীরের ওমে, ওর শরীরের গন্ধে কেমন যেন ডুবে যেতে থাকে মৈথিলী... আদ্বানও মৃদু হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়... যতই নিষ্পাপ, নির্লোভ স্পর্শ হোক; আদ্বানের এই মায়াভরা আন্তরিকতায় মৈথিলীর সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলে গেল... এটাই বোধহয় ছিল ওদের বন্ধুত্বের উত্তরণের পর প্রথম ছোঁয়া, প্রথম কাছে আসা... দুটো ভালোবাসার মানুষ কাছাকাছি, পাশাপাশি... একে অপরের ভালোবাসায়, মায়ায় আবদ্ধ... যদিও তা দু'জনের কাছে ছিল অজানা, কিন্তু দুটো মানুষ নিস্তব্ধতায় নিজের নিজের যন্ত্রণা অব্যক্ততার দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনুভব করছে যে কোথাও যেন একটা নিঃস্বার্থ বন্ধুন ওদের বেঁধে দিয়েছে... তবুও দু'জনেই চুপ অনুভব করতে থাকে এই প্রথম পাওয়া অনুভূতিটাকে....


কিছু কিছু সুখ এমন হয় দুঃখ থাকে তাতে,

কিছু কিছু মুখ এমন হয় ভরসা থাকে সাথে...

সুখ-দুঃখের মহামারী, রঙ বড্ড বেরঙীন,

ব্রহ্মসম দুটি কথা- তিমির ভাঙা আলোর দিন...

ছায়াবৃত্তের গণ্ডি মুছে আঁকতে পারে আলপনা,

সমানুপাতিক সম্পর্কে মিষ্টি মুখের আয়না...

বিশ্বাসের সেতুর পিঠে গড়া এ জগৎ সারা,

অবিশ্বাসের ভিতে পুড়ছে এ বিশ্ব ধরা...

ভরসা রেখো, সঙ্গে থেকো আসবে সুদিন একদিন,

মিথ্যে নয়, ভালোবাসা হবেই জয়ী দেখবে সবাই সেদিন

সুখ না হলেও, দুঃখের দিনে পাশে পাবে নিশ্চিত,

মুখটি তুলে, কন্ঠ ছেড়ে গাইবো মোরা প্রেমের গীত...

মনের সব বন্ধ দরজার চাবি তোমার হাতে,

ইচ্ছে হলে নিও খুলে, দেখবে বিশ্বাস ভরা আছে...

সমাজ সংসারের বেড়া ভেঙে বারেবারে ফিরব মোরা দু'জন,

একে অপরের ললাট রেখায় আঁকব বিশ্বাসের দৃঢ় চুম্বন..

                                      (রচয়িতা : সুদীপ বাগ)

সোনাঝুরি :

------------------

আদ্বান সেদিনের পর থেকে যেন মৈথিলীকে আরো বেশি করে আগলে রাখে... আদ্বানের দিন শুরু হয় মৈথিলীর ফোনে, আর মৈথিলীর চোখে ঘুম নামে আদ্বানের ফোনে... ছোটখাট্টো মৈথিলীর হাত লাইব্রেরির একেবারের উপরের তাকে না পৌছালে ঠিক আদ্বানের হাত পেছন থেকে এসে বই পেড়ে দেয়... মৈথিলীর ওষুধ খাওয়ার সময়ে ঠিক আদ্বানের ফোন আসে, তাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য... যখনই সুযোগ তারা পায় তখনই সোনাঝুড়ির ক্যানেলের জল, সোনাঝুড়ির জঙ্গল সাক্ষী থাকে এক নিষ্পাপ, সহজ, সরল বন্ধুত্বের যার ভিত শুধুই ভরসা, বিশ্বাস, আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা... ঘুগনি, ঝালমুড়ি, ভাড়ের চা সাক্ষী থাকে ওদের সারাদিনের কত্ত ছোট্ট ছোট্ট মূহুর্ত ভাগ করে নেওয়ার... আদ্বানের ইচ্ছে থাকলেও মৈথিলীকে দামী কোনো উপহার দেওয়ার সামর্থ্য সেসময় তার ছিল না... তার উপর মৈথিলীর চিকিৎসা... যদিও মৈথিলীও এখন নিজের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দেয় আদ্বানকে, কারন এখন একটা কলেজে পড়ায় Part Time হিসেবে... দু'জনের স্বল্প রোজগারে, ছোট্ট ছোট্ট মূহুর্তের সমাবেশে একটা অনাবিল আনন্দের সমারোহ হয়... কখনও মৈথিলীকে আদ্বানের কাঁধে মাথা রেখে আদ্বানের গিটারের সুরে ওর গান শুনতে দেখা যায়; আবার কখনো মৈথিলীর কোলে মাথা রেখে আদ্বানকে বই খুলে পড়া নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়... আবার কখনো দু'জনে পাশাপাশি চুপ করে বসে একে অপরের সান্নিধ্য, উপস্থিতি অনুভব করতে দেখা যায়...

মৈথিলীর প্রতি মাসের ওই বিশেষ দিনগুলোতে ওর Roommate-এর হাত দিয়ে ওর কাছে চকলেট, আইসক্রিম পৌছে যেতে থাকে... মৈথিলীর চিকিৎসা চলার দরুণ ওর ওই দিনগুলো ভীষণ যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে থাকে, ও University যেতে পারে না... মৈথিলী কোনোদিনই তার সহজাত লজ্জা আর শালীনতার দরুন ওই দিনগুলোর কথা আদ্বানকে বলতে পারে না... কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ওর কাছে কিন্তু চকলেট, আইসক্রিম পৌছাতে কখনো ভুল হয় না আদ্বানের... কিন্তু মৈথিলী অবাক হয় না... কারন ও জানে, আদ্বানকে ডক্টর বর্মনই বলেছেন যে ওষুধের দিয়ে মৈথিলীর Internal Blood Clods এইসময়ই Remove করা হবে... আদ্বান বহুবার আক্ষেপ করে বলেছে,

মৈথিলী : এগুলো কি আদ্বান !!! এত টাকা কেন খরচ করিস !!

আদ্বান : টাকা কোথায় খরচ করতে পারলাম রে মৈথিলী !!! তুই তো জানিস, আমার এই PhD করা আমার বাড়িতে Support করে না... কিন্তু আমার স্বপ্ন বল, ইচ্ছে বল- তার জন্যই নিজের জেদে এই পড়াটা করছি আমি... আমার পড়ার খরচ, আমার খরচ, আমার মায়ের খরচ সব আমার ওই রোজগারেই করতে হয়... আমার পরিবার আমার পাশে নেই... আমার পাশে আছে শুধু আমার মা আর তুই... যদি আমার কাছে একটু টাকাপয়সা থাকতো আমি তোর অপারেশনটা করিয়ে দিতাম জানিস... তোকে এত কষ্ট পেতে দিতাম না...

মৈথিলী : সেইজন্যই তো আমারও খারাপ লাগে আদ্বান... কেন এতকিছু পাঠাস তুই !! আর অপারেশন হয় নি বলেই তো Installment-এ এত্ত Pampered হই আমি.... তাই তুই মনখারাপ করিস না...

আদ্বান : আমি... আমি তোকে পূজোতে একটা শাড়ি দিতে চাই... বেশি দামি নয়, তাঁতের শাড়ি... নিবি তুই !!

মৈথিলী : কেন নেব না !!! নিশ্চয়ই নেব... আর পুজোতে পরে তোকে ফোটোও পাঠাব... (একটু অন্যমনস্ক হয়ে) জানিস আদ্বান, আমার তো বাঁচারই কথা ছিল না... একটু একটু করে আমি নিজেই নিজেকে শেষ...

আদ্বান : (ব্যাথাদীর্ণ গলায়) আহহ... মৈথিলী... আমার এই কথাগুলো শুনতে ভালো লাগে না...

মৈথিলী : না রে... আমি সেটা বলতে চাই নি... আমি বলতে চাইছি যে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুই একদিন অ-ন-এ-এ-ক বড় হবি... University-তে পড়াবি দেখবি... আর সেই স্বপ্নপূরণের পথটুকু আমি তোর সাথে হাটতে চাই...

আদ্বান : আমি তো তোর সাথে সারাটা জীবন পথ চলতে চাই মেথি পাতা... তোকে ছাড়া এখন আমার আর শান্তিতে ঘুম আসে না, জানিস...

মৈথিলী : (চমকে উঠে) কিইইই !!!

আদ্বান : হ্যাঁআআআ... তোর ভাট বকা না শুনলে আমার চোখে ঘুম নামে না, আমার সকাল হয় না, সারাদিনের Energy পাই না... এই যে সারাদিন তুই ভাট বকিস, তার মধ্যে একটা বেশ.... বেশ একটা ব্যাপার আছে জানিস...

আদ্বানের বলা কথাগুলো চোখ সরু সরু করে আর ঠোঁট ফুলিয়ে শোনে মৈথিলী... তারপরেই আদ্বানের ফিক করে হাসির শব্দে মুখের হাঁ-টা বন্ধ করেই ক্ষেপে উঠে তর্জনী নেড়ে নেড়ে বলে ওঠে, 

মৈথিলী : এই কাকতাড়ুয়া... আমি ভাট বকি !!! তোর সাথে কোনো কথা নেই আমার... তোকে আমার ভাট বকা আর শুনতে হবে না, যা...

আদ্বান : এই... এই... মেথি পাতা... শোন... শোন... যাহহহ... ফোনটা কেটে দিল... কি পাগলি রে !!! আচ্ছা, পাগলিটা কি কখনো বুঝবে না আমার মনের কথা !!! সারাজীবন জেদ ধরে বসে থাকবে যে, ও কারোর জীবনের সাথে নিজেকে জড়াবে না... কিন্তু আমি যে ওর জন্য আমৃত্যু অপেক্ষা করব... আর যে ওকে ছেড়ে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না, আমার সবকিছুর সাথে একটু একটু করে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে... নাহহহ... আজ মৈথিলীর Blood আর USG Report-টা নিয়ে ডক্টর বর্মনের চেম্বারে যেতে হবে একবার... তারপর University যেতে হবে... মেয়েটা তো যন্ত্রণাতে এই ক'দিন বিছানা থেকেই নামতে পারে না... University কি করে যাবে !!!

HOSPITAL :

---------------------

ডক্টর বর্মন : Amazing... মৈথিলীর Case-টা আমি একদম Lost Case হিসেবেই ধরে নিয়েছিলাম... But, You proved Me Wrong... আমি ভাবতে পারছি না, তুমি নিজে এই তিনমাসে ওকে Counseling করে করে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করেছো... নেশা তথা মৃত্যুর মুখ থেকে তুমি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে এলে... মানে তুমি যদি Academicians না হতে, তুমি কিন্তু খুব ভালো Psychiatrist হতে পারতে...

আদ্বান : কিন্তু ডক্টর ওর Internal Injury-টা !!! মেয়েটা যে প্রতি মাসে মরণ যন্ত্রণা ভোগ করছে...

ডক্টর বর্মন : দেখো আদ্বান, ওর ভেতরে যে Blood Clods-গুলো আছে সেটা হয়তো আর তিন-চার মাসের মধ্যেই Remove হয়ে যাবে... শরীরের নিজস্ব কিছু ক্ষমতা থাকে Internal Injuries-কে resolve করার... কিন্তু ওর উপর যে পরিমান আঘাত করা হয়েছে এবং তাতে ওর Internal যা আঘাত লেগেছে, সেটা ওষুধ বা শরীর কোনোটাতেই সারবে না... কিছু যন্ত্রণা ওকে আজীবন সহ্য করে যেতে হবে... তবে ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্য আর যত্ন সেই যন্ত্রণার অনুভূতিটা অনেকটাই প্রশমিত করে দিতে পারে... তার উপর মৈথিলীর Adenomyosis আছে... তাই ওর Complete recovery হয়তো কোনোদিনই সম্ভব নয়... তবে যার হাত তোমার মতো বন্ধু শক্ত করে ধরে আছে, সে সব যন্ত্রণা হাসিমুখে সহ্য করে নিতে পারবে... তোমার মনের কথাটা ওকে বলেছো !!!

আদ্বান : (চমকে উঠে) অ্যাঁ !!! কোন মনের কথা !!

ডক্টর বর্মন : (মৃদু হেসে) বুঝতে পারছো না কিসের কথা বলছি !!

ডক্টর বর্মনের অর্থপূর্ণ হাসির ইঙ্গিত বুঝে আদ্বান লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়... ডক্টর বর্মন আদ্বানের হাতের উপর হাত রেখে নরম গলায় বলেন,

ডক্টর বর্মন : আদ্বান, মৈথিলী কিন্তু তোমাকে ছেড়ে কোনোদিনই ভালো থাকতে পারবে না... তাই, ও যদি একান্তই নিজের মনের কথা বুঝতেই না পারে... তুমি ওকে তোমার মনের কথাটা বলেই দাও...

আদ্বান : না ডক্টর... ও ওই ঘটনার বিভীষিকা থেকে এখনও বেরতে পারে নি... ওর Roommate, তন্বী আমাকে বলেছে, ও মাঝেমধ্যেই রাতে ঘুমের মধ্যেই খুব চিৎকার করে ওঠে... তন্বী ওকে ঘুম থেকে তুলে জল খাওয়ায়... কিন্তু তারপরেও ও ভয়ে ভীষণ কাঁপতে থাকে, শ্বাসকষ্ট হয়... তন্বী সারারাত ওকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকে... পরে হয়তো ভোরের দিকে ওরা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে...

ডক্টর বর্মন : (দৃঢ় স্বরে) আদ্বান, তোমরা যখন এতবড় লড়াইটা একসাথে লড়ে পার হয়েছো, এই লড়াইটাও পারবে... একটা কথা বলি আদ্বান, আমাদের মস্তিষ্কে কিছু Memory Cell থাকে যা নির্দিষ্ট সংখ্যক স্মৃতি ধারণ করতে পারে... হয়তো ওর জীবনে তেমন কোনো সুখ স্মৃতি তৈরি হয় নি, যা ওই বিভীষিকার স্মৃতিটা Replace করতে পারে... এখন ওর জীবনের মূহুর্তগুলো এতটাই আনন্দের, ভালোবাসার স্মৃতি দিয়ে ভরিয়ে দিতে হবে যে, ওই ভয়াবহ স্মৃতির জন্য যেন কোন স্থান ফাঁকা না পড়ে থাকে....

আদ্বান : আমি ওকে খুব বেশি সময় তো দিতে পারি না... কিন্তু ও এখন যেখানে সবথেকে বেশি সময় কাটায়, সেটা হলো ওর হোস্টেল... আর Hostel Life তো আপনি জানেন... ওরা এত্ত আনন্দে, মজায় থাকে যে মৈথিলীর জীবনেও আস্তে আস্তে আনন্দের ছোঁয়া লাগছে... ওর যে বন্ধুরাও ভীষণ Co-Operate করে আমাকে, ওকে সবসময়ই আগলে রাখে... হয়তো এই ভালোবাসাগুলো পাবে বলেই ও এতকিছু সহ্য করেও শেষ হয়ে যায় নি...

ডক্টর বর্মন : তাই হবে... এত্তগুলো ভালোবাসার মানুষ যখন একসাথে লড়ছে, ওকে তো জিততেই হবে... মৈথিলী ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে...

আদ্বান : আজ তাহলে আসি ডাক্তারবাবু...

ডক্টর বর্মন : হ্যাঁ, ভালো থেকো Young Man...

আদ্বান উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টর বর্মনকে নমস্কার করে বলে,

আদ্বান : আপনিও সাবধানে থাকবেন...

হোস্টেল :

--------------

তন্বী : এই নে ধর...

মৈথিলী : কি এটা ?

তন্বী : MILO...

মৈথিলী দুধের নাম শুনেই মুখ বেকায়,

মৈথিলী : নাহহ... আমার ভালো লাগে না.. (আবদারের সুরে) চকলেটটা দে না...

তন্বী ছোট্ট করে জিভ কেটে কাচুমাচু মুখ করে বলে,

তন্বী : চকলেট নেই...

মৈথিলী : (অবাক হয়ে) নেই ??

তন্বী : আদ্বান তোর হাতে দিতে বলেছিল... আমি তোর হাতে দিলাম... তারপর আমিইই সা-আ-টি-ই-য়-এ-এ...

হাত নেড়ে নেড়ে কথাগুলো বলে মৈথিলীর দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে তন্বী বলে,

তন্বী : তুই MILO খা না... Chocolate Flavour...

মৈথিলী কপট রাগতে গিয়েও ফিক করে হেসে ফেলে,

মৈথিলী : বাহঃ বাহঃ... Very Good... আচ্ছা দে... MILO-টাই দে... ওষুধ খেতে হবে তো !!!

উচ্ছ্বসিত তন্বী মৈথিলীর পাশে বসে বলে,

তন্বী : আচ্ছা, তুই আর আদ্বান Propose করেছিস !!

মৈথিলী : ওমাআআ... খামোখা Propose করতে যাব কেন !!

তন্বী : (চোখ বড় বড় করে) খামোখা !!! তুই কি আদ্বানের না বলা কথাগুলো বুঝিস না !!! বুঝিস না ওর চোখ সবসময়ই কি বলতে চায় !!! হ্যাঁ, মানছি আদ্বান Least Spoken Person... তাই বলে Feeling-Less তো নয়...

তন্বীর কথা এই প্রথমবার মৈথিলীকে আদ্বানের মনের কথা ভাবতে বাধ্য করে,

মৈথিলী : কি বলছিস তুই, তন্বী !! তুই Sure !!

তন্বী : একদম ঠিক বলছি... কেন !! তুই বুঝিস না !!

মৈথিলী : নাহহ... আর যদি তোর কথা সত্যি হয়, আমাকে... আমাকে ওর জীবন থেকে সরে যেতে হবে...

মৈথিলীর কথায় একেবারে চমকে ওঠে তন্বী... ওর হাতটা ধরে বলে,

তন্বী : ভুলেও এটা করিস না, মৈথি... ছেলেটা তোর সাথে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে, এই ধাক্কাটা সহ্য করতে পারবে না ও... নিজেকে শেষ করে দেবে...

আদ্বানের অমঙ্গল আশঙ্কায় আৎকে ওঠে মৈথিলী,

মৈথিলী : না... না... নাহহহ...

মৈথিলীকে উত্তেজিত হতে দেখে বুদ্ধিমতী তন্বী এইটুকু বোঝে, মৈথিলীকে আস্তে আস্তে আদ্বানের মনের কথা বোঝাতে হবে... আদ্বানের কাছে ও মৈথিলীর অসুস্থতার কথা সবটাই শুনেছে, কারন আদ্বানের মতো তন্বীও মৈথিলীকে ভীষণ ভালোবাসে... তাই মৈথিলীকে দুই হাতে আগলে নিয়ে তন্বী বলে,

তন্বী : আচ্ছা শোন, এত্ত Excitement তোর জন্য ঠিক নয়... এখন তোর শরীরও ভালো নেই... এখন এত ভাবিস না... সময় এলে হয়তো ওই তোকে সব বলবে...

মৈথিলী : (উত্তেজিত হয়ে) কিন্তু তখন আমি কি করব !!! আমি বেঁচে থাকতে ওর জীবনটা নরক করতে পারব না... আমি ওকে প্রেম না করি, কিন্তু ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি...

তন্বী : তোর এই এত্তটুকু ভালোবাসাই ওর জন্য য-থে-এ-ষ্-ট... বুঝলি !! এখন এইসব চিন্তা ছাড়... কাল তো সারারাত যন্ত্রণাতে ছটফট করেছিস... (মৈথিলীর মুখটা দুই হাতের অঞ্জলিতে নিয়ে) আমি তোর মাথায় একটু Oil Message করে দিই, একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর... Please...

তন্বীর আদরে মৈথিলীর মুখের হাসি ফিরে আসে... মিষ্টি হেসে সে বলে,

মৈথিলী : Thank You....

(আদ্বানের মনের কথা কি কখনো মৈথিলী বুঝতে পারবে !! মৈথিলী কি আদ্বানকে আপন করতে পারবে না কি অতীত মৈথিলীকে জীবনের পথে আর এগোতে দেবে না !!! কি হবে আদ্বান মৈথিলীর ভালোবাসার পরিণতি !!!)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance