Anishri's Epilogue

Romance

3  

Anishri's Epilogue

Romance

অনাদৃতা (পর্ব ৩)

অনাদৃতা (পর্ব ৩)

19 mins
365


রঙের স্বভাব নেই কো তার, অভ্যেস শুধুই সাদা-কালো

একাকী ঋতু কতই পেরোয়, বসন্ত কি পথ হারালো !!

                                                 (✍ : আরুণী)

Pune :

---------

পরের দিন মৈথিলীকে দেখে ক্ষণিকের জন্য দিব্যান্ত-র চোখ আটকে যায়... না তেমন কিছু সেজে আসে নি মৈথিলী... একটা Multi Colour ব্লাউজের সাথে সোনালী পাড় সাদা South Cotton শাড়ী, ঠোঁটে হাল্কা গোলাপী Lipstick, ছোট্ট গোলাপী টিপ, ছোট্ট Pendant দেওয়া একটা সরু হার, কানে ছোট্ট ঝুমকো, আর হাতে দুটো চুড়ি... সবার এত সুন্দর সাজের মধ্যে এই স্বল্প সজ্জিতা মৈথিলীকেই একদম আলাদা লাগে দিব্যান্তর... যদিও সে সবার সাথে আনন্দ মজাতেই মেতে থাকে... কারন সে চায় না যাকে সে সবচেয়ে বেশি দেখছে, সেটা অন্য কেউ বুঝুক... এই মূহুর্ত তার একান্তই বড্ড আপন... তবে এক দু'বার মৈথিলীর সাথে তার চোখাচোখি হয়, মেয়েটা বোধহয় বড্ড Tension করছে...

একে একে সবাইকে ডেকে নেয় Seniors-রা... আতর আর গোলাপ দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়... দিব্যান্তর খুব কাছের এক Senior দিদি মৈথিলীকে জানায়,

অহনা : কি রে !!! খুব ভয় পাচ্ছিস নাকি !!! দিব্যান্ত বলছিল...

মৈথিলী : আসলে দিদি, আমি একদম সবার সাথে Free হতে পারি না... খুব ভয় লাগছে...

অহনা : একদম ভয় পাবি না... আমরা আছি তো... আর দিব্যান্ত আমাদের বিশেষ করে তোর খেয়াল রাখতে বলেছে... So... No Tension... okk... Smile... তুই জানিস, আজকে তোকে কত মিষ্টি লাগছে... তবে জানিস তো, আমরা দিব্যান্ত আর দিব্যার জুটিটা Real Life-এও দেখতে চাই...

মৈথিলী : আমিও তাই চাই দিদি... ওরা ভালো থাকলে আমি খুব খুশি হবো...

অহনা : যা... গিয়ে বোস...

মৈথিলী : হ্যাঁ....

দিব্যা আর মৈথিলী বরাবরের মতো পাশাপাশি বসে, আর দিব্যান্ত ঠিক ওদের সামনে... হঠাৎই দিব্যান্ত কি মনে করে ওর হাতের লাল গোলাপটা মৈথিলীকে কোলে ফেলে দেয়...

মৈথিলী : এ কি !!! তুই তোর গোলাপ আমার কোলে ফেললি কেন !!

দিব্যান্ত : আরে ধরতে দিলাম... ধরতে...

মৈথিলী : ধরতে দিলি !!! বাজে বকার জায়গা পাস না...

দিব্যান্ত : আরে... এরপর তো আমাকে আর দিব্যাকে ডাকবে... আমি কি ফুল নিয়ে যাব না কি ওখানে !!! ঘট-এ কিছু নেই না কি তোর !!! সব বলে বলে দিতে হবে !!! যত্তসব...

দিব্যা : নারদ... নারদ... থাম তোরা... এই চল... আমাদের ডাকছে....

আগেরদিন দিব্যান্তর কথা মতোই দিব্যান্তকে দিব্যাকে Propose করতে বলামাত্র গোটা Hall জুড়ে হর্ষধ্বনি উঠলো... এই প্রথমবার মৈথিলীর বুকের কোথাও গোপন বেদনা জাগে... একে কি বলে, জানে না মৈথিলী... তাই মূহুর্তে নিজের মনকে তার সঙ্কীর্ণতার জন্য শাসন করে ঠোঁটে স্মিত হাসি এঁকে নেয়... কিন্তু হঠাৎই মৈথিলীর মনে হলো, Propose-টা দিব্যান্ত তার দিকে তাকিয়েই করলো... এমনকি দিব্যাকে Cheat Hand Kiss করেও মৈথিলীর দিকেই আড়চোখে তাকালো... মূহুর্তে লজ্জায় রাঙা হয়ে মৈথিলী মুখ নামিয়ে নেয়, দিব্যান্ত-র মুখেও একটা হাল্কা হাসি ছুঁয়ে যায়...

কিন্তু সেই মূহুর্ত বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না... এক দু'জনের পর মৈথিলীর ডাক পরে... দিব্যান্ত মৈথিলীর হাত ছুঁয়ে ওকে পাশে থাকার আশ্বাস দেয়... বিপত্তি ঘটে Stage-এ গিয়ে... হঠাৎই মৈথিলীর সাথে ডাকা হয় তারই সহপাঠী ঋককে... অহনা আর দিব্যান্ত অবাক হয়ে পরষ্পরের দিকে তাকায়... কিন্তু কয়েকজনের মুখে সুপ্ত ক্রুর হাসি খেলে যায়, যার মধ্যে মৈথিলীর খুব কাছের একজনও আছে... ঋক মৈথিলীর হাত শক্ত করে ধরে বলতে থাকে,

ঋক : দেখ মৈথিলী, আমি আমার এই কৃতকর্মের জন্য দুঃখিত, কিন্তু তুই আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা রাখিস নি....

মৈথিলী : তুই আগে আমার হাত ছাড়, আমার হাতে লাগছে...

ঋক : ছেড়ে দেব... এক্ষুনি ছেড়ে দেব... তার আগে তুই আমাকে কথা দে, তুই আমার হবি...

মৈথিলী : সেটা সম্ভব নয়... হাত ছাড়...

ঋক : কেন !!! সবকিছুই কি শুধুই দিব্যান্তর জন্য তোলা থাকবে !!!

মৈথিলী : কি পাগলের মতো বকছিস !!! হাত ছাড় লাগছে আমার...

ঋক : নাহ... আগে কথা দে...

দিব্যান্ত : কি করছিস কি ঋক !!! হাতটা ছাড় ওর....

ঋক : কেন !! তুই এই ফুলেরও মধু খাবি, আবার ওই ফুলেরও মধু খাবি না কি !!!

দিব্যা : দিব্যান্ত, তুই বোস... মৈথিকে একটু শক্ত হতে দে... ওর সমস্যা ওকেই মেটাতে দে... একটা কথা মনে রাখবি, সব জায়গাতে আমরা থাকব না...

দিব্যান্ত : আর চোখের সামনে ওর এই অপমানটা সহ্য করলে আমরা ওর বন্ধু হবার যোগ্য হবো না...

মৈথিলী : হাতটা ছাড় ঋক...

অহনা আর সহ্য করতে না পেরে ছুটে এসে ঋকের গালে সজোরে একটা চড় মারে....

অহনা : শোনো ঋক, আমরা এখানে মজা করে হয়তো Propose করতে বলি, বা আরো কিছু Perform করতে বলি... কিন্তু সেটা নিতান্তই মজার পর্যায়েই থাকে... কিন্তু এই রকম অসভ্যতা আমরা কেউ সহ্য করব না... তোমার নামে আমি Report করব H.O.D.-র কাছে...

মৈথিলী : (কান্নাভেজা গলায়) না দিদি... আমি চাই না, আমার জন্য শুরুতেই কারুর কেরিয়ারে দাগ লাগুক... শুধু আমাকে এই অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবার অনুমতি দাও... আমি মানছি, আমি তোমাদের এই Modern যুগের যোগ্য নই... আমি অপারগ এই Culture-এর সাথে পা মেলাতে... Please, আমাকে যেতে অনুমতি দাও... Please...

অহনা : যা... তোর এখন একা থাকাটা দরকার...

দিব্যান্ত : আমি তোকে ছেড়ে দিয়ে আসছি...

মৈথিলী : (ঋজু স্বরে) একদম না... আমার দায়িত্ব আমি একা নিতে সক্ষম... তাছাড়া আর কত নেব ??আর কত অন্যের দয়ায় পরনির্ভরশীল হয়ে জীবনটা কাটাব !! এবার সময় হয়েছে নিজেকে সামলানোর... সব আবেগকে পেছনে ফেলে নিজের পথে হেঁটে যাওয়ার... তাই আমায় আটকাস না বা আমায় এগিয়ে দিয়ে আসার কথা ভাবিস না... এই রাস্তাটা আমার... আমাকেই চলতে হবে... আর সেটা কারোর সাহায্য ছাড়াই..আসি... তোরা এখানেই থাকবি... আমি একটু একা থাকতে চাই... আশা করি, এইটুকু থেকে তোরা আমায় বঞ্চিত করবি না... Please... Enjoy Yourself...

মৈথিলী দিব্যান্তর সব রঙ কেড়ে নিয়ে এক ছুটে Hall থেকে বেরিয়ে যায়... গোটা অনুষ্ঠানের সুরটা যেন কেটে যায়... বিকেলে দিব্যা আর দিব্যান্ত মৈথিলীর P.G.-তে এসে দেখে মৈথিলী খাটে চুপ করে বসে আছে... পোশাক পরিবর্তনও করে নি... একভাবে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে বসে আছে... ওদের ঘরের দরজা খোলা... ওরা দু'জন যে ঢুকেছে, মৈথিলী অনুভবই করতে পারে নি... দিব্যান্ত মৈথিলীর ব্যাথা পাওয়া হাতটা নিজের অঞ্জলির মধ্যে নিয়ে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে,

দিব্যান্ত : হাতে লেগেছে তোর মৈথি !!! একবার দেখতে দে...

মৈথিলী দিব্যান্তর হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে ওকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে দিব্যাকে জিজ্ঞেস করে,

মৈথিলী : কখন এলি দিব্যা !! Tired তো !! চা খাবি !!

দিব্যা : হ্যাঁ... Please... খুব ভালো হয়...

মৈথিলী Electric Kettle-এ চা বসালে দিব্যা change করতে চলে গেলে দিব্যান্ত এসে আবার মৈথিলীর হাত ধরে...

দিব্যান্ত : তোকে চা করতে হবে না... তুই Please একটু আমার পাশে বোস... আমাকে একটু তোর হাতটা দেখতে দে...

মৈথিলী : নাহহহ... হাতটা ছাড়...

দিব্যান্ত : (বেদনার্ত গলায়) মৈথি !!!!

মৈথিলী : (কান্নাভেজা অথচ ঋজু স্বরে) আমি তোকে অধিকার দিই নি আমার হাত ধরার... সবাই তোকে আর দিব্যাকে একসাথে দেখতে চায়... আমিও চাই... কিন্তু এটা আমাদের Room... যদিও দিব্যার সমান অধিকার, কিন্তু তাও আমি চাই না তুই এখানে আয়... তোরা বাইরে Time Spend কর... কিন্তু এখানে নয়... নাহহহ.. কারন, আমি এখানে শুধুই পড়াশোনা করতে এসেছি... আমি চাই না, এই আনন্দের জোয়ারে সাময়িক গা ভাসিয়ে তারপর আকুল পাথারে ডুবে যেতে... কারন চোখের সামনে যা দেখছি, সবই চোরাবালি... তাই কিছু মনে করিস না, আমাকে একা ছেড়ে দে তোরা... Please... Earnest Request আমার...

দিব্যান্ত : (বেদনার্ত গলায়) মৈথি !!!

মৈথিলী : ঠিক বলছি আমি... আমি এখানে Degree নিতে এসেছি, Degree নিয়ে চলে যাব... ব্যাস... (আর্তনাদ করে) আহহহহহ....

দিব্যান্ত : (আৎকে উঠে) মৈথিইইইই....

দিব্যান্ত জানলার বাইরে মুখ ফিরিয়ে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করতে থাকে... মৈথিলীও রাগের মাথায় Plug-এর Switch বন্ধ না করেই টেনে Electric Kettle টেনে বার করতে গিয়ে জোর Electric Shock খায়... কিছুদূরে ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারায়... দিব্যান্ত দৌড়ে এসে মৈথিলীর মাথা নিজের কোলে তুলে নেয়... দিব্যান্ত ওর গালে নরম হাতে আলতো চাপড় মেরে ওকে ডাকতে থাকে...

দিব্যান্ত : মৈথিলী... মৈথিলী... চোখ খোল... চোখ খোল Please... আমি জানতাম না, আমি তোর এত অশান্তির কারন... এত বিপদের কারন... আমি কোনোদিনও তোর সামনে আসব না... কথা দিলাম তোকে... কিন্তু তুই Pleae চোখটা খোল... কথা দিচ্ছি আমি, কোনোদিন তোর স্বপ্ন পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না... আজকের পর থেকে কোনোদিন আমার মুখটা তোকে দেখতে হবে না... আমি আর কোনোদিনও তোর সামনে এসে দাঁড়াব না... তুই শুধু চোখটা খোল মৈথি... Please...

দিব্যাও বাথরুম থেকে বেরিয়ে মৈথিলীকে ওই অবস্থাতে দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়... মনে মনে ভাবে,

দিব্যা : (মনে মনে) যাহ !! Dose-টা কি একটু বেশি হয়ে গেলো !!! যা মেয়ে !! একটুতেই উল্টে পড়ে !! কিন্তু এখন কি হবে ?? বাড়াবাড়ি হলে তো Guardian Call হবে !! বেশি তাড়াতাড়িই করতে গিয়ে ভুল করে ফেললি দিব্যা... এবার একটু গা বাঁচানোর নাটক করতে হবে !!

তাই দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হওয়ার ভান করে বলে ওঠে, 

দিব্যা : দেব !! কি হয়েছে মৈথির ?? ও এইভাবে শুয়ে আছে কেন ?? কি করবো এবার আমরা, দেব !!ওকে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাবি !!

দিব্যান্তর মৈথিলীর Pulse check করে ওকে কোলে তুলে বিছানাতে শুইয়ে দেয়.... দুজনে মিলে পর হাত পা ঘষতে থাকে.... একটু ধাতস্থ হলে দিব্যান্ত বলে ওঠে,

দিব্যান্ত : চিন্তা করিস না ডিভা... মৈথি ঠিক হয়ে যাবে... কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে হয় ওর জ্ঞান ফিরে আসবে... তুই Switch-টা Off করে একটু দুধ নিয়ে আয় তোদের কাকিমার কাছ থেকে Please...

ভয়ার্ত দিব্যা দিব্যান্তর কথামতো কাজ করে দুধ আনতে ছোটে... দিব্যান্তর চোখে পড়ে ঋক মৈথিলীর যে হাতটা শক্ত করে ধরেছিল, সেই জায়গাটায় কালশিটে পড়ে গেছে... দিব্যান্ত উঠে দেওয়ালের তাক থেকে Volini নিয়ে এসে মৈথিলীর হাতে লাগিয়ে দেয়... ধীরে ধীরে চোখ মেলে মৈথিলী... কিছুক্ষণ দিব্যান্তর দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে মৈথিলী... ক্লান্তিতে মুখ ফুটে কোনো কথা বেরোয় না মৈথিলীর, কেবল নির্লজ্জ চোখের জল বাঁধ মানে না... দিব্যান্তও চোখের কোণটাও চিকচিক করে ওঠে, কিন্তু সে-ও কোনো কথা বলে না... দিব্যা দুধ নিয়ে এলে দিব্যান্ত মৈথিলীকে ধরে উঠিয়ে জোর করে দুধ খাইয়ে দেয়... তারপর মৈথিলীর দিকে একবার দু'চোখ ভরে দেখে কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়... রাতে মৈথিলীর ফোনে দিব্যান্তর একটা Whatsapp Message ঢোকে,

"বুকে তোমায় নাই বা পেলাম,

রইবে আমার চোখের জলে

ওগো বধূ তোমার আসন, গভীর ব্যথার হিয়ার তলে"

পরেরদিন দিব্যান্ত University আসে না... Tiffin Break-এ অহনার সাথে দেখা হয় মৈথিলী আর দিব্যার... আজ মৈথিলীর মনটাও ভীষন অস্থির হয়ে ওঠে দিব্যান্তকে দেখতে না পেয়ে, সে ভেবেছিল আজ দিব্যান্তর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেবে...

দিব্যা : অহনাদি, আজ দেব University এলো না কেন গো !!!

অহনা : দিব্যান্ত আজ ভোরে পুনে ছেড়ে চলে গেছে... University ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে... ও আর কোনোদিন ফিরবে না....

মৈথিলী : কিইইইই !!!

মৈথিলীর হঠাৎ করেই যেন চারপাশটা ফাঁকা হয়ে আসে... মনে হয়, যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না... দিব্যান্ত এটা কিছুতেই করতে পারে না ওর সাথে... কিন্তু শুধু বুঝে উঠতে পারে না, দিব্যান্ত ওর কে হয় !! বুক ঠেলে একটা চাপা কান্না যেন বেরিয়ে আসতে চায়... খুব ধীরে অস্ফুটে একটাই শব্দ উচ্চারণ করে, 'দেব... ব.. ব...'


চলার পথে অনেক সম্পর্কই এসে ভিড় জমায়... সাময়িকভাবে মনে হয় এগুলো ছিন্ন হলে হয়তো জীবন বৃথা... কিছু সম্পর্ক থাক না অসম্পূর্ণ... সব সম্পর্ককে যে পূর্ণতার রূপ দিতে হবে, এমন তো নয়... কিছু অগোছালো সম্পর্কও মধুর স্মৃতি বহন করে চলে...

মুসৌরি :

--------------

আদ্বান আর ঈরিশ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অজানা ঝোরাটার সামনে... ধীরে ধীরে তখন সূর্য উঠছে ভোরের আলো ফুটিয়ে... আকাশ অপার্থিব ডিমের কুসুমের মতো কমলা রঙে ভরে যাচ্ছে, আদ্বানের মতো বাউন্ডুলে মেঘগুলো হঠাৎ হঠাৎ ছোট্ট বাছুরের মতো এদিক ওদিক ঢুকে পড়ছে... এই মেঘগুলো দেখেই বোধহয় কবি লিখেছিলেন, 'এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে'... দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে কুয়াশার চাদরটা কে যেন সরিয়ে নিচ্ছে আস্তে আস্তে... সেই অপার্থিব সকালে যখন মুগ্ধ হয়ে দু'জনেই শীতের ওম গায়ে মেখে নিতে নিতে, ঘাসের ডগার উপরে জমে থাকা ঈষৎ বরফালি শিশিরের গলে যাওয়া দেখতে দেখতে ঈরিশ বলে,

ঈরিশ : কুয়াশার চাদরটা দেখছিস আদ্বান !!!

আদ্বান : হ্যাঁ... তাতে কি হয়েছে !!!

ঈরিশ : আমি বিশ্বাস জানিস, কেউ একজন একদিন নিশ্চয়ই আসবে... যে তোর জীবনের এই কুয়াশার চাদরটা ধীরে ধীরে সরিয়ে তোর গোটা আকাশটা জুড়ে ওই হলুদ রঙের ভোর নিয়ে আসবে... এইটা আমার বিশ্বাস...

আদ্বান : আদ্বান, আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না রে... পারবে না....

ঈরিশ : পারবি.... পারবি দেখিস... যখন তোর মনের ভেতরের এই জমে থাকা মেঘের জলকণার উপর সূর্যের প্রথম আলো পড়লে, তখন কেমন সুন্দর রামধনু তৈরি হবে... ঠিক তেমনি রঙে রঙে রঙিন হয়ে উঠ... আমি শুধু সেদিনের অপেক্ষাতে আছি..

আদ্বান : আমি এখন শিখছি জীবনের পাহাড়ি চড়াই-উতরাই রাস্তায় কিভাবে দম না নিয়ে হাঁটতে হয় !!! এইসব ভাবার সময় কোথায় !!!

ঈরিশ : কিন্তু আদ্বান...

নেপথ্যে : এই আদ্বান, তোরা এখানে... Excursion হবে, আর তোর গান হবে না !!! চল... চল... একটা গান ধরবি চল...

ঈরিশ নেতিবাচক মাথা নাড়ায় আর চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠে আদ্বানের গাওয়া গানে,

কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে

যদি নেমে আসে ভালোবাসা খুব ভরে

চোখ ভাঙা ঘুমে তুমি খুঁজো না আমায়

আশে পাশে আমি আর নেই

আমার জন্য আলো জেলো কেউ

আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ

এই স্টেশনের চত্তরে হারিয়ে গেছি

শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না না না

না না না না না না

আমাকে আমার মত থাকতে দাও

আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি

আমাকে আমার মত থাকতে দাও

আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি

যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক

সব পেলে নষ্ট জীবন....

Pune :

-----------

কেটে গেছে সাত-সাতটা দিন... মৈথিলী ভালো নেই... একে তো দিব্যার মেজাজ সবসময়ই সপ্তমে থাকে, তার উপর মৈথিলীর নিজের মনও এখন বিদ্রোহ করে... দিব্যান্ত তাকে আত্মগ্লানিতে ডুবিয়ে সব ছেড়ে চলে গেছে... তার উপর দিব্যান্তর অনস্তিত্ব মৈথিলীর মনে অস্তিত্বের থেকেও বেশি গভীরতর দাগ কেটে গেল... মৈথিলী মাঝে মাঝেই ওকে Hallucinate করতে শুরু করে- কখনো হাসি, কখনো ওর দুষ্টমী আর সবথেকে বেশি ওর নিঃশব্দে মৈথিলীর পাশে হেঁটে চলা... যেন এক একাকী বিরহিনী একক মননে সৃষ্টি করে চলেছে এক 'রূপকথা'- যার কথন শুনলো না কেউ, কিন্তু সেই রূপকথার পান্ডুলিপিতে নতুন নতুন আখরলিপি সে লিখে চলে... সে গোপনে লেখে, আর ততোধিক সঙ্গোপনে তাকে লুকিয়ে রাখে...

সেদিন University থেকে ফেরার পথে,

দিব্যা : কি হয়েছে তোর !!

মৈথিলী : (চমকে উঠে) আম... আমার !! কি হবে !!!

দিব্যা : হ্যাঁ তোর... আমি লক্ষ্য করছি, যেদিন থেকে দিব্যান্ত চলে গেছে, You are drastically changed... কেমন অন্যমনস্ক থাকিস !!! হঠাৎই চমকে উঠিস... এইসব তো তোর মধ্যে কখনো ছিল না... হ্যাঁ, তুই বরাবরই নিজের ভাবের জগতের মানুষ... সেটার সাথে আমি Used To... কিন্তু এই অন্যমনস্কতা এক নয়, অন্য...

মৈথিলী : না রে... তুই ভুল ভাবছিস...

দিব্যা : আমি ভুল ভাবছি !!! আমি !!! এই শোন, আমি না তোর এখানকার আর পাঁচটা সহপাঠীর মতো কয়েকমাসের বন্ধু নই... বিগত তিন বছর আমরা একসাথে থেকেছি সারাদিনের বেশিরভাগ সময়... তুই যেমন আমি না বললেও বুঝে যাস- আমার খিদে পেয়েছে কি না, আমি ঘুমিয়েছি কি না, আমার কষ্ট হচ্ছে কি না... তেমনি আমিও তোকে চিনি... দিব্যান্ত যাবার পর থেকে তুই একদিনও ফুচকা শুদ্ধু খাস নি... ফুচকা... কলেজে আমি একটাদিন যেতে দেখি নি, যেদিন তুই ফুচকা খাস নি... সেই তুই...

মৈথিলী : যতদিন না তোর দিব্যান্তকে আমি তোর কাছে ফিরিয়ে আনতে পারছি, ততদিন আমি একদম শান্তি পাচ্ছি না রে... আমি দিব্যান্ত চলে যাবার আগেরদিন ওর সাথে খুব বাজেভাবে ঝগড়া করেছিলাম রে... খুব খারাপ লাগছে আমার...

দিব্যা : তুই আর করতে কি পারিস !! এই ঝগড়া করা ছাড়া... তোর দ্বারা প্রেম হবে !!! অবশ্য তোর প্রেমে পড়বেই বা কে !!! শোন আমি যাদের প্রেম করে ছেড়ে দিই, ভাবছি সেইসব 2nd Hand কোনো মালকে তোর সাথে জুড়ে দেব... ওরা আমার জন্য এতটাই পাগল, আমার কথা ঠিক শুনবে... চলবে !!!

মৈথিলী জীবনে প্রথমবার কঠোর চোখে দিব্যার দিকে তাকায়...

দিব্যা : কি হলো !! ওমনিভাবে তাকাচ্ছিস কেন !!!

মৈথিলী : (নরম অথচ ঋজু স্বরে)

'আমার হৃদয় আমারই হৃদয়,

বেচি নি তো তাহা কারোর কাছে...

ভাঙাচোরা যা হোক, তা হোক,

আমার হৃদয় আমারই আছে' (🙏 কবিগুরু)

দিব্যা : মানে !!!

মৈথিলী : আমি একজন মানুষকে ভালোবাসতে চাই দিব্যা, যার একটা নরম মন থাকবে... তোর ওই নপুংসকদের তোর কাছেই রাখ... আর যদি পুরুষ মানে এই নপুংসকরা হয়, তাহলে আমার সারাজীবন অবিবাহিত থাকাই ভালো...

দিব্যা : মৈথি সোনা, তাহলে তুমি সারাজীবন তাই থেকো... নয়তো, মা-বাবার ঠিক করে ছেলের কাঁধে চেপে যাস...

মৈথিলী : জীবন ভীষন Unpredictable, ডিভা... কার জীবন কোন খাতে বইবে, আমরা কেউ জানি না... তাই তো জীবন সুন্দর... এখন চল...

নেপথ্যে : এই ডিভা... ডিভাআআআ....

অহনার গলা শুনে ওরা দু'জনেই পেছন ফিরে তাকায়... অহনা দৌড়ে এসে দিব্যার হাতে একটা কাগজ দিয়ে দেয়...

দিব্যা : এইটা কি অহনাদি !!!

অহনা : আরেএএ, আমাকে মৈথিলী বলেছিল যদি কোনোভাবে দিব্যান্তর WB-এর নম্বরটা যোগাড় করা যায়... তাহলে ও যে করেই হোক, দিব্যান্তকে ফিরিয়ে আনবে... ও তোকে আর কষ্টে দেখতে পারছে না... দেখ, আমরা সবাই তোদের দু'জনকে একসাথে দেখতে চাই... তাই আমি এই নম্বরটা তোকে দিলাম... পারলে একমাত্র তুই-ই পারবি ওকে ফিরিয়ে আনতে... আর মৈথিলী, Thank You... এইভাবে ওদের দু'জনকে নিয়ে ভাবার জন্য... আসি রে...

দিব্যা : হ্যাঁ....

অহনা চলে যেতেই দিব্যা নরম স্বরে বলে উঠে,

দিব্যা : তুই আমাকে নিয়ে এতটা ভেবেছিস, বলিস নি তো... এখন ঘরে চল... ফোন করতে হবে... শোন, দোষ তুই করেছিলিস, ফোনটা তুই করবি... তারপর আমাকে দিয়ে দিবি... বেশি কথা বলবি না একদম... আর যেন কোনো গন্ডগোল না হয়...


কিছুক্ষণ পর :

~~~~~~~~~~

মৈথিলী : হ্যালো দিব্যান্ত... আমি মৈথিলী বলছি রে...

দিব্যান্ত :

'মরিচিকার বলিয়াড়িতেও বসন্ত আসে ধুলো নিয়ে,

পথ হারানো পথিক যখন শান্ত হয় নিখোঁজ দিশা পেয়ে'

                                                  (পৃথা নন্দী)

রাগ পড়েছে ম্যাডামের !!!

মৈথিলী : একজনের শাস্তি অন্যজনকে দিতে নেই, দিব্যান্ত... এতে তো তুই দু'জনের পাপের ভাগীদার করে দিয়ে গেলি....

দিব্যান্ত : আমি তোর কথা জানতে চাইছি মৈথি... (আবেগী গলায়) কেমন আছিস তুই !!! Miss করিস আমাকে !!!

মৈথিলী : দিব্যা তোকে খুব Miss করে... ও কিন্তু খুব কষ্ট....

দিব্যান্ত : এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না মৈথি... আমি তোর কথা জানতে চাইছি... শুধু তোর কথা... এই দূরত্বটা আমাদের খুব দরকার ছিল জানিস... দূরে না আসলে আমি ঠিক বুঝতেই পারতাম না, তুই আমার কতটা জুড়ে আছিস !! আমি তোর মনে কতটা জুড়ে আছি মৈথি !!!

মৈথিলী : (গলাটা খাদে নামিয়ে) ফিরে আয় দিব্যান্ত... আমার সব অবহেলা দ্বিগুন করে ফিরিয়ে দেব তোকে... ভালোবাসায়, বন্ধুত্বে, মিষ্টি মূহুর্ত দিয়ে দ্বিগুন করে ফেরত দেব তোকে... তোর শোধের পরিমান কি কম পড়ে যাবে !!!

দিব্যান্ত : (ততোধিক উত্তেজিত হয়ে) এই কথাটা তুই আমাকে বললি মৈথি... আমার তো... আমার তো মনে হচ্ছে, এক ছুট্টে তোর কাছে চলে যাই... আচ্ছা দে... আমাদের ডিভাকে ফোনটা দে...

দিব্যা প্রথমে কথা বলতে অস্বীকার করলেও পরে ফোন নিয়ে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে দেয়... রাখার আগে দিব্যান্ত আরো একবার মৈথিলীর সাথে কথা বলতে চাইলে নিতান্ত অনিচ্ছাতেই মৈথিলীকে ফোনটা ধরায় দিব্যা...

দিব্যান্ত : আমি কিন্তু ফিরলে শুধু তোর জন্য ফিরব... 'শুধু তোর জন্য'... আর সেদিন তোকে আমার সব কথা শুনতে হবে, সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে... তবেই আমি ফিরব...

মৈথিলী : আচ্ছা... তাই হবে....

কিছুদিন পর ফেরে দিব্যান্ত... দিব্যাকে লুকিয়ে মৈথিলীর আপত্তি স্বত্ত্বেও মৈথিলীকে নিয়ে একটা পুরনো মন্দিরে যায়... আজ যে তাকে অনেক কথা বলতে হবে... একটা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে দু'জনে...

দিব্যান্ত : ভালোবাসিস আমায় !!!

মৈথিলী : জানি না রে... ভালোবাসা কাকে বলে, আমি সেটাই জানি না...

দিব্যান্ত : জানিস, যেদিন তোকে প্রথম দেখি... একটা অদ্ভুত স্নিগ্ধতা ছেয়ে গিয়েছিল মনে... গুটি গুটি পায়ে যখন আমাদের বন্ধুত্বটা গভীর হচ্ছিল, তখনই হঠাৎই সেটা বন্ধুত্বের গন্ডির উর্ধ্বে উঠে একটা নতুন অনুভূতির সৃষ্টির করেছে, সেটা ক্রমশঃ অনুভব করতাম যখন আমরা নিঃশব্দে পাশাপাশি হাটতাম... কেমন করে যেন সেই বন্ধুত্ব হঠাৎই 'ভালোবাসা'-র পরিণত রূপে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে... ভালোবাসা কি সেটা আমি বেশ বুঝতে পারি এখন... তোর থেকে দূরে গিয়ে আমার ভালোবাসার রঙ আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হলো...

মৈথিলী : খালি নিজের কথা বলে যাচ্ছিস... একবারও দিব্যার কথা ভেবেছিস !!

দিব্যান্ত : এখানে আমাদের কথা হচ্ছে মৈথি, সেখানে দিব্যা কোথা থেকে এলো !!! আমি আর দিব্যা শুধু ভালো বন্ধু... আমি তোর চোখে আমার জন্য অস্ফুট ভালোবাসা দেখেছি...

মৈথিলী : দিব্যা তোকে ভালোবাসে দিব্যান্ত... ও তোকে শুধু বন্ধু ভাবে না... তাহলে ওর কি হবে !! আমি কোনোদিন কাউকে ভালোবাসি নি... কিন্তু দিব্যা সহ্য করতে পারবে না....

দিব্যান্ত : তুই পারবি আমাকে দিব্যার সাথে সহ্য করতে !!!

মৈথিলী : যে জীবনে সবকিছু হারিয়েছে, তার আবার নতুন করে কষ্ট কি বল !! কিন্তু দিব্যা !!! ও তো হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারে না...

দিব্যান্ত নিরুপায় হয়ে মৈথিলীর হাতটা নিজের অঞ্জলিবদ্ধ করে আকুলভাবে বলে,

দিব্যান্ত : জীবনে সবকিছু হারানো যায় না মৈথি... তোর দিব্যার মতো আমিও পারবো না... Please, কোনোকিছুর বিনিময়ে তুই নিজের সাথে অন্ততঃ এই অন্যায়টা করিস না... আর আমার সাথেও হতে দিস না... তাহলে আমি কি করব, আমি নিজেও জানি না... শোন, কাল আমরা এই মন্দিরে আবার আসব... আজ আমি আমার মনের কথা বলেছি... কাল আমি তোর মনের কথা শুনব... কাল তুই আসবি কথা দে... কথা দে, তোর মনের কথা বলতে তুই আসবি... জীবনে একবার অন্ততঃ নিজের জন্য ভাববি... বল... কথা দে...

মৈথিলীকে জীবনে প্রথমবার 'ভালোবাসা' এসে ছুঁয়ে গেল... সে মুখে কিছু না বললেও দিব্যান্তর হাতে আলতো চাপ দিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়... দিব্যান্ত মৈথিলীকে ওদের PG-তে পৌছাতে গেলে দেখে দিব্যা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে... মূহুর্তের জন্য যেন চমকে ওঠে মৈথিলী... দিব্যা ওকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে দিব্যান্তর জন্য যে Gift-টা কিনেছে, সেটা ওকে দিয়ে ওর সাথে গল্প করতে থাকে... মৈথিলী চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে যায়... আজ মৈথিলীর একটু নিজের জন্য সময় চাই... যে অনুভূতি তাকে স্পর্শ করে আছে, সেটা সে ক্ষণিক অনুভব করতে চায়... সে ঘরে ঢুকে নিজের খাটে চুপ করে বসে থাকে... হয়তো কিছু ভাবছিল, হঠাৎই সজোরে দরজা বন্ধ করার আওয়াজে তার ঘোর কেটে যায়... যে দিব্যা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে সে যেন চেনে না...

দিব্যা : আমাকে না জানিয়ে দিব্যান্তর সাথে কোথায় গিয়েছিলিস !!!

মৈথিলী : মন্দিরে...

দিব্যা : কেন !!!

মৈথিলী : ওর কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার ছিল, দিব্যা...

দিব্যা : সেটা আমার সামনে চাওয়া যেত না...

মৈথিলী : আচ্ছা, দিব্যান্ত কি তোর Personal Property যে ওর সাথে আলাদাভাবে কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে না !!! ক্ষমা চাওয়াও যাবে না !!!

মূহুর্তে টেবিলে রাখা ফল কাটার ছুরিটা তুলে নেয় দিব্যা... নিজের কব্জির উপর সেটা ধরে রক্তচক্ষু নিয়ে মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে বলে,

দিব্যা : শোন মৈথিলী, তোর এত কথা আমি শুনতে বাধ্য নই... কি ভেবেছিস তুই, আমাকে টপকে যাবি !!! আমি কোনোদিন হারি নি মৈথিলী... আর তোর মতো মেয়ের কাছে তো...

মৈথিলী : ক্কি !!! কি করছিস তুই !!! একটু শান্ত হয়ে কথা বল... আমি তো তোর বন্ধু বল... আমি তো সবসময়ই তোর পাশে আছি... তুই বল... আমি সব শুনব... কিন্তু তুই ওটা রাখ... ওটা সরিয়ে রাখ Please... লেগে যাবে তো !!!

দিব্যা : (আরো জোরে কব্জির উপর ছুরিটা ধরে) বন্ধু !! হুমমম !!! বন্ধু হোস তুই !! তাই তো আমার দিব্যান্তর প্রতি একটা আলাদা ভালোলাগা আছে, আমি ওকে পচ্ছন্দ করি, আমি ওকে আমার জীবনে পেতে চাই জেনেও তুই আমার থেকে ওকে কেড়ে নিতে চাইছিস, তাই তো !!!

মৈথিলী : কেড়ে কেন নেব !!! আমি তো শুধু কথা বলে ভুল বোঝাবুঝিটুকু মিটিয়ে নিতে গিয়েছিলাম... আমি ওকে আমার কথা কিছু বলি নি, বিশ্বাস কর...

দিব্যা : ওহহহ... এর মাঝখানে তোর কথাও তৈরি হয়ে গেছে তাহলে !!! তার মানে আমার আর দিব্যান্তর মাঝে আসার সব পথ তৈরি হয়ে গেছে... বাহহহ...

মৈথিলী : (অসহায়ভাবে) আমি তোদের মাঝখানে আসতে চাইছি না, দিব্যা....

দিব্যা : বাজে কথা বলা একদম বন্ধ কর... দিব্যান্তর প্রতি তোর অস্ফুট ভালোবাসা আমি খুব ভালো করেই বুঝি... অথচ আমাকে বন্ধু বন্ধু বলে আমার সাথেই শত্রুতা করছিস...

মৈথিলী : দিব্যা !!! কি বলছিস তুউউ !!!

দিব্যা : চুপ কর... Please... তুই আমাদের জীবনে এসে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছিস... প্রথমে দিব্যান্তকে অপমান করে এখান থেকেই সরিয়ে দিলি... যদিওবা আমি ফিরিয়ে আনলাম, তুই আমাদের মাঝে চলে এলি... দিব্যান্ত আমার ভালোবাসাটা দেখতেই পাচ্ছে না, শুধুমাত্র প্রতিবার ওর সামনে তুই চলে আসছিস বলে... তুই আমাদের মাঝে না এলে একদিন না একদিন ও নিশ্চয়ই বুঝে যেত ওর প্রতি আমার Feelings-টা... আমাকে বন্ধু বন্ধু বলে তার সুযোগ নিয়ে দিব্যান্ত-র কাছাকাছি পৌছে নিজের ভালোবাসাটা কেড়ে নেবার পর ব্যবস্থাটা ঠিক করে নিচ্ছিস... আমাকে বলছিস, দিব্যান্ত আমার Personal Property কি না !!! How dare You !!!

মৈথিলী : কি বলছিস তুই !!! আমি তো কোনোদিন এইসব ভাবিই নি...

দিব্যা : এইসব কথা আমাকে বলিস না... দিব্যান্ত যে মাঝে মাঝেই দিব্যার মতো মেয়ের দিকে না তাকিয়ে তোর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তুই সেটা Enjoy করিস না !! কি হলো বল !!!

মৈথিলী : তুই এইসব কি বলছিস !! আচ্ছা, তুই কি চাস বল !!! কি করলে তুই শান্ত হবি !!! সম্ভব হলে আমি আজই সারাজীবনের মতো চলে যেতাম তোদের মাঝখান থেকে... এই University ছেড়ে... কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়... তুই কি করলি খুশি হবি বল !!! তুই দিব্যান্তকে জিজ্ঞেস করে দেখ, আমি ওকে কোনো ইঙ্গিত করেছি কি না, (একবার গলাটা যেন কেঁপে ওঠে) যাতে ওর মনে হয় আমার ওর প্রতি কোনো অস্ফুট Feelings আছে !!! (কান্নাভেজা গলায়) আমরা যেটুকু কথা বলি, তার মধ্যে শুধু তুই থাকিস... শুধু তুই... তুই যদি চাস, আমি ওকে স্পষ্ট এটাও বলতে পারি- (কাঁপা গলায়) আমি... আমি ওকে ভালোবাসি না...

চোখের কোলটা একটু যেন ভিজে আসে মৈথিলীর...

দিব্যা : Just Look at You... তোর কথাটা বলতে কান্না এসে যাচ্ছে, গলাটা বারবার কেঁপে যাচ্ছে... ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তোর অনুভূতিটা !!! তুই ওকে হারাতে কষ্ট পাচ্ছিস... but I pity on You... আমি যেটা চাই, সেটা আমি পেয়েই ছাড়ি...

মৈথিলী : আমি অঙ্কে বরাবরই বড্ড কাঁচা রে... চাওয়ার, পাওয়ার অত হিসেব আমি বুঝি না... আমি তোর বন্ধু... তাই তুই যাকে চাস, তাকে কোনোদিনই আমি নিজের করে কাছে পেতে চাইব না... তুই চাইলে আমি দিব্যান্তর সাথে সব Contact বন্ধ করে দেব... তাহলে তুই খুশি হবি তো !! কোনো অঘটন ঘটাবি না তো !!

দিব্যা : তাহলে বল... আজ থেকে আমি যা চাইব, যেমনভাবে চাইব, তুই তেমনভাবেই চলবি... শোন...আজ থেকে তুই ওকে Avoid করে চলবি... আমি যা বলব, তুই তাই করবি... রাজি !!! (কড়া স্বরে)

রাজিইইই !!!

মৈথিলী : (ক্লান্তস্বরে) বেশ... তাই হবে... কিন্তু কি চাস তুই !!!

দিব্যা : প্রথমে তুই ওকে Block করে দে, সবকিছু থেকে... ফোন... Social Media... সব... সবকিছু থেকে... যাতে ওর কাছে এটা প্রমাণিত হয় যে, ওর সান্নিধ্য তুই চাইছিস না... ওর Presence তোকে Irritate করে... তুই ওকে Avoid করছিস... তুই পারবি না আমার জন্য এইটুকুই করতে....

মৈথিলী : (ক্লান্ত স্বরে) বেশ... তাই হবে... সত্যিই তো... এটা তো খুবই ছোট্ট ব্যাপার...

দিব্যা : এবার বল... কিসের জন্য গিয়েছিলিস আজ ওর সাথে !!!

মৈথিলী : (কাঁপা গলায়) কিছু কথা বলার ছিল, তাই...

দিব্যা : (উত্তেজিত হয়ে) তুই তোর মনের কথা ওকে বলেছিস !!! কি হলো বল !!! বলেছিস !!!

মৈথিলী : নাহহহ... না... না... কাল আবার দেখা করতে বলেছে... আমি তোর কথা ওকে বলেছি....

দিব্যা : কোথায় দেখা করতে বলেছে !! কোথায় !!

মৈথিলী : মন্দিরে...

দিব্যা : কাল আমি যা বলব, তাই হবে... আজ যেটা হলো, সেটা যেন কোনোদিন কেউ জানতে না পারে... দিব্যান্ত তো নয়ই... মনে থাকবে !!!

মৈথিলী : (অসহায় গলায়) থাকবে...

সারাটা রাত মৈথিলী শুষ্ক শূণ্য চোখে জমাট বাঁধা রাগ, অভিমান, বিষন্নতা, ক্লান্তি আর একরাশ অস্ফুট অতৃপ্ততা নিয়ে জেগেই কাটিয়ে দেয়...

কেন এই দৃষ্টিরোধ !!! কেন এই দূরত্ব লিখন !!!

          শূন্যতা !!! চোখেরই শুধু...

দূরে কি কোথাও বৃষ্টি নামে নি গোপনে !!! (জাতিস্মর)

দিব্যান্ত সারা রাত মৈথিলীকে ফোন করে যায়, কিন্তু Switch Off পায়... পরেরদিন উৎকন্ঠা নিয়ে University গিয়ে দেখে মৈথিলী আসে নি... দিব্যাও ওকে জানায়, মৈথিলী কেন আসে নি সেটা ওকে জানায় নি... শুধু বলেছে, একটু একা থাকতে চায়... দিব্যান্ত ভাবে, হয়তো নিজেকে প্রস্তুত করছে নিজের নতুন প্রারম্ভের জন্য... তাই আর ওকে বিরক্ত করে না... অপেক্ষা করতে থাকে বিকেলের জন্য... কিন্তু মন্দিরে হয়তো দিব্যান্তর জন্য কিছু চমক অপেক্ষা করছিল... যা দেখেই চমকে ওঠে সে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance