Anishri's Epilogue

Romance Crime Thriller

4  

Anishri's Epilogue

Romance Crime Thriller

বৃত্তের বাঁধনে (Part 10)

বৃত্তের বাঁধনে (Part 10)

35 mins
402


নেপথ্যে (ক্রুর স্বরে)

--------------‐------------

মেঘরাজ্যের সীমানায় জ্ঞাননগরের মহাপরাক্রমশালী রাজা অজাতশত্রু... তার আছে দুয়োরানী আর সুয়োরানী... দুয়োরানীর দিন কাটে দুঃখে, তার আছে কেবল এক হারানিধি রাজপুত্তুর 'অত্রিসুত'... বাবার প্রতি তার ভীষণ অভিমান- বাবার যখন অধিশ্বর তখন তাদের দিন কেন কাটে দুঃখে, কেন তার মা প্রথমা স্ত্রী হয়েও অনাদৃতা, পরিত্যক্তা... আর ওদিক সুয়োরাণীর গর্ভে জন্ম নেয় মহারাজা অজাতশত্রু প্রাণভ্রোমরা রাজকুমারী 'পদ্মাবতী'... যেমন তার রূপ, তেমন তার গুণ... আর মন জুড়ে এক আকাশ ভালোবাসা... কত দেশের রাজপুত্তুররা পদ্মাবতীর জন্য পাগল... কিন্তু রাজকুমারী পদ্মাবতীর সময় কোথায় !!! সে যে বড়ই কোমলপ্রাণা... গরীবের জন্য তার মন কাঁদে সবসময়ই... মহারাজা অজাতশত্রুর জ্ঞানের জগত আর রাজকন্যা পদ্মাবতীর কোমলতায় অতিষ্ঠ সুয়োরাণী ফিরে আসে তার নিজের রাজত্বে... বাবার স্নেহ, মায়ায় বড় হতে থাকে রাজকুমারী পদ্মাবতী... এমনসময় মহারাজা অজাতশত্রুর কাছে শিক্ষালাভ করতে আসে রূপনগরের রাজকুমার 'রূপকুমার'... শৌর্যে, বীর্যে, রূপে, জ্ঞানে তার সমকক্ষ ছিল একমাত্র সেই দুয়োরানীর সন্তান অত্রিসুত... জ্ঞাননগরের মহারাজা অজাতশত্রু আপনমনের মাধুরী মিশিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলে রূপকুমারকে... তার আত্মজ আর প্রেয়সী যে হারিয়ে গেছে... সেই দুঃখ ভুলতে পদ্মাবতী আর রূপকুমারকে আঁকড়ে ধরে অজাতশত্রু... রূপকুমার দেখে পদ্মাবতীকে... আর একজন দেখাতেই.... (ক্রুর হাসিতে ভরে যায় চারিদিক)... এমনসময়, অজাতশত্রুর উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ করে রাক্ষসগড়ের রাক্ষসরা, অজাতশত্রু তার জ্ঞানভান্ডার রাক্ষসরাজ্যের হাতে তুলে দেয় নি যে... মৃত্যুর পূর্বে অজাতশত্রু রূপকুমারের হাতে সমর্পণ করে গেল তার প্রাণভ্রোমরা পদ্মাবতীকে... অজাতশত্রুর মৃত্যুর পর পদ্মাবতী জানতে পারে তার বড়মা দুয়োরানী আর অগ্রজ সহোদরের কথা... পদ্মাবতী সসম্মানে তাদের ফিরিয়ে আনে জ্ঞাননগরে... তার পাশে তখন তার শক্তিস্বরূপ দাঁড়িয়ে অজাতশত্রুর মানস পুত্র রূপকুমার... কিন্তু এবার রাক্ষসগড়ের রাক্ষসদের পরবর্তী লক্ষ্য, জ্ঞাননগরের প্রাণভ্রোমরা পদ্মাবতী... অত্রিসুত আর রূপকুমার কি পারবে জ্ঞাননগরের প্রাণভ্রোমরাকে রক্ষা করতে !! কারন, 'চিচিংফাঁক'

আবার এক ক্রুর হাসি চারিদিকে গুঞ্জরিত হতে থাকে...

সুশ্চম :

-----------

মেঘদূত : (শশব্যস্ত হয়ে) আসুন, আসুন অর্ণা দেবী... আপনারা আমাদের বাড়িতে এসেছেন, কি সৌভাগ্য আমাদের !!! এসো বাবা পরাগ... বসো বসো... বৈদেহী, কোথায় গেলে গো !!! আরে দেখো, কে এসেছে !!! সিয়া !!! সমুদ্র !!! ওহহ... সমুদ্র তো আবার সকালে মাঠে একটু দৌড়াতে যায়... আর সিয়াদেবী তো এখনও হয়তো বিছানাই ছাড়েন নি... ওর দাদাভাই এসে কান ধরে ঘুম থেকে তুলবে, তবে বোনের ঘুম ভাঙবে...

অর্ণা : (স্মিত হেসে) আপনি এতো ব্যস্ত হবেন না... সকালে সবাই ব্যস্ত থাকে... আর সিয়া তো ছোট্ট মেয়ে, আমার ঢেউ-এর বন্ধু... থাক না... একটু ঘুমাক না...

মেঘদূত : (একটু অবাক হয়ে) কি বলছেন আপনি !!! এক মাস পর ওই মেয়ের বিয়ে !!! শ্বশুরবাড়ির লোক কি বলবে !!!

এমনসময় হন্তদন্ত হয়ে বৈদেহী এবং ওনার বোন বিদিশা ঘরে প্রবেশ করে...

বৈদেহী : কিছু বলছিলে !!!

বিদিশা : (বিরক্ত হয়ে) আপনি কি জামাইবাবু !!! সকাল সকাল দিদির কতো কাজ থাকে, আর তার মধ্যেই আপনি হাকডাক শুরু করলেন....

মেঘদূত : আহহ... ছোটো গিন্নি... একটু থামো দেখি নি... ও সমুর মা, কারা এসেছেন দেখো !!! আমাদের সমুর স্যারের স্ত্রী অর্ণা দেবী ও ওনার ছেলে পরাগ...

বৈদেহী : ওমা... আপনারা দাঁড়িয়ে কেন !!! বসুন না... আমি একটু সরবত নিয়ে আসি...

অর্ণা : আপনি এতো উতলা হবেন না... আমরা চা খেয়েই এলাম... আসলে, আমার স্বামী মনে করতেন সকালের আলোয় একটা Positive Vibes থাকে... তাই শুভ কোনোকিছুর এই সময় উপযুক্ত... তাই আমি বাধ্য হয়েই এই সময় আপনাদের বাড়ি এলাম... যদিও এই সব কথা এখন অতীত... তবুও অভ্যেস,ওই আর কি!!মানুষ চলে যায়.... কিন্তু তার কথা, রীতি-রেওয়াজ এইগুলোই রেখে যায়... আর আমরা তাদের শ্রদ্ধায় হোক বা ভালোবাসায় হোক, সেইগুলোই মাথায় করে নিয়ে চলি... যাই হোক, অতীতকে স্মরণে রেখে, মনে করে আর কষ্ট পেতে চাইনা... তাই কাজের কথায় আসা যাক... কথায় আছে শুভস্য শীঘ্রম... তাই শুভ কাজে আর দেরি করতে চাই না আমরা..

বিদিশা : (কৌতুহলী হয়ে) শুউউভ কাজ !!! তা কি কাজ !!!

অর্ণা : আসলে সামনেই তো পয়লা বৈশাখ, ওইদিন আমাদের বাড়িতে ছোট্ট করে একটু পুজোর আয়োজন করেছি... যদি আপনারা সবাই সেদিন আমাদের বাড়িতে আসেন...

মেঘদূত : (স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে) আরে... নিশ্চয়ই যাবো... কেন যাবো না !!

অর্ণা : (কুন্ঠার সাথে) আ... আসলে আরও একটা কথা ছিল... আমার স্বামীর একটা ইচ্ছে অপূর্ণ রেখে উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন... এবার আমার ছেলেমেয়েদের ভালো রাখার দায়িত্ব যেমন আমার একার উপর এসে পড়েছে, তেমনই তার অধরা স্বপ্নপূরণের দায়িত্বও... তাই যদি আপনাদের সম্মতি থাকে, তাহলে ওই দিন বেদ আর ঢেউ-এর আর্শীবাদটা সেরে রাখতে চাই... এক বছর পরে না হয়...

বিদিশা : ওহহহ... এইজন্যই তাহলে সাতসকালে আমার দিদির কাছে ছুটে এসেছেন... জানেন, দিদি আমার অন্নপূর্ণা... তাই ওই পাপকে আমাদের বাড়িতে ফেলে...

পরাগ : (ক্ষুব্ধ হয়ে) আপনি আপনার শব্দচয়ন সংযত করে কথা বলুন... আপনি এইসব কি বলছেন আমার বোনকে !!!

বিদিশা : (ব্যঙ্গাত্মক স্বরে) কেন বাবা !! তোমার সাধের বোন যে একটা পাপ, জারজ সন্তান সেটা তো তুমিই প্রেস, মিডিয়া সবার সামনে এনেছো... আজ হঠাৎ কি হলো তোমার !!! না কি, ঠান্ডা মাথায় ওই পাপকে আমাদের কাছে গছাতে এসেছো !!!

পরাগ আরো কিছু হয়তো বলতো... কিন্তু নিজের প্রতিশোধস্পৃহা আর ক্ষণিক ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ঢেউ-এর যে সর্বনাশ সে করে ফেলেছে, তার জন্য ভেতর ভেতর লজ্জায় সে প্রায় শেষ হয়ে যায়... এই সমাজ ঢেউকে আর বোধহয় সুস্থভাবে বাঁচতে দেবে না...

মেঘদূত : ছোটো গিন্নি, তুমি অনেকক্ষণ ধরে আমার বাড়ির অতিথিদের অপমান করে যাচ্ছো...

বিদিশা : আপনার আর কি বলুন তো জামাইবাবু !!! আপনি বিয়ের ঠিক পরেরদিন নতুন বউকে সোনার গয়না দেবার বদলে এক মা-মরা অপয়া ছেলেকে এনে ওর কোলে তুলে দিলেন... আবার সেই ছেলের হাত ধরেই আর এক পাপকে এই ঘরের বউ করে আনছেন... পারেনও বটে আপনি !!!

বৈদেহী : ছোটো তোর কথা বলা কি শেষ হয়েছে !!! তাহলে আমি আমার কথাগুলো বলি... কারন যতই হোক, এই সংসারটা এখনও মায়ের... বা আমার... কোনোভাবেই তোর নয়...

বিদিশা : দিদি... আমি তো তোর জন্যই...

বৈদেহী : (দৃঢ় স্বরে) ভুলে যাস না ছোটো, সমুদ্র আমার ছেলে... আর এটাও ভুলে যাস না, তোর জামাইবাবু আমার কোলে নিজের একমাত্র বোনের একমাত্র শেষ চিহ্ন ওই নিষ্পাপ কয়েকদিনের ছোট্ট প্রাণকে যেমন তুলে দিয়েছিল... ঠিক তেমনই তোর মতো বিষকে নীলকন্ঠের মতো গলায় ধারণ করেও আছে... তোর এই স্বভাবের জন্য সংসারটাও ঠিক করে করতে পারলি না তুই... আমরা কিন্তু সমুদ্র, সিয়া আর দিয়াকে কোনোদিন আলাদা করে দেখি নি... তিনজনকেই একইভাবে মানুষ করেছি... হ্যাঁ, হয়তো নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী... হ্যাঁ, হয়তো খুব বেশি স্বচ্ছলতা দিতে পারি নি... কিন্তু কোনোদিন কাউকেই আলাদা চোখে দেখি নি... সবসময়ই জেনেছি, আমরা তিন সন্তানের অভিভাবক... তখন কিন্তু তোর জামাইবাবুর পাশে কেউ ছিল না রে... এখন আমার সমু চাকরি পেয়ে তোর জামাইবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছে... নিজের সামর্থ্যে সিয়ার বিয়ে দিচ্ছে... দিয়ারও দেবে... তোকে বলতেও হবে না... সমুদ্র আমার তেমনই ছেলে...

বিদিশা : দিদি, তুই আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারলি !!!

বৈদেহী : তুই এতক্ষণ কি করছিলিস ছোটো !!!

বৈদেহী উঠে এসে অর্ণার পাশে বসে অর্ণার হাতের উপর হাত রেখে ওকে আশ্বস্ত করে বলে,

বৈদেহী : ওর কথায় কিছু মনে করবেন না দিদি... আসলে হাতের পাঁচটা আঙুল তো আর সমান হয় না... আর আমাদের তো সবাইকে নিয়েই চলতে হয়... আর আমিও তো মেয়ের মা, তাই আপনার কথাগুলো আমি বুঝতে পারছি... আসলে স্নেহ, মায়া, মমতা এই অনুভূতিগুলো আদপে খুবই অদ্ভুত, কারন কোনো জাগতিক নিয়মকানুনের ভেতরে এদের বাঁধা যায় না... তবে আমি আগেই সমুদ্র-এর হাত দিয়ে ওর মায়ের আর্শীবাদ প্রিষার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি... সমুদ্র প্রিষাকে সেটা দিয়েও দিয়েছে... কিন্তু সেটা তো সমাজ মানবে না... আমরা দুই পরিবার মিলে পয়লা বৈশাখেই ওদের দু'জনকে আর্শীবাদ করে আসব.... আপনারা একদম চিন্তা করবেন না...

অর্ণা : আপনি আমাকে নিশ্চিন্ত করলেন দিদি... আর বিদিশা দেবী, আপনাদের সঙ্গে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়... তাই আমার কথা আপনারা বিশ্বাস নাও করতেই পারেন, এতে কোনো ভুল নেই... কিন্তু বেদ !! ওর কথায় বোধহয় আপনারা বিশ্বাস করবেন... কারণ প্রাঞ্জলের সব চাইতে কাছের মানুষ, অন্যতম স্নেহভাজন যদি কেউ থেকে থাকে, তাহলে সে হলো আপনাদের বেদ... আর আমি যতদূর জানি, প্রাঞ্জল নিজেই বাবা হিসেবে বেদের হাতে ঢেউকে সম্প্রদান করেছেন... তাই আমাদের বোধকরি এরপরে আর কোনো কথা বলার কোনো অবকাশই থাকে না, তাই না !!! আর কি যেন বলছিলেন 'পাপ,অপয়া'... বিদিশা দেবী সন্তান ভগবানের আশীর্বাদ... ওরা নিজেরা তো আমাদের কাছে আসে না, আমরা ওদেরকে ঈশ্বরের কাছে কামনা করি বলেই তিনি সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের কোল আলো করে ওদের পাঠান... তাই দয়া করে কথায় কথায় ওদেরকে ছোট করবেন না Please... এতে করে আমাদেরও অভিভাবক হিসেবে সম্মান কমে বই বাড়ে না কিন্তু... (একটু থেমে) এমনকি ওদের চোখেও... আপনিও তো মা ,আশা করি আপনিও বুঝবেন... আচ্ছা... (হাত জোর করে) এবার আমরা আসি তাহলে... খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে...

মূহুর্ত :

---------

অর্ণা : ঢেউ, এদিকে আয় তো মা... তোর সাথে আমার কথা আছে....

ঢেউ এসে অর্ণার পাশে বসে... আজ ঢেউ-এর শরীরটা ভালো নেই একদম... বিগত কয়েকদিনের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর মানসিক রক্তক্ষরণ থেকে বুকের ভেতরে একটা চাপা অথচ তীক্ষ্ণ অস্বস্তি হচ্ছে, তার উপর পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে... কিন্তু অর্ণা যা বললো, তা যদিও ঢেউ আগে থেকেই জানে, তবুও যেন তা জানা অবধি ঢেউকে যেন ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে...

অর্ণা : ঢেউ, তোর বাবাইয়া একটা স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে চলে গেছেন... আমাদের সবার দায়িত্ব সেটাকে পূর্ণতা দেওয়া... তাছাড়া বেদ-এর মতো ভালো ছেলে আর ক'জন হয় বল তো, মা !!! আমরা ওকে যত না ভালোবাসি, তার শতগুন বেশি ও আমাদের ভালোবাসে... তোকে ভালোবাসে... আগলে রাখে... আজ আমি আর তোর দাদাভাই বেদ-এর বাড়ি গিয়েছিলাম, তোদের আর্শীবাদের কথা বলতে... সামনের পয়লা বৈশাখে দুই পরিবার তোদের দুটিকে আর্শীবাদ করব বলে ঠিক করেছি... তোর কোনো আপত্তি নেই তো মা !!!

কথাটা অর্ণা আর পাঁচজন সাধারন মায়ের মতো মেয়ের শুভকামনা করেই বলে, কিন্তু ঢেউ-এর অন্তর অগোছালো থাকায় ঢেউ তা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না... ঢেউ একভাবে তাকিয়েই থাকে অর্ণার দিকে, ওর চোখের জলগুলোও যেন আর বয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে না... কোনোরকমে নিজেকে ঠেলে উঠে দাঁড়ায় ঢেউ... আর তার যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না... সমস্ত পৃথিবীটা যেন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে... পা দুটো থরথর করে কাঁপছে, জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে তলপেটটা আঁকড়ে ধরে ঢেউ... অর্ণা ছুটে এসে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ঢেউকে...

অর্ণা : ঢেউ !!! ঢেউ !!! কি হয়েছে মা !!! এত ঘামছিস কেন !!

ঢেউ : বব... বড়মা... আম... আমি ক্কি... কি সস... সত্যিই এৎ... এত... বড়... পা... পাপ....

আর কিছু বলতে পারে না ঢেউ... একবার জোরে শ্বাস নিয়ে লুটিয়ে পড়ে যায় মাটিতে... পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে.... ঢেউ-এর মাথাটা কোলে তুলে আর্তনাদ করে ওঠে অর্ণা....

অর্ণা : ঢেউউউউউ... ঢেউউউ... মা... মা রে... কি হলো তোর !!! পরাগগগগ... পাঁপড়িইইই... তাড়াতাড়িই একবার আমার ঘরে আয় তোরা... ঢেউ... ঢেউ....

পরাগ আর পাঁপড়ি ছুটে আসে... পরাগ ঢেউকে অর্ণার বুক থেকে নিজের কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দেয়... পাঁপড়ি ঢেউকে একটু জল খাওয়ায়, কিন্তু তাতেও কোনোপ্রকার কোনো লাভ হয় না... ঢেউ একইভাবে যন্ত্রণাতে কাতরাতে থাকে... পরাগ ঢেউ-এর Pulse Check করে, খুবই দ্রুত তা Drop করছে... পরাগ আর দেরী করে না... সমুদ্রকে ফোন করে হসপিটালে আসতে বলে আর পাঁপড়িকে অর্ণা আর ঠাম্মির খেয়াল রাখতে বলে ঢেউকে কোলে তুলে নিজের গাড়ি করে হসপিটালের দিকে ছোটে... রাস্তায় পরাগের চোখ বারবার জলে ভিজে যায়... হাত দিয়ে সেই জল মুছলেও বারবার সিক্ত হয়ে ওঠে পরাগের চোখ... রাস্তাতেই যন্ত্রণাতে কাতরাতে থাকা ঢেউ-এর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, ধীরে ধীরে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে থাকে... সমুদ্র ততক্ষণে হসপিটালে পৌছে সব ব্যবস্থা করে রাখে... ওরা আসতেই ঢেউকে Oxygen Musk পরিয়ে দেওয়া হলেও ওর শ্বাসকষ্ট কমে না... পরাগ আর সমুদ্রকে পেছনে ফেলে ডক্টররা যত দ্রুত সম্ভব ঢেউকে নিয়ে ICCU-তে ঢুকে যায়... আধঘন্টা পর ডক্টররা বেরিয়ে এসে পরাগ আর সমুদ্রকে জানায়, Poisoning...

পরাগ : Poisoning !!! বিষ !! কিন্তু এটা কি করে সম্ভব !! ও তো সচরাচর বাড়ি থেকে কোথাও একা বেরোয় না.. একমাত্র ওর ওই NGO ছাড়া... তাহলে ??ঢেউ কি নিজে কোনো Poison intake করেছে, না কি ডক্টর !!

ডক্টর ভট্টাচার্য : নাহহহ... আশ্চর্যের বিষয়, ঢেউ সরাসরি কোনো Poison intake করে নি...

সমুদ্র : তাহলে !!!

ডক্টর ভট্টাচার্য : আমরা কয়েকটা Blood Test করতে দিয়েছি... আমার সন্দেহ, ওকে Slow Poisoning করা হোত, সম্ভবত Lead Poisoning...

সমুদ্র : Le... Lead !!!

কথাটা শুনেই যেন সমুদ্রের কপালে কেমন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে দেখা যায়...

ডক্টর ভট্টাচার্য : হ্যাঁ, Lead... দেখুন, উনি একটি Murder Case-এর Eye Witness... তাই হয়তো খুব ধীরে ধীরে ওনাকে শেষ করে দেবার পরিকল্পনা চলছিল... আর যাদের শরীরে Lead যায়, তাদের সরাসরি কোনো Symptoms দেখা যায় না... একটু সময় লাগে... সেট কয়েক মাসও হতে পারে, বা ধরুন একটা বছর !! আসলে সীসা এমন একটা 'ধাতু', যেটা রক্তে আপাতভাবে মিশে গেলেও Activity show করতে একটু সময় নেয়... তাই আমরা বুঝতেও ভুল করি... কিন্তু ছোটো ছোটো কিছু Symptoms অবশ্যই দেখা যায়... যেমন ধরুন, Headache, Vomiting, Nausea, Joint Pain or Cramps, Hyperactivity, Irritation, Depression....

পরাগ : আর এইসবগুলোই আমরা দেখেও সাধারন ঘটনা ভেবে অবজ্ঞা করে গেছি... ডক্টর ঢেউ-এর কাছে যেতে পারি আমরা !!!

ডক্টর ভট্টাচার্য : আগামী 72 hours খুব Critacal... তার উপর ওকে এখন Sedative দেওয়াতে ও এখন ঘুমাচ্ছে... ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন, যত দ্রুত সম্ভব ওর যেন জ্ঞান ফিরে আসে... আর আমরা আমাদের Best-টা দিয়ে চেষ্টা তো করছি... আর আপনারা চাইলে ওকে দেখতে যেতে পারেন....

বেশ কিছুক্ষণ পর :

----------------------------

ঢেউ-এর রিপোর্টগুলো নিয়ে ঢেউ-এর কেবিনে ঢুকতে গিয়ে একটু থমকে দাঁড়ায় সমুদ্র... পরাগ ঢেউ-এর মাথায় হাত রেখে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে... সহস্র শব্দের, কথার খই ফোটানো ঢেউও কেমন তখন থেকে হাজারটা যন্ত্রের নানান শব্দের মাঝে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে... সমুদ্র বোঝে, যে আঘাত করার কথা ঢেউ জ্ঞানতঃ কখনো ভাবে নি... আজ ঢেউ-এর এই নীরবতা পরাগকে তার থেকে শতগুন বেশি আঘাত করছে... সমুদ্র বরাবরই স্থিতধী, তার অন্তর আজ রক্তাক্ত হলেও তাতে প্রলেপ লাগানোর মানুষটা যে একেবারেই নিথর হয়ে ওই বেড-এ শুয়ে আছে... মিষ্টিমাকে ফোন করার সময় সমুদ্র-এর গলাটা ধরে এসেছিল... কিন্তু ওই একবারই... মিষ্টিমা ওর ভেতরে ওর মধ্যে এই খারাপ সময়টা কাটানোর মনোবল যুগিয়ে দিয়েছে... তাই ধীর পায়ে এগিয়ে এসে পরাগের কাঁধে হাত রাখে সমুদ্র... মাথা নীচু রেখেই পরাগ বলে,

পরাগ : আমিই বোধহয় তোমাদের দোষী, তাই না বেদ !!! বিশেষ করে এই মেয়েটার...

সমুদ্র : না পরাগ... তুমি আমাদের দোষী নও... তবে, ঢেউ-ও যে দোষী ছিল না, সেটা বোধহয় তুমি এখন উপলব্ধিও করতে পারো... আসলে, পরিস্থিতি প্রতিকুল ছিল না... আর এই প্রতিকূলতা মনুষ্যসৃষ্ট... আমাদের তাকে খুঁজতে হবে...(একটু থেমে) অবশ্যই সতর্কভাবে...

পরাগ : হ্যাঁ... কিন্তু একটাও Clue পাচ্ছি না...

সমুদ্র : পারি নি, কারন আমরা এতদিন বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম... এবার আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে... আর সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পারতেই হবে- স্যারের জন্য, ঢেউ-এর জন্য...

একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখেছো পরাগ, স্যার আর ঢেউ-এর পরিণতি প্রায় এক... তাহলে কি ঢেউ-এর উপর এবার কোনো প্রাণঘাতী আঘাত !!!

পরাগ : নাহহহ... বাবুর পরিণতি বুনির কখনো হবে না... আমি হতে দেব না....

সমুদ্র একেবারেই চুপ হয়ে গেছে, হয়তো বা কঠিনও... এই সমুদ্র পরাগের চেনা, আবার অচেনাও... তবে যতবার ঢেউ বিপদে পড়েছে, ততবারই এই অচেনা সমুদ্র পরাগের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে... আর এখন তো ঢেউ-এর জীবন-মরণের প্রশ্ন... ঢেউ-এর রিপোর্টগুলো নিয়ে এসে সমুদ্রের ঢেউ-এর কেবিনের সোফায় গুম হয়ে বসে আছে... পরাগ এসে সমুদ্রের পাশে বসে...

পরাগ : কি ভাবছো বেদ !!!

সমুদ্র : দুটো ঘটনার এত মিল কি করে হতে পারে !!! তাহলে কি স্যারকেও !!! হতেই পারে... ঈর্ষা এক ঠান্ডা নীল আগুন, এক অস্বাভাবিক প্রবৃত্তি... কখনও দৃশ্যমান, কখনও অপ্রকাশ্য... পৃথিবীর সকল মানুষের সকল প্রাপ্তির পেছনে থাকে ঈর্ষার কোলাহল... ঈর্ষার অপর পিঠে থাকে ক্ষতির চিহ্ন... কিন্তু এটা তো বারবার হতে দেওয়া যায় না... একজন হত্যাকারী বারবার আমার শ্রদ্ধার, ভালোবাসার চারাগাছগুলোকে নির্মমভাবে দলন করে দিয়ে চলে যাবে, এটা সমুদ্র কখনোই হতে দেবে না...

পরাগ : আর এবার তো তোমার জীবনের সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের মানুষটা যার হাতে হাত রেখে তোমার জীবনের পথ চলা শুরু হয়েছিল... আর নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস দেখো....

আআআআআহহহহ.... আহহহহ.... আহহহহ.... বেব.... বেদদদ... বেদদদদদ.... আআআআহহ....

হঠাৎই ঢেউ-এর অস্ফুট গোঙানি শুনে সমুদ্র আর পরাগ দু'জনেই মূহুর্তের জন্য যেন চমকে ওঠে.... দু'জনেই ছুটে যায় ঢেউ-এর কাছে.... পরাগ ঢেউ-এর কপালে হাত রাখে, সমুদ্র ঢেউ-এর হাতের উপর হাত... বহু কষ্টে ভারী চোখের পাতা ঠেলে চোখ মেলে তাকায় ঢেউ... দেখে তার আপনজনরা তাকে আগলে রেখেছে.... একটু হাসার চেষ্টাও করে ঢেউ....

ঢেউ : ব্যা.... ব্যাথা....

সমুদ্র : কোথায় ?? কোথায় ব্যাথা ঢেউ ??

ঢেউ : পে... পেটেএএএ...

সমুদ্র : একটু Rest নিয়ে নাও ঢেউ... দেখো, খুব তাড়াতাড়িই কমে যাবে...

ঢেউ : সত্যি বলছ !!!

সমুদ্র : সত্যি... সত্যি... সত্যি.... তিন সত্যি....

ঢেউ : জা... জানো... বাআআ... বাবাইয়া... এএ... এসেছিল...

সমুদ্র : তাই !!! কথা বললো বুঝি তোমার সাথে !! স্যার তো আমার সাথে কথা বলা ছেড়েই দিলেন...

ঢেউ : আগ... আগলে... রাআআ... রাখতে.. বল... বলল... সব... সবাইকে... বিপ... বিপদ... বিইইই... বিইইই.... বিপদদদদ.... আগ... আআআগ... লেএএএ...

ঢেউ কথা বলতে বলতেই আবার জ্ঞান হারায়...

পরাগ : কি হলো এটা !!! বাবু এসে ওকে বলে গেছে.... মানে !!!

সমুদ্র : Sir নয়... হয়তো ওর Intuition ওকে সাবধান করেছে... মেয়েদের Sixth Sense ভীষন Strong হয়... আর আত্মা !! সে-ও কি প্রিয়জনদের মায়া এত তাড়াতাড়িই কাটাতে পারে !! তাই হয়তো মৃত্যুকে হারিয়ে ঢেউকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন....

পরাগ : তুমি University-তে পড়াও বেদ... কি বলছো এইসব !!! Sixth Sense !!! আত্মা !!! আজকাল Science কত এগিয়ে গেছে !!!

সমুদ্র : সেই Science-ই কিন্তু Paranormal Subject নিয়ে Research-ও করে... জানো তো পরাগ, আমাদের অলক্ষ্যে অশুভ শক্তি যেমন থাকে, ঠিক তেমনই শুভ শক্তিও আছে... তাই কেউ যেমন স্যারের মতো ঢেউকে তিলে তিলে খুন করার চেষ্টা করে আজ এখানে এনে ফেলেছে... ঠিক তেমনই আমাদের ভালোবাসাই বলো বা স্যারের দূর থেকে আমাদের সবাইকে আগলে রাখা- ঢেউ আজ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলো... কিন্তু পরাগ, Lead-টা ওর শরীরে গেল কি করে !!!

এমনসময় পরাগের ফোন Vibrate করে উঠে... পরাগ দেখে Private Number থেকে একটা ফোন এসেছে...

পরাগ : এক সেকেন্ড...  হ্যালো...

নেপথ্যে : ঢেউ... ঢেউকে নিয়ে তোমরা হসপিটাল থেকে সরে যাও... নয়তো ওর উপরেও হামলা হবে... চলে যাও তোমরা... চলে যাও....

পরাগ : কে !!! কে বলছেন !!! Hello... He... যাহহহ... ফোনটা কেটে দিল !!

দূরে তখন কোনো এক অন্ধকার ঘরে একটা Writing Padএ লেখা হচ্ছে মৃত্যু বার্তা....

Hence gout and stone afflict the human race;

Hence lazy jaundice with her saffron face;

Palsy, with shaking head and tott'ring knees.

And bloated dropsy, the staunch sot's disease;

Consumption, pale, with keen but hollow eye,

And sharpened feature, shew'd that death was nigh.

The feeble offspring curse their crazy sires,

And, tainted from his birth, the youth expires.

(Description of lead poisoning by an anonymous Roman Hermit, translated by Humelbergius Secundus, 1829)


প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস :

--------------------------------------------------------------------

পয়লা বৈশাখের আগের দিনই গাঁদা ফুলের মালা, রজনীগন্ধার মালা, নানান রঙের ফুল, আম পাতা, হাতপাখা, কুলো, প্রদীপ, কড়ি, একতারা, দোতারা দিয়ে মূহুর্ত আর ভরদি-কে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে অর্ভি, সামপ্রিয়, সমুদ্র, পাঁপড়ি... ঢেউ-এর সাথে হাত মিলিয়েছে পরাগও... ঢেউ মাটির কলসি, থালাতে আলপনা এঁকে দিয়েছে... আর পরাগ সেই আলপনা করা কলসির উপর আলপনা করা থালাতে আবীর ঢেলে তার চারপাশে গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে... কাজু সোনাও ছিল, সে নানান রকম আওয়াজ করে ওর ভাষায় সবাইকে উৎসাহ দিয়ে গেছে... আর ঢেউকে না জানিয়েই সমুদ্র ঢেউ-এর NGO-র বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে মূহুর্তে... তাদের দেখে ছোট্ট কাজু আর কাজুর পিসির সে কি উচ্ছ্বাস... কতদিন পর উচ্ছ্বসিত হলো ঢেউ !! আনন্দের চোটে চারপাশ ভুলে সমুদ্রকে মূহুর্তের জন্য জড়িয়ে ধরেছিল... অবশ্য পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পেয়ে ওকে ছেড়ে দৌড়ে ঘর থেকে পালিয়েছে... কতদিন পর সেই চিরচেনা ঢেউকে ফিরে পেল সমুদ্র....

অর্ভি আর পাঁপড়ি সবার জন্য সরবত নিয়ে এলো... পরাগও হাতে হাতে সবাইকে এগিয়ে দিতে লাগল... ঢেউ তখন লক্ষ্মী ঠাকুরের আসনের সামনে এক মনে আলপনা দিচ্ছিল... পরাগ ওকে সরবত দিতে এসে দেখে ঢেউ-এর কপালে তখন চালের গুড়োর গোলা লেগে... পরাগ এই প্রথম পরম মমতায় তার অনুজ সহোদরার কপাল থেকে ওই গোলা মুছে দেয়... তারপর ঢেউকে নরম দৃষ্টিতে ক্ষণিক দেখে ঢেউ-এর মাথায় একবার হাত বুলিয়ে সেখান থেকে সরে যায়... পাঁপড়ি আর সমুদ্র পুরোটাই দূর থেকে সবটা দেখে, কেউই আর দাদা আর বোনের মাঝে আসে না... এদিকে সামপ্রিয় ঠাকুরের আসনের সামনে কিছুটা মাটি রেখে তাতে জল দিয়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করার বেদী প্রস্তুত করে তার উপর গাঁদার মালাটা গোল করে সাজিয়ে রেখে দেয়... অর্ভি ঘটে আর ডাবে ঘৃত-সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে আঁকতে আড় চোখে দেখে তার 'প্রিয়' বড় মন দিয়ে ফুলের সজ্জা সাজাচ্ছে... দুষ্টুমির প্রস্তুতি নিয়ে সরু সরু চোখে সামপ্রিয়কে ক্ষণিক দেখে সুযোগ বুঝেই টুক করে ওর গালে একটু সিঁদুর লাগিয়ে দেয়... সামপ্রিয় রাগী রাগী বড় বড় চোখ করে অর্ভির দিকে তাকায়... তবে বেশিক্ষণ সে এই কপট রাগ ধরে রাখতে পারে না, দু'জনেই হাসিতে ভেঙে পড়ে... ওদের এই দুষ্টু-মিষ্টি মূহুর্তের সাক্ষী থেকে হাসতে থাকে ঢেউও...

'তুমি আমায় এখানে ওখানে খুঁজেছো কতসময়...

থাকি না তো এখানে সবসময়,

হৃদপিণ্ডের অলিন্দে থাকি সর্বদাই,

খুঁজেছো কি তুমি সেখানে আমায় ? '

                                      (🙏 মাহ্ফুজ রাজন)

কিন্তু সে যে কেন এতকিছুর পরেও সমুদ্র-এর সাথে সহজ হতে পারছে না !!! যতবার একটু সহজ হবার চেষ্টা করছে, কেউ না কেউ ঠিক মনে করিয়ে দিচ্ছে- 'সে একজনের পাপের চিহ্ন'... কালকের দিনটা সমুদ্র-এর জন্য ভীষণ আনন্দের একটা দিন, সেটা ঢেউ বুঝতে পারছে... সমুদ্রের চিরকালই বহিঃপ্রকাশ বড্ড কম, এমনকি সে ভীষণ স্বল্পবাক... তবুও আজ তার চোখ ভীষণ বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে... তার চোখ বারবার ঢেউকে তার গহীন অন্তরের চুপকথা বলতে ব্যাকুল হয়ে উঠছে... কিন্তু ঢেউ কিছুতেই এই আনন্দে সামিল হতে পারছে না... সেদিন অর্ভির ফোনে সে সমুদ্র-এর মাসির সব বক্তব্য শুনে ফেলেছিল, যদিও কেউ সেটা জানে না... সেদিন অর্ভি খুব আনন্দে Video Call করে ওদের সব ঢেউকে শোনাতে গিয়েছিল, কিন্তু মাসি যে এমন কথা বলে দেবে সেটা সে হয়তো স্বপ্নেও ভাবে নি... এই কথাটা শুধু ঢেউ আর অর্ভির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে... ঢেউ আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করে নি, কেন তার পরিবার এত তাড়াহুড়ো করছে বিয়ে দিতে... সত্যিই তো ঢেউ-এর জন্যই তাদের জীবন এতদিন তছনছ হয়ে গিয়েছিল... আজ তারা নিজেদের প্রাপ্য সম্মান ফিরে পেয়েছে... হয়তো ঢেউ কোথাও না কোথাও এই সংসারে অবাঞ্ছিত...

ঢেউ অর্ভির হাত থেকে ঘটটা নিয়ে জল ভরতে যায়... এমনসময় হঠাৎই একটু আড়ালে তার ওড়নাতে পেছন থেকে মৃদু টান পড়ে... ঢেউ পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে সমুদ্র আলতো করে ওর ওড়না ধরে আছে...

ঢেউ : তুমি !!!

সমুদ্র : মনখারাপ !!!

ঢেউ : (নিজেকে আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে) কই না তো... নাহহহ...

সমুদ্র : আমাকে মিথ্যে বলো না ঢেউ... সেদিন মাসিমনির সব কথা তুমি শুনে ফেলেছিলে...

মূহুর্তের জন্য মুখটা শুকিয়ে যায় ঢেউ-এর... আবার পরক্ষণেই চঞ্চল চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,

ঢেউ : ত্তু... তুমি কি করে জানলে !!! অর্ভি বলে দিয়েছে !!!

সমুদ্র : হ্যাঁ... সিয়া বলেছে... ও যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসে...

ঢেউ : বাবাইয়া তোমার উপর বেশ গুরুদায়িত্ব দিয়ে চিরতরে চলে গেল... সবাই এই 'পাপ'-কে ঝেড়ে ফেলে দিলেও তুমি কি করে পারবে বলো তো !! আমৃত্যু এই 'পাপ'....

সমুদ্র : 'ভালোবাসা'... 'ভালোবাসা' ঢেউ... আমৃত্যু আমি আমার ভালোবাসাকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে চাই... আর আমার এটা মনে হয় না, দাদাভাই বা বড়মা তোমাকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিতে চাইছে... ওরা শুধু স্যারের অসমাপ্ত স্বপ্নটুকুই পূর্ণ করতে চাইছে... তুমি ওদের পাশে থাকবে না ঢেউ !!!

ঢেউ নত চোখে নীরব থাকে...

সমুদ্র : আমি জানি ঢেউ, তুমি আমাকে ভালোবাসো... নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসো... কিন্তু তোমার অতীত, তোমার বর্তমান তোমাকে বর্মের আবরণে আবৃত করে রাখে... তোমার অনুভূতিগুলোকে মুক্ত হতে দেয় না... আমাকে তোমার সেই বর্ম হবার সুযোগ দেবে !! তবে তোমার যদি অসম্মতি থাকে, তুমি আমাকে বলো... আমি নিজে আর্শীবাদ Cancel করে দিচ্ছি...

ঢেউ সিক্ত চোখে শুধু সমুদ্রের একটা হাত আঁকড়ে ধরে নীরবে কাঁদতে থাকে...

ঢেউ : আমি নিজে শান্তিতে নেই বেদ... আমি... আমি তোমাকে কি দিতে পারব বলো তো !!! আমার সবসময়ই মনে হচ্ছে, আমি তোমার কাছে গেলে আমার গায়ের যে 'পাপ' নামক কাদাটা লেগে আছে, সেটা... সেটা তোমারও এই শ্বেত-শুভ্র চরিত্রে লেগে যাবে, কর্দমাক্ত করে দেবে তোমাকে !! আর এইটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না...আমি.. আমি চেয়েও তোমার কাছে যেতে পারছি না... আচ্ছা, Miracle-ও তো হয় বলো... এমনকিছু হতে পারে না, যাতে আমি প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পাই... বলো না !!! পাবো না !!!

সমুদ্র : কিসের প্রায়শ্চিত্ত ঢেউ !!! যা ঘটেছে, তাতে তোমার দোষটা কোথায় !!!

ঢেউ : খালি তুমি দেখতে চাও না, যেমন বাবাইয়া দেখতে চায় নি... বাকি সবাই দেখতে পায়... আর তাই তো আমার সবসময়ই ভয় হয়, বাবাইয়া-র মতো যদি তোমারও কোনো ক্ষতি... (সমুদ্রের অমঙ্গল আশঙ্কায় নিজেই নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ চাপা দেয়)

সমুদ্র : হ্যাঁ আমিও স্যারের মতো দেখতে চাই না, ভাবতে চাই না তোমাকে 'পাপ' বলে... এতে আমার যা পরিণতি হবে হোক... আমি আমার মাকে হারিয়েছি খুব ছোটোতে, আমি তোমাকে হারাতে পারব না... কিছুতেই পারব না... আমি মানি, তুমি আমাদের সবার জীবনে আর্শীবাদস্বরূপ... আর সেটা তুমি খুব তাড়াতাড়িই এর প্রমাণ পাবে... দেখে নিও...

ঢেউ : কিন্তু...

সমুদ্র : হুসসস... আর কোনো অমঙ্গলের কথা নয়... (প্রেমের ছোঁয়া ঠোঁটের হাসিতে মিশিয়ে) আসলে কালকের দিনটা যে ভালোবাসার দিন, নতুন করে বাঁচতে শুরু করার দিন... কাল নতুন করে জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করার দিন ঢেউ আর সমুদ্র-এর... এসো, আজ আমরা একসাথে মঙ্গলঘটে জল ভরি... এসো...

সমুদ্র আর ঢেউ একসাথে ঘটে জল ভরে ঠাকুরের আসনের গাঁদার মালা দ্বারা সজ্জিত স্থানে রাখে... এরপর সমুদ্র-এর এগিয়ে দেওয়া আম্রপল্লব ঘটের উপর বসিয়ে প্রতিটা পল্লবে সিঁদুরের ফোঁটা দেয়... ঢেউ অর্ভির হাত থেকে ডাব নিয়ে ঘটের উপর ডাবটা বসায় এবং তার উপরেও পাঁচটা সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে নতুন গামছা আর লাল শালু কাপড় দিয়ে ঘট পুরোটা ঢেকে দেয়... সমুদ্র রুদ্রাক্ষ্ম দেওয়া আকন্দ ফুলের মালা আর গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে ডাবের উপর সাজিয়ে দিয়ে অল্প ধান-দূর্বা দিয়ে সাজিয়ে দেয়... তারপর তিনজনে সকলের মঙ্গলকামনা করে প্রণাম করে...

বৈশাখ বরণ :

-------------------------

যাও হে প্রবীণ, এসো হে নবীন, আনো হে রবির কর,

ভাঙো হে ধনু, ত্রাসের অনু, নিঃশেষ হোক শর...

এসো হে নূতন, তোলো হে কেতন,

আনো হে নবীন প্রভাত...

ধুয়ে মুছে যাক, তবুও পড়ে থাক, শান্ত ঘুমের রাত...

ভোলো ভেদাভেদ, করো না কো ছেদ,

ছবি নয় দেখো ভক্তি...

ভেঙে যাবে ভুল, ফুটে যাবে ফুল, ভরসা তোমার শক্তি..

এসো হে বৈশাখ, ভালোটুকু থাক, কলুষকে করো হরণ,

মোরা নব বেশে, একগাল হেসে, করবো নবীন বরণ...

                         (কবিতা : বৈশাখ বরণ, অঙ্কুর মুখার্জী)

প্রতিদিনের চেয়ে আজকের দিনটা কিছুটা আলাদা... কারন আজ পয়লা বৈশাখ... দিনপঞ্জির বারোটা পাতা ঘুরে একটা বছর পেরিয়ে নতুন আরেকটি বছরে পা রাখার দিন... যদিও সে অর্থে বাঙালির মানসে বৈশাখের সাথে প্রেম একাকার হয়ে থাকে না, যতটা থাকে বসন্তের সাথে... বসন্তের মাস ফাল্গুন-চৈত্র... বসন্ত পাতা ঝরার প্রহর আর গ্রীষ্ম রিক্ততার, হাহাকারের কাল... "এমন আলাপ নয়, নয়...

বৈশাখের রুদ্ররোষে বিষন্ন প্লাবন" ... তবে, বৈশাখ প্রেমের মাস না হলেও বৈশাখ পুরাতন স্মৃতি-জরা-গ্লানি পেছনে ফেলে নতুনকে, সবুজকে আবাহনের কাল... বৈশাখ নতুনের সাথে হাত ধরে চলার প্রেরণা, বৈশাখ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়ার আকাক্ষা-স্বপ্ন ছোঁবার স্পর্ধার কাল...

"মিলন আজি সম্পূর্ণ হলো তোমার সনে,

এ বিচ্ছেদ বেদনার নিবিড় বন্ধনে"

কবি লিখেছিলেন তাঁর 'মিলন' কবিতায়... পরাগের এই মূহুর্তে মনে হলো, মিলন আর বিচ্ছেদ বোধহয় পরিপূরক দুটো শব্দ... সেদিন সকালে ঢেউকে একটা দুধ আলতা ঢাকাই শাড়িতে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় পাঁপড়ি... এই প্রথম ঢেউ-এর জন্য শাড়ি কিনে এনেছে পরাগ... অবশ্য বাড়ির সকলের জন্যই কিনে এনেছে... কিন্তু এই বোনটাকে এত তাড়াতাড়িই পর করে দিতে মন চাইছে না তার... সে দূর থেকে দেখছে ঢেউ সাজছে সমুদ্র-এর জন্য, যদিও একদমই অল্পই সেজেছে... কিন্তু তার মনে যে বিষাদের সানাই বাজছে...

সমুদ্র-এর বাড়ির সবাই আসার পর লক্ষ্মী আর গনেশের পুজো শুরু হয়... সাদা পাঞ্জাবিতে সুপুরুষ সমুদ্রকে দেখে ঢেউ-এর ক্ষণিকের জন্য চোখ ফেরাতে পারে না... নাহহ, অন্য কোনো অনুভূতি নয়... এই সাজ যেন সমুদ্রের চরিত্রের সাথে একেবারেই একাত্ম হয়ে গেছে... সমুদ্রও ক্ষণিক চোখ ভরে দেখে নেয় তার প্রেয়সীকে, যেন গ্রীষ্মের এই অগ্নিস্নাত সকালে শরতের এক ফালি শিউলি ভেজা সকালের সুভাষ নিয়ে এসেছে মেয়েটা... হঠাৎই পিঠে পরাগের মৃদু ধাক্কা খেয়ে সম্বিত ফেরে সমুদ্র-এর... পরাগ লজ্জিত সমুদ্রকে মৃদু হেসে নিজের বুকে টেনে নেয় ওর কানে কানে বলে,

পরাগ : আরে ভাই, এত লজ্জা পেয়ো না... এমন মূহুর্ত আমারও আসে মাঝে মাঝে... তবে আমার শ্রীমতিটির বোধহয় এখনও চক্ষুদান পর্ব চলছে... অর্ভিকে যেতে দেখলাম ওর ঘরে...

সমুদ্র : চক্ষুদান ??

পরাগ : Eye Make Up....

পরাগ আর সমুদ্র একযোগে হেসে ওঠে....

পূজোর পর সবাই গুরুজনদের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয়, কেবল কাজু বাবু ছাড়া... সে নানান রকম আওয়াজে সবাইকে সাদর আহ্বান করে যায়... এরপর ঢেউ আর পাঁপড়ি সবাইকে আম পোড়ার সরবত আর বেলের সরবত এনে দেয়... সমুদ্র মেঘদূত আর বৈদেহীদের সাথে অর্ভি আর ঢেউ-এর বাচ্চাদের সাথে আলাপ করিয়ে দেয়... সবার আড়ালে সমুদ্র ঢেউকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঢেউ-এর খোঁপায় একটা সাদা গোলাপ গুঁজে দেয়, তারপর নিজের বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ঢেউ-এর কপালে একটা স্নেহ চুম্বন দেয়... দূর থেকে পরাগ সবটাই লক্ষ্য করে, এমনসময় পাঁপড়ি তাকে সরবত দিয়ে এলে পরাগও তাকে প্রেম বাঁধনে বেঁধে হঠাৎই তার গালে একটা প্রেমের স্পর্শ এঁকে দেয়... সকল কাজের মাঝে আজ বারবার অর্ণা দেবী সিক্ত চোখের দৃষ্টি চলে যায় প্রাঞ্জলবাবুর চন্দন আঁকা ছবির দিকে, যা ফুল আর মালা দিয়ে সাজিয়েছেন তিনি নিজেই... আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা স্বরে তিনি বলেন,

'আমায় ক্ষমা করো তুমি... তোমার উপর রাগ করে খুব কষ্ট দিয়েছি... জানতেই চাই নি, কেমন আছো তুমি !!! ভেবেছিলাম কেবল আমি আর তোমার ছেলেই কষ্টে আছি... তুমি বোধহয় সুখে সংসার করছো... কিন্তু তুমি আর আমাদের মেয়েটাও যে এত কষ্ট পেয়েছো, তার কোনো খবর রাখি নি আমি... হয়তো আজ তুমি যেমন তোমার সংসার চেয়েছিলে, ঠিক তেমনই সংসারটাকে আনন্দে, খুশিতে ভরিয়ে দিতে পেরেছি... হয়তো কোথাও না কোথাও থেকে তুমি দেখছো... কিন্তু আমার পাশে তো তুমি নেই প্রাঞ্জল... শত ব্যস্ততার মধ্যেও বড় একা হয়ে গেলাম আমি... হয়তো এটাই আমার শাস্তি...'

হঠাৎই একটা নরম হাতের বাঁধন অর্ণাকে আঁকড়ে ধরে... অর্ণা পিঠে মুখ গুঁজে দেয় ঢেউ... দুজনেই একবার ফুঁপিয়ে ওঠে....

ঢেউ : আমার মতো পাপের জন্য... শুধুমাত্র আমার জন্য তোমাদের জীবনটা তছনছ হয়ে গেল বলো !!!

অর্ণা : ঢেউ !! কি বলছিস তুই এইসব !!!

ঢেউ : আমি তখন খুব ছোট ছিলাম তো, তাই কিছু করতে পারি নি... কিন্তু, আমি এখন তোমাদের কোনো ক্ষতি হতে দেব না দেখো... আমার জীবন দিয়ে হলেও আমি ওই... ওই মহিলার ছায়া এই পরিবারের উপর পড়তে দেব না...

অর্ণা : খুব বাজে কথা বলছো আজ কাল... এসো এবার... বেদ-এর পাশে বসবে এসো...

ঢেউ : আমাকে যত তাড়াতাড়িই সম্ভব পর করে দিচ্ছো বড়মা !!!

অর্ণা : না, তোমার ভালোবাসার মানুষের হাতে তোমাকে তুলে দিচ্ছি... তোমার বাবার শেষ ইচ্ছে তুমি পূরণ করবে না !!

ঢেউ : করব বড়মা... নিশ্চয়ই করব...

অর্ণা : তাহলে এসো আমার সাথে...

অর্ণা ঢেউকে নিয়ে এসে সমুদ্রের পাশে বসায়... সমুদ্র আর ঢেউ পাশাপাশি বসে স্মিত হেসে আড়চোখে চোখে একবার একে অপরকে দেখে... সবাই একে একে ওদের আর্শীবাদ করে... সবার শেষে আসে পরাগ... আজ এক রাশ কালো মেঘ জমাট বেঁধেছে পরাগের চোখে, মুখে... যখন তখন বৃষ্টি নামবে... কোনোপ্রকারে নিজেকে সংযত করে সমুদ্রকে আর্শীবাদ করে পরাগ... কিন্তু ঢেউকে আর্শীবাদ করার সময় ঢেউ জলভরা চোখ তুলে তাকাতেই সব সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে পরাগ... এই প্রথম নিজের বোনকে আঁকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরাগ...

বৈশাখী আড্ডা :

-----------------------

"হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ

ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল

তপ্তঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষান ভয়াল

কারে দাও ডাক, হে ভৈরব হে রুদ্র বৈশাখ?"

'কল্পনা’ কাব্যের ‘বৈশাখ’ কবিতা আবৃত্তি করেই সেদিনের বৈশাখী আড্ডা শুরু করে সমুদ্র... দারুণ গ্রীষ্মে একদিকে যেমন ‘প্রখর তপন তাপে, আকাশ তৃষায় কাঁপে, বায়ু করে হাহাকার’, তারপরেই সেখানে আসে চাঁপাফুলের ছোঁয়া, বকুলমালার গন্ধ... বৈশাখের রুদ্রতা ও কোমলতা দিয়ে সবাই কামনা করে সমস্ত গ্লানি দূর করে পবিত্র ও নির্মল এক পৃথিবীর... তাই ঠাম্মি সবার জন্য কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন....

"মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে তৃষ্ণার কাতর চাতকী ডাকে।।

সমাধি-মগ্না উমা তপতী রৌদ্র যেন তার তেজঃ জ্যোতি,

ছায়া মাগে ভীতা ক্লান্তা কপোতী

কপোত-পাখায় শুষ্ক শাখে।।

শীর্ণা তপিনী বালুচর জড়ায়ে

তীর্থে চলে যেন শ্রান্ত পায়ে।

দগ্ধ-ধরণী যুক্ত-পাণি চাহে আষাঢ়ের আশিস বাণী

যাপিয়া নির্জলা একদশীর তিথি

পিপাসিত আকাশ যাচে কাহাকে।।”

       (মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে, কাজী নজরুল ইসলাম)

গ্রীষ্মের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে তার কঠোর রূপ, বৈরাগীর বেশ... আবার অন্যদিকে তার রস-কোমলতা ও সৃষ্টির স্নিগ্ধতাও... ঠিক তেমনই কোমল-কঠোর পরাগের জন্য পাঁপড়ি রবি ঠাকুরের গান ধরে,

"হে তাপস, তব শুষ্ক কঠোর রূপের গভীর রসে

মন আজি মোর উদাস বিভোর কোন্‌ সে ভাবের বশে॥তব পিঙ্গল জটা হানিছে দীপ্ত ছটা,

তব দৃষ্টির বহ্নিবৃষ্টি অন্তরে গিয়ে পশে॥"

বৈদেহী তার চিরন্তন মমতায় সমুদ্রকে কাছে টেনে কবিগুরুর 'জন্মকথা' থেকে ছোট্ট একটা অংশ পাঠ করে যা মূহুর্তে ঢেউ-এর চোখকে আর্দ্র করে দেয়,

খোকা মাকে শুধায় ডেকে, ‘এলেম আমি কোথা থেকে,

কোন্‌খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে। ‘

মা শুনে কয় হেসে কেঁদে, খোকারে তার বুকে বেঁধে,

‘ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।'

এরপর NGO-র বাচ্চারা অর্ভির সাথে কাজী নজরুল ইসলামের 'আমার শ্যামলা বরণ বাঙলা' গানে বাংলার মাঠ-ঘাট এবং প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় রূপকে তুলে ধরে,

"আমার শ্যামলা বরণ বাঙলা মায়ের

রূপ দেখে যা, আয় রে আয়।

গিরি-দরি-বনে-মাঠে প্রান্তরে রূপ ছাপিয়া যায়।।

ধানের ক্ষেতে বনের ফাঁকে

দেখে যা মোর কালো মাকে

ধূলি-রাঙা পথের বাঁকে বৈরাগিনী বীণ বাজায়।।”

অর্ণা কবিগুরুর 'বলাকা' কাব্যের 'ছবি' কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে তার প্রকৃতিগাথায় ব্যক্তিগত অনুভূতির স্পর্শ এসে পড়ে... ফলে প্রকৃতির চিরকালীন মর্মবানী হয়ে ওঠে জীবন্ত...

"এই ধুলি ধূসর অঞ্চল তুলি

বায়ুভরে ধায় দিকে দিকে

বৈশাখে সে বিধবার আভরণ খুলি

তপস্বিনী ধরণীরে সাজায় গৈরিকে"

এরপর ঢেউ আর সমুদ্র বাদে সবাই NGO-র বাচ্চাগুলোর সাথে নাচে গানে মেতে ওঠে,

"তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর!

ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

আস্‌ল এবার অনাগত প্রলয় নেশায় নৃত্যপাগল,

সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!

মৃত্যুগহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ডরূপে ধূম্রধূপে

বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!

ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়,

দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়

বিন্দু তাহার নয়ন জলে

সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে কপোলতলে!

বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর

হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর”

তোরা সব জয়ধ্বনি কর !!

মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ

জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে

জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে

এবার মহানিশার শেষে

আসবে ঊষা অরুণ হেসে করুণ বেশে...

দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু চাঁদের কর..

আলো তার ভরবে এবার ঘর...

তোরা সব জয়ধ্বনি কর !!" (কাজী নজরুল ইসলাম)

বৈশাখী ঝড় কেবল বাইরের প্রকৃতিতেই আসে না, হৃদয়ের ভেতরেও সে ঝড় তোলে... হয়তো সবার অগোচরে, নীরবে, নিভৃতে... তাই অবনত রাঙা মুখে কবিগুরুর 'জীবনদেবতা' কবিতার অংশ আবৃত্তি করে ঢেউ....

"ওহে অন্তরতম,

মিটেছে কি তব সকল তিয়াষ আসি অন্তরে মম।

দুঃখসুখের লক্ষ ধারায় পাত্র ভরিয়া দিয়েছি তোমায়,

নিঠুর পীড়নে নিঙাড়ি বক্ষ দলিত দ্রাক্ষাসম।

কত যে বরন কত যে গন্ধ কত যে রাগিণী কত যে ছন্দ

গাঁথিয়া গাঁথিয়া করেছি বয়ন..."

মুখে কিছু না বললেও সমুদ্রের চোখে, মুখে হাসির আভা ছড়িয়ে পড়ে... কবিতার এই স্বল্প অংশ বলে ঢেউ চুপ করে গেলে কবিতার শেষাংশ পাঠ করে সমুদ্র,


"আনো নব রূপ, আনো নব শোভা,

নূতন করিয়া লহো আরবার চিরপুরাতন মোরে।

নূতন বিবাহে বাঁধিবে আমায় নবীন জীবনডোরে।"


মূহুর্ত :

---------

জীবন চলে যায় নিজের গতিতে, সময় বয়ে যায় নিজের স্বাভাবিক ছন্দে... সবকিছুর পরিবর্তন হয়, বদলে যায় সবকিছু... কিন্তু কিছু জিনিস সময়ের সাথি বদলে যায় না, বরং পরিবর্তিত হয়... ঠিক যেমন ভালোবাসা, ঠিক তেমনই উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লোভ, আসক্তি... ভালোবাসা যেমন সময়ের সাথে কখনো প্রতিবর্তিত হয় ঘৃণায়, অভিযোগে, অভিমানে... তেমনই কিছু ভালোবাসা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় শ্রদ্ধায়, পূজায়, জীবনের স্পন্দনে... ঠিক তেমনই উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লোভ, ঘৃণা- এগুলো বছরের পর বছর মানুষের অন্তরে সুপ্তভাবে লালিত হতে থাকে... ধীরে ধীরে পরিণত হয় লালসায়- জিতে যাবার লালসা, ছিনিয়ে নেবার লালসা... গুটি গুটি পায়ে সে এগোতে থাকে তার লক্ষ্যের দিকে... তার পরিকল্পনা বদলায়, নিজের শিকার বদলায়.. তার লক্ষ্যের পথে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তাকে মারণ কামড় দিতে সে দ্বিতীয়বার ভাবে না... ভাবে না সেই মানুষগুলোর প্রিয়জনদের কথা...

কাল ঢেউ-এর NGO-তে একটা অনুষ্ঠান আছে... ঢেউ নাচ করার সময় নিজের নাচের ঘরে কাউকেই ঢুকতে অনুমতি দেয় না, কিন্তু আজ এতদিনের সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে এবং সেই ঘটনার নেপথ্য নায়ক আর কেউ নয়, ঢেউ-এর অন্যতম প্রিয় মানুষ 'সমুদ্র'.. যে এখন তার বাগদত্তও বটে.... আসলে সমুদ্র মানুষটা অদ্ভূত... সাগরের ন্যায় মানুষকে শুধু দুই হাত ভরে দিতে জানে, কিছু ফেরত নেওয়া তার অভ্যাসে নেই... তাই এহেন মানুষ কিছু চাইলে, অবশ্যই সেই চাওয়া হয় খুবই যৎসামান্য এবং সাধারণ... প্রেমিকা হয়ে ঢেউ কি ভাবেই বা না করতে পারতো !!! তাই তো আজ সে সমুদ্রের অনুরোধে সমুদ্রের জন্যই নাচবে, শুধুই তার সমুদ্রের জন্য... নাচ তার প্রথম ভালোলাগা, প্রথম ভালোবাসা সব... জীবনে যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, ব্যক্তিগত সমাধান হিসেবে নাচকেই বেছে নিয়েছে সে... ঢেউ জানে, জীবনের কোনো পর্যায়ে ওর প্রিয়জনরা যদি ওকে ছেড়ে চলেও যায়, নাচ কোনোদিন ওকে ত্যাগ করবে না... ঘুঙুর ওর চিরসঙ্গী... আদরের, একাকীত্বের সব... ঢেউ আজ পর্যন্ত যতগুলো Performance করেছে- তার প্রতিটা নাচের বোল ঢেউ-এর আনন্দ দেখেছে, ঢেউ-এর কান্না দেখেছে, নৃত্যকলায় নিজেকে নিংড়ে সঁপে দেওয়া দেখেছে... তাই ওই ঘুঙুরগুলোর চেয়ে ওর সংগ্রাম বেশি কেউ দেখেছে বলে মনে করে না ঢেউ... এমন কি বাবাইয়া চলে যাওয়ার পরও এই নাচের ঘরের দরজা বন্ধ করে ওই ঘুঙুরগুলোকে জড়িয়ে ধরেই ও অনর্গল কথা বলেছে... কথা বলতে বলতে কেঁদেছে, পাগলের মতো হেসেছে- সব করেছে... সব... আর ওরাও ওকে পরম স্নেহে কাছে টেনে নিয়েছে... প্রাণহীন ঢেউ রুমঝুম শব্দে প্রাণ পেয়েছে আর ওকেই জীবনের পরম বন্ধু হিসেবেই মেনে এসেছে নাচ শেখার প্রথম দিন থেকে... তাই ঢেউ তার ছোট্টবেলা থেকেই অভ্যেস মতো ঘুঙুরটা নিয়ে প্রথমে কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করে... তারপর তার ঠোঁটে ঠেকিয়ে একটু আলতো করে পরশ দেয়... সমুদ্র দূর থেকেই ঢেউকে লক্ষ্য করছিল অনেকক্ষন ধরে... মনে মনে ভাবে,

সমুদ্র : অদ্ভূত মানুষ তুমি ঢেউ... নিজের খোলসের আবরণে কাউকে পৌঁছতে দাও না, এদিকে ওই জড়বস্তু গুলোর প্রতি তোমার কি অপরিসীম মায়া !! কি পরম যত্নে ধরেছো সে গুলো !! যদিও তোমার কাছে ওদের মূল্য অপরিসীম, তা আমি জানি..তাই তো তোমার এই ভালোবাসার প্রতি আমার একটা প্রতিদান দেওয়া উচিত বলে মনে করলাম... খুব শীঘ্রই পাবে তুমি তোমার উপহার... তোমার স্বপ্নপূরণ- সারাজীবন নাচকে সঙ্গে করে বাঁচার !!

এক অদ্ভুত হাসি খেলে যায় সমুদ্রের মুখে.. যদিও শুধু আলো, না আঁধারিও আছে সেটাই বোঝা দুষ্কর হয়ে ওঠে... নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই এগিয়ে যায় সমুদ্র ঢেউ-এর দিকে..তারপর নিজের হাতে ওর ঘুঙুর পায়ে বেঁধে দেয়... সমুদ্র পায়ে হাত দেওয়ায় ঢেউ একটু ইতস্ততঃবোধই করে... কিন্তু কেমন এক মায়ায় মনটা ভালো হয়ে যায় নিমেষে... শ্রদ্ধার পারদটা বুঝি একটু বেড়েই যায় সমুদ্রের এই অপরদিকের মানুষটার ইচ্ছের প্রতি সম্মান করতে দেখে...

আসলে ঢেউ-এর এই স্বভাবটা একটু অদ্ভুত... আসলে ছোট্টবেলা থেকেই যখন ওর ভীষণ মনখারাপ হতো যেটা ও কারোর সাথেই ভাগ করে নিতে পারতো না- নিজেই নিজেকে ওর নাচের ঘরে আটকে রাখতো... ও ঘুঙুরটাকে গালে ঠেকাতো, বুকে আঁকড়ে ধরতো, ঠোঁট ছুঁয়ে আদর করতো আর চোখ দিয়ে অঝোর শ্রাবণ ঝরতো... ঘুঙুরের মধ্যেই ওর মাকে খুঁজতো, ওর মা যে ভীষণ ভালো নাচতো... ওইটুকুই তো ঢেউ মায়ের কাছ উত্তরাধিকারস্বরূপ থেকে পেয়েছে... নইলে মায়ের বলতে তো তার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই, স্বয়ং সে নিজে ছাড়া...

ওদিকে আজ সমুদ্র নিজের হাতে ঢেউ-এর ঘুঙুর পরিষ্কার করে ওর হাতে ঘুঙুর তুলে দিয়েছে... ওর পায়ের ঘুঙুর নাচের ঢেউ তুলছে নটরাজের সামনে... সমুদ্র মুগ্ধ চোখে দেখছে তার প্রেয়সীকে... যেমন হাতের মুদ্রা, তেমনই পায়ের বোল... প্রতিটা নাচের স্টেপ যেন নিখুঁত... আর নৃত্যরত ঢেউ-এর দেহ ভঙ্গিমা বলে দিচ্ছে সে তার চিরসঙ্গীকে পাশে পেয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী... এক অনাবিল আনন্দে ভরে গেছে ঢেউ-এর মুখ, যেন ভালো থাকার রহস্য সমাধান করেছে আজ নৃত্যের মধ্যে দিয়ে... কিন্তু সব ভালোর মধ্যেও যে কিছু সময় কালো লুকিয়ে থাকে... ঢেউ সমুদ্রও বোধ হয় তার বহির্গত নয়... তাই হঠাৎই ছন্দপতন !! আচমকাই মাটিতে আছড়ে পড়ে ঢেউ, একটা ভীষণ অস্বস্তিতে ছটফট করে কাতরাতে থাকে... ছুটে আসে সমুদ্র, নিজের বুকে তুলে নেয় ঢেউকে... নিজের এত যন্ত্রণাতেও সমুদ্রের কাতর মুখটা দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে... আজ এতগুলো দিনের শেষে একটু হাসছিল ঢেউ... সেটাও বোধ হয় কপালে সহ্য হলো না... আর সমুদ্র !! কোনোদিনও কিছু প্রত্যাশা না করা ছেলেটা আজ একদিন আব্দার করেছিলো ঢেউ-এর কাছে, সেটাও পূরণ করতে পারলো না সে !! অথচ এই পরিস্থিতিতেও কতটা ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতে চাইছে ঢেউকে... ঢেউ-এর যদি কিছু হয়ে যায়, সমুদ্র নিজেকে সামলাতে পারবে তো !!! আর ঢেউ নিজে এত ভালোবাসা ছেড়ে যাবে কি করে !!!

ঢেউ প্রচন্ড ঘামছে, সারা শরীরটা থরথর করে কাঁপছে... গলাটা শুকিয়ে আসছে ওর... ঢেউ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সমুদ্রের দিকে... ঢেউ-এর এই অসহায় দৃষ্টিটা সহ্য করতে পারছে না সমুদ্র... যে চোখে স্বপ্ন মানায়, উজ্জ্বলতা মানায়, উচ্ছলতা মানায়- সেই চোখে অসহায়তা একদম সহ্য করতে পারছে না সমুদ্র... সমুদ্র ওর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে ঢেউকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে বসিয়ে দেয়... কিন্তু ঢেউ সমুদ্রকে ছাড়ে না... ওর বুকের কাছে পাঞ্জাবিটা আঁকড়ে ধরে বলে,

ঢেউ : বেএএ... বেদ... আম... আমিইই... আমিইইই আর বাব... বাঁচব না... তাই না !!!

সমুদ্র : (মনে মনে) তোমার তো কিছু হতে দেওয়া যাবে না ঢেউ... স্যার তোমার কাছেই বুনে গেছেন তার স্বপ্ন রহস্যের চাবিকাঠি... তোমার কিছু হলে যে আমি স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো না... তোমার... স্যারের... আবার আমারও বটে... তাই সুস্থ তো তোমায় হতেই হবে ঢেউ... হতেই হবে...

মন যতই চিন্তায় ডুবে থাকুক,মুখে অতিকষ্টে হাসি ফুটিয়ে বলে সমুদ্র,

সমুদ্র : ঢেউ !!! এইসব কি কথা !!! তোমার কিছু হবে না ঢেউ... সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো... সব ঠিক হয়ে যাবে...

ঢেউ : ও... ও... ওরা আম... আমাকে বাঁচতে দে... দেবে না....

সমুদ্র : কারা বাঁচতে দেবে না !!! কার সাধ্য আছে তোমাকে সমুদ্রের বুক থেকে কেড়ে নেবে !!

ঢেউ : বাবা... বাবাইয়া বলেছি... ছিল... তোত... তোমাকে আগ... আগলে রাখতে... আআআ... আর বব... বলেছিল...

সমুদ্র : কি বলেছিল !!!

ঢেউ : ভর... ভরদি... আহহহ...

সমুদ্র : ঢেউ, তোমাকে এখন কিছু বলতে হবে না... তুমি একটু শান্ত হবার চেষ্টা করো... শান্ত হলেই দেখবে সব মনে পড়বে... মাথার ওপর এইভাবে চাপ দিও না... Please... ঢেউউউউউ...

ঢেউ : মন... মনে পড়ছে না তো... মাথা... মাথাটা... যন্ত্রণা... মনে পড়ছে না... বল.. বলতে হবে... তোমাকে... ভরদি.... আহহহ... আআআ... বেদ...

ঢেউ যন্ত্রণাতে মাথাটা চেপে ধরে, তবুও কিছু একটা মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়... সমুদ্র আরো জোরে আষ্টেপৃষ্ঠে ঢেউকে জড়িয়ে ধরে... ঢেউও আবেশে সমুদ্রের কাঁধ দুটো চেপে ধরে কাঁপতে থাকে, সমুদ্র কাছে এলেই যেন ঢেউ-এর সারা শরীরে শিহরণ বয়ে যায়... সমুদ্র-র একটা হাত ঢেউ-এর পিঠ বেয়ে নেমে ওর কোমর ধরে ওকে আরো কাছে টেনে এনে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,

সমুদ্র : এই তো আমি ঢেউ... তোমার সমুদ্র তোমার কাছেই আছে...

কথাটা শুনে ঢেউ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না... ঠুকরে কেঁদে ওঠে... সমুদ্র ঢেউ-এর চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,

সমুদ্র : কেঁদো না ঢেউ... Please কেঁদো না... আমি তোমার চোখে জল সহ্য করতে পারি না...

ঢেউ : কষ... কষ্ট হচ্... হচ্ছে... মনে পড়... ছে নাআআআ...

সমুদ্র : ঢেউ, আমার চোখের দিকে তাকাও... তাকাও...

সমুদ্রের কথা শুনে ঢেউ তার সিক্ত অসহায় চোখ তুলে সমুদ্রের দিকে তাকায়... সমুদ্র ঢেউ-এর গালে হাত রেখে বলে,

সমুদ্র : তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো ঢেউ !! বিশ্বাস করো আমায় ??

ঢেউ-এর সহ্যশক্তি তখন প্রায় তলানিতে পৌঁছেছে... জোর করে টেনে টেনে চোখ খুলে রেখে কোনোপ্রকারে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়...

সমুদ্র : একটু শান্ত হও... আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে যাবে... সব কথা এখনই বলতে হবে, এর কি মানে আছে !!

ঢেউ : বু... বুঝতে পারছি নাআআ... খুউউ... খুউউউব কষ.. কষ্ট হচ্ছে... তো... তোমাকে বলতে... না পারলে... আম... আমি মরেও... শাআআআ...

সমুদ্র আর বলতে দেয় না ঢেউকে... ওর মুখের উপর নিজের হাত রেখে বলে,

সমুদ্র : নাহহহ !!! কিচ্ছু হবে না তোমার... কিচ্ছুটি না... আ... আ... তোমার কিছু হলে রহস্য সন্ধানে যাব কি করে আমরা !! তুমি ছাড়া যে ভরদি অব্দি পৌঁছানো যাবে না... আর ভর... র... দি... ই... ই... অবধি না পৌছালে আমার এতদিনের স্বপ্ন...

আচমকা ঢেউ-এর দিকে চোখ পড়ে সমুদ্রের... অতি কষ্টে হলেও কেমন যেন বিস্ময় ওর দুই চোখে... কথার ভাঁজে কি সব বলে ফেলছিল সে... এখুনি তো সব বলে দিত... নাহহহ... এখন তো কিছু বুঝতে দেওয়া চলবে না... ঢেউ কি কিছু সন্দেহ করলো !!! আর না... এবার সামাল দিতে হবে...

সমুদ্র : আ... আ... আর আছি তো তোমার সাথে... ভয় কি !!! আমি আছি তো তোমার সাথে... সবাই আছে... ঠাম্মি, বড়মা, দাদাভাই, বৌদিভাই... কাজু... আমাদের কাজু বাদাম...

কাজুর নামটা শুনে একটা ম্লান হাসি ঢেউ-এর ঠোঁটের কোণে ছড়িয়ে পড়ে... ঘোর লাগা চোখেও বুঝতে পারে মনের মধ্যে হঠাৎই যেন কেমন একটা 'কিন্তু' তৈরি হয়েছে... তবে কেন, তা সে জানে না... ঢেউ-এর দুই চোখের জলে জমা হয়েছে জল... কাঁপা কাঁপা হাতে সমুদ্রের গালটা একবার ছোঁয় ঢেউ... কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে ওর চোখের কোণা দিয়ে... অস্ফুট স্বরে সে বলে,

ঢেউ : আমি... আমি তো... তোমার জন্য... বাঁচতে চাই... হয়তো... জীবনের শেষ... শেষবেলায় ভালোবাসা... ভালোবাসা... এক... একটা কথা বল... বলতে.... হ...

জ্ঞান হারায় ঢেউ... আর তারপরেই সমুদ্রের বুকে ঢলে পড়ে অবচেতন হয়ে পড়ে ঢেউ... সমুদ্র ক্রমাগত চাপড় মেরে চলে ঢেউ-এর গালে... কিন্তু কোনোরকম উত্তর পায় না... ভয় পেয়ে অনবরত ডেকে যায়,

সমুদ্র : ঢেউ, ওঠো ঢেউ... Please... এইভাবে হারিয়ে দিও না আমায়... Please ঢেউ, চোখ খোল... দয়া করো আমায়, Please...

সমুদ্রের চোখে জল এসে যায়... এমন সময় হঠাৎই নাচের ঘরের দরজা খোলার আওয়াজে সতর্ক হয় সমুদ্র... চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে... পেছন ফিরে থাকলেও অনুভব করতে এতটুকু অসুবিধা হয় না কে এসেছে... কারণ এই পদচারণায় মিল আছে পিতা এবং পুত্রের... তাই এই পায়ের শব্দ তার চেনা... পরাগ !!! কিন্তু এই অসময়ে ??এমনসময়ই ঢেউ-এর নাচের ঘরে দরজা ঠেলে দ্রুত পায়ে ঢোকে পরাগ... প্রশ্ন করতে পেছন ফিরতেই দেখে হাতে গ্লাভস পড়তে পড়তে এগিয়ে আসছে সে... আনমনা পরাগ সমুদ্রকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যেতেই আৎকে ওঠে সামনের দিকে তাকিয়ে... যতই হোক, সহোদরা না হলেও বোন তো... তাই প্রায় চিৎকার করে ওঠে,

পরাগ : বেদ... এ কিইইই !!! ঢেউ-এর কি হয়েছে !!!

সমুদ্র : আরে, আমিও ভালো করে বুঝলাম না... সুস্থ মানুষ... দিব্যি ছিল... হঠাৎই নাচতে নাচতে অসুস্থ হয়ে পড়ল...

পরাগ : What !!!! সত্যিইই বলছো ?? ঢেউ নাচ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছে !!! Strange !!! কি হলো হঠাৎ করে মেয়েটার ?? ডক্টর তো বলেছেন ওর Last Reports-এ দেখা গেছে রক্তে Lead-এর Poisoning-এর মাত্রা কমছে... তাহলে !!! আচ্ছা, এক কাজ করো বেদ... ওকে শুইয়ে দাও... শুইয়ে দাও ভালো করে...

সমুদ্র ঢেউকে সাবধানে কোলে নিয়ে ঘরে থাকা সোফায় যত্ন করে শুইয়ে দেয়... এতক্ষন কি হাসি খুশি ছিল মেয়েটা... মনের আনন্দেই অনেকদিন পর একটু প্রাণ খুলে নিজের শখটা উদযাপন করছিল, তাও আবার তারই প্রেমিকের সাথে... কিন্তু ওই যে ভাগ্য !! মাঝে মাঝে মানুষকে এমন হতচকিত করে দেয় যে কোনো অনুভূতিপ্রকাশের সময়টুকুও রাখে না... অচেতন ঢেউ-এর চোখে মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দেয় পরাগ... যতই হোক, ছোট বোন কষ্ট পেলে কোন দাদাই বা তা সইতে পারে !!! যদিও ঢেউ এর তাতে কোনো রূপ শারীরিক পরিবর্তনই ঘটে না.. ঢেউ-এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পরাগকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সমুদ্র..

সমুদ্র : কিন্তু আপনি আজ এই সময় ফিরে এলেন !!!কোনো জরুরি দরকার !!

ঢেউ-এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে উত্তর দেয় পরাগ,

পরাগ : জানো সমুদ্র, আজ আবার সেই Mysterious Call-টা এসেছিল... ফোনটা ধরতেই এক ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর যন্ত্রমানবের মত গরগর করে বলে যায়, 'বিপদ বিপদ... সমূহ বিপদ... ঢেউ যেন সমুদ্রে আছড়ে না পড়ে... সব ভেসে যাবে... সব...'

পরাগের বাক্যবন্ধনীতে যেন সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়... অদ্ভুত এক আগুন যেন ওর চোখের জলেই শান্ত হয়ে যায়... কোনো মতে উত্তর দেয়,

সমুদ্র : তারপর !!

পরাগ : তারপর আর কিছুই না... আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'কে বলছেন?'... ব্যস !! কট করে লাইনটা কেটে গেলো... আর উত্তর পেলাম না কোনো... এরপর যতবারই Call Back করলাম... উত্তর এলো- This Number does not exist... Please Check the Number...

সমুদ্র এতক্ষণে একটু স্বাভাবিক হয়েছে... কৌতূহলী প্রশ্ন এগিয়ে দেয়,

সমুদ্র : আপনি নম্বরটা check করেন নি ?? কোথা থেকে এসেছে !! SIM-এর মালিক কে ?? যদি একবার SIM-টা কার নামে ইস্যু করা আছে, জানা যেত... তবেই এই Phone Call-এর পেছনের মানুষটা পর্যন্ত পৌঁছনো যেত... কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস, এইসব কিছুর পেছনের মাথা এই মানুষটা নন... ইনি হয়তো গুটি মাত্র... আসল মানুষটা আমাদের সামনেই আছে, কিন্তু আমরা তার নাগাল পাচ্ছি না...

পরাগ এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিল... এবার উত্তর দিল,

পরাগ : সে গুঁড়ে বালি ভগ্নিপতি আমার... আমি সব কিছু খুঁটিয়ে দেখেছি... কিছুই সন্দেহজনক মনে হয় নি... পরে Numberটাও চেক করতে দিয়েছিলাম, কিছুই পাওয়া যায় নি... আমার বিশ্বাস ফোনের SIMটা নষ্ট করে দিয়েছে... আর এরা খুব বুদ্ধিমান... প্রত্যেকবার নতুন নম্বর থেকে ফোন করছে, যাতে আমরা কোনোমতেই ট্রেস করতে না পারি... আর অদ্ভূতভাবে Last যে Call Location-টা track করা গেছে, সেটা মূল কলকাতা থেকে একটু দূরে... Raaj Danga Main Road, East Kolkata Township... আমি একটু অবাক ই হয়েছি জান তো... হঠাৎ এইরকম একটা ঠিকানা থেকে ঢেউকে বাঁচানোর আর্জি কেন জানাবে বারবার !! আর তারাই বা আমাদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ খবর পেলো কোথা থেকে ??

ঠিকানাটা শোনার পর থেকেই সমুদ্র গভীর ভাবনায় ডুবে যায়... কেন জানে না, ওর মনে হয় এই জায়গাটার নাম ওআগে শুনেছে... কিন্তু কোথায় তা আর মনে করতে পারে না... পরাগকেও জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু সদুত্তর পায় না... ওদিকে ঢেউ এখনও অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে... পরাগ আর সমুদ্র ক্রমাগত জল ছেটানো, গালে চাপড় মারা এইগুলো করতে থাকলেও লাভ কিছু হয় না... সমুদ্র জলে গুলে একটা ডাক্তার বাবুর prescribe করা ওষুধ খাইয়ে দেই... কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয় না...পরাগ কাঁধে হাত দিয়ে শান্ত করলেও নিজের মনে কাটাকুটি খেলেই যাচ্ছে ক্রমাগত...

ওইদিকে মনের খচখচানি দূর করতে ক্রমাগত Google-এ খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র... আচমকাই ওর মুখে একটু হাসির আভাস দেখা যায়... তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে,

সমুদ্র : কলকাতা টাউনশিপ-এর কাছাকাছি আমার এক বন্ধুর বাড়ি আছে জানেন তো... আমি অনেক গল্প শুনেছি ওদের ফ্ল্যাটটার... একবার যেতে নিমন্ত্রণও করেছিলো, কিন্তু আমাদের পক্ষে রক্ষা করা সম্ভব হয় নি... শুনেছি রুদ্রাগ্নি নৃত্যাঙ্গণ নামের নাচের স্কুল থেকে একটু এগিয়ে গিয়েই ওর বাড়ি...

পরাগ : কি বললে ?? কি বললে তুমি, বেদ ?? নাচের স্কুল ?? নৃত্যাঙ্গন ??

পরাগে যেন দিক হারানোর মাঝে এক চিলতে আলোর দিশা খুঁজে পায়... অন্যমনস্ক হয়ে বলে ওঠে,

পরাগ : জানো,আজ যখন ফোনে কথা হচ্ছিল তখন পেছন থেকে নাচের বোল শুনতে পাচ্ছিলাম... কেউ যেন তাল ছন্দ মিলিয়ে অবিরাম নেচে চলেছে... আসলে আগে হলে বুঝতাম না... এখন বনু প্রাকটি.. স... বে.. দ.. দ !!!

বিস্ফারিত চোখে সমুদ্রের দিকে তাকায় পরাগ... সামনের দিকে চোখ পড়তেই বোঝে সমুদ্রও কিছু আন্দাজ করে স্থির হয়ে গেছে... হঠাৎই যেন কিছু একটা মনে পড়ে গেছে ভেবেই দ্রুত একটা ফোন নম্বর ডায়াল করে সে.. দুই মিনিট কথার পর একটাই শব্দ উচ্চারণ করে,

                         প্রিয়ম রায় চৌধুরী !!!!

পরাগ : কিন্তু গত দুই দিন ফোনে যে কথা বলেছে, সেই অজ্ঞাত পরিচয় মানুষটি কিন্তু পুরুষ, বেদ !! নারী নয়, মনে রেখো !!

কথাগুলো বলে ওঠে পরাগ.. সামান্য আলোর রেখা পথ প্রদর্শন করছে বুঝেও উৎস মুখ পর্যন্ত কোনোদিক নির্দিষ্ট না হওয়ায় আবার কাটাকুটিতে মেতে ওঠে দুজনে... ঢেউ-এর এই নাচের ঘরের মধ্যেই যে লুকিয়ে আছে রহস্য... সেইটুকু বুঝলেও প্রয়োগের পদ্ধতি এখনও অনুধাবন করে উঠতে পারেনি কেউই...

আচমকাই ঢেউ-এর গোঙানির আওয়াজে সম্বিত ফিরে পায় দুজনে... দৌড়ে গিয়ে ঢেউ-এর মাথাটা নিজের কোলের মধ্যে নেয় সমুদ্র... জল পিপাসায় পিপাসার্ত ঢেউকে একটু একটু করে পরম মমতায় জল খাওয়াতে থাকে... সাময়িক জ্ঞান ফিরে আসায় স্বস্তি পেলেও আশ্বস্ত হওয়ার আগেই ফের ঢেউ অচেতনতার অন্ধকারে ডুব দিতে থাকে... শুধু উচ্চারণ করে কিছু প্রকাশহীন মনের বার্তা,

ঢেউ : মা... মা.. আম... আমায়.. য়.. য়.. তো.. তো.. মার.. সাথ.. সাথে না.. আ.. চ.. ক.. র.. তে..দে.. দেবে.. মা.. আ.. আ.. আ.. আ.. ম.. র.. আ.. এ.. ক.. সাথে.. পা.. এর.. বো.. বোল দেব... আম.. আমার ইচ্.. ইচ্ছা.. অন.. অনেক.. ক.. ক.. দিন.. দিনের.. শুনতে পাচ.. পাচ্ছো মা... আ.. আ.. !!!

ঢেউ পুরোপুরি আবার নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে... সমুদ্রের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা জল ঢেউ-এর কপাল ছোঁয়... কপালে কপালটা ঠেকাতেই ঢেউ-এর কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয় ওর কানে... এত কষ্ট পায় মেয়েটা মা-এর জন্য !! কিন্তু প্রকাশ করে না... তবে এই বারংবারের প্রতিধ্বনি তার মনেরও একটা জটিল অঙ্ক সমাধান করে দেয় নিমেষে... মা !! মেয়ে !!নাচ !! বোল !! হঠাৎই পরাগের মাথায় বিদ্যুৎ চমকের রেখা খেলে যায়... মন সরিয়ে দেয় এতদিনের ঢেকে রাখা ধাঁধার পর্দা... ঢেউ-এর দিকে তাকিয়ে দুজনেই একসাথে বিস্ময়ে মাখা হাসিতে বলে ওঠে,

                      বিষ !!!! ঘুঙুর !!!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance