অনাদৃতা (পর্ব ৫)
অনাদৃতা (পর্ব ৫)
তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে সুপ্ত রাতে :
----------------------------------------------------------
'এ শহর আজও জানে না 'আমার আমি'-র হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা... বৃষ্টির প্রতি ফোঁটায় জানলার কাঁচে দাগ কেটে আমি যে উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলাম, জমাট বাঁধা অভিমানী মেঘ কেটে যেতেই সেগুলো এখন রোদে পোড়া দগদগে ঘা... এ শহর আজও জানে না 'আমার আমি'-র হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা...' (সায়নী মজুমদার)
বাইরে তখন বসন্তের দখিন হাওয়া... দমকা ঝড়ো হাওয়ায় শুকনো পাতাগুলো উড়ে যায় ফেলে আসা বছরগুলোর মতো... এখন শুধু অপেক্ষা মুষলধারায় বৃষ্টি নামার...
তিন বছর পর :
-----------------------
Dharti se kuchh dur kahi saat samundar paar,
Akash-o ke bichh hain swapno ka sansar,
Woh jaami hai Pyaar ki, Woha sirf Pyaar hai,
Mere Chand jaa woha, Tera intejar hai...
গানটা শুনতে শুনতে মৈথিলী বেশ কয়েকটা Sleeping Pills বার করে খেয়ে নেয়... সে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে... আর ক'টা দিনের অপেক্ষা... তারপরেই যে হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন একসময় দিব্যান্তর জন্য স্পন্দিত হতো, সেই হৃদস্পন্দন যে এখন কোনো সময় স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়... মৈথিলী, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে শুধু সেই মূহুর্তটার জন্য... ধীরে ধীরে ওষুধের প্রভাবে গভীর ঘুম নেমে আসে মৈথিলীর চোখে....
তখন গভীর রাত... আদ্বান তার পড়াশোনায় ব্যস্ত, কঠিন অধ্যয়ণে... তার সামনে এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কঠিন পরীক্ষা... যদিও সে প্রচুর টিউশন পড়ানো শুরু করেছে, এবং একটা কলেজে Guest হিসেবে পড়ায়... তার সাথে আছে তার নিজের গবেষণা... এখন চাইলেও আর আদ্বান তেমন গিটারে হাত দিতে পারে না... সামনেই বিশ্বভারতীতে PhD-র জন্য Viva আছে তার... সে JNU-তেও PhD-তে Chance পেয়েছিল... কিন্তু ওই যে মধ্যবিত্তদের সাধ আর সাধ্যের মধ্যে অনেকটাই দূরত্ব থেকে যায়... তাই সেই সুযোগটা তাকে ছাড়তে হয়... তবে এতে আদ্বানের কোনো দুঃখ নেই... সে জানে, মেধা আর পরিশ্রম থাকলে সব জায়গা থেকেই সফলতা পাওয়া যায়...
একটু আগেই দিব্যার সিঁদুরদান হয়ে গেল... ব্যবসায়ী আরভের সাথে... নাহহ... দিব্যার বিয়ে দিব্যান্তর সাথে হয় নি... দিব্যান্তই করে নি... পুনে থেকে ফেরার পর মৈথিলী আহন ছাড়া আর কারুর সঙ্গেই কোনো সম্পর্ক রাখে নি... দিব্যান্ত ফোনের পর ফোন করে শুধু একটা উত্তর পেয়েছে মৈথিলীর বাবার কাছ থেকে, 'ও এখন কথা বলতে চায় না'... মৈথিলী কেন বদলে গেছে, কেন সে পৃথিবীর কারুর সাথেই সম্পর্ক রাখতে চাইছে না- মৈথিলীর বাবাকে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দেবার সাহস দিব্যান্তর কোনোদিনই হয় নি... কিন্তু, মৈথিলী যতদূরে সরে গেছে, দিব্যান্তর কাছে দিব্যা ততই অসহ্যকর হয়ে উঠেছে... ওদের পড়া শেষ হবার পর তিনমাস কাটে নি, ওদের সম্পর্ক তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে... দিব্যা শুধু নিজের স্বার্থ নিয়ে জিতে গেছে, কিন্তু মৈথিলী সরে যাবার পর দিব্যার কাছে নিজের স্বার্থটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রইলো না যে... দিব্যা স্বীকার করুক আর নাই করুক, আজ নিজের কাছে সে অনুভব করে তার জীবনে 'মৈথিলী' নামক আচ্ছাদনটি ছিল বলেই সে বিগত দু'বছর রোদ-ঝড়-জল-বৃষ্টি কোনোকিছুই বুঝতে পারে নি... 'মৈথিলী'-র বন্ধুত্বের আড়ালে মাতৃত্বটা তার এই পরাজয়ের সময় বড় দরকার ছিল... কিন্তু আজ তার মৈথিলী কোথায় !!! কেন এক নিকষ অন্ধকারে সে নিজেকে নিমজ্জিত করে নিয়েছে !!! অবশ্য এর জন্য ওদের পড়ার শেষ বছর মৈথিলীর সাথে যে দুর্ঘটনাটা ঘটে গেছে, সেটা অনেকাংশেই দায়ী... দিব্যা নিজেও হয়তো ভাবতে পারে নি, দিব্যার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে করতে এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে মৈথিলীর সাথে... তারপর থেকে সেই যে মৈথিলী দিব্যা আর দিব্যান্ত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, আর কোনোদিন ফিরে তাকায় নি... হয়তো নিজের অন্তিম সম্মানে ওইভাবে আঁচড় লাগলে, কোনো মেয়ের পক্ষেই আর সম্ভব হয় না নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া... কিন্তু আজ সিঁদুর পরতে পরতে দিব্যার মৈথিলীর মুখটাই ভীষন চোখে ভাসছে... ওর যত্ন, ওর ভালোবেসে আগলে রাখা, ওর সব আব্দার মেটানো... সব... সবকিছু... দিব্যার কোনো প্রেমিক এইভাবে দিব্যাকে আগলে রেখেছিল কি না সন্দেহ !!! আজ মৈথিলীর মুখটা মনে পড়তেই, দিব্যার মতো মেয়ের চোখ থেকেও কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে... চিন্তা একটাই- মৈথিলী পারবে তো জীবনে ফিরতে !!! না কি হারিয়ে যাবে দুর্ঘটনার নিকষ অন্ধকারে...
কয়েকদিন আগেই, দিব্যান্তর প্রায় দু'মাস পর জ্ঞান ফেরে... ওর জীবন থেকে দু'মাস হারিয়ে গেছে... যেদিন দিব্যার সাথে শেষ কথা বলে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল, সেদিন মৈথিলীকেও ও ফোন করেছিল... মৈথিলীর বাবা দিব্যান্তকে বারবার ফোন করতে বারণ করে দেন, কারন আজকাল ওনার মেয়ে ভীষন Rude আর Unsocial হয়ে গেছে... বন্ধুবান্ধব কেন, নিজের মা-বাবার সাথেই ভালো করে কথা বলে না... একটা ঘরে নিজেকে আটকে রেখে পড়াশোনা করে, নয়তো ঘুমায়... তাই ওনার খুব খারাপ লাগে দিব্যান্ত বারবার ফোন করলে... দিব্যান্ত বলতে পারে না, মৈথিলীর সাথে ঘটে যাওয়া সেই চরম দুর্ঘটনার কথা... ফোন রেখে বাড়ি ফেরার পথে একটা লরির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় দিব্যান্তর... আশ্চর্যজনকভাবে, ঘটনাচক্রে সে ছিটকে গিয়ে পড়ে পাশের একটা ধানের গোলায়... দিব্যান্তর বাঁচার কথাই নয়, কিন্তু সে বেঁচে যায়... জ্ঞান ফেরার পর আজ ডক্টর ওর হাতে একটা রক্তাক্ত রাখী দিয়ে যায়, যেটা ওইসময় ওর পকেটে ছিল... রাখিটা আর কারুর নয়, মৈথিলীর দেওয়ার রাখীটা... মৈথিলীর একমাত্র স্মৃতি... রাখীটা মুঠোয় আবদ্ধ করে দিব্যান্ত প্রতিজ্ঞা করে, সে মৈথিলীর জীবনে ফিরবেই...
ভালোমানুষ নই রে মোরা, ভালোবাসা মানুষ নই ----------------------------------------------------------------------
বিশ্বভারতীর PhD-র Viva দিয়ে বেরিয়ে এসে মৈথিলীর কিছুতেই মনে পড়ছে না, Girls Common Room-টা কোথায় !!! ওদের সবার ব্যাগ তো ওখানেই রাখতে বলেছিল... আর ও বাবাকে একটু সোনাঝুরিতে ঘুরতে পাঠিয়েছিল... কখন তার Viva শেষ হবে, তার ঠিক নেই, বাবা নয় একটু ঘুরেই আসুক সোনাঝুরিটা- এই ছিল তার ভাবনা... কিন্তু মুঠো মুঠো ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে তার যে এখন কিছুই মনে থাকছে না... এবার সে কি করবে !! এমনসময় এক যুবককে হেঁটে যেতে দেখলো সে... সে কি যৌবনে প্রাচুর্যে ভরা রূপ, শতদলের মাধুর্যে ঠিক যেন কোনো স্বর্গের দেবদূত... আপন দীপ্তিতে আপনই যেন দেদীপ্যমান... মৈথিলী ছুটলো তার পেছনে...
মৈথিলী : স্যার... স্যার... ও স্যার... একটু দাঁড়ান... একটু দাঁড়ান না...
যুবক যেন একটু থমকে দাঁড়ায়... তারপর রাগত মুখে মৈথিলীর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়... মুখটা দেখলে মনে হয়, সমস্ত শরীরের রক্ত এসে মুখমন্ডলে জমা হয়েছে....
যুবক : (ধমকে) এই !!! কে স্যার !!!
মৈথিলী : আপ... আপনি...
যুবক : আমি কোনো স্যার ট্যার নই... আপনারই মতো এখানকার PhD Scholar হতে এসেছি...
মৈথিলী : Ohhh Sorry.... বলছিলাম, Girls Common Roomটা কোনদিকে জানেন !!! আসলে, আমার ব্যাগটা ওখানে আছে....
যুবক : আরেএএএ ধুরররর মশাই... ওখানে তো আমারও ব্যাগ আছে... আমি তো Viva দিয়ে ব্যাগ ফেলেই চলে গিয়েছিলাম....
এবার অ..নে..ক অনেকদিনপর প্রাণখোলা হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে মৈথিলী... যুবক এবার বেশ বিস্মিত হয়... যুবকের বিস্ময় দেখে মৈথিলী বলে,
মৈথিলী : মানে আমি এক ভুলোর ভুলো... আপনি তো দেখছি আমারও গুরু... আপনাকে 'স্যার' বলাটা একদম ঠিক আছে...
যুবক : (আবার ধমকে) চুপ... আবার স্যার বলছে... খালি পেছনের লেজটাই নেই, তাই না !!
মৈথিলী : (চোখ পাকিয়ে) আমি বাদর !!!
যুবক : হনুমান একটা... এর স্ত্রী লিঙ্গ আমি জানা নেই...
মৈথিলী : বাহহহ... তা নিজেকে দেখা হয়েছে কখনো !! কাকতাড়ুয়া কোথাকার...
যুবক : কিইই !!! আমি কাকতাড়ুয়া !!! শুনুন এত বাজে বিশেষণ আমাকে কেউ কখনো দেয় নি...
মৈথিলী : (আত্মবিশ্বাসের সাথে) হুহ !! কী করে দেবে !!আপনাকে মন দিয়ে দেখে নি তো, তাই হয়তো !!অবশ্য দেখবেই বা কেন !! কাকতাড়ুয়াদের এত দেখারই বা কি আছে !! ওই বাঁশের ওপর জামা পড়ানো... মাথায় একটা কালো হাঁড়ি, আর তাতে সাদা রং দিয়ে চোখ মুখ আঁকা... দেখলেই যা হাসি পায় না.. কি আর বলবো !!
বলতে বলতেই মৈথিলী হাসতে থাকে... এতক্ষণ একটা অচেনা মেয়ের স্পর্ধায় রেগে গেলেও এই মিষ্টি হাসিটা যেন সেই রাগে প্রলেপ দিতে থাকে... মনে হয় বড্ড আপন, যেন ভীষণ চেনা....
যুবক : আচ্ছা, আপনাকে কি আমি কোথাও দেখেছি !!! কেমন যেন চেনা লাগছে !!
মৈথিলী : আমার মুখটা ভীষন Common, নিতান্তই সাধারন... বাংলার ঘরে ঘরেই আমার মতো কাউকে না কাউকে দেখে থাকবেন... ও নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই...
যুবক : নাহহহ... কোথাও একটা Missing Link থেকে যাচ্ছে... মনে পড়ছে না... যাই হোক, এবার আসুন... ব্যাগ উদ্ধার হোক...
যুবকের সাহচর্যে মৈথিলী ব্যাগ খুঁজে পায়, কিন্তু মৈথিলী ধন্যবাদ জানানোর আগেই যুবক সেখান থেকে চলে যায়... মৈথিলী যখন বাবার জন্য অপেক্ষা করছে, এমনসময় দূর থেকে একটা গান ভেসে আসে যার গলাটা মৈথিলীর ভীষন চেনা লাগে... কিন্তু মৈথিলীর মনে পড়ে না... সে শুধু মুগ্ধ হয়ে সেই গান শুনতে থাকে...
ভালোমানুষ নই রে মোরা ভালোমানুষ নই,
গুণের মধ্যে ওই আমাদের, গুণের মধ্যে ওই॥
দেশে দেশে নিন্দে রটে, পদে পদে বিপদ ঘটে
পুঁথির কথা কই নে মোরা, উল্টো কথা কই॥
জন্ম মোদের ত্র্যহস্পর্শে, সকল-অনাসৃষ্টি।
ছুটি নিলেন বৃহস্পতি, রইল শনির দৃষ্টি।
অযাত্রাতে নৌকো ভাসা, রাখি নে ভাই ফলের আশা
আমাদের আর নাই যে গতি ভেসেই চলা বই॥
দুর্ণিবার আকর্ষণই কি ভালোবাসা !!! না কি ভালোবাসা হলো সেই শক্ত করে ধরে থাকা হাতটা যে ক্ষতবিক্ষত, নরম মনের মানুষটাকে এক অকল্পনীয় দৃঢ় সত্ত্বায় রূপান্তরিত করে !!! তবে প্রকৃত ভালোবাসা ঠিকই তার রাস্তা করে নেয়... মনের টানে মনের কাছে ঠিকই পৌছায়, ঠিক মনের মানুষের হৃদয়ে তার জায়গা করে নেয়... হোক না সে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত বা হোক না সে শরীর কোনো দুর্ঘটনা কবলিত... ধীর পায়ে প্রকৃত ভালোবাসা সবকিছুর অন্তরালে অনেকটা পথ পেরিয়ে তৈরি করে এক অপার্থিব ভালোবাসার সম্পর্ক, যা সময়ে অসময়ে ছুঁয়ে যায় মন, একমুঠো সোঁদামাটির গন্ধ মেশানো ঠান্ডা বাতাসের পরশের ন্যায়...
বিশ্বভারতী :
-----------------
May I come in Sir !!!!
A.R. Sir : আরেএএ... আদ্বান স্যার যে... আসুন... আসুন... Local Train-ই তো সবশেষে ঢোকে কি না !!! অবশ্য আপনার তো আবার চাটাই-এর ব্যাপার আছে....
A.R. Sir-এর কথার সাথে সাথেই সবাই পেছন ফিরে দেখে... আদ্বানকে দেখেই মৈথিলী চোখ বড় বড় করে... আরেএএএ... সেদিনের সেই কাকতাড়ুয়াটা না !!! এই রে, তাকে দেখলে আবার বকাঝকা শুরু করবে... সে কোনোক্রমে মুখ লুকায়...
A.R. Sir : মৈথিলী, তুমি সরে ওকে একটু বসতে দাও... স্যার বলে কথা...
মৈথিলী : (মনে মনে) কি মিথ্যাবাদী রে বাবা !!! সেদিন যখন জিজ্ঞেস করলাম, তখন বললো আমি স্যার নই...
আদ্বান ততক্ষণে মৈথিলীর পাশে বসেছে... মৈথিলী গলা নামিয়ে আদ্বানের কাছে গিয়ে বলে,
মৈথিলী : এই কাকতাড়ুয়া, সেইদিন মিথ্যে বললে কেন যে, তুমি স্যার নও !!! সবাই জানে, তুমি স্যার...
আদ্বান : আমার মাথা আর তোমার মুন্ডু... কি যেন নাম তোমার !!! মেথি পাতা !!
মৈথিলী : এই... আমার নাম মৈথিলী... মেথি পাতা নয়...
আদ্বান : তো আমার নামও আদ্বান, মানে কাকতাড়ুয়া নয়...
মৈথিলী : খুব Uncommon নামটা... কি মানে গো !!!
আদ্বান : যে আলোয় অন্ধকার দূর হয়, সূর্যদেবকে বলে...
মৈথিলী : বাহহহ... ভীষণ সুন্দর নাম তো তোমার, কাকতাড়ুয়ার !!!
আদ্বান : আবার...
মৈথিলী : তুমি Local !!
আদ্বান : এই Local মানে কি হ্যাঁ !!! Local মানে কি !! আমার এখানে থাকি, তাই আমি Absolute Local... কাল তুমি Hostel-এ এলে তুমিও Relative Local হয়ে যাবে... সবটাই আপেক্ষিক...
মৈথিলী : ওরে বাপ রে !!! জল খাবো...
আদ্বান : হ্যাঁ... আমার মাথাটা না খেয়ে ওটাই খাও...
মৈথিলী : আচ্ছা, চাটাই কি !!
আদ্বান : এই তুমি চুপ করবে, না আমি এখান থেকে উঠে যাব... বুড়োধাড়ি মেয়ে.... চাটাই মানে জানে না !!!
মৈথিলী : আরেএএ, আমি সত্যিই জানি না... নয়তো খামোখা তোমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার ঝাড় কেন খেতে যাব বলো !!
আদ্বান : শোনো, আমি নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশন পড়াই... সেটাকেই স্যার 'চাটাই' বলছেন...
মৈথিলী : তাহলে স্যার তোমার সৎ প্রচেষ্টাটাকে অপমান করলেন...
আদ্বান : উনি ওমনিই...
মৈথিলী : কিন্তু এটা তো ঠিক নয়... ঠিক নয় এটা... (হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে) স্যার, আমার একটা কথা বলার ছিল...
আদ্বান : এই... এই... কি করছো মেথি পাতা !!!!
A. R. Sir : বলো মৈথিলী...
মৈথিলী : কারুর জীবনের প্রাথমিক সৎ প্রচেষ্টাকে কখনো অসম্মান করা উচিত নয়, সেই প্রচেষ্টা যত ছোটই হোক... আর একজন শিক্ষক হিসেবে তো নয়ই...
A. R. Sir : মানেএএ !!! তুমি আমাকে শেখাচ্ছো যে আমার কি করা উচিত !!! আগে তুমি শেখো গুরুজনদের কিভাবে সম্মান দিতে হয়...
মৈথিলী : গুরুজনেরও তো সম্মান অর্জন করার দায় থাকে স্যার...
A. R. Sir : Get Out... Get Out Right Now...
মৈথিলী : ঠিক আছে স্যার....
মৈথিলী বেরতে গেলে হঠাৎই কারুর হাতের আলতো বাঁধনে বাধা পায়... মুখ ফিরিয়ে দেখে বাচ্চা ছেলের মতো তার হাতের কড়ি আঙুলটি আদ্বান মুষ্টিবদ্ধ... সে দাঁড়িয়ে যেতেই আদ্বান উঠে দাঁড়ায়...
আদ্বান : স্যার, আমার জন্য প্রতিবাদ করে মৈথিলী তো একা শাস্তি পাবে না... এই শাস্তির তো সমান ভাগীদার আমিও... তাই আমিও এই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে চাই... এবং এখান থেকে বেরিয়ে আমি সোজা যাব H.O.D. Mam-এর কাছে...
A. R. Sir : তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো আদ্বান !!
আদ্বান : না স্যার, সেই ধৃষ্টতা বা সাহস কোনোটাই আমার নেই... কিন্তু আমাকে অযথা অপমান করার কারণটা তো আমি ওনার কাছ থেকে জানতেই পারি... এসো মৈথিলী...
A. R. Sir : এই দাঁড়াও... তোমরা কোথাও যাবে না... বসো দু'জনে... চুপচাপ Class করো...
আদ্বান : আপনি গুরুজন হয়ে যখন বলছেন, আমরা বসেই যাচ্ছি...
ওরা দু'জনে চুপ করে বসে যায়... হঠাৎই আদ্বানের চোখে পড়ে মৈথিলী মিটিমিটি হাসছে...
আদ্বান : মেথি পাতা !!! হাসছো কেন !!!
মৈথিলী : বাপ রে বাপ !!! আমার কাকতাড়ুয়া একেবারে সিংঘম হয়ে গেল যে...
আদ্বান : কিইইই !!!
দু'জনেই মিটিমিটি হেসে ফেলে মৈথিলীর কথায়... ধীরে ধীরে দিন পার হতে থাকে... ওদের সব সহপাঠীদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে... তবে মৈথিলী আর আদ্বানদের একটা পাঁচজনের ছোট্ট Group তৈরি হয়... ওরা কখনো একসাথে চা খেতে যায়, কখনো একসাথে গান করে, আবার কখনো একসাথে লাইব্রেরিতে পড়াশোনা... অদ্ভুতভাবে আদ্বান আর মৈথিলীর মধ্যে একটা অস্ফুট গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে... কথায় আছে, কে যে কখন আপন হয়ে ওঠে সেটা কেউ বলতে পারে না... মৈথিলী নিজের অজান্তেই আদ্বানের জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে... যেদিন আদ্বানের কলেজ থাকে, সেদিন হোস্টেল থেকে ওর জন্য ঝালছাড়া টিফিন নিয়ে আসে কারন আদ্বান ঝাল খেতে পারে না বলে... আদ্বান যাতে পড়া আর পড়ানোর মধ্যে সামঞ্জস্যতা বজায় করে রাখতে পারে, তার জন্য ওকে Note বানিয়ে দেয়... কোনো Class করতে না পারলে এখন আর আদ্বানকে চিন্তা করতে হয় না, জানে মৈথিলী আছে... এমনকি, সকালে ক্লাস থাকলেও মৈথিলী আদ্বানের গালমন্দ সহ্য করেও ওকে ঘুম থেকে তুলে দেয়... ভালোবাসার প্রতি একটা তীব্র ঘৃণায় পরত পরতে পরতে কেমন যেন কঠিন হয়ে গিয়েছিল আদ্বান... কিন্তু ধীরে ধীরে আদ্বানের কাঠিন্যের মোড়ক মৈথিলীর বন্ধুত্ব আর মমতার স্পর্শে ঠিক যেন শল্কমোচন প্রক্রিয়ায় পেয়াজের খোসার মতো খসে পড়ে যেতে থাকে.... আদ্বান আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠতে থাকে, এমনকি আজকাল মৈথিলীর নরম মুখটা মনে পড়লে আদ্বানের ঠিক নেশা করতেও ভালো লাগে না... তবে এই সবটাই ঘটছে আদ্বানের অবচেতন মনে, আর সচেতন মন !!!
কিন্তু, মৈথিলী আদ্বানের কাছে যেন একটা দূরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, ওর চোখের শূন্যতা ওকে কখনোই কারুর 'কাছের মানুষ' করতে দেয় না... আদ্বান এটাও লক্ষ্য করে যে, পুনের কথা বললে মৈথিলী কেমন একটা হয়ে যায়... তাই ওদের প্রথম দেখা হওয়াটা কথায় কথায় ওদের মনে পড়লেও আদ্বান সেই নিয়ে আর কথা বলে না... তবে মৈথিলী মাঝে মাঝেই আদ্বানকে পোস্ত খাওয়ায় টিফিনে... মৈথিলীর সব স্বাভাবিক কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মৈথিলী আর কিছুতেই ওদের মধ্যে থাকে না...
আজ আকাশের মনের কথা ঝরো ঝরো ঝরে:
---------------------------------------------------------------
এর মধ্যে ঘটে যায় এক অপ্রীতিকর ঘটনা... সেদিন নিম্নচাপের প্রভাবে ঘুর্ণিঝড় আসার কথা ছিল রাতে... তাই সবাইকে সন্ধ্যের মধ্যে University থেকে চলে যেতে বলা হয়... B.G. Sir মৈথিলী আদ্বানকে বেশকিছু xerox করতে বলে তাড়াতাড়িই বাড়ি চলে যেতে বলে... আঁখির সেদিন আদ্বানকে বিশেষ কিছু বলার ছিল হয়তো... তাই কথা হলো- মৈথিলী একাই চলে যাবে Xerox করতে, আদ্বান পরে ওর কাছে চলে যাবে...
আঁখি : শোন না, আদ্বান... বলছিলাম আমার তোকে যে কথাটা বলার ছিল...
আদ্বান : যেটা বলার আছে, তাড়াতাড়িই বল... আধঘন্টা থেকে একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছিস...
আঁখি : কেন !!! তোর তাড়া আছে !!!
আদ্বান : হ্যাঁ... আকাশের অবস্থা দেখ... তুই আজ বাড়ি যা... আমাকেও মৈথিলীর কাছে যাবে... মৈথিলী ঝড়কে খুব ভয় পায়, তার উপর বাজ পড়লে তো আর কথাই নেই....
আঁখি : (শ্লেষাত্মক স্বরে) আদ্বান, তুই মৈথিলীর সম্পর্কে একটু বেশিই জানিস মনে হচ্ছে...
আদ্বান : (কঠিন স্বরে) মৈথিলী, ওখানে আমাদের সবার জন্য Xerox করতে গেছে... সেখানে আমার Xerox আছে, আর তোরও Xerox আছে... কাল আমরা সবাই ওর কাছ থেকে Xerox নেব, আর আজ মেয়েটা একা একা ভয় পাবে... তুই চল, তোকে রিক্সায় তুলে আমি ওর কাছে যাব...
আঁখিকে একটা রিক্সায় তুলে আদ্বান সাইকেল নিয়ে ছোটে মৈথিলীর কাছে... ততক্ষণে বেশ জোরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে, আর বেশ ক'টা বাজও পড়ে গেছে... আদ্বান Xerox centre-এ এসে মৈথিলীকে দেখতে পায় না, দেখে কিছুটা দূরে হোস্টেলের পথে মৈথিলী থরথর করে ভয়ে কাঁপছে...
আদ্বান : মৈথিলী... মৈথিলী আমি চলে এসেছি... তুই ভয় পাস না... চোখ খোল... চোখ খোল...
মৈথিলী চোখ খুলেই ভয়ার্ত চোখে আদ্বানের হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে... ওর দুই চোখ ভর্তি জল...
আদ্বান : চল তোকে হোস্টেলে দিয়ে আসি...
মৈথিলী : নাহহহ... আমাকে দিয়ে আসতে গেলে তুই ফেরার সময় পাবি না... আমি তোকে একা এই ঝড়ে কিছুতেই ছাড়ব না...
আদ্বান : কিন্তু মৈথিলী, তুই তো ভয় পাচ্ছিস... আচ্ছা আয়, এই সামনের পোড়ো বাড়িটায় বসি ক্ষণিক... ঝড়ের দাপটটা কমলে আমরা চলে যাব... আয়....
আদ্বান আর মৈথিলী দু'জনেই একটা পোড়ো বাড়িতে গিয়ে বসে... এদিকে ঝড়ের তান্ডব বাড়তে থাকে... আদ্বান নিজের সাইকেলটা মাটিতে শুইয়ে রেখে মৈথিলীর থেকে একটু দূরে গিয়ে বসে... আদ্বান একবার আড়চোখে দেখে মৈথিলীকে...ওর চোখের ভাষা যেন বলছে, "আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে, আমার ভাবনা যত উতল হলো অকারণ"... কিন্তু মৈথিলী সেই ভাষা পড়তে পারছে না... মেয়েটা ভয়ে জড়োসড় হয়ে বসে আছে... আদ্বান একটু সরে আসে মৈথিলীর দিকে... ওর হাতের উপর আলতো করে হাত রাখে... চোখের ভাষায় আশ্বাস দিয়ে বলে,
আদ্বান : ভয় পাচ্ছিস কেন, মেথি পাতা !!! আমি আছি তো !!
মৈথিলী : জানিস কাকতাড়ুয়া, একটা সময় আমার বৃষ্টি খুব ভালো লাগত, বিশেষ করে ওই... ওই সোদা মাটির গন্ধটা যেন আমাকে ভিজিয়ে দিত... ঠিক যেমন ধরণীর বুক বাদল বারিধারা শুষে নিচ্ছে অপার মেদুরতায়... তাই ধরণী আরো নিবিড় করে কাছে ডাকে বর্ষাকে... তাই তো কবি লিখেছেন,
"এসো হে এসো সজল ঘন বাদল বরিষণে,
বিপুল তব শ্যামল স্নেহে এসো হে জীবনে"
আদ্বান : জানিস, এই কথাটা কিছুদিন আগে বললে আমার কাছে ঝাড় খেত সবাই... আমার কাছে বৃষ্টি মানে প্যাচপ্যাচে কাদা ছাড়া আর কিছুই নয়...
মৈথিলী একটু হেসে ফেলে আদ্বানের কথায়... আদ্বান মৈথিলীর চোখে সরাসরি তাকিয়ে বলে,
আদ্বান : আজ আমি বুঝি জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা ঝরে পড়লে ঠিক কেমন অনুভূত হয়... এটা না যে, তাকে শুধুই প্রেমিক বা প্রেমিকাই হতে হবে... প্রেমের থেকেও নিখাদ বন্ধুত্ব অনেক বেশি সুন্দর, অনেক বেশি স্বচ্ছ... আজ জানিস, আমি চাই আমার সেই নিখাদ, নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বকে বেঁধে রাখতে, সে যেন সতত ছেয়ে থাকে আমার চারপাশে... তাই বোধহয় তোর প্রাণের কবি লিখেছিলেন,
"বন্ধু রহো রহো সাথে, আজি এ সঘন শ্রাবণপাতে"
আদ্বান মৈথিলীর হাতে আলতো চাপ দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফেরায়... মৈথিলী একটু হাসার চেষ্টা করে, কিন্তু বুকে হঠাৎই একটা তীক্ষ্ম, চাপা ব্যাথা অনুভব করে... চোখের সামনে বসে থাকা আদ্বান যেন মূহুর্তের মধ্যে অস্পষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু নিজেকে সামলে নেবার নিরন্তর চেষ্টা করতে থাকে সে... আদ্বান আবার মৈথিলীর দিকে তাকায়... ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু ভ্রূটা যেন কুঁচকে যায় আদ্বানের... মৈথিলী জোর করে হেসে ওর সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করে...
আদ্বান : আচ্ছা মৈথিলী, দ্বিতীয়বার ভালোবাসা যায় রে !!!
মৈথিলী : ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসা থাকে আদ্বান... প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় কিছু হয় না... ভালোবাসা মূহুর্তরা চিরসত্য হয়... শুধু পার্থক্য এটাই হয় যে, সঠিক মানুষকে ভালোবাসলে সে তোকে ভালোবাসার শহর উপহার দেবে... আর ভুল মানুষকে ভালোবাসলে তোর জীবনটা তোর কাছেই অবহেলার হয়ে যাবে... তবে, সত্য যখন অপ্রিয় হয়, তার কাঠিন্য হয় অপরিমেয়... হৃদয়ের আলোকে তুমি যত তাড়াতাড়িই সেটা মেনে নেবে, ততই ভালো... ভালোবাসার মানুষটা বিষাক্ত হলেও আমাদের হৃদয় যেন বিষিয়ে না যায়...
আদ্বান : সেদিন পুনেতে তোকে কোনো প্রশ্নই করতে পারি নি, অপরিচিত হিসেবে কোনো অধিকার ছিল না... আজ বন্ধু হিসেবে একটা প্রশ্ন করতে পারি !!!
মৈথিলী : সেদিন কেন আমি ওই ঘটনাটা ঘটাতে গিয়েছিলাম, তাই তো !!! আমি জানি না, তোকে আমি গুছিয়ে সবটা বলতে পারব কি না !!! হয়তো সবার মতো তুইও আমাকে স্বার্থপর ভাববি... কিন্তু সেই রাতের ঘটনা আমি কখনো কাউকে বলতে পারি নি, হয়তো সেই রাতটা আমার মৃত্যুর সাথেই...
"তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি...
নাই অভিমান, নাই দীন কান্না, নাই গর্বহাসি...
নাই পিছু ফিরে দেখা, শুধু সে মুক্তির ডালাখানি,
ভারিয়া দিলাম আমি আমার মহৎ মৃত্যু আনি..."
আদ্বান : মৈথিলী, তুই নেশা করিস !!!
মৈথিলীর কাছে পুনের সব ঘটনা শোনার পর আদ্বান নিজের মনের দ্বিধা নিয়েও প্রশ্নটা করেই ফেলে, আর মৈথিলীর মৌনতা আদ্বানকে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়... মৈথিলী সেইদিন অব্দি সব ঘটনা বলে আদ্বানের থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকে... দীর্ঘকাল পর নিজের মনের সেই অন্ধকার কুঠুরি খোলে মৈথিলী, হয়তো অন্ধকারে আদ্বানের মুখটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না বলেই... কিন্তু কথাগুলো বলতে বলতে তার বুকের চাপটা বাড়তে থাকে... আদ্বানের তীক্ষ্ম দৃষ্টির ভয়ে সে আদ্বানের থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকে...
আদ্বান : তুই মুখ ফুটে বল আর নিই বল, আমি জানি তুই নেশা করিস... তোর চোখ যেন সবসময়ই এটা বলে, তুই ভালো নেই... একদম ভালো নেই তুই !!! কি পাস নেশা করে, বল তো !! নেশা করলে তো আরো বেশি করে মনে পড়ে !!! তাই না !!! আমিও নেশা করতাম মৈথিলী... এখন আর করতে ভালো লাগে না... যদি নেশা করতেই হয়, বই-এর নেশা কর... দেখবি সব ভুলে যাবি... সব... কি রে !!! মেথি পাতা !!! আমি পাশে বসে বকবক করছি, তাও তুই ভয় পাচ্ছিস না কি !!
মৈথিলীর কোনো কথা কানে ঢুকছে না... বুকের ব্যাথাটা কেমন যেন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে... তার কাছে মৃত্যু বড় কাঙ্খিত, মৃত্যু বড় মুক্তির... কিন্তু এখন যন্ত্রণাতে মৈথিলী থরথর করে কাঁপছে, ভালো করে কাঁদার শক্তি না থাকায় তার চোখ যেন টইটুম্বুর জলজ মেঘ যেখানে বৃষ্টি অঝোরধারা, মাঝে মাঝে একটু একটু ফোঁপাতে থাকে মৈথিলী... এবার আদ্বানের একটু সন্দেহ হয়... মেয়েটা এতক্ষণ চুপ করে আছে কেন !!! আদ্বান দুই হাতের আলতো বাঁধনে মৈথিলীকে নিজের দিকে ঘোরায়... মৈথিলীকে দেখে চমকে ওঠে সে...
আদ্বান : মেথি পাতা, তোর কষ্ট হচ্ছে !!! কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর !!! বল আমাকে...
এবার মৈথিলী খুব জোরে ফুঁপিয়ে ওঠে... নিজের সহজাত লজ্জা ভুলে একেবারে ছিন্নপত্রের মতো আদ্বানের বুকে লুটিয়ে পড়ে আঁকড়ে ধরে আদ্বানকে... মুক্ত করে দেয় তার অন্তর আর আঁখির সব জমাট বাঁধা মেঘপুঞ্জকে... আদ্বান প্রথমে একটু হতভম্ব হলেও মূহুর্তের মধ্যেই অনুভব করে মৈথিলীর এখন তার সান্নিধ্য দরকার... ধীরে ধীরে নিজের বক্ষলগ্না মৈথিলীকে নিজের বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে আগলে নেয় সে... ভিজে ওঠে ভালোবাসায় ভরা চিরন্তন সেই বন্ধন... আজ আদ্বানকে মৈথিলীর প্রতিটা অধোর রূপোর ফোঁটার মতো বৃষ্টির জলকে চিনে নিতে হবে... কবি বোধহয় এই মূহুর্তের জন্যই লিখেছিলেন,
"আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে,
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটি...
অঝোর শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে,
মেঘ আঁচলে নিলে ঘিরে..."