Arpita Pal

Horror

2.6  

Arpita Pal

Horror

অভিশপ্ত ডায়রি - দ্বিতীয় পর্ব

অভিশপ্ত ডায়রি - দ্বিতীয় পর্ব

4 mins
297


পরের দিন খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মোবাইলটা অন্ করে দেখলাম ৫.৩০ টা বাজে। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে পাশ ফিরতেই দেখি তনু বিছানায় নেই। ভাবলাম হয়তো বাথরুমে গেছে। আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর যখন ঘুম ভাঙল সেটা নিজে থেকে নয়। কেউ একজন ধাক্কা দিয়ে আমায় জাগানোর চেষ্টা করছে। চোখ খুলে দেখলাম আমার সামনে এই বাড়ির এক কেয়ারটেকার সুবোধ দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে -

 " বাবু? ও বাবু? ঘুম থেকে উঠুন বাবু। "

আমি হকচকিয়ে গিয়ে উঠে বসে বললাম-

 " কি হয়েছে? এই ভাবে আমায় ডাকছো কেন? "

 " আপনি শিগগিরি বাইরে আসুন। "

 " আরে কি হয়েছে বলবে তো? "

 " বাবু... বৌদিমনি বাইরের বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। "

আমি ভীষণ অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি বারান্দার ডানদিকে একটা সিঁড়ি তিনতলার দিকে উঠে গেছে। সেই সিঁড়ির মুখে তনু অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আর তারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে এই বাড়ির সবচেয়ে পুরনো কেয়ারটেকার হরিপদদা এবং রাধুনি হরিশদা যাকে আমারা আসব বলেই অখিলেশ কয়েকদিনের জন্য রেখেছে। আমি প্রায় দৌড়ে তনুর কাছে গিয়ে দেখি সে পুরোপুরি অজ্ঞান হয়নি। মুখ দিয়ে একটা গোঙানির মতো আওয়াজ বেরোচ্ছে। আমার মনে হল ও যেন কিছু বলতে চাইছে। ওর মুখের সামনে আমার মুখটা নিয়ে গিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছু অস্পষ্ট শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পারলাম না। ওকে সাথে সাথে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারলাম ওর গায়ের উত্তাপ ভীষণ ভাবে বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে আমার দুটো হাতে গরম শিকের ছ্যাঁকা লাগছে। ঘরে নিয়ে গিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। সুবোধ, হরিপদদা আর হরিশদা আমার সাথে সাথেই ঘরে এসে প্রবেশ করেছে। তাদের উদ্দেশ্যে বললাম-

 " তোমরা এক্ষুণি জলপট্টির ব্যবস্থা কর। "

আমার এই কথা শুনে সুবোধ " এক্ষুণি নিয়ে আসছি " বলে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সাথে হরিশদাও বেরিয়ে গেল ওর পেছন পেছন। কিন্তু হরিপদদাকে দেখে খুব অবাক হয়ে গেলাম। যাকে কোনোদিনও ভয় পেতে দেখিনি বা বলা ভালো কখনও শুনিনি। অখিলেশের মুখে শুনেছিলাম বাড়ির মধ্যে সবথেকে সাহসী হরিপদদাই। সে নাকি একবার অখিলেশের দাদা ঠাকুরকে এক বিশাল বড়ো অজগর সাপ থেকে বাঁচিয়েছিল। তখন হরিপদদার বয়স ১৬ কি ১৭ ছিল। তবে থেকেই সে বাড়ির অন্যান্য চাকর-বাকরদের তুলনায় একটু বেশি প্রাধান্য পেতে শুরু করে। আর এখন সেই হরিপদদা আতঙ্কিত চোখে মুখে তনুর দিকে তাকিয়ে কি যেন বিড়বিড় করছে। 

আমি তার সামনে গিয়ে বললাম-

 " হরিপদদা? কি হয়েছে তোমার? তুমি এরকম করছো কেন? "

সে কিন্তু আমার কোনো কথারই উত্তর দিল না। আগের মতোই সে বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছে-

 " আমার কথা কেউ শুনল না। বার বার বারণ করলাম। কিন্তু কেউ শুনল না। এবার ও কাউকে ছাড়বে না। কাউকে না। কারও মুক্তি নেই। সবাইকে শেষ করে দেবে ও। কারও মুক্তি নেই। কারও মুক্তি নেই......"

আমি এইসব অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে তার কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললাম-

 " হরিপদদা তুমি এসব কি বলছো? কার কথা বলছো? "

এবার সে আমার দিকে সেই ভাবেই আতঙ্কিত মুখে তাকিয়ে বলল-

 " বাবু তুমি আর এখানে থেকো না। পারলে আজকেই বৌদিমনিকে নিয়ে কলকাতায় ফিরে যাও। আর থেকো না। আর থেকো না......"

এই বলতে বলতে সে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। এরই মধ্যে সুবোধ জলপট্টি নিয়ে হাজির হয়েছে। আমি ওকে বললাম-

 " আচ্ছা সুবোধ। আশেপাশে কোনো ডাক্তার আছে কি? "

সুবোধ কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল-

 " হ্যাঁ বাবু তা আছে। এখান থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। আপনি যদি বলেন তো ডাক্তার নিয়ে আসি? "

 " ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি যাও। "

সুবোধ বেড়িয়ে যাওয়ার পর আমি তনুকে জলপট্টি দিতে লাগলাম। গা যেন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ওর মুখ থেকে আর কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। আধঘণ্টা পর ডাক্তার এসে সব কিছু শুনে বিশেষ কিছুই বলতে পারলেন না। তনুকে একটা ইঞ্জেকশান দিয়ে আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে চলে যান। তারপর আমি অখিলেশকে ফোনে সবটা বললাম। শুধু বললাম না হরিপদদার অদ্ভুত আচরণের কথা। ব্যাপারটা খুব তুচ্ছ মনে হয়েছিল আমার কাছে। ভেবেছিলাম বয়স হয়ে গেছে। তাই হয়তো মাথাটা ঠিক কাজ করে না এখন। 

অখিলেশ আমার কথায় বেশ দুঃখ প্রকাশ করল। আর এটাও বলল যে খুব অসুবিধে হলে আমরা যেন খুব শীঘ্রই কলকাতায় ফিরে যাই। আমি তাকে অভয় দিলাম বটে কিন্তু আমার মনে তনুর জন্য চিন্তাটা রয়েই গেল। অবশ্য সেই চিন্তাটা বেশিক্ষণ ছিল না। দুপুরের দিকে সে বেশ সুস্থ আর স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে তার অজ্ঞান হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছুই নাকি মনে নেই। আমিও আর এই নিয়ে বেশি কিছু বলিনি। ও যখন সুস্থ হয়ে গেছে এটাই আমার কাছে অনেক।

সন্ধ্যে বেলায় আমি আর তনু বৈঠকখানায় বসে গল্প করছি। এমন সময় হরিপদদা ঘরে প্রবেশ করল। তার মুখে সকালের মতো আতঙ্কের ছাপটা না থাকলেও কালো অন্ধকারটা রয়েই গেছে যেটা আমি এসে থেকে দেখছি। সে সবুজ রঙের মলিন কাপড়ে মোড়া একটা জিনিস আমার হাতে দিয়ে বলল-

 " ছোট কর্তা এটা আপনাদের দিতে বলেছেন। আজ তো আপনাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই এটা ওনার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য উপহার। "

তখন আমার হঠাৎই আমার মনে পড়ল অখিলেশের surprise gift-এর কথা। সকাল থেকে যা গেল তাতে আর মনে থাকার কথা নয়। আমি সাথে সাথে কাপড়টা সরিয়ে চোখের সামনে যা দেখলাম তাতে বিস্ময়ের সীমা রইল না। তনুকেও দেখলাম সে আমার মতোই অবাক হয়ে গেছে। এখন আমার হাতে যেটা রয়েছে সেটা লাল, নীল ও সাদা পাথর খোচিত একটা সোনার সিঁদুরদানি। সাদা পাথরগুলোকে দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সেগুলো প্রত্যেকটা হীরে! আমি অখিলেশকে ফোন করে অনেক ধন্যবাদ জানালাম ঠিকই। কিন্তু এই উপহারের কাছে সেগুলো কিছুই না।

                                                                   ক্রমাগত......  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror