Arpita Pal

Romance Thriller

3  

Arpita Pal

Romance Thriller

অন্তরাল-ষষ্ঠ পর্ব

অন্তরাল-ষষ্ঠ পর্ব

4 mins
216


আপাদমস্তক জরিপ করে নিচ্ছে শিঞ্জিনীকে একজন মুখোশধারী লোক। চারিদিকে নীলচে আলোর ধোঁওয়া। মাথাটা ভীষণ ভাবে ভার হয়ে আছে। এমন সময় সেই মুখোশধারী লোকটা জামার ভেতর থেকে কি একটা জিনিস বের করতেই সেটা চক চক করে উঠল। ভালো করে সেটা দেখার চেষ্টা করল শিঞ্জিনী। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আছে। ঠিক মতো দেখতে পারছে না। তবে যেই মুহূর্তে লোকটা হাতে ধরে থাকা সেই জিনিসটা নিয়ে শিঞ্জিনীর আরও কাছে এগিয়ে এলো তখনই সে বুঝতে পারল চক চকে সেই জিনিসটা আসলে একটা ছুরি। আর সেটা গলার কাছে এগিয়ে আসতেই শিঞ্জিনী চিৎকার করে উঠল। 


আজ ক্লাসে কিছুতেই মন বসছে না। টিচার প্রায় ৪০ মিনিট ধরে প্লেট টেকটনিক নিয়ে অনেক কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু তার কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না মহিতের। বার বার হোয়াটস্ আ্যপটা চেক করছে। নাহ্! শিঞ্জিনীর কোনো মেসেজ নেই। এরকমটা তো আগে কোনো দিন হয়নি। প্রায় ৭ বছর হয়ে গেল তাদের বন্ধুত্বের। কিন্তু কখনও তো এরকম হয়নি যে শিঞ্জিনী মহিতকে তার জন্মদিনে উইশ করেনি। তাও আবার কোনো reminder ছাড়াই। তবে আজ কি হল? গতকাল রাতে প্রায় ২টো অব্দি মহিত জেগে ছিল যদি শিঞ্জিনী ফোন করে। কিন্তু তার সব আশাই হতাশায় বদলে গিয়ে ২ঃ৩০ টে নাগাদ সে ঘুমিয়ে পড়ে। স্কুলে থাকাকালীন তারা একে অপরের পরিপূরক ছিল। তাদের জুটি স্কুলের মধ্যে famous ছিল। মহিত আর শিঞ্জিনীর সহজ সরল বন্ধুত্বটা স্কুলের প্রায় বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েদের ধারনার মধ্যে " wow so cute ", " lovely ", " দুই শালিক ", " made for each other ", " rab ne bana di jodi " এইসব বিশেষণ পদযুক্ত love status-এ পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তারা কখনও এইসব comment-এর প্রভাব তাদের friendship-এর উপর পড়তে দেয়নি। বরং সবার মনের ভুল ধারনা গুলোকে তারা খুব enjoy করত। শিঞ্জিনী শান্তিনিকেতন যাওয়ার আগে শেষ যেদিন মহিতের সাথে দেখা করেছিল সেদিন মহিত তাকে বলেছিল-


 " আমাদের মধ্যে দেখা হওয়ার সুযোগ গুলো এবার থেকে কমে যাবে। ওখানে নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু হবে। এমনকি boy friendও হবে। তাই এতো সব কিছুর মাঝে আমাদের friendship-টাকে ভুলে যাস্ যেন শিনু। "


সেই সময় শিঞ্জিনীর চোখের কোণায় খারাপ লাগাগুলো চিক্ চিক্ করে উঠেছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলে- " তোর মতো হেঁদোকে আর কতো মনে রাখব রে? এতো বছরতো সামলালাম। এবার তোকে মনে রাখার দায়িত্ব তোর upcoming girlfriend - এর উপর দিয়ে গেলাম। " বলেই শিঞ্জিনী হেসে উঠলো।


মহিত জামার কলার উচিয়ে গর্বের সাথে বলেছিল-


 " হুমহ্! দেখিস্ আমার girlfriend আমায় কতো যত্ন নেবে, ভালবাসবে। সুন্দরীও হবে। তোর মতো পেত্নি হবে না। "


 শিঞ্জিনী এই কথায় মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল-


 " আমি কখন বললাম যে আমার মতো পেত্নি হবে। আর তুইও দেখে নিস্ আমার boyfriend তোর থেকে বেশি handsome হবে। " 


 " হ্যাঁ যা যা। তুই তোর boyfriend - এর কাছেই যা। "


 " হ্যাঁ তাই যাচ্ছি। তোর সাথে কথা বলে কে? "


 " এই দাঁড়া। কোথায় যাচ্ছিস্? এদিকে আয়। "


মহিত শিঞ্জিনীর হাত ধরে টেনে তার হাতে একটা friendship band পড়িয়ে দেয়। তারপর শিঞ্জিনীর দু-গালে হাত রেখে মহিত বলেছিল-


 " তুই যতদিন আমায় মনে রাখবি এটা ততদিন তোর হাতে থাকবে। আর যেদিন তুই আমায় ভুলে যাবি সেদিন এটাও তোর হাত থেকে খুলে যাবে। "


এই কথার পড়েই দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিল। 


সেদিনের কথা মহিত এখনও ভোলেনি। কিন্তু শিঞ্জিনীর কি মনে আছে মহিতের কথা? 



   


রাতের খাওয়া সেরে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় চুপচাপ বসে রইল শিঞ্জিনী। মনের মধ্যে একটা চাপা ভয় কাজ করছে। ঘুম পেলেও ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না তার। না জানি আবার কি স্বপ্ন দেখবে! সত্য-মিথ্যা, সঠিক-বেঠিক সব কিছুর হিসেব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুর তল খুঁজে পাচ্ছে না সে। কলেজ থেকে ফেরার সময় একটা কোল্ড ড্রিংকের বোতল নিয়ে এসেছিল। গত কয়েকদিন ধরে শিঞ্জিনীর সাথে যা সব ঘটছে তাতে তার নিজের একটু ব্রেকের দরকার। একটা গ্লাসে কিছুটা কোল্ড ড্রিংক ঢেলে তাতে একটা চুমুক দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয় সে। একটু যেন আরাম লাগছে। তবে তার নিজেকে আজ খুব অসহায় লাগছে। কিন্তু শিঞ্জিনী এটা কি করছে? সে এতদিন ধরে যা যা দেখেছে সবটা মেসোকে বলে দিলেই তো হয়। ছোটবেলা থেকেই তার গোয়েন্দা হওয়ার খুব শখ। কিন্তু সেই শখ পূরণের সামনে দেওয়ালের মতো করে দাঁড়িয়ে আছে তার মা-বাবা। শিঞ্জিনীর অন্তরে গোয়েন্দা হওয়ার ইচ্ছেটা আজ তাকে কোনোভাবেই মাঝ পথ থেকে ফিরে যেতে দেবে না। এই মুহূর্তে তার বড্ড বাড়ির কথা মনে পড়ছে। মা, বাবা, তার প্রিয় কুকুর জনি আর স্কুলে কাটানো সুন্দর দিনগুলো। স্কুলের কথা মনে পড়তেই ধীরে ধীরে চোখের বন্ধ দরজার সামনে মহিতের সাথে কাটানো ছেলেমানুষি দিনগুলো পুরনো অ্যালবামের ছবির মতো ভেসে উঠছে। শিঞ্জিনীর মুখেও যেন একটা আলতো হাসি ফুটে উঠেছে। হঠাৎ কি একটা মনে হতেই গ্লাসটা টেবিলে রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে আনলো। সারাদিনে ফোনটা চেক করাই হইনি। একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সে। ক্লাসে কি কি পড়ানো হয়েছে সেসব কিছুই তার মগজে আজ আশ্রয় পায়নি। অর্জুনও আজ ছিল না যে তাকে মাঝে মাঝে বাস্তবে ফিরিয়ে আনবে। ফোনটা আনলক্ করতেই অনেক কটা নোটিফিকাশনের মাঝে মহিতের দুটো হোয়াটস্ আ্যপ মেসেজ তার চোখে পড়ল। তাড়াতাড়ি হোয়াটস্ আ্যপটা অন্ করে দেখে মহিত লিখেছে-


 " আশা করি তুই তোর স্বপ্নের রাজকুমারকে পেয়ে গেছিস্। "


 " তাই তো আমার বিশেষ দিনটার কথা ভুলে গেছিস্। ভালো থাকিস্। "


আজ দুপুর ১টার সময় মেসেজ দুটো এসেছে। শিঞ্জিনীর গাল বেয়ে দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। যেটা কোনো দিন হওয়ার কথা ছিল না। সেটাই আজ হল। 



ক্রমশ.....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance