Arpita Pal

Classics

4  

Arpita Pal

Classics

অন্তরাল - দ্বাদশ পর্ব

অন্তরাল - দ্বাদশ পর্ব

4 mins
300


প্রায় আধঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পর একজন পুলিশ অফিসার হাতে একটা ফাইল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। শিঞ্জিনীর মনে নানা রকম বিষয় আনাগোনা করছে। জীবনটা তো ভালোভাবেই চলছিল। হঠাৎ করে এইসব কি ঘটে গেলো? তবে এটা সত্যি যে শিঞ্জিনী অর্জুনকে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই চাওয়া অনুযায়ী সে তো বড়ো অপরাধটা করেনি। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরন করেছিল। ভেবেছিল অর্জুনের সাথে দেখা করে তার আড়ালে তৈরি হওয়া সম্পর্কটার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে চিরতরে বিদায় নেবে ভুল পথটা থেকে। কিন্তু তার আগেই তো সব কিছু শেষ হয়ে গেল। এইভাবে যে সব ভাবনার বাইরে বেড়িয়ে যাবে সেটা কে-ই বা বুঝতে পেরেছিল? এমন সময় শিঞ্জিনীর ভাবনায় বিরতি ঘটিয়ে উল্টো দিকে বসে থাকা পুলিশ অফিসারটি বলে উঠল-


 " কি ভাবছেন এতো মিস্......? "


হঠাৎ এই প্রশ্নে শিঞ্জিনী চমকে উঠল। এরপরেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-


 " শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত। "


 " Ok. শিঞ্জিনী আপনার ভাবনাটি কি আমার সাথে শেয়ার করা যায়? "


 একটু বিরক্ত হয়ে শিঞ্জিনী বলল-


 " কেন শেয়ার করতে যাব? "


 " তাহলে আপনার জেনে রাখা দরকার আমার নাম দেবজিত চক্রবর্তী। এই কেসটা মুলত আমিই হ্যান্ডেল করছি।তাই এই কেসের সব কিছু জানার অধিকার আমার আছে। এবার বলুন। "


 " কি বলব? "


 " দেখুন মিস্ সেনগুপ্ত। আপনি একজন বাঙালি আর আমিও। তাই আমার কথা বুঝতে হয়তো সময় লাগার কথা নয়। তাই......"


শিঞ্জিনী যেন হঠাৎ রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল-


 " তাই কি? হ্যাঁ? তাই কি? আমি কিন্তু এই ব্যপারে কিছু জানি না। "


দেবজিত শান্ত গলায় বলল-


 " আমি যত দূর জানি আপনি এখানে যে বাংলোটা তে থাকেন সেটা আপনার মেসোর। আর তিনিও একজন পুলিশ। সেক্ষেত্রে আপনার হয়তো জানা উচিৎ পুলিশের কাছে কিছু লুকোতে নেই। তার ফল কিন্তু ভালো হয় না। "


এতোক্ষণ ধরে শিঞ্জিনীর মাথায় মেসোর কথাটা এলো না কেন? তাহলে তো এতো ঝামেলা হত না। সে দ্রুততার সাথে বলে উঠল-


 " আমি মেসোর সাথে একবার কথা বলব। "


দেবজিত একটা বাঁকা হাসি হেসে নিয়ে বলল-


 " আপনার হয়ে এই কাজটা আমি অনেক আগেই করে ফেলেছি। আর ঘন্টা খানেকের মধ্যে আপনার মেসো এখানে উপস্থিত হবেন। আর তার সাথে আপনার মা বাবাও। "


লজ্জায় মাথা হেট্ হয়ে আসছিল শিঞ্জিনীর। শেষে কিনা এই বয়সে নিজের মা বাবাকে মেয়ের জন্য থানায় আসতে হবে? কিন্তু সে এতো ভয় পাচ্ছে কেন? তার তো কোনো দোষ নেই। তাহলে কোন সত্যিটা বেড়িয়ে আসার ভয়ে মনের ভেতরে আতঙ্কের পাহাড় তৈরি হচ্ছে?


ঘণ্টা খানেক ধরে কোনোরকম বাক্য ব্যয় না করে চুপচাপ সময় কেটে যায় শিঞ্জিনীর। মানুষের জীবনে কখন যে কি ঘটে যায় সেটা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। গতকাল জীবনটা নিজের কাছে তার খুব অসহ্য লাগলেও আজ যেন হঠাৎ প্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সাথে জীবনের অর্থও পরিবর্তন হতে থাকে। দরজা ঠেলে যারা ঘরে প্রবেশ করল তাদের দেখে সে আর চুপ করে থাকতে পারল না। চেয়ার থেকে উঠে দ্রত পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। মায়ের বুকের মাঝে সে যেন একটা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছিল। মা আমাদের সকলের কাছে এমনই একজন যার কাছে পৃথিবীর সব ভয় এক মুহূর্তে দূর হয়ে যায়। মা-মেয়ের কান্না ভেজা মুহূর্তও গুলোর মাঝে দেবজিত বলে উঠল-


 " এখনই এই ভাবে ভেঙে পড়ার মতো কিছু হয়নি। শিঞ্জিনী কিন্তু কোনো দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়নি। আপনারা please আমার সাথে co-operete করুন। "


টেবিলে পাঁচ কাপ চা দিয়ে একটা বারো-তেরো বছরের ছেলে Interrogation room থেকে বেড়িয়ে গেল। ইন্সপেক্টর দেবজিত চক্রবর্তী, লাল বাজার থানার ওসি ওরফে শিঞ্জিনীর মেসো প্রত্যয় হালদার, শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত এবং তার মা বাবা ওরফে মৃণালিনী সেনগুপ্ত ও অভিজিৎ সেনগুপ্ত, এদের মাঝে এক অদ্ভুত নিঃশব্দটা কাজ করছে। নিস্তরঙ্গ সময়ের মাঝে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে শিঞ্জিনীর বাবা অভিজিৎ বাবু জমিদারি চালে দেবজিতের উদ্দেশ্যে বললেন-


 " আমার মেয়ের অপরাধ? "


শোনা যায় অভিজিৎ সেনগুপ্তের পূর্বপুরুষরা নাকি একটা সময় বাংলাদেশের কোন এক গ্রামের বিশাল বড়ো জমিদার ছিলেন। কিন্তু দেশ ভঙ্গ হওয়ার পর কালের নিয়মে সে সবের চিহ্ণ এখন আর নেই। তিনি এখন সামান্য ব্যাঙ্ক কর্মী হলেও জমিদারি রক্ত তার পরিচয় দেয়। দেবজিত কোন রকমভাবে উত্তেজিত না হয়ে বলল-


 " সেই অর্থে আপনার মেয়ে কোনো দোষ করেনি। এই কেসটায় দুটো খুন হয়েছে। একটি ছেলে আর একটি মেয়ের। এদের মধ্যে যে ছেলেটি খুন হয়েছে যার নাম অর্জুন, তার সাথে পরিচয় আপনার মেয়ের অনেক আগে থেকেই ছিল। বলা যেতে পারে একটা প্রেমের সম্পর্ক। এখানেও আপনার মেয়ের কোন দোষ নেই। "


এরপর অভিজিৎ বাবু বেশ উদ্বেগজনক ভাবে বলল-


 " তাহলে আমার মেয়ের দোষটা কোথায়? "


দেবজিত চেয়ারে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে বলল-


 " এই গল্পটাকে ভালোভাবে সাজাতে গেলে আসল লোক কে তো আমার দরকার। "


প্রত্যয় বাবু এতোক্ষণে মুখ খুললেন। বললেন-


 " আসল লোকটা কে? "


সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে ঘরের কোণায় বসে থাকা এক কন্সটেবেলকে দেবজিত বলল-


 " বিশ্বদা ওনাকে ঘরে নিয়ে আসো। "


এরপর বিশ্বদা বেড়িয়ে গিয়ে যাকে ঘরে ঢুকিয়ে আনল তাকে দেখে শিঞ্জিনীর মুখ থেকে একটা অস্ফুট শব্দ বেড়িয়ে এল। 


 " মোহিত? "



ক্রমশ...... 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics