অন্তরাল - অষ্টম পর্ব
অন্তরাল - অষ্টম পর্ব
দরজার কাছে একজনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মহিত পেছনে তাকায়।
" আয় বস্। "
শিঞ্জিনী সংকোচের সাথে ঘরে ঢুকে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে। কেন যেন সে আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা নয়। মহিত তো ওর ছোটবেলাকার বন্ধু।
মহিত প্রোজেক্টের একটা ফাইল হাতে নিয়ে সেটার পাতা উল্টাতে উল্টাতে শিঞ্জিনীকে জিজ্ঞেস করে-
" কেমন আছিস্? "
শিঞ্জিনী কেমন যেন চমকে উঠল। সেটা চোখের আড়াল হয়নি মহিতের।
" Are you allright? "
শিঞ্জিনী কি বলবে বুঝতে না পেরে বলে-
" একটু জল দিবি? "
মহিত জলের বোতলটা তার দিকে এগিয়ে দেয়। শিঞ্জিনী কিছুটা জল খেয়ে নিয়ে বলে-
" আমি ভালো আছি। "
" তা হঠাৎ কি মনে করে আমার আলয়ে আপনার পদার্পণ হল? Boy friend - এর ভালবাসা কি কম পড়ে গেছে? "
শিঞ্জিনী উত্তেজিত হয়ে বলে-
" Don't say like that Mohit. I'm suffering from many unusual things. "
মহিত অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। শিঞ্জিনী তখন কাঁদছে। মহিত তার সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে শিঞ্জিনীর কাঁপতে থাকা হাত দুটোকে শক্ত করে ধরে বলে-
" আমাকে বল শিনু। কি হয়েছে তোর? ভালোবাসাটা মিথ্যে প্রমান হয়েছে? "
শিঞ্জিনী আর থাকতে না পেরে মহিতকে জড়িয়ে ধরে। সেও আচমকা এরকম আচরণে একটু থতমত খেয়ে গেলেও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-
" Shh!!!!..... calm down. Calm down. "
শিঞ্জিনী মহিতকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই কাঁদতে কাঁদতে বলে-
" I'm so sorry. আমার সব কিছু এমন ভাবে ঘেটে গেছে। আমি...আমি..."
আর কথা বলতে পারে না সে। মহিত এবার তাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে-
" অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। এবার পরিষ্কার করে বল তো কি হয়েছে? "
কয়েক মিনিট পর নিজেকে সামলে নিয়ে শিঞ্জিনী মহিতকে সব কথা খুলে বলে। সব কিছু শোনার পর মহিত একটু ভেবে নিয়ে বলে-
" তোর থেকে আমি যা যা শুনলাম তাতে আমার এটা মনে হয় যে বেশ কিছু জিনিস তোর অতিরিক্ত ভাবনা চিন্তার ফল। আর কিছু জিনিসের সত্য মিথ্যা যাছাই করাটা দরকার। "
" এখন আমার তাহলে কি করা উচিৎ? "
" যদি আমার advise নিতে চাস্ তাহলে বলব তুই ওই বাড়িটা ছেড়ে দে। কোনো মেসে গিয়ে থাক্। আর সবচেয়ে ভালো তোর কলেজের হোস্টেলে থাক্। "
" সেটা থাকাই যায়। কিন্তু ওই বাড়িতে যদি কিছু খারাপ হতে থাকে আমি চাই সেটা দিনের আলোতে নিয়ে আসা। "
" বুঝতে পারছি গোয়েন্দাগিরির ভূতটা আবার তোর মাথায় চেপেছে। কিন্তু এসব করতে গিয়ে তুই যে কোনো বিপদে পড়তে পারিস্ সেটা বুঝতে পারছিস্ না? "
" Please আমার কথাটা একটু শোন। "
" আমার আর কিছু শোনার নেই শিনু। বড়ো জোর তোকে আমি বুদ্ধি দিতে পারি। এর বেশি কিছুর অধিকার আমার নেই। " এই বলে মহিত ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
রাতে খাওয়ার পর শিঞ্জিনী যখন বিদায় নেবে তখন অনুপমা দেবী মহিতকে বললেন-
" বাবান ওর সাথে একটু যা। শিনুকে বাড়ি অবদি এগিয়ে দিয়ে আয়। ১০ টা বেজে গেছে। "
শিঞ্জিনী সেটা বাধা দিয়ে বলে-
" না না কাকিমনি তার আর দরকার নেই। আমি চলে যেতে পারব। "
" না শিনু তা হয় না। এতো রাতে তোকে একা ছাড়ব না। "
এরপর তিনি মহিতের হাতে একটু ঠেলা দিয়ে বললেন-
" যা তো বাবান ওর সাথে। "
শিঞ্জিনী আর মহিতের বাড়ি হাঁটা পথের দূরত্বে। দুজনে হেঁটে চলে ধীর গতিতে পাড়ার ফাঁকা গলি গুলো দিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর মোহিতই প্রথম কথা শুরু করে।
" অর্জুন তাহলে বেশ caring। "
শিঞ্জিনী হালকা হেসে বলে-
" হ্যাঁ সে তো একটু আছেই। এখন তো আরও। "
এরপর দুজনের বেশ খানিক্ষণ চুপচাপ হেঁটে চলে। শিঞ্জিনী আবার বলল-
" তোর কি কাউকে এখনও পছন্দ হয়নি? "
" না রে। তোর মতো এতো fast চলতে পারি না। "
" তাহলে কি বলতে চাস্ আমি ভুল করেছি? "
" একদমই নয়। বলতে হয় তোর ভাগ্যটা ভালো। এমন একজন মানুষকে তুই কাছে পেয়েছিস্। তোর বাড়ি প্রায় চলেই এসেছে। এইটুকু তুই একা চলে যেতে পারবি। "
" হুমম্......ok। Good night। "
" Good night. "
ক্রমশ......
