অন্তরাল-চতুর্থ পর্ব
অন্তরাল-চতুর্থ পর্ব
বসন্তের বিকেলে যেন এক মায়া আছে। নরম রোদের আলো আর শির শির করে বয়ে চলা ঠাণ্ডা বাতাসের মিলনে মেতে ওঠে দুটো মন যৌবনের খেলায়। যে খেলায় মেতেছে শিঞ্জিনী আর অর্জুনও। তাদের বস্রহীণ শরীর দুটো কম্বলের নীচে এখন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে একে অপরকে। শিঞ্জিনীর দুর্বল শরীরে অর্জুনের ভালবাসার স্পর্শে তার মন এখন বেশ চনমনে। অন্তরের ভয়, আশঙ্কা, উদ্বেগ কোথায় যেন পালিয়ে গেছে। অর্জুন তার বুকের উপর রাখা শিঞ্জিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে নিয়ে বলছে-
" শিঞ্জিনী? "
" হুমম্। "
" তোকে এই ভাবে ভালবাসার অধিকার আমার সারাজীবন থাকবে তো? "
" তোর কি মনে হয়? "
" আমার মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় রে। "
শিঞ্জিনী ভ্রু কুঁচকে অর্জুনের দিকে তাকিয়ে বলে-
" কীসের ভয়? "
" এই তুই যদি আমায় ছেড়ে কোথাও চলে যাস্। "
শিঞ্জিনী অর্জুনের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে-
" একমাত্র মৃত্যু ছাড়া তোকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। "
" তাহলে যেন তোর সাথে আমিও চলে যেতে পারি। "
দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজে দুজনেই উঠে বসলো। শিঞ্জিনী জিজ্ঞেস করল-
" কে? "
দরজার বাইরে থেকে সরুজিনীর গলা শোনা গেল-
" দিদিভাই আমি। তোমরা খাবে না? দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল যে। "
একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে সময় কাটানোয় খাওয়ার কথা তাদের দুজনেরই খেয়াল ছিল না। তাদের মনে হচ্ছিল এই ভাবেই একে অপরকে জড়িয়ে থাকবে সারাজীবন। কেউ কোথাও যাবে না। শিঞ্জিনী বলল-
" হ্যাঁ আমারা যাচ্ছি। তুই খাবারটা রেডি কর। "
সরুজিনী শুধু আচ্ছা বলে সেখান থেকে চলে যায়। এরপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে নীচে নেমে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে এবং দুজনেই খাওয়ার সময় বুঝতে পারছিল সরুজিনী মাঝে মাঝে তাদের দিকে তাকিয়ে মিট্ মিট্ করে হাসছে। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারী ঘরের দরজা আটকে বেশ কিছুক্ষণ একান্তে সময় কাটানোর অর্থ সে খুব সহজেই বুঝতে পেরেছে।
গভীর রাতে এক অদ্ভুত গর গর আওয়াজে শিঞ্জিনীর ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখে বারান্দার জানালা দিয়ে একটা হালকা আলো ঘরে এসে ঢুকেছে এবং আওয়াজটা কোনো এক গাড়ির মনে হচ্ছে। সে ঘর থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে একটা জিপ গাড়ি বাড়ির সামনে বাগানের মধ্যে জেগে থাকা সুরকির পথটার উপর দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে একজন মাত্র লোক বসে আছে। শিঞ্জিনী লোকটার মুখ খুব বেশি ভালো ভাবে বুঝতে পারছে না। লোকটা গাড়ির হেড লাইট এখন নিভিয়ে দিয়েছে। এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে কেউ একজন বেড়িয়ে লোকটার সাথে কথা বলছে। বাগানে জ্বলতে থাকা হালকা আলোয় শিঞ্জিনী বুঝতে পারে বাড়ির ভেতর থেকে যে বেড়িয়ে এসেছে সে সরুজিনী ছাড়া আর কেউ নয়। শিঞ্জিনী চাইলে এখনি নীচে গিয়ে ব্যপারটা তদারকি করতে পারত। কিন্তু সে তার বদলে তাদের অলক্ষে সবটা স্বচক্ষে দেখে নেওয়াই শ্রেয় মনে করল। শিঞ্জিনী সাথে সাথে ঘর থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে এসে বারান্দার একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে নীচে সরুজিনী আর সেই লোকটার ভিডিও রেকর্ড করতে শুরু করে দিল। তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথোপকথন চলার পর লোকটা সরুজিনীর হাতে কিছু একটা দিল। সরুজিনী সেটা খুব সন্তর্পণে চুড়িদারের ওড়নার মধ্যে লুকিয়ে ফেলল। এরপরেই লোকটা গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিল হেড লাইট অফ্ রেখেই। সরুজিনীও দ্রুত বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। সেই সময় শিঞ্জিনী একটা ব্যপার লক্ষ্য করল। সরুজিনী যখন বাড়ির ভেতর ঢুকছে তখন দরজা খোলার পর ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসা আলোয় সরুজিনীর ছাঁয়ার সাথে আরও একজনের ছাঁয়াও দরজার বাইরে ফুটে উঠেছিল। শিঞ্জিনী ভিডিও রেকর্ডটা বন্ধ করে বারান্দার ইজি চেয়ারটায় বসলো। তার মনের মধ্যে এখন অজস্র প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হল টুকরো টুকরো ঘটনাগুলোর পেছনে আসল কারণটা কি?
ক্রমশ......।