STORYMIRROR

Arpita Pal

Romance Classics

4  

Arpita Pal

Romance Classics

অন্তরাল - দশম পর্ব

অন্তরাল - দশম পর্ব

3 mins
331

মানুষের মন যখন শূন্যতায় ভরে যায়, যখন এত বছরের যত্নে গরে ওঠা আবেগ-অনুভুতি গুলির পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়, যখন মুখ লুকিয়ে কাঁদার ইচ্ছেটুকু মরে যায়, তখন মানুষ ভেতর থেকে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। শিঞ্জিনীতো সরল ভাবে শুধু ভালোবেসে ছিল অর্জুনকে। তবে তার ভুলটা কোথায় ছিল? আচ্ছা......ভালোবাসার বাঁধনে কাউকে কি কখনও বেঁধে রাখা যায়? শিঞ্জিনীর ভালোবাসাটা ভুল ছিল না। ভুল ছিল ভালোবাসার মানুষটা। এই মুহূর্তে শিঞ্জিনীর হাতে ধরা রিভলভারের নলটা তার মাথার ঠিক বাঁ দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে আছে। ট্রিগারের উপর হাতের আঙুলের তর্জনীর চাপ আর একটু বেশি পড়লেই মাথার খুলি এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাবে। এখন তার ঘর্মাক্ত শরীরটা উত্তেজনায় কাঁপছে। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড। এরপরেই এই মিথ্যে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতিরে বিদায় নেবে সে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে একটা প্রশ্ন জেগে ওঠে। পৃথিবীর সব কিছুই কি মিথ্যে? সব মানুষগুলো কি সত্যিই মিথ্যে? এমন সময় শিঞ্জিনীর মনে পড়ে যায় তার মা-বাবার কথা। তাদের ভালোবাসার থেকে সত্য হয়তো আর কিছু হয় না। তারা কি দোষ করেছে যে এই ভাবে নিজের সন্তানকে হারিয়ে ফেলতে হবে? আর মহিতের মা? যিনি নাকি শিঞ্জিনীর মধ্যে নিজের মেয়েকে খুঁজে পায়। আর এদিকে মহিতের সাথে তার বন্ধুত্ব যেন যুগ-যুগান্তরের। এই মানুষগুলোতো মিথ্যে নয়। এরা তো কোনো দোষ করেনি। তাহলে কেন সে একটা মিথ্যে, কাপুরুষ, চরিত্রহীন মানুষের জন্য নিজের জীবনটাকে শেষ করে দেবে? কেন সে আপনজনদের এই ভাবে শাস্তি দেবে? শাস্তি যদি দিতেই হয় তাহলে সেটা অর্জুনকে দেওয়া উচিৎ। রিভলভারটা মাথার সামনে থেকে নামিয়ে সেটাকে আলমারিতে যথাস্থানে রেখে দেয়। এরপর ধীর পায়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে পড়ে। কাল থেকে এক নতুন ভোরের শুরু। যেই ভোরের আলো তাকে মিথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস জোগাবে। 


দুপুরের খাওয়া শেষ হতেই কলিং বেলটা বেজে উঠল। কোনরকমে হাত ধুয়ে অর্জুন দরজাটা খুলতেই যাকে দেখতে পেল তাতে সে একটু চমকে উঠল। আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে আগত ব্যক্তির হাতটা ধরে খুব দ্রুত ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।


তারপর অর্জুন ব্যস্তভাবে বলে উঠল-


 " কি হল সরুজিনী? তোমাকে না কতবার বলেছি যে এই ভাবে দিনের বেলায় আমার বাড়ি আসবে না। "


সরুজিনী এখন আর সেই সহজ সরল মেয়েটিী নেই। ওর মুখাবয়ব জুড়ে শুধুই রয়েছে শয়তানের কালো ছায়া। সে একটা প্যাকেট অর্জুনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-


 " এই মালটা আজ নতুন এসেছে। তাই ভাবলাম এর প্রথম ফাইলটা সবার আগে তোমাকে দিই। After all you are my ......"


কথাটা শেষ না করেই সরুজিনী অর্জুনের একদম কাছে গিয়ে গালে একটা চুমু দিল। এরপরেই অর্জুন ধাক্কা দিয়ে সরুজিনীকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে চাপা উত্তেজিত গলায় বলে উঠল-


 " কি হচ্ছেটা কি? কেউ দেখে ফেললে কি হবে? "


এই কথায় সরুজিনী একটু উচ্চ গলায় হেসে নিয়ে বলল-


 " কে দেখবে অর্জুন? যারা দেখার তারা তো এখন নেই। তোমার মা-বাবা যে এক সপ্তাহের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেড়িয়েছে এ কথা কিন্তু আমার অজানা নয়। "


 " কিন্তু তাই বলে......"


সরুজিনী এবার উত্তেজিত হয়ে অর্জুনের গায়ের জামাটা দু হাতে শক্ত করে চেপে ধরে বলল-


 " তাই বলে কি অর্জুন? বল তাই বলে কি? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ আমাদের মধ্যেকার সম্পর্কটা। তুমি শিঞ্জিনীর সাথে যখন তখন দেখা করতে পার। তাতে কোনো বাধা নেই। তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পার। কিন্তু আমি? আমি কি দোষ করলাম অর্জুন? ওর সাথে ভালোবাসার নাটক করতে বলেছিলাম। ভালোবাসতে বলিনি। "


 " কিন্তু তুমি যদি আমায় সত্যি ভালোবাসতে তাহলে আমাকে শিঞ্জিনীর সাথে ভালোবাসার নাটক করতে বলতে


না। "


 " আর তোমারও মনে রাখা উচিৎ কেন তোমায় এই নাটকটা করতে বলেছিলাম। আর সেই নাটক করতে গিয়ে ওর সাথে ঐদিন ঐভাবে তুমি......"


সরুজিনীর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। অর্জুন তাকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল-


 " আমি তোমায় কতবার বলেছি যে আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কতবার বলব? "


 " ছাড়ো আমায়। আর মিথ্যে নাটক করতে হবে না। "


সরুজিনী অর্জুনের থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতেই অর্জুন তাকে আরো শক্ত করে নিজের কাছে জড়িয়ে ধরে বলল-


 " আমার ভালোবাসা কখনই মিথ্যে ছিল না। আর আজও নয়। "


সরুজিনীকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দুজনেই এক গভীর চুমুতে ডুবে যেতে লাগল। সরুজিনীও আর কোনো বাধা দিল না। সেও যেন এতো দিন ধরে অপেক্ষায় ছিল এই দিনটারই জন্য।



ক্রমশ...... 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance