Ranu Sil

Fantasy

4  

Ranu Sil

Fantasy

আতস কাঁচ

আতস কাঁচ

10 mins
311


আতস_কাচ----১

শশাঙ্ক শেখর, হাঁটছিলেন রাসবিহারী এ‍্যাভিন‍্যু দিয়ে। এ‍্যাপোলো ফার্মেসি থেকে একটা ওষুধও কেনার ছিল, আর হাঁটাও হবে একটু,এমনিই উদ্দেশ‍্যহীন। হঠাৎই একজন লোক ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে একটু সচেতন হলেন। দেখলেন, রোগা, লম্বা,চেক শার্টের একটা লোক নির্বিকার ভাবে সামনে সামনে হাঁটছে। ধাক্কাটা ওই দিয়েছে সন্দেহ নেই। ভাবলেন, আশ্চর্য অভদ্র তো! লোকটার মাথার পিছনে যেন কোথা থেকে, একটা গোলাপী আলোর ফুটকি এসে পড়েছে। কী অদ্ভুত দেখাচ্ছে। যেন মাথার পিছনে চালচিত্তির।

লোকটা একবার মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসল। না না ! ঠোঁট একটুও নড়ল না। চোখদুটো হাসল। লোকটা যেন শুনে ফেলেছে, ওঁর কথা। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল। তারপর মনে হল, লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছেন। "কোথায় দেখেছেন... কোথায় দেখেছেন" ভাবতে ভাবতে হঠাৎই খেয়াল হল, গতরবিবার দেশপ্রিয় পার্কের একেবারে কোনার বেঞ্চে বসেছিল লোকটা। সেদিনও ওরকম মুচকি হেসেছিল।সারাটা পথে বারবার লোকটার কথা মনে পড়ছিল! কেন কে জানে !

বাড়ি ঢুকেই মেজাজটা বিগড়ে গেল। বাড়ি ভর্তি ধুপ-ধুনোর ধোঁয়া । বললেন,

--" শিবুদা ! তোকে বারণ করেছি না ! এতো ধুপ-ধুনো দিবি না।

শিবুদা এ বাড়ির সবকিছু দেখাশোনা করে, সেই কবে থেকে, বলল,

-- তোমায় বলে কী হবে! এ‍্যাঁ? কী হবে তোমায় বলে ? বাড়িতে অদ্ভুত সব কান্ড হচ্ছে!

-- আবার শুরু করলি শিবুদা !

-- আজ সন্ধ‍ে হয়ে গিয়েছিল। তোমার ঘরে আলো জ্বালাতে গিয়ে দেখি কতো আলো। তারপর দেখি স্টোর রুমের দরজার তলা দিয়ে আসছে । একটা হালকা গোলাপী উজ্জ্বল আলো। আমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পরে, কতক্ষণ জানিনা! নিভে গেল। তারপর বুঝলাম আমাদের বাড়ির আলো আর জ্বলছে না। আর সব বাড়ি, রাস্তার আলো জ্বলছে। আমি বাতি আনতে আসছিলাম। তখন জ্বলে উঠলো। এর আগে একদিন মনে হয়েছিল, কে যেন আমাদের বাড়িতে টর্চের আলো ফেলছে। আলোটা খুব উজ্জ্বল কিন্তু হালকা গোলাপী।

শশাঙ্ক মনে মনে খুব আশ্চর্য হলেও, মুখে বললেন,

-- হতে পারে কেউ আলো ফেলছিল। যখন অন্ধকার ছিল বাকি সব তো জ্বলছিল! কোথাও থেকে আলো আসতে পারে না ? এতে ধূপধুনো কী করবে ?

বলে বাথরুমে ঢুকে গেল।

বাঁ দিকের দেওয়ালে আলোর সুইচে হাত রাখতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো নীলচে আলো। এটা ওর একটা শখ। শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে জলের ধারায় সঁপে দিল নিজেকে। বন্ধ চোখের পাতার ওপর দিয়ে জলের ধারা অমৃত স্নানের অনুভূতি দেয়। চোখের সামনে, অন্ধকার জমাট বেঁধে একটা অবয়বের আকার নিল। একটা মুখ। ঠিক যেন ঐ লোকটা ! খাঁড়ার মত নাক, শক্ত চোয়াল, উজ্জ্বল চোখে হাসি। চওড়া কপালের বাঁপাশে একটা কালো আঁচিল। আশ্চর্য! আঁচিলটা তো আগে লক্ষ‍্য করেননি! আছে নাকি?

তক্ষুনি মনে পড়ে গেল, গতকাল তো বাথরুমের নীল বাল্বটা কেটে গিয়েছিল। শিবুদা লাগালো কি ? কিন্তু শিবুদার জানার কথা নয়। এ বাথরুমে ও ঢোকে না। তবে ? শীত করে উঠলো শশাঙ্কর। চোখ খুলবেন ? ধীরে চোখ খুললেন, বাথরুম সম্পূর্ণ অন্ধকার। দরজাটা হাতড়ে পাওয়া যায় না কেন ? কিছুক্ষণ থাকলেই যেন দম আটকে আসবে। একটা ফিসফিস শব্দ,--" আমার একা জিনিস..."

হঠাৎই দরজাটা পেয়ে গেলেন.....

ইচ্ছে করেই শিবুদাকে কিছু বললেন না। ভেবে রাখলেন, -- কাল লক্ষ্মণকে বলতে হবে, বাল্বটা পাল্টে দিতে --

অফিসে ঢোকার মুখে, "দ‍্য ওরিয়েন্টাল শিপিং কর্পোরেশন" সাইন বোর্ডটা রোজই চোখে পড়ে। আজ মনে হলো, বড়ো ম্লান হয়ে আছে। আগে মনে হয়নি। আবার সেই ক্লান্তিকর একটা দিন। চাকরিটা আর না করলেও চলে। কেমন একটা অনীহা কাজ করছে যেন।

রবিবার একটু আগেভাগেই পার্কে গেলেন। লোকটাকে যদি দেখা যায়। নাঃ, কোথাও নেই। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে যখন বেরোতে যাবেন, ঠিক তক্ষুনি দেখতে পেলেন, লোকটিকে। তারই দিকে তাকিয়ে হাসছে। ঠোঁটে নয় চোখে।

শশাঙ্ক এগিয়ে এসে বললেন,

-- ইয়ে! আমায় কিছু বলবেন ?

লোকটা সটান চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

-- পুরোনো গান ভালোবাসেন ?

-- হ‍্যাঁ... তা... তো...

বলেই মনে হলো, এ লোকটা কি করে জানলো ?

কথা বলতে গিয়ে তুতলে গেলেন,

-- আ...পনি কীকরে জানলেন ?

সেকথার উত্তর দিলনা ! বলল,

-- নজরুলের গান ভালোবাসেন ?

আমার কাছে "বানাত ইস্কান্দরিয়া"-র বহু পুরোন রেকর্ড আছে।

-- বলেন কী? সিরিয়ার লোক সঙ্গীত ?

ঘাড় নাড়ল লোকটা।

-- কবে দিচ্ছেন ?

আগ্রহী চোখে জিগ্যেস করলেন, শশাঙ্ক।

-- আপনার বাড়ি পৌঁছে যাবে।

উঠে পড়ল লোকটা।

শশাঙ্ক ভাবলেন, গুল মারছে না তো ?

লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে, হাসল।

-- আমরা মিথ‍্যে বলতে পারি না।

সোজা চলে গেল।

শশাঙ্ক খানিকটা হতভম্ব হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আজও লক্ষ‍্য করলেন, মাথার পিছনে একটা গোলাপী আলোর বিন্দু। যেন কেউ লেজার দিয়ে টার্গেট করেছে। কী ব‍্যাপার ? "আমরা" কারা ?

খেয়াল হলো, কী করে বাড়ি যাবে ? ঠিকানা, ফোন নম্বর কিছুই তো নিল না ! লোকটার নামও তো জানা হলনা।

শশাঙ্ক তাড়াতাড়ি বেরিয়ে কোথাও দেখতে পেলনা। ও 'ভাবনা' শুনতে পায় ? আশ্চর্য ! আশ্চর্য !

সেদিন বাড়ি ফিরে দেখল, শিবুদা স্টোর রুমটা খুলেছে। দুশো বছরের পুরোনো বাড়ির একটা গন্ধ থাকে। স্টোর রুমটা থেকে যেন ওটাই বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাড়িতে,

-- কী রে শিবুদা? কী হয়েছে?

-- রোজ রোজ আলো দেখি! কতোদিন যে খোলা হয়নি কে জানে। আজ লক্ষণ আলো লাগাতে এসেছিল। ওকে নিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। বাবার একটা কত সুন্দর চেয়ার। তোমার ঐ প্লাসটিক না কিসের যেন চেয়ার! বাদ দাও। এটাই ব‍্যবহার করো। ঘরে রেখেছি। বাব্বা! কী ভারী!

ওদের বাড়িটা সাবেক কালের। লম্বা লম্বা গরাদ লাগানো জানলা। বিশাল উঁচু ছাদ। এসব ঘরের অসুবিধে হলো, যতো আলোই থাক, কখনোই যথেষ্ট মনে হয়না। এর মধ‍্যে এ রকম একটা রাজকীয় চেয়ারই যেন মানায়। বড়োসড়ো কাঠের টেবিলের ওপর সাবেকী গ্রামাফোন। ঘরটার আভিজাত্য বেড়ে গেছে। মনে পড়ল, বাবা এই চেয়ারেই বসে থাকতেন। শেষ চারটে বছর আর মাথাটা কাজ করতো না। তবু এটা থেকে ওঠাতে গেলেই রেগে যেতেন। খুব তারা দেখার শখ ছিল, বাবার। ছোটো বেলায় শুনেছিল, ওঁর এক মামা নাকি জ‍্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন।

শশাঙ্কর খুব ইচ্ছে হলো, চেয়ারটা বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ওটায় বসে তারা দেখতে। তুলতে গিয়ে দেখল, প্রচন্ড ভারী। কী মনে হতে চেয়ারটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে একটা জিনিসে চোখ আটকে গেল। চেয়ারের বসার জায়গা থেকে পিঠ অবধি উচ্চতায় কিছু একটা গোলমাল আছে। সামনের থেকে পিঠের মাপ, দুফুট। পিছন থেকে দুফুট চার/পাঁচ ইঞ্চি। এই তফাৎটা কোথায় ? চেয়ারের তলায় পরীক্ষা করতেই, একটা ড্রয়ার চোখে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় একটা ছোট্টো সুইচ্ পেলো। ওটাতে চাপ দিতে ড্রয়ারটা খুলে গেল। একটা লাল ভেলভেট মোড়া ছোট্ট বাক্স চামড়া বাঁধানো ডায়রী আর এলবাম। ছোট্ট বাক্সটা থেকে যেটা বেরোল সেটা একটা কাচের কিউবের মতো দেখতে। গোলাপী, খুব স্বচ্ছ আর চকচকে। ওটা নিজের ড্রয়ারে চালান করে, শশাঙ্ক সন্ধে থেকে ঐ খাতাটা নিয়েই বসে আছে।

ওর বাবার লেখা ডায়রী। জ‍্যোতির্বিজ্ঞানী মামার প্রভাবে, গ্রহ তারার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন বাবা। মামা জার্মানি থেকে দেশে ফিরে কীসের যেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলন। বাবাকে খুব স্নেহ করতেন। ঐ চকচকে স্বচ্ছ বস্তুটি আসলে একটি আতস কাচ। কিন্তু ওটা একটা পাথর, যা অনেকটা চুনীর সাথে মেলে। পৃথিবীতে এ ধরনের কোনো বস্তু পাওয়া যায় না। ওটার দুটো দিক উত্তল-অবতল লেন্স আর দুটোদিক শক্তিশালী দূরবীণ। মামা নাকি ঐ দূরবীণ দিয়ে আলোর সংকেত পাঠিয়ে, কোনো গ্রহ থেকে সাড়াও পেয়েছিলেন। বাবাকে এই আতসকাচটি দেওয়ার পাঁচদিন পরে মামার আকস্মিক অন্তর্ধান হয়।

তারিখ বলছে শেষ লেখা হয়েছিল তেতাল্লিশ বছর আগে। বাবার মারা যাওয়ার তিন বছর আগে। তখন শশাঙ্ক তের বছর। তারপর অনেক পাতা ফাঁকা। একেবারে শেষ পাতায় কাঁপা কাঁপা অক্ষরে লেখা, " ওরা আসছে, প্রায়ই আসছে"। তারিখ বাবার মৃত‍্যু দিনের ।

শশাঙ্ক স্তম্ভিত বিষ্ময়ে বসে থাকেন। এতো বড় একটা জিনিস, অথচ কিচ্ছু জানতেন না ? কারা আসছিল? বাবার মাথাটা কী ঐ জন‍্যই?

শশাঙ্ক পাথরটা নিয়ে বারান্দায় এলেন। চোখে লাগিয়ে দেখলেন, লাইট পোস্টের ওপর একটা প‍্যাঁচা বসে আছে। সাদা আর খয়েরি ফুটকি।

বাঃ অত‍্যন্ত শক্তিশালী আতস কাচ। উল্টো দিকে ওর হাতটাও মনে হচ্ছে কতো ছোটো। পাশের দূরবীণে চোখ রাখতে, তারাগুলো বেশ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। একটু লক্ষ‍্য করতে বহু আলোর বিন্দু চোখে পড়ল। একটা টর্চ এনে ওটার মধ‍্যে দিয়ে, আলো ফেলতেই, অনেকগুলো আলোর রেখা তৈরি করলো। আর সেটা চলে গেল অন্ধকার আকাশে।

অনেক ধুমকেতু অনেক নক্ষত্র, তার কিছু আবার চলমান। দেখতে দেখতে শশাঙ্ক মোহিত হয়ে যায়। আর কিছুতে মন দিতে পারেন না।

শিবুদা কিন্তু খুশি। আর কোনোও অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে না। শশাঙ্কও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছে। ঠিকঠাক খেয়ে নিচ্ছে। সব নিয়ম করে চলছে। কোনোও সমস‍্যা নেই।

দুদিন পরের ঘটনা,

সেদিন আবহাওয়া খারাপ ছিল। আকাশ অন্ধকার। সব কেমন ঝাপসা।দুপুরের দিকে ডোরবেলটা বেজে উঠলো। শিবুদা "এখন আবার কে এলো!" বলতে বলতে দরজা খুলতে গেল।

-- তোমাকে কে যেন ডাকচে....

শশাঙ্ক নিচে নেমে দেখল, সেই লোক। লোকটা এতোটা লম্বা আগে বোঝেনি। হাতে একটা চৌকো বাক্স। ভাবল, কীকরে ঠিকানা জানল ! বলল,

-- আসুন!

লোকটি একটু তাকিয়ে বলল,

-- খুঁজে নিলাম। আপনার এক কোলিগের সাথে আলাপ আছে।

আবার থট রিডিং?

হাঃহাঃহাঃ করে হেসে উঠলো লোকটা। বলল,

-- ঠিক ধরেছেন।

এরপর শশাঙ্কর হাসা ছাড়া আর গতি নেই।

এতক্ষণে লোকটাকে ভালো করে দেখার সুযোগ হলো। বলিষ্ঠ চেহারা। ছ ফুটের ওপর লম্বা। বাঁ ভ্রুর ওপর একটা বড় তিল। সবচেয়ে অদ্ভুত হলো, ওর চোখদুটো আর গায়ের লোম সোনালি।

শশাঙ্ক ভাবল, শিবুদাকে চা আনতে বলা উচিৎ। উঠে দাঁড়াতেই, লোকটা হাত তুলে বলল,

-- না, তার দরকার হবে না।

হতভম্ব হয়ে বসে পড়ল শশাঙ্ক। এ লোকটার কাছে তো কথা বলা, না না! ভাবাই মুশকিল।

লোকটা আবারও হাসল। বলল,

-- আপনি তো খারাপ কিছু ভাবছেন না। এটা তো স্বাভাবিক। তবে, একটা জিনিস নিয়ে রেখেছেন, যেটা আপনার নয়। এটা ঠিক নয়।

-- মানে?

-- ওটা আপনার জিনিস নয়। গলাটা হঠাৎ পাল্টে গেছে, ঘ‍্যাসঘ‍্যাসে গলায় বলল লোকটা।

-- কোন... মানে কোনটা?

হঠাৎ লোকটা বাঁহাতটা উল্টে ঘড়ি দেখল। চটকরে উঠে বলল,

-- আজ আসি। সময় হয়ে গেছে। আমি আসব আবার।

একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকালো। বুকটা যেন কেঁপে উঠল। আজও চলে যাওয়ার সময় মাথার পিছনে সেই গোলাপী আলোর বিন্দু। কোন জিনিসের কথা বলল? মাথার মধ‍্যে বিদ‍্যুৎ খেলে গেল। ঐ জিনিসটা কী? ও সেটাও জানে? আতঙ্ক গ্রাস করল যেন শশাঙ্ককে। যাঃ! আজও নামটা জানা হলনা।

শিবুদা কেমন মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়ালো।

---- কি হল রে শিবুদা?

---- এ লোকটাকে আমি দেখেছি। কদিন ধরেই দেখছি যখন তখন রাস্তার ও দিকে দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়ির দিকে চেয়ে থাকে। এ কে?

এই খবরটা শশাঙ্কর কাছে নতুন। লোকটা একদম সুবিধের লাগছে না। পুলিশে বলে রাখা ভালো। বিশেষত সবকিছু জানছে কীকরে? নাঃ লোকটাকে নজরে রাখতে হবে। ক'দিন অফিস ছুটি নিতে হবে।

রাতে শোওয়ার আগে বারান্দায় গিয়ে বসলেন। আজ আর ঐ পাথরটা নিতে ইচ্ছে করল না। ওটা লকারে আছে।খালি চোখেই আকাশে তাকালেন। তারা নেই কেন? সেদিনের বাথরুমের কথা মনে পড়ল। মনটা বড্ড দুর্বল হয়ে পড়ছে।

কীযেন একটা উড়ছে। বেশ বড়ো। প‍্যাঁচা নাকি? সামনের চায়ের দোকানে একটা ছেলে থাকে। খুব সুন্দর বাঁশি বাজায়। আজ বাজাচ্ছে না। কোথাও গেছে বোধহয়। একেবারে ফাঁকা পথঘাট। চাঁদ উঠেছে। অস্পষ্ট জ‍্যোৎস্নায় ঢাকা চারিদিক। একটা লোক বেরিয়ে এলো ডানদিকের মোড় থেকে। হেঁটে এসে দাঁড়ালো, শশাঙ্কর ব‍্যালকনির সোজাসুজি চায়ের দোকানের শেডের তলায়। ওপরের অংশটা দেখা যাচ্ছেনা। একভাবে দাঁড়িয়ে রইল। আশ্চর্য! এতো রাতে কে?

*******

আতস_কাচ---২

"আপনি কিন্তু কাজটা ঠিক করছেন না। যা আপনার নয়, তা নিজের কাছে রেখে দেওয়া ঠিক নয়"--- ঘ‍্যাসঘ‍্যাসে গলাটা কানে যেতেই ঘুমটা ভেঙে গেল। ধড়মড় করে উঠে বসলেন শশাঙ্ক।

সেই মুখটা আবার এসেছে স্বপ্নের মধ‍্যে। কী আশ্চর্য! লোকটা কে? নিশ্চয়ই কিছু একটা রহস‍্য আছে। খুবই চিন্তার কথা। তার পারিবারিক কথা জানবে কী করে? এই "আমরা" ই বা কারা ?

কে দাঁড়িয়েছিল!

ঘড়ি দেখল,রাত পৌনে তিনটে। ভোরের এখনো দেরি। এলবামটা হাতে নিয়ে, বসল। পাতা ওল্টাতে লাগল।বাবা-মা, কাকা ছাড়া আর বিশেষ কাউকে চেনেন না। ঐ জন‍্যই খুব আগ্রহ ছিল না এটা দেখার। একটা ছবিতে এসে চোখ আটকে গেল।

--- অবিকল ঐ মুখ! কীকরে সম্ভব! আমাদের এলবামে কীকরে? তাও বাবার সাথে।

থরথর করে কাঁপন ধরছে ভেতরে। কে লোকটা? যেন কোন দিগন্তের ওপার থেকে এ যুগে এসে পড়েছে! ঐ পাথরের সাথে কোনোও সম্পর্ক আছে? নিশ্চয়ই আছে। কেন বলছিল? "ওটা আপনার নয়?"

********

বেশ বেলায় শিবুদার ডাকে ঘুম ভাঙলো।

---- শরীর খারাপ নাকি? ওঠোনি কেন? এই নাও চা।

কিছু ভালো লাগছেনা শশাঙ্কর। শিবুদাকে ডেকে দেখালেন,

-- দেখ তো শিবুদা ! চিনিস?

শিবুদা অনেক্ষণ দেখে মাথা নেড়ে বলল,

-- তাই চেনা চেনা লাগছিল। আমি তখন ছোট। ইনি কোথায় যেন থাকতেন। আমাকে একটা বিদেশী গরমজামা দিয়েছিলেন।

শশাঙ্ক বিদ‍্যুৎপৃষ্টের মতো উঠে দাঁড়াল। ব‍্যস আর বলতে হবেনা। কিন্তু তিনি তো ! বিন্দুবিন্দু ঘাম ফুটে উঠলো কপালে।

সারাদিন আজ ডায়রিটা পড়ে ফেলেছে শশাঙ্ক। কোথাও আর কিছু লেখা নেই। "আমরা" শব্দটা বলে দিচ্ছে, উনি এ পৃথিবীর মানুষ নন। এবার একটু একটু করে সব পরিষ্কার হচ্ছে। মাথার পিছনের গোলাপী আলোটা কোথাও থেকে পড়েনি। ওটা ওখান থেকেই বেরোচ্ছিল। উনি অন্তর্ধান করেছিলেন। মারা তো যাননি। অন‍্য গ্রহের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল। পাথরটা নিশ্চয়ই এ পৃথিবীর নয় ! বাবা ফেরৎ দিতে চাননি। তাই "ওরা" প্রায়ই আসছিল....

নাঃ! শশাঙ্ক উন্মাদ হয়ে বাঁচতে চায়না।

রাত তখন এগারটা প্রায়। ব‍্যলকনির সামনে দিয়ে, কিছু একটা উড়ে গেল। কালকের মতোই বন্ধ চায়ের দোকানে কেউ এসে দাঁড়াল। আজ রাস্তা পেরিয়ে ওর বাড়ির দিকে এগোচ্ছে সে..., এবার ডোরবেলটা বাজছে। শশাঙ্ক জানেন, কে এসেছেন।

পাথরটা বার করে রাখলেন টেবিলে। চেঁচিয়ে বললেন,

-- শিবুদা! দরজাটা খুলে দে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy