Atrayee Sarkar

Comedy

3  

Atrayee Sarkar

Comedy

আত্মার ইচ্ছে

আত্মার ইচ্ছে

4 mins
361


দেখছিস দাদা.......... কিভাবে লুচি, আলুর দম, চাটনি খাচ্ছে । আর আমরা কোথায় বসে আছি । আর বসা যায় না দাদা.........চল এবার ।

-- " ঠিক ই বলেছিস ছোট । চল.......মজা দেখাচ্ছি।"

দিলীপ বড়ুয়া.... আর মহেশ বড়ুয়া দুই ভাই ছিলেন।

 ওনাদের একান্নবর্তি পরিবার ছিল । দিলীপবাবু বড়ো ভাই ছিলেন.......... আর মহেশবাবু ছোটভাই।

  দুই জন ভাইয়েরই ছেলে ছিল । সন্তান মানে তাদের ছেলে অন্ত প্রাণ ছিল ।

  ছেলেরাও তাদের বাবাকে খুবই ভালোবাসত ।

যতদিন বাবা, মা বেঁচে ছিলেন অনেক সেবা করেছে।

২ জন ছেলের বিয়ে হয়ে গিয়ে সন্তানও হয়ে গেছে ।

কিছুদিন আগেই, প্রথমে মহেশবাবু, তারপর দিলীপবাবু অনেক কষ্টে মারা যান।

সেদিন দিলীপবাবুর ছেলে অচিন্ত্য বড়ুয়া..... আর ওনার স্ত্রী , সুস্মিতা........ খিচুড়ি রান্না করেছিলেন,

আর মহেশবাবুর ছেলে, অনিমেষ.... আর ওনার স্ত্রী মিতালি..... লুচি, আলুর দম রান্না করেছিলেন খাবে বলে ।

বড়ো ছেলে ওপর ঘরে থাকতো.......... আর ছোট ছেলে নীচের ঘরে ।

সেদিন রাতে dinner করতে ওনারা দুই পরিবারই বসেছিল । হঠাত্ দেখে একবার আলো জ্বলছে একবার বন্ধ হচ্ছে । তারপর একদমই লোডশেডিং।

২ জনেই দেখছে বাইরে আলো জ্বলছে ওদের বাড়িতে আলো নেই ।

মিতালি ভুরু কুঁচকে বল্ল --" কি গো.... ফিউস উরে গেল নাকি??"

অনিমেষের অদ্ভুত লাগছিল । বল্ল -- " হমম তাই তো ভাবছি , fuse উরে গেল কিনা ।"

অচিন্ত্য -- " আর ভেবে কাজ নেই.....

চল সি.এস.সি কে ফোন করি।"

  তারপর............ দিলীপবাবু, আর মহেশবাবু কে দেখে দুই পরিবার থরথর করে কাঁপছিল ।

অনিমেষ কাঁপতে কাঁপতে বলছিল -- " বা... বা.. তুমি ।"

-- " কি অবস্থারে তোর..........বাবা কথা দেখছি উচ্চারণ করতেই ১০০ ঘন্টা লাগছে । যা গিয়ে আবার অ, আ, ক, খ , শিখে আয়।"

অনিমেষ -- " বাবা তুমি এখানে?" অনিমেষ প্রায় পুরো ভয়ে কাঁপছে ।

-- " হ্যা । এসেছি । আনন্দের সাথে খাচ্ছিস কিন্তু বাবার একটু সেবা করতে পারলিনা?? অসুস্থতায় মরতে হলো ?"

-- " তোমায় তো হাসপাতালে ঢুকিয়েছিলাম বাবা ।"

অনিমেষ খুবই ভিত ।

-- " ওই হাসপাতালেই যা ঢুকিয়েছিলিস.... তারপর অতিকেষ্ট ১বার করে দেখতে যেতিস ।"

-- " বাবা ওটা তো করোনা রোগ, বেশি কাছে গেলে তো আমার হয়ে যেতো.......... তাহলে আমার পরিবারকে কে দেখত?" অনিমেষ কাঁদো কাঁদো গলায় বলছে ।

-- " আসলে করোনা নয় , বাবা এবার তুমি মরোনা, আমি আর পারছিনা । সোজা সাপটা বল। "

তারপর হঠাত্ অচিন্ত্যর মেয়ে........ বলতে বলতে চোলে আসে -- " ছোট ঠাকুরদা, তুমি "

-- " হ্যারে মনা,, কেমন আছিস? তোকে দেখে কি ভালো লাগছে । আমার দাদুভাইটা কোথায়?"

নিজের নাতনিকে দেখে দিলীপবাবুর মুখে হাসি ফুটে ওঠে -- " ওরে আমার ছোট দাদুভাইটা কোকথায়??"

অনিমেষের ছেলে তখন দৌড়ে এসে বলে -- " এই তো আমি বড়ো ঠাকুরদা ।"

সুস্মিতা-- " সর্বনাশ!......... মিতালি তুই বাচ্ছা দুটোকে নিয়ে ভেতরে যা , আমি এখানটা দেখছি ।"

দিলীপবাবু -- " থাক থাক বউমা । তোমার কি মনে হয় আমরা ওদের ঘাড় মটকে খাব? ওদের আজও হৃদয় দিয়েই ভালোবাসি।"

 মানলাম করোনা......তা বলে তোরা শশানে দূর থেকেও একটু দেখতে গেলিনা?"

অচিন্ত্য ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলছে -- " বাবা তোমাকে তো ভালো হাসপাতালে ঢুকিয়েছিলাম । তারপর তুমি ventilation এ চলে গেছিলে । তারপর আর..........

অচিন্ত্যর কথা শেষ না হতেই দিলীপবাবু বলে ওঠেন -- " তারপর আর কি বাবা তুমি এখন ventilation এ চলে গেছ....... এবার আমায় ছাড় না ।"

অচিন্ত্য ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলছে -- " বাবা তাহলে এখন আমরা কি করব???"

-- " খিচুড়ি খাচ্ছিস... আমার ছবিটার সামনে একটু দিতে পারলিনা?? জানিসই তো....... আমি খিচুড়ি, বাঁধাকপির তরকারি আর চাটনি দিয়ে খেতাম।"

মহেশবাবু -- " না দাদা........ ওদের আর কি মনে থাকবে। আমরা এখন চলে গেছি ....এখন অনেক শান্তিতে আছে ।"

-- " যা বলেছিস ছোট ।"

অনিমেষ -- " বাবা তুমি কি চাও??"

মহেশবাবু -- " অতো কাঁপছিস কেন? আত্মা হলেও এতো বাজে নই যে নিজেদের সন্তানকেই মারব ।

পেট ভরে লুচি খাচ্ছিস...আমার ছবির সামনে ৮টা লুচি, আলুর দম, মিষ্টি রাখতে পারলিনা???"

মিতালি -- " এক্ষুণি রেখে দিচ্ছি বাবা ।"

অচিন্ত্য -- " সুস্মিতা তুমিও একটু খিচুড়ি রেখে দাও না ।"

সুস্মিতা-- " হ্যা যাচ্ছি । "

তারাতারি করে দুই বউ করে দিল সব।

দিলীপবাবু -- " আহা! কতো মাস পরে একটু ভালো ভাবে খেলাম বল ছোট ।"

-- " যা বলেছিস দাদা।"

দিলীপবাবু-- " শেওরা গাছে আর কতো দিন দুলব? কালকে মহালয়া... তোরা কাল গঙ্গায় গিয়ে তর্পণ করে আসিস, তাহলে আমাদের আত্মার একটু শান্তি হবে। আর যখনই খাবি একটু দিয়ে খাবি"

অচিন্ত্য -- " হ্যা বাবা কালই তর্পণ করে আসব ।"

মহেশবাবু-- " আসছি এবার আমরা ।"

অনিমেষ-- " হ্যা বাবা ।"

ওনারা ২জন চলে যেতেই ঘরে আবারও আলো জ্বলে ওঠে । পুরো পরিবার যেন হাঁফ ছেড়ে বসল ।

সুস্মিতা-- " তুমি কালই তর্পণ করে আসবে । তোমাদের জন্য আমাদের কি অবস্থা । কিভাবে দৌড়ে সব করতে হলো ।"

মিতালি -- " সত্যি দিদি কি হলো ।"

   পরের দিন অচিন্ত্য আর অনিমেষ দুজনেই গিয়ে

তর্পণ করে এলো ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy