Subhra Roy

Action Inspirational

4.1  

Subhra Roy

Action Inspirational

আমার দুর্গা

আমার দুর্গা

7 mins
287



---' মা ' , দুর্গা ঠাকুর অসুরকে কেন মারে ? '

---' অসুর 'দুষ্টু লোক তাই মারে । '

----' মা ' , ত্রিশূল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারে কেন ? বন্দুক দিয়ে তো মারতে পারতো ? '

--- ' তাতান ' তখনকার দিনে বন্দুক আবিষ্কার হয়নি তাই ত্রিশূল দিয়ে মা দুর্গা অসুর বধ করে ছিলেন । আর তোমাকে কে বলেছে ত্রিশূল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে ? মা দুর্গা ত্রিশূলটা নিয়ে অসুরের বুকের উপর গেঁথে দিয়েছেন , তাতেই অসুর মারা যায় । '

---' না , তুমি ভুল বলছো, আমি সব প্যান্ডেলেই দেখেছি দুর্গামা ত্রিশূলটা অসুরের বুকে খুঁচিয়ে ধরে আছে , আর ওয়ান ড্রপ ব্লাড বেরিয়ে এসেছে । '

তাতানের যুক্তি শুনে চিত্রা কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে , বলে উঠলো---- ' তাতান ' অনেকক্ষণ ধরে বক বক করছো তুমি ,এবার ঘুমাও তুমি । কাল দশমী , প্যান্ডেলে গিয়ে হাতে অপরাজিতা লতা পরতে হবে না কি ? দেরী করে গেলে কিছুই পাবে না । '

--- ' তোমাকে একটু কিছু কোয়েশ্চন করলেই তুমি ঘুমাতে বলো , কেন বলো ? ভাল্লাগে না । ' যদিও বা তাতান বালিশে মাথা রেখে শুয়ে ছিল , এবার সে গাল ফুলিয়ে উঠে বসলো।

চিত্রা চোখ বড় বড় করে বকতে যাবে তখুনি শুভ্র তাদের দিকে পাশ ফিরে শুলো । চিত্রা তাই একটু সংযত হয়ে বললো ---- আর কি প্রশ্ন আছে শুনি ? '

ফাস্ট কোয়েশ্চন -- ' তুমি তখনকার দিনে বল্লে কেন ? দুর্গামা তো ওল্ড লেডী  নয় ! '

সেকেন্ড কোয়েশ্চন -- ' আমি স্কূলে মারপিট করলে তোমরা আমাকে বকো , আমাকে বলো -- ' তোমার ক্লাস মেট যতই দুষ্টুমি করুক তুমি মারপিট করবে না । আর দুর্গা মা অসুরের সাথে মারপিট করছে এইরকম  আইডল তোমরা সবাই কেন পূজো কর ? '

দুটো মোক্ষম প্রশ্ন বানে চিত্রা একেবারেই ধরাশায়ী । সে একবার শুভ্রর দিকে আর একবার তাতানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-- ' দুটোর উত্তর তোমার বাবা ভাল জানে । তোমার বাবা বলে দেবে তোমায় । '

শুভ্র এতক্ষণ চোখ পিট পিট করে মুচকি মুচকি হাসছিল । এবার চিত্রা তাতানকে তার দিকে পাঠিয়ে দিতেই , শুভ্র ঢোক গিলে বলো -- ' চিত্রা তুমি এটা ঠিক করলে না । '

শুভ্র নিরুপায় হয়ে তাতানকে শুয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে মা দুর্গার গল্প গাথা শোনাতে শুরু করলো ।

পরের দিনই দশমী । আজ ও তাতান সকাল সকাল স্নান সেরে ফেলেছে । চিত্রা তাতানকে জামা পরাচ্ছে । এমন সময় তাতান হটাৎ তার মাকে প্রশ্ন করলো -- ' মা , তোমাকে যদি দুষ্টু লোক এ্যাটাক করে তখন তুমি কি দিয়ে মারবে ? বন্দুক না ত্রিশূল ? '

শুভ্র তখনও বিছানা ছাড়েনি , শুয়ে শুয়ে পা নাড়ছিল । তাতানের প্রশ্ন শুনে তাতানকে বললো --- ' ওরে তোর মার দশভূজের দরকার পড়ে না , তোর মার দুইহাত ই যথেষ্ট । ক্যারাটে তে ব্ল্যাক বেল্ট । দু দুবার স্টেট চ্যাম্পিয়ন । আমাদের বাড়িতে না আসলে ন্যাশানাল লেবেলে খেলতে পারতো রে । '

তাতান চোখ বড় বড় করে বললো ---- ' তাই মা ? ' চিত্রা গম্ভীর মুখে খালি বললো --- ' হুঁ । '

ক্যারাটে নিয়ে কোন কথা উঠলে চিত্রা কেমন উদাস হয়ে যায় । বড় প্রিয় শখ ছিল তার । শুভ্রকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল বলে শাশুড়ীমার সব শর্ত মেনে নিয়ে ছিল সে । তার মধ্যে ক্যারাটে প্র্যাক্টিস বন্ধ হলো অন্যতম । শাশুড়ীমার বক্তব্য ----- ' বাড়ির বৌকে এই সব করা মানায় না ' । ব্যাঙ্ক এর চাকরীতেও বাঁধা দিয়ে ছিলেন , অনেক কষ্টে তাকে রাজি করানো হয়েছে । তাই চাকরীটা বজায় আছে।

দশমী এলেই মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । আর কয়েক ঘণ্টার পর সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলেই বিষন্নতার সুর আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াবে । আজ দত্ত বাড়ির সবার নিমন্ত্রণ বড় মেয়ের নতুন শ্বশুর বাড়িতে । তাই তারা সবাই দুপুর থেকে তৈরী হচ্ছে বারাসাতে মেয়ের বাড়ি যাবে বলে । শুভ্রজিত , চিত্রা ,তাতান , প্রিয়াঙ্কা (শুভ্রর বোন) , পল্লবীদেবী ( শুভ্রর মা ), অশোকবাবু ( শুভ্রর বাবা ) সবাই মিলে রহনা দিলেন তাদের নতুন স্কোর্পিউ করে ।

বারাসাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে চারটে বেজে গেল । যেতেই শুরু হয়ে গেল আপ্যায়ন । হাসি ঠাট্টা, হই হুল্লোড় আড্ডা , খাওয়া দাওয়া । কখন যে সময় প্রায় সাড়ে এগারোটা ছুঁই ছুঁই কেউ যেন টের পেল না । যখন হুঁশ হলো তখন পৌনে বারটা বাজে । পরেরদিন সকালেই শুভ্রর চিত্রার অফিস রয়েছে , তাই বাড়ি যে করেই হোক ফিরতে হবে । অশোকবাবু তাড়া লাগিয়ে সবাই কে গাড়িতে তুললেন । বাগুইয়াটি ফিরতে ফিরতে রাত দেড়টা বেজে যাবে মনে হয় । চারিদিকে তখন বিসর্জন দিয়ে ফেরার পালা রাস্তা সব ব্লক । প্রিয়াঙ্কা তাতান গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছে । ফেরার সময় ড্রাইভার শেখরকে আবার বি .ডি কলেজের কাছে ছেড়ে আসতে হলো কারন সে বাড়ি ফেরার পথে ওতো রাত্রে আর কোন অটো পাবে না । তাই এখন শুভ্র গাড়ি ড্রাইভ করছে । যশোররোড বিসর্জনের জন্য ভীষণ জ্যাম । তাই বাধ্য হলো মেন রোড ছেড়ে ভিতরের ঘুর পথে বাড়ি পৌঁছাতে । ভিতরের রাস্তাতে এই পূজোতেও কিছু কিছু জায়গাতে লাইট নেই । শুভ্র সাবধানে বাঁক ঘুরতে যাবে হটাৎ চাকা ফাটার বিকট শব্দ হলো । শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে মোবাইলের আলোতে দেখলো সামনের ডানদিকের চাকাটা বাস্ট করেছে । রাস্তায় বোতলের কাঁচ ভাঙ্গা পড়ে আছে , মনে হয় সেই কাঁচে ফেটেছে । রাত তখন প্রায় দেড়টা ।

শুভ্র তার বাবাকে বললো ---- ''বাবা ' সামনের চাকাটা কাঁচে ফেটেছে । সারা রাস্তা কাঁচ পড়ে আছে । এতো রাতে এই অন্ধকারে আমি কি করে চাকা পাল্টাবো ? তোমরা গাড়ি থেকে সাবধানে নেমে এসো । এখান থেকে বাড়ি হাঁটা পথে পঁচিশ তিরিশ মিনিট হবে । তোমরা হাঁটতে থাকো আমি গাড়িটা সেভ জায়গায় পার্ক করে আসছি ।

অশোক বাবু ঘুমে কাতর তাতানকে কোলে তুলে নিয়ে সবাই কে বললেন --- ' আমি জায়গাটা মোটামুটি চিনি তোমরা আমার পিছু পিছু এসো ' ।

মিনিট পাঁচেক বাদে ওরা একটা বাজারের মতো জায়গায় এলো । দোকানপাট সব বন্ধ , রাস্তায় কুকুর ছাড়া আর কেউ নেই । কিন্তু ওদের ভাবনা ভুল । চার পাঁচটা ছায়া মুর্তি হটাৎ তাদেরকে ঘিরে দাঁড়ালো-- গায়ে অসম্ভব মদের কটু গন্ধ ---- ' কি দাদা , এই মাঝ রাতে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছেন '? ওরে , সঙ্গে সুন্দরীও রয়েছে রে ! ওরে বাবা ! দুগ্গামা দেখছি আমাদের জন্য প্রেসাদ পাঠিয়েছেন ' .... বলেই লোকটা প্রিয়াঙ্কার হাতটা টান মেরে ধরলো ।

--- ' চলো সুন্দরী আমি তোমাকে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাব । '

--' এই তোমরা করছো কি ? ছাড়ো , আমার মেয়ের হাত , ছাড়ো বলছি ' ?--- অশোক বাবু হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন ।

আরেক জন অশোক বাবুর কোল থেকে তাতানকে কেড়ে নিয়ে বললো ------- ' এই বুড়ো চোপ , একদম চেল্লাবি না , তাহলে বাচ্চাটাকে আছড়ে মেরে ফেলবো ' ।

এবার চিত্রা আর চুপ থাকলো না পল্লবীদেবীকে আড়াল করে মুহূর্তের মধ্যে পরনের লাল জামদানিকে মালকোচা মারা ধুতি শাড়ী করে ফেললো ( সে এটা ট্রেনিংয়ে শিখে ছিল )

---' এই বাচ্চাটাকে ছেড়ে দে । ওর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোর সব কটা দাঁত ভেঙ্গে ফেলবো । মেয়েটার হাতও ছেড়ে দে বলছি ' ...চিত্রা গর্জে উঠেই সজোরে এক কিক লোকটার গলা বরাবর , যে তাতানকে ছিনিয়ে নিয়ে ছিল । এক কিক কে লোকটা মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়লো । অমনি অশোক বাবু তাতানকে কোলে তুলে নিলেন । চিত্রা সটান লাফ মেরে প্রিয়াঙ্কার কাছে , দুই হাতে দুটো রদ্দা কষিয়ে দিল লোকটার দুই কাঁধে , প্রিয়াঙ্কার হাত ছেড়ে দিয়ে লোকটা অসম্ভব যন্ত্রনায় মাটিতে বসে পড়লো ।

--- ' প্রিয়াঙ্কা ' , দৌড়ে দাদাকে ডাকতে যাও, পুলিশে ফোন করো , লোক জোগাড় করো , আমি এদের দেখছি ' ...... চিত্রা চিতকার করে বললো ।

প্রিয়াঙ্কা হাত ছাড়া পেয়েই পিছন দিকে দৌড়াতে শুরু করলো । তিনজন লোক তখন চিত্রাকে ঘিরে ধরেছে। চিত্রা ক্যারাটের মোক্ষম প্যাচের নমুনা দিতে শুরু করলো ওদের ।

--- ' মা , দুষ্টু লোকদের খুব করে মারো ' ..... তাতান তার দাদুর কোল থেকে চিৎকার করে উঠলো ।সেই শুনে চিত্রা আরো ক্ষিপ্র বাঘিনী হয়ে উঠলো ।------' এবার মার কাকে বলে আমি তোদের দেখাবো ' .....বলেই লোক গুলোকে এলো পাথাড়ি ক্যারাটের মোক্ষম কিক মারতে শুরু করলো চিত্রা । তাতানকে নিয়ে অশোক বাবু ও পল্লবীদেবী অনেকটা সাইডে সরে গেলেন । মিনিট পাঁচেকের ভিতর চিত্রা দুজনকে রক্তাত্ব করে মাটিতে শুয়ে দিল । আরেক জন কয়েক ঘা খেয়ে , নিজেকে বাঁচিয়ে দোকান ঘর গুলোর পিছনে অন্ধকারে পালিয়ে গেল ।

ততক্ষণে শুভ্র প্রিয়াঙ্কা আর ও দুজন লোক ছুটতে ছুটতে চলে এসেছে । ওরাই লোকাল থানায় খবর দিয়েছে । এসে দ্যাখে চার জন মাটিতে পড়ে আছে । মিনিট সাতেকের ভিতর  পুলিশের জিপ এসে হাজির । চার জনকে জিপে তুলে নিয়ে থানায় রহনা দিল । একজন পুলিশ ওদের বললেন ------ ' আপনারাও থানায় চলুন , একটা ডায়রী করতে হবে , না হলে আমরা চার্জ গঠন করতে পারবো না । ' ফোন করে ওদের জন্য একটা গাড়ীর ব্যবস্থা করা হলো ।

থানায় পৌঁছাতেই অফিসার ওদের বসতে দিয়ে বললেন ----- ' লোক গুলো ওই অঞ্চলের তোলাবাজ মস্তান , ইভটিজিং- এ সিদ্ধ হস্ত । মাঝের মধ্যেই জেল খাটে , আবার বেরিয়ে এসে কুকীর্তি করে । এবার অনেক কটা কেস দিয়ে ওদের জেলে পাঠাবো । আর যেটা পালিয়েছে তাকেও কাল সকালেই তুলে আনছি'।

" বাই দ্যা ওয়ে , একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছিনা , আমাদের লোক ওখানে পৌঁছানোর আগেই চার চারটা লোককে কে ওই ভাবে বেধড়ক মার মারলো ? দুটোর তো মনে হয় হাতই ভেঙ্গে গেছে । কে করলো বলুনতো ? '

পল্লবীদেবী তখন স্বগর্বে বলে উঠলেন -----'আমার দুর্গা । '

--- ' মানে ? '

--- ' হ্যাঁ ,' অফিসার '  মা ঠিকই বলেছেন ------ ' আমার দুর্গা । আমার স্ত্রী ' চিত্রা ' । আমার দুর্গা অবলা নয় । কারোর নখে হয় না ক্ষত । পাল্টা জবাব দিতে জানে সে । ওর এক কথা একবার কেউ যদি গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করে , তখনই সে দশটা মারে তাকে মাটিতে শুয়ে দেবে '  .......শুভ্র গর্বের সাথে বললো।

তাতান তখন দাদুর কোল থেকে ঝট করে নেমে এসে চিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো ------ ' দুর্গা মাইকি জয় । '


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action