Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Manasi Ganguli

Horror Tragedy

3  

Manasi Ganguli

Horror Tragedy

আজও রক্ত ঝরে

আজও রক্ত ঝরে

3 mins
370



   ঘটনা সর্বদাই ঘটে,ঘটে চলেছে,দুর্ঘটনা কদাচ,যদিও বর্তমানে দুর্ঘটনার মাত্রাও বড় কম নয়। দুর্ঘটনার সাক্ষী হওয়াটা বড় কষ্টের,না হতে পারাটাই সুখের। তবুও কখনও পাকে চক্রে কাউকে হতে হয় দুর্ঘটনার সাক্ষী। যার দুর্ঘটনা ঘটে তার চেয়েও বোধহয় যার সামনে ঘটে তার পক্ষে আরো হানিকর। যার ঘটে সে শারীরিক ভাবে আহত বা মৃত হয় আর যার চোখের সামনে ঘটে সে আজীবন প্রতিদিন মরে,চোখ বুজলেই সে দৃশ্য তাকে তাড়া করে বেড়ায়।

   বর্তমানে মানুষ বোধহয় একটু বেশি নির্দয় হয়ে পড়েছে,হয়তো বা তারা বাস্তববাদী,তাই সব কিছুকেই দেখে সহজ চোখে,২০-২৫ বছর আগেও যেটা ছিল না। মানুষ পরের জন্য কাতর হত অনেক বেশী,কষ্ট পেত অনেক বেশী। হয়তো এটাই ঠিক,এটাই ভাল,সেটা অবশ্য বিতর্ক সাপেক্ষ। চারিদিকে হানাহানি,খুনোখুনি দেখতে দেখতে মৃত্যু মানুষকে এখন আর ততটা নাড়া দেয় না। এ যেন সেই "জন্মিলে মরিতে হবে,অমর কে কোথা রবে"। অতএব,এ তো সাধারণ ব্যাপার।


    ৪০ বছর আগের এক দুর্ঘটনার সাক্ষী ছিল আরো অনেকে,সাথে আমিও। কলেজ থেকে ফিরলাম বাসে করে সন্ধ্যে ৭.৩০ কি ৮টা হবে,ইভনিং কলেজ। বাসে দেখা মলয়ের সাথে,বলল নতুন চাকরী পেয়েছে। বেশ খুশী খুশী লাগল ওকে। চিরকাল অভাবে কাটিয়ে একটু সুখের মুখ দেখবে কিনা।


    মলয় আমার নীলুকাকা(বাবার বন্ধু,আমার সেতারের শিক্ষক)র ছেলে। নীলুকাকা খুব গুণী লোক ছিলেন,১৩টা মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে পারতেন।আমাদের ভাই-বোনেদের প্রাথমিক গান-বাজনার শিক্ষা ও চর্চা ওনার হাত ধরেই। কেউ গান,কেউ এস্রাজ, কেউ তবলা,আমি ও আমার ছোটভাই সেতার। নীলুকাকা আমাদের খুব প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন যদিও এত গুণী একজন মানুষ কোনোদিন স্বীকৃতি পেলেন না আর তাই সারাজীবনই তাঁর কাটে অর্থাভাবে। এই মলয় ওনার একই মাত্র ছেলে,সবে একমাস চাকরী পেয়েছে।


    মলয়কে নীলুকাকা সঙ্গে করে আমাদের বাড়ী নিয়ে আসতেন,উদ্দেশ্য একসাথে বাজনা শেখানো,যদি কিছু শেখাতে পারেন সঙ্গীত বিমুখ ছেলেটাকে।কিন্তু না,অমন গুণী মানুষের ছেলে হয়েও মলয়ের গান বাজনা শেখায় কোনো আগ্রহ ছিল না,আর তাই হলও না।


   বাস আমাদের স্টপে থামলে আমি নামলাম,মলয় আমার পিছনেই ছিল,ওরও নামার কথা কারণ আমাদের পাড়ার উল্টো দিকের পাড়াতেই ওদের বাড়ী। সন্ধ্যে হয়ে গেছে বলে বাস থেকে নেমে জোরেই পা চালিয়েছি, হঠাৎই একটা জোর মড়মড় শব্দ শুনে বেদম চমকে পিছন ফিরে তাকাই,বাস সাঁ সাঁ করে বেরিয়ে গেল দেখলাম। সবাই হৈ হৈ করছে,চিৎকার, চেঁচামেচি জি.টি রোড ধরে,বাসস্টপের সামনে রোয়াকে যে ছেলেরা বসে ছিল তারা সব উঠে রাস্তায় ঝুঁকে। কি হল বুঝতে পারছি না। পায়ে পায়ে এগিয়ে ভিড়ের কাছে গেলাম,ফাঁক দিয়ে দেখি,মলয়ের প্রাণহীন দেহটা পড়ে আছে আর মাথাটা থেঁতো হয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। আমি দু'হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরলাম,"মা গো"। বুক ঠেলে হাউ হাউ করে কান্না উঠে এল। দেখা যায় না সে দৃশ্য। মাথাটা ঘুরে চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম,পড়ে যাবার উপক্রম হতে একটা দোকানের রোয়াকে বসে পড়লাম।


   আস্তে আস্তে সম্বিত ফিরে পেতে শুনলাম,মলয় বাস থেকে আমার পিছন পিছন নামতে না নামতেই বাসটা দারুণ স্পিড তুলে দিয়েছিল পিছনে অন্য বাস আসছে বলে। মলয় তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় রাস্তায় আর বাসের পিছনের চাকায় ওর মাথাটা মড়মড় শব্দে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। যেহেতু পিছনের চাকায় কেউ আহত বা মৃত হলে বাস ড্রাইভারের বা বাসের মালিকের কোনো দায় থাকে না তাই এক্ষেত্রে বাস বেকসুর খালাস। একবাস যাত্রী নিয়ে বাস চলে গেল ছুটে অন্য বাসের সাথে কম্পিটিশন করতে করতে।


   সেখানে যারা ছিল তারা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক,কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হসপিটাল নিয়ে যাবার কোনো ব্যাপার নেই শেষ তো হয়েই গেছে আর নিয়ে যাওয়াও অসম্ভব ব্যাপার।

    আমার নীলুকাকার বুঝি একটু আর্থিক সুখের মুখ দেখার আশা ছিল ছেলের রোজগারে,তার বদলে আজীবন পুত্রশোক তাকে বুকে লালন করে চলতে হল।

   আর আমি?যখনতখন চোখ বুজলেই মলয়ের সেই থেঁতো মাথার চেহারা দেখি আর ভিতরে ভিতরে ক্ষতবিক্ষত হই। ৪০ বছর আগের কথা কিন্তু আজও বুকের মাঝে রক্ত ঝরে অহরহ। 



Rate this content
Log in

More bengali story from Manasi Ganguli

Similar bengali story from Horror