হ্যাপি টিচার্স ডে
হ্যাপি টিচার্স ডে
ছোট্ট সুমি বাবাকে বলল, আমাকে একটা ভালো পেন এনে দেবে, রঙিন কাগজে মোড়া।
বাবা বললেন, কি করবি পেন দিয়ে?
কাল টিচাস্ ডে না, স্যারকে গিফ্ট দেবো।
বাবা তখন মুচকি হেসে বললেন, তোর স্যারকে কি গিফ্ট দিলে সবথেকে বেশি খুশি হবেন জানিস?
বিস্ফারিত দু চোখে, কৌতূহল ভরা চাহনি মাখিয়ে, সুমি বলে, কি বাবা, কি?
তুই যদি এবারের পরীক্ষায়, ফার্স্ট হতে পারিস, সেটাই হবে স্যারের, সবথেকে ভালো গিফ্ট।
গভীর চিন্তার অতলে ডুবে যেতে থাকে সুমি।
গত পরীক্ষায় মাত্র কটা নম্বরের জন্য ও সেকেন্ড হয়েছে, হারাতে পারেনি রিমা কে।
বোকার মতো ওয়াই টা জেড এর পরে লিখেছিল, কিউ এর লেজ দেয়নি, আর ওয়ান এর পিছনে ভুল করে চারটে জিরো দিয়ে ফেলেছিল হান্ড্রেড লিখতে গিয়ে।
না, এই ভুলগুলো আর করা যাবে না, তাহলেই ও হয়ে যাবে ফার্স্ট।
পরেরদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাবা ফিরে আসল, কিন্তু স্যার তো এখনো এলো না।
ধৈর্য্যের বাঁধ আর মানতে চায় না, এ বিলম্ব।
সুমি ছুটে গিয়ে বাবাকে বলে, স্যার কই?
বাবা থমথমে মুখে বলেন, তোর স্যারের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, হসপিটালে ভর্তি, অনেকদিন আসতে পারবেন না।
মনটা বড় মুষড়ে পড়ে সুমির, সারাদিনের উৎকন্ঠা পরিনত হয় একরাশ হতাশায়।
বাবার আনা রঙিন কাগজে মোড়া ভালো পেনটা, তুলে রাখে শোকেসে, অতি সযত্নে।
দেখতে দেখতে সুমির পরীক্ষাও হয়ে যায় শেষ।
এবার আর কোন ভুল করেনি সে, ওয়াইটা লিখেছে জেডের আগে, কিউ এরও দিয়েছে লেজ।
তবে এবার হান্ড্রেড নয় এসেছিল থাউজেন্ড, ওয়ানের পিঠে তিনটে জিরো বসাতে, সুমির একবারও কাঁপেনি পেন।
সবই ওর ছিল মনে, কিচ্ছুটি যায়নি ভুলে।
সত্যিই সুমি এবার ফার্স্ট হয়েছে, রিমা কে দিয়েছে হারিয়ে।
স্যারের জন্য সবথেকে ভালো গিফ্ট টা, ও আনতে পেরেছে।
সুমি আজ বেজায় খুশি, বাবার হাত ধরে এসেছে স্যারের বাড়ি।
জীর্ণ শয্যায় মিশে আছে স্যারের শীর্ণ শরীর।
যন্ত্রনা ক্লিষ্ট মুখাবয়ব, সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ বাঁধা ক্ষতের ভিড়।
বাবার, স্যারেকে রেজাল্ট দেখানো হলে, সুমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে, স্যারের পাশে, মাথার কাছে রাখে, রঙিন কাগজে মোড়া ভালো কলমটি, আর তার অসংলগ্ন উচ্চারণে বলে, ‘হ্যাপি টিচাস্ ডে।‘
সুমি তার বাবার হাত ধরে চলে যাচ্ছে।
সেই যাত্রা পথের দিকে তাকিয়ে আছেন, স্যার, দুচোখে তার অশ্রুর বৃষ্টি।
এভাবে ছাত্র ছাত্রীর মনের মাঝে, মিশে যেতেই, বুঝি শিক্ষকের সৃষ্টি।
-----000-----