পরিযায়ী
পরিযায়ী
মা! এবার একটু কোলে নিবি আমায়!
সকাল থেকে হাঁটছি রে যে মেলা,
পা দুটো যে চলছে না রে আর -
শরীরেও দেখছি ধরেছে ভীষণ জ্বালা।
তুই ভোরের বেলা যে বিস্কুটখানা হাতে ধরিয়েছিলি -
ওটা তো কখন ফুরিয়ে গেছে বল!
খিদের চোটে কাঁদছে পেটটা আবার -
খাবার আছে আর? - না থাকলে দে নাহয় একটু জল!
তুই যে মা তবে বলেছিলি -
একটু গেলেই গাড়ি আসবে নিতে!
গাড়িটার বোধহয় অসুখ হয়েছে বুঝলি,
থাক গে ছাড়! - বাবাকে বল বরঞ্চ একটা চটি কিনে দিতে।
মাটির গরমে পায়ে কেমন ফোস্কা পড়েছে দেখ!
অভিযোগ কি তবু করেছি আমি কিছু?
তখন তো খুব আশা দিয়েছিলি তুই
তবে এখন তোর মাথাটা কেন নিচু?
বলেছিলি তুই সেদিন আমায় ইস্কুলেতে যাব!
বড় হয়ে - মানুষ হয়ে - পেট ভরে ভাত খাব!
মা তুই বড় মিথ্যেবাদী - স্বপ্ন দেখাস কতো,
আমার কি আর কপাল আছে - ওই রাজার ছেলের মত?
আচ্ছা মা! এই যে এরা, যারা হাঁটছে আমার সাথে,
এরাও কি যাবে অনেক দূরে - হাঁটবে দিনে রাতে?
এদেরও কি মা তাড়া করেছে করোনা নামের ভূতটা!
এদেরও কি পকেট খালি নাকি - জোটেনি এদেরও সুখটা?
মারিস নে মা! বাড়াবো না কথা - চল যেতেই হবে বাড়ি,
তবে বল দেখি তুই - এই ছোট দুটো পায়ে - কতটা হাঁটতে পারি?
ঘুমটাও চোখে আসছে জড়িয়ে - দেখছি সবই কালো!
বল না রে মা আর কতটা হাঁটলে থাকব একটু ভালো?
একবার কোলে নে না মা রে - একবার আদর কর!
একবার সেই গানটা শোনা - একবার জড়িয়ে ধর!
চোখের জলটা শেষবার তুই - তোর আঁচলে মুছিয়ে দে,
ফিরতেই হবে বাড়ি তোকে মা - তুই আমার প্রাণের শক্তি নে।
ফিরতেই হবে বাড়ি তোকে মা - তুই আমার প্রাণের শক্তি নে।