বিশুর কারখানা
বিশুর কারখানা


কারখানা আছে বিশুর একটা - বিশু স্বপ্ন তৈরী করে,
হাসির সাথে খুশি মিশিয়ে বোতলে বোতলে ভরে,
তারপর তাতে মনের ইচ্ছে বেশটি করে মিশিয়ে-
ভালোবাসার মোড়কে পাকায়
আর চোখে চোখে বিলি করে।
খদ্দের অবিশ্যি সবই ক্ষুদে তার - ইচ্ছেও তাদের ভিন্ন,
তাই কাজও করতে হয় খুবই মেপেবুঝে - গ্রাহক না হয় ক্ষুন্ন!
কেউ খুশি হয় পুতুল খেলায় - কেউ বা বাঘের পিঠে চড়ে,
তবে কাজটা কিন্তু বিশু ভালোবেসেই করে -
তাই পারিশ্রমিকও তার শূন্য।
স্বপ্ন বিলির এমনই একটা গভীর ব্যস্ত রাতে,
ক্লান্ত রূপাই বিশু রাক্ষসকে ধরে নিলো হাতেনাতে,
ভয় পেয়ে শেষে বিশু রাক্ষস কি করবে ভেবে না পেয়ে-
স্বপ্ন রাখার ঝোলায় - রুপাইকে ভরে নিয়ে গেল সাথে।
অবাক রুপাই তো বুঝেই পায় না - ব্যাপারখানা কি!
এমন আজব লোকও তো সে আগে দেখেনি! উড়তে পারে - ছুটতে পারে হাওয়ার চেয়েও জোরে,
শুধু দেয় না সাড়া হাজার ডাকে আর - নামটাও বলেনি।
বাড়ি পৌঁছলো বিশু যখন, তখন ভোর হচ্ছে সবে,
ঘুমাচ্ছে রূপাই, কিন্তু তাকে তো এখনি একটা স্বপ্ন বুনতে হবে,
খেয়ালের বশে রুপাইকে সে তুলে এনেছে ঠিকই-
কিন্তু বাকি রাক্ষসরা দেখে নিলে ওকে - বাঁচানো কি আর যাবে?
ছেলে ছিল যে বিশুরও একটা - রুপাইয়ের মতই হবে,
রক্ত, স্বার্থ, মাংসের লোভ তাকে টানতো না কো সেভাবে,
চেয়েছিল সে শুধু স্বপ্ন খুঁজতে রামধনুর রঙে রাঙা,
আর নিষেধ যত বায়না গুলো - আগলে রেখেছিল মনে নীরবে।
খবরটা ছড়াতেই একঘরে হতে হলো -
সে যে আস্ত কুলাঙ্গার! রাক্ষসকূলের নিয়ম মানে না -
এমন সাধ্যি তার! বাবা হয়েও ছেলের ইচ্ছেটা বোঝেনি
সেদিন বিশু- কিন্তু ছেলেটা যখন চিরঘুমে গেলো - পাশে রইলো না যে কেউ আর।
বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছেলেটার, আজও রাখা আছে ঘরে,
সেইটাকেই যে আজ দরকার বিশুর - নইলে রুপাইয়ের মনে বাঁচার ইচ্ছে - জাগাবে কেমন করে?
মরতে চাওয়ার আগের ক্লান্তি বিশু চেনে যে ভীষণ রকম- এভাবেই যদি তার ছেলেটা তাকে - কোনোদিনও ক্ষমা করে।