STORYMIRROR

Pritam Banerjee

Horror

5.0  

Pritam Banerjee

Horror

স্বপ্নের রাত

স্বপ্নের রাত

3 mins
840


"অবশেষে তাহলে গোছগাছটা কমপ্লিট হলো"-

নতুন ফ্ল্যাটে সোফায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে মালিনী,

মালিনী - অনিমেষের স্ত্রী - সুন্দরী, সুশিক্ষিতা, স্মার্ট, মিষ্টভাষী মেয়েটার অহংকার বলে কিছু নেই,

স্বামী হুইলচেয়ারে বন্দী, প্রায় প্রতি রাতেই ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে - তবু কোন অভিযোগ নেই,

বছর দুয়েক আগে যখন অনিমেষের গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট হয়- তখন কাকতালীয় ভাবেই সেখানে গিয়ে পৌঁছায় মালিনী,

বাল্যবন্ধু মিতাকে সে বাঁচাতে পারেনি - কিন্তু তার একনিষ্ঠ সেবায় বেঁচে ওঠে অনিমেষ,

মা বাপ মরা অনিমেষ‌ও আর মালিনী কে ছাড়তে পারেনি,

আর মালিনীও নিজের ভালোবাসাটাকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি।


হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে যায় মালিনীর - চকিতে অনিমেষের দিকে তাকায় সে,

অনিমেষ ঘুমাচ্ছে - মোবাইলটা খুঁজতে থাকে মালিনী, কিন্তু কোথায় যে রেখেছে! -

এদিকে দরজার ওপাশ থেকে গোঙানির আওয়াজটা ক্রমাগত আসছে,

বেড ল্যাম্পটা জ্বালাতে যায় মালিনী - জ্বলে না,

অন্ধকারে আলোর সুইচগুলো ঠিকমতো ঠাহর করতে পারে না সে,

তবু অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতেই এগোতে থাকে,

পিছনে ওটা কার গলা! অনিমেষের না! কিসের যেন একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ আসছে!

আর! আর! ওটা কি? কে যেন বীভৎস গলায় হাসছে!


সেই ছোটবেলা থেকেই অনিমেষকে চেনে মালিনী - বছর দুয়েকের বড় ওর থেকে,

সায়েন্সটা সে ওর কাছেই পড়েছে - মনে মনে খুব ভালোবেসেও ফেলেছিল,

কিন্তু অনিমেষ ভালবাসত মিতাকে - বিয়ের কথাও পাকা হয়ে যায় অ্যাক্সিডেন্টের মাস তিনেক আগেই,

কিন্তু পুরো পৃথিবীটাই যেন এক লহমায় বদলে যায় ওদের,

মিতাকে নিয়েই অনিমেষের বাইকটা গিয়ে ধাক্কা মারে বনমালীতলার ঐ কালবেদীতে,

ঠিক ওই সময়ে টিউশন পড়িয়ে ফিরছিল মালিনী - ছুটে গিয়েছিল,

মিতার নিথর দেহটা মালিনী আজও ভুলতে পারেনা,

আর অনিমেষের সে কাতর আর্তি - আজও মালিনীর পিছু ছাড়ে না।


চোখ মেলে চায় মালিনী - অনিমেষের কাতর চাউনিটা এখনো যেন চোখের সামনে ভাসছে,

গোঙানিটা এখনও আসছে - তবে এটা যে অনিমেষের সেটা বোঝাই যাচ্ছে,

শরীরের বাকি শক্তিটুকু সঞ্চয় করে কোন রকমে উঠে দাঁড়ায় মালিনী,

দেয়াল ধরে এগোতে এগোতে খুঁজেও পেয়ে যায় সুইচগুলো,

"অনিমেষ! অনিমেষ কোথায় তুমি?" দরজাটাও তো ভিতর থেকেই বন্ধ!

আর তারপরই চমকে ওঠে মালিনী!

<

p>শীতের রাতে অনিমেষ কেমন সিলিং বেয়ে ঝুলছে!

আর বিনা হাওয়াতেই পাতার মতন এদিক ওদিক দুলছে।


"তাহলে কি গুরুদেব মিতাই..?" -

প্রধান গুরু প্রথমানন্দকে প্রশ্নটা করেই ফেলে মালিনী,

"না! না! না! - মিতা নয়, মিতা নয়, মিতা ওকে বাঁচিয়েছে এযাত্রা-

তবে আর পারবে না, এই আত্মা ওর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।"

মালিনী কে জিজ্ঞেস করে দুর্ঘটনার জায়গাটা জেনে নেন গুরুদেব-

আর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে থাকেন,

"কালবেদীতে কাল পিশাচের আত্মা গোনানো ছিল,

রক্ত পেলেই জেগে উঠবে এমন‌ই লিখন ছিল"।


গুরুদেবের কথামতো ঘুমিয়ে পড়েছে মালিনী - খুঁজে তাকে পেতে হবেই মিতাকে,

গুরুদেবের কথা সত্যি হলে ওর কাছেই পাওয়া যাবে কাল পিশাচের হাত থেকে মুক্তির উপায়,

ঐতো! ঐতো! সাদা ধোয়ার মত কি যেন একটা ভেসে আসছে,

"মিতা! এটা কি তুই বোন? তোর সাহায্য যে আজ আমার বড় দরকার!"

না! এই গোঙানির আওয়াজ তো তার খুব চেনা,

এক্ষুনি পালাতে হবে মালিনী কে - নাহলে স্বপ্নসমাধি হলো বলে,

ছুটছে! মালিনী ছুটছে! অন্ধকারে ছোট ছোট ঐ আলোগুলো তাকে পথ দেখাচ্ছে -

এদিকে বাইরে চোখের জল মুছলেন গুরুদেব - এইটুকু মেয়েটা যে তাকে বেঁচে থাকার নতুন মানে শেখাচ্ছে।


শে্ষরক্ষা হবে কিনা জানেনা মালিনী,

তবু হাল সে ছাড়বে না - অনিমেষকে বাঁচাতেই হবে তাকে - ওই যে তার সব,

কালবেদীর পাথরটা তাকে ভাঙতেই হবে - কে যেন মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে কথাটা,

একবার পিছন ফিরে তাকায় সে - আলোগুলো এক এক করে নিভছে,

মানেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার - গতি বাড়ায় মালিনী,

ওই তো কালবেদী - কিন্তু ওটা কে দাঁড়িয়ে? কাল পিশাচ!

তাহলে কি সব শেষ! উপায় কী নেই কিছু আর?

এত লড়েও মালিনীকে কী তবে মানতেই হবে হার?


ঐ তো মিতা! মুখে কেমন হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে,

ঐ তো মিতা! একহাতে সেই আলো আর একহাতে শাবল নিয়ে দাঁড়িয়ে,

"মিতা তুই এসেছিস বোন - কতদিন বাদে দেখলুম,

একটা সুযোগ দিলি না রে বোন - ঠিক‌ই তোকে বাঁচাতুম!"

ঠিক তখনই কানের পাশে গোঙানি ভীষণ রকম,

চোখ বন্ধ করে শাবল তোলে মালিনী - হাতে সময় যে ভীষণ কম!

"মালিনী!" - অনিমেষের ডাকে চোখ মেলে তাকায় সে,

অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকে - মিতা যে তাকে এখনো ভালোবাসে।


সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Horror