প্রলয়
প্রলয়
দমকা হাওয়ায় থমকে গেল কলমের গতি।
কবিতার খাতা হতে চায় প্রাণ খোলা বাতাসে মাতোয়ারা।
মোমবাতির ক্ষীণ শিখা টি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে হারতে নারাজ।
জানলায় তাকিয়ে দেখি অবিচ্ছেদ্য নিকষ তমসা,
যা মনে করায় বনলতা সেনের কেশ রাশি।
সহসা ভয়ে মুখ লুকিয়েছে আকাশের তারাগুলি,
আর অমাবস্যায় শশীর সন্ধান তো বৃথা অঙ্গীকার।
নদীর পাড়ে আমার কুঁড়েঘর,
ঝড়ের গতিতে সর্বনাশী নদীর ঢেউ, হাতছানি দেয় মোর গৃহটিকে,
সেও ঝড়ের কঠিন বাহুডোরে নিজেকে করে সমর্পণ, হতে চায় ছন্নছাড়া।
আজ প্রকৃতি মেতেছে সৃষ্টি বিনাশের লীলায়,
আমি একাকী মনুষ্য দাঁড়িয়ে রয়েছি গগন তলে,
জানিনা কিবা ভূমিকা আমার এ প্রলয় আনন্দে।
মেঘেরা তীব্র দৃষ্টির রেখা টেনে, সরবে ভাগ করে নিচ্ছে মহাশূন্যের অংশ, একাধিক অংশীদারের সাথে।
বৃক্ষ গুলি মাথা নুইয়ে সমাপ্তির মিনতি করছে, এ ভীষণ বিবাদের।
কেউ বা মাথা তুলছে, কারও শিরদাঁড়া দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে ঝড়ের উন্মাদ নৃত্যে।
ইতিমধ্যে প্রবল বারিধারায় নদীর উন্মত্ততা হয়েছে দ্বিগুণ।
সে তার সর্বগ্রাসী ছোবলে তৈরি করছে বিরাট ধ্বস।
ঝড়কে ভ্রুকুটি করে বলছে, তুমি ভেঙ্গেছো শিরদাঁড়া, আমি সৃষ্টির গাঁটছড়া ছিন্ন করে নিয়ে চললাম অজানার পথে, অসহায় ক্ষমাপ্রার্থী মহিরুহ কে।
আমার আলয় আজি মহা সংকটে।
কার প্রতি করবে আত্মসমর্পণ?
ঝড়ের ভালোবাসা প্রবল কঠিন, তাকে নিঃশেষ করবে উন্মত্তের মতো আছড়ে।
নদী তাকে নিয়ে যাবে অজানার পথে হারিয়ে ফেলতে,
তবু কঠিন বন্ধনে জড়িয়ে রাখবে আপন বক্ষে।
তাই নদীই শ্রেয়।
আমার ছোট্ট ঘরটি, এ প্রলয় সংকটে নির্দ্বিধায় যদি রাখতে পারে জীবন বাজি,
আমি পারব না কেন?
আমিও তো তাকে ভালোবাসি।
তাই পরবর্তী ঢেউ ভাঙ্গা তীরের অংশে, উন্মাদিনী প্রকৃতির নিকট,
আমিও এক অসহায় ক্ষমাপ্রার্থী।
