বেকার ছেলে কয়
বেকার ছেলে কয়
স্মরজিৎ দত্ত
বাবা সামান্য কেরানি,
মা গৃহবধূ;
ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে সবে,
কলেজে ভর্তি হবে ইচ্ছে তার।
তবে সমস্যা ঘরে,
যদিও মায়ের ইচ্ছা ছেলের সাথে সায়;
বাবা বলেন অনেক হয়েছে
এবার লাগো কাজে,
আমার বয়স ছয় এর কোঠায় আজ।
ছেলে ভাবে শিক্ষিত হব
তবু দিশা পায়না ভেবে
টিউশনি ও জোটে একটি
বন্ধু তাকে বলে, আমি দিলাম এই নম্বর
কথা বলে দেখিস ;
ওদের লাগবে এক শিক্ষক।
হঠাৎ ছেলের স্বপ্ন জাগে মনে
টিউশনি করেই চালিয়ে যাবে সে
পড়াশোনার যতটা ইচ্ছে করে।
সারারাত ঘুমোয়না সে
কখন হবে ভোর!
সেই সকালে ফোন করে তার
শুরু হবে নতুন জীবন।
দ্বিধা নিয়েই ফোন করে সে
অপর পাড়ে এক মহিলা,
তার ছেলেকেই পড়াতে হবে
তাই লাগবে শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা।
মিষ্ট গলায় পরিচিতি দেয়
শিক্ষিত ওই ছেলে।
ওপার থেকে ভারী গলায় মা
জিজ্ঞাসা করেন তুমি কি এম.এ?
আকাশ ভাঙ্গে মাথার ওপর
কুল পায় না ছেলে।
তবুও সে জিজ্ঞাসিল তাকে
ছেলে পড়ে কোন ক্লাসে?
ওপার থেকে ভারী গলায় বলে মা
আমার ছেলে যাতেই পড়ুক সে,
শিক্ষক আমার এ.মে.এই চাই
অন্যথা চলবে না যে।
ডুকরে ওঠে ছেলের বুক
বাস্তবটাকে ভেবে।
এমএ পাস করা ছেলে মেয়ে এখন
ডোমের চাকরির খোঁজে।
কাজেতে কোন নেই ছোট-বড়
সবই সমান তাই।
তবু মনে প্রশ্ন জাগে
কষ্ট করে এত পড়া
কি দরকার ভাই।
শিক্ষিত ছেলে মেয়ের দল
আজ পথে ঘুরে বেড়ায়;
নেতার ছেলে কিংবা প্রভাব
যদি কারো জোটে;
যেমন শিক্ষা থাকনা কেন
তার চাকরিই জোটে।
দুঃখ নিয়ে ঘরে ফেরে
মার কাছে কয় কেঁদে।
মাগো, বাবার কষ্ট কেমনে মেটাবো
খুঁজে পাই না যে।
রাতভর সেই ছেলে কাঁদে
খোঁজে ভিন্ন দিশা;
ভোরের আকাশে সূর্য ওঠার আগে
চিরকুটে সে লেখে,
বাবা, তোমার তিনটে পেটের খরচ
যদি একটাও কমে,
একটু তোমার বাজবে পয়সা
সঞ্চয় তো হবে!
গ্রামের সকাল আগে হয়
মা লেগে যায় কাজে।
কাজের ফাঁকেই হাঁক দেয় সে
ছেলের নাম ধরে।
তবুও কেন দেয় না সারা
মা ওঠে যে আঁতকে!
হঠাৎই সে ছুটে যায়
ছেলের ঘরের পানে।
ঘরও আছে ছেলেও আছে
কেবল একটু ফারাক,
ছেলে আজ বিছানাতে নেই
ঝুলছে ঘরের চালে।
এমন করেই কত ছেলে,কত মেয়ে,
যায় গো চলে দিনে দিনে।
ঘুচবে কবে এমন জ্বালা?
শিক্ষিতেরা শিক্ষা নেবে,
সমাজ করবে শক্ত।
জানি, এ কথা হাস্যকর,
নয় বাস্তব সম্মত।
তবু কেন রোখ না আজ,
শিক্ষিতের দল?
গুটিকয় না হয় দেবো প্রাণ,
তবু পরিবর্তন প্রয়োজন।