STORYMIRROR

যুবক অনার্য

Tragedy

4  

যুবক অনার্য

Tragedy

তাহসান বলছে মিথিলাকে

তাহসান বলছে মিথিলাকে

4 mins
227

প্রতিদিন প্রতিটিক্ষণ তোমার কথাই মনে পড়ে যায়।ভুলে যাই- এখন যেনো আমার কী করবার

 কথা ছিলো! এমনও হয়েছিলো একদিন- স্নান অর্ধেক সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।change হতে গিয়ে লক্ষ্য করে নিজেই

 হেসে ফেলি-' দ্যাখো কী কাণ্ড- এই,শুনছো!' পরক্ষণেই মনে পড়ে- শোনার মতো তো কেউ নেই।তাহলে কাকে ডাকছি আমি! এভাবে এরকম

 ভুল বার বার হয়ে যায়।প্রায়শ ঘুম থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে থেকেই বলি- এই পাগলি,

শুনতে পাচ্ছো,আমার বেড টি কোথায়!

 তুমি হয়তো তখোন রান্নাঘরে- ভাবি।

আসলে তখোন রান্নাঘরে কেউ নেই।


আমার এ ঘরের সবকিছুতেই তোমার ছোঁয়া। সবকিছুই আমি কী মিহিন আর মায়াবীভাবে

ছুঁয়ে দিই- তোমার স্পর্শের ঘ্রাণ পাই অবিকল আগের মতন।কিন্তু এরকম কিছুই

 তোমার হবার কথা নয়,হবেও না।

কীভাবে হবে বলো!আমাদের বাংলাদেশিরা তো চিরদিনই বিদেশি প্রোডাক্টের প্রতি মোহমুগ্ধ। 

মনে করে- বিদেশিদের সবকিছুই অন্যরকম।এমনকি ওদের... ও মনে হয় খুব টেস্টি হবে!

 তুমি থাকো এখন ওরকম বিদেশি প্রাসাদে।চাকচিক্যময় সমস্ত অনুষঙ্গ নিয়ে স্বর্গ ওখানে নিজেই যেনো হাজির।লিমুজিন,ভি-সিক্স--- আজ লন্ডন তো কাল ম্যায়রিকা।আমি সামান্য 

আদার ব্যাপারি,ওসব বুঝবো কী করে বলো! আমার না হয় লিমুজিন ছিলো না 

কিন্তু ছোট্ট একটি জলের নৌকো তো ছিলো! 

যে- নৌকোয় তোমাকে নিয়ে পাড়ি জমাতাম ঝাউবন পার হয়ে বনদিঘি- যমুনার কাছে।সারাটাপথ আমার একেকটি গান শুনে 

তুমি যেনো প্রতিবারই পুনর্জন্ম পেতে- এ কথা তো তোমার মুখ থেকেই শোনা আমার।

একদিন বাতাবিনেবু ছুরি দিয়ে কাটতে গিয়ে আমার আঙুলে লেগে ছরে গিয়ে

 গল গল করে রক্ত বের হতে লাগলো।

তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার আঙুল 

ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বোল্লে:' তোমার

 এক ফোঁটা রক্তের জন্য আমি আমার 

শরীরের সমস্ত রক্ত বিসর্জন দিতে পারি।' 

হ্যাঁ,তুমি বিসর্জন দিয়েছিলে 

তবে রক্ত নয় ,নিজেকেই।বিসর্জন দিয়েছিলে

 অন্য কারো কাছে- জৌলুসমাখা জীবনের কাছে।


আরে দ্যাখো তো কী সব বকছি আমি 

পাগলের মতো! আসল কথাটাই তো 

জানা হলো না- আমাদের ক্ষুদে পরিটা

 কেমন আছে? সরি,একটা ভুল হয়ে গেছে- 

এখন তো আর পরিটা আমাদের নয়- তোমাদের।বলোনা,তোমাদের পরিটা লক্ষী পুতুলটা

কেমন আছে? আমি গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে

 না দিলে লক্ষীটা ঘুমোতোই না।যখোন 

ওকে কোলে নিতুম, আমাকে কী মিষ্টি সুরে

 গান শোনাতো-" মন্দ হোক ভালো হোক

,বাবা আমার বাবা/ পৃথিবীতে বাবার মতো

 আর আছে কে বা!" কখনো জেমসদা'র 

সুরে গাইতো -" বাবা কতোদিন কতোদিন

দেখি নি তোমায়"। কতোদিন নয়রে খুকি,

তুই আমাকে আর কোনোদিনই দেখতে পাবি না।আমি যে এখন তোর মিথ্যেমিথ্যি বাবা!না না

 বাবা নই,আমি এখন তোর আংকল! হা হা কী মজা কী দারুণ মজা! লক্ষী মা লক্ষী সোনা আমার এখন থেকে চিরদিন তোকে এক মিথ্যে বাবার কাছে থেকে যেতে হবে! তবু মিথ্যে অই বাবাকে নিয়েই ভালো থাকিস তুই,মিষ্টি পরি আমার।


তুমি চলে যাবার পর একদিন অবিনাশ 

এসে হাজির।কথায় কথায় বোলছিলো:' এরপরও বোলবি - অই মেয়েটা তোকে ভালোবেসেছিলো!"

আমি বোলেছিলাম: হ্যাঁ বোলবো।হৃদয়ে হৃদয় গেঁথে নিয়ে বেঁচে থাকা আর শরীরে শরীর মিশিয়ে বেঁচে থাকা এক নয়।দেখিস একদিন মিথিলা সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে আমার কাছেই ফিরে এসে ভীষণ জড়িয়ে ধরে বোলবে:" আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছিলাম,আজীবন তোমাকেই ভালোবাসি শুধু।আর মাঝখানের অই দুর্ঘটনাগুলো ভালোবাসা নয়,ওসব অন্যকিছু যা আমার 

মুখ ফুটে বেরুবে না।তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।জানি,তুমি তো সেই তুমি যার কাছে আমার 

সহস্র ভুলও ফুলের মতো ক্ষমা পেয়ে যায়।বলো,ঠিক বলিনি আমি?


তারপর অবিনাশকে বলেছিলাম: তোর তো এসব বোঝার কথা- তুই কবি মানুষ।

" আমি কবি!" বোলে অবিনাশটা হো হো করে

 হেসে উঠেছিলো।হাসলে অবিনাশকে দেখে মনে হয়- এই ছেলের পক্ষে পাপ স্পর্শ করা সম্ভব নয় অথচ তবুও সুদর্শনা ওকে ক্ষমা করতে পারে নি।সুদর্শনা এখন কোথায় - এ কথা আমি আর কোনোদিন অবিনাশকে জিজ্ঞেস করি নি প্রচন্ড এক অভিমানে।


মিথিলা এ কথা তোমার জানবার কোনো মানেই 

হয় না যে- ৪ দিন হলো আমি covid19- এ 

আক্রান্ত হয়ে কোয়ারেন্টিনে আছি।অবস্থা তেমন সুবিধের নয়।কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো শুরু হবে তীব্র শ্বাসকষ্ট। সেই দুঃসহ শ্বাসকষ্টের সময়- যখন মৃত্যু মাত্র কয়েক মিনিট দূরে- তখনও 

বোলবো আমি: মিথিলা,তুমি শুধু আমাকেই ভালোবেসেছিলে।অন্য কাউকে কিছুতেই নয়।এখনও আমি তোমার চোখের তারায় তাকিয়ে নিশ্চিত বোলে দিতে পারি- তোমার হৃদয়ে 

লেখা আছে যে-নাম, সে হলো - আমি,

কেবলি আমি,অন্য কেউ কিছুতেই নয়।

নইলে যে ঈশ্বরও মিথ্যে হয়ে যাবে!


আমার মৃত্যুর পর তোমার কাছে যখোন

 সংবাদ পৌঁছুবে- ' বাংলাদেশের বিখ্যাত তারকা তাহসান আর নেই!" আমি জানি ইংরেজিতে তোমার স্ট্রেইট বাক্যটি হবে:" Who is Tahsan?" বিশ্বাস করো - এর চেয়ে বেশি কিছু আমি 

মোটেই প্রত্যাশা করি না।সেই বিখ্যাত

 বাক্যটির মতো -" ক্ষমার অধিক দণ্ড

 দিও না আমায়"। তুমি আমাকে চিনতে পারলে যে আমার যন্ত্রণা দ্বিগুন বেড়ে যাবে।

ভুলে যাও আমাকে,স্রেফ ভুলে যাও।ভুলে যাও- জলনৌকো বনদিঘি যমুনা শরীরের সমস্ত রক্তের বিসর্জন....


শুধু একটি প্রশ্ন তবুও যে থেকে গেলো- তুমি কি কখনোই আমাকে চিনতে পেরেছিলে?

 

কিছুক্ষণ পর ডাক্তারবাবু আসবার কথা যদিও বাংলাদেশে ৯ টার ট্রেন ক' টায় আসবে যেমন ঠিক নেই- কিছুক্ষণ পরের ডাক্তার যে কখন আসবে নাকি আদৌ আসবে না - তারও কোনো ঠিক নেই!

পাশের বেডে - একাদশ শ্রেণিতে পড়ে- 

একটি ছেলে ভর্তি হয়েছে।ডাক্তারবাবু আসবেন- 

এ কথা শুনলেই তার ধারণা হয় - সে বুঝি 

মারা যাবে! আর সাথে সাথেই সে একটি গান

 বার বার একটি গানই শুনতে শুরু করে:" দূরে তুমি দাঁড়িয়ে / সাগরের জলে পা ভিজিয়ে/ কাছে

 যেতে পারি না?/ হাতটা ধরতে পারি না...."

তখন কেনো যেনো কোনো এক বিচিত্র কারণে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা।দেখে- আমার দু'চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের মতো এক অবিশ্রান্ত জলের ধারা...


প্রিয় মিথিলা

ভুল মানুষে কেটে যায় একটা জীবন।খুব জানতে ইচ্ছে করে- আমি কি খুব বেশি ভুল ছিলাম কিংবা ভুল মানুষ?


రచనకు రేటింగ్ ఇవ్వండి
లాగిన్

Similar bengali poem from Tragedy